কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০-১৮৭০)
সমকালীন সমাজে কালীপ্রসন্ন সিংহ শিল্পসংস্কৃতির একজন মহান পৃষ্ঠপোষক, বিধবাবিবাহের একনিষ্ঠ প্রবক্তা, অনন্যসাধারণ রাজনীতিবিদ ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দীনবন্ধুর 'নীলদর্পণ' নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করে ছাপার দায়ে প্রকাশক রেভারেন্ড জেমস লঙ্ নামক এক পাদ্রীকে বিচারালয়ে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২৪ জুলাই, ১৮৬১ সালে কালীপ্রসন্ন সিংহ বিচারালয়ে উপস্থিত হয়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে পরোক্ষভাবে এ নাটকে ব্যক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করেন ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান | সাহিত্যিক তথ্য |
---|---|
জন্ম | কালীপ্রসন্ন সিংহ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪০ সালে উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত সিংহ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। |
সাহিত্যকর্ম | ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা' (১৮৬২): এটি রম্য রচনা। তাঁর রচনার রীতিকে ‘হুতোমী বাংলা’ বলে। এ উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্র- দনুবানু । ‘সংস্কৃত মহাভারতের গদ্য অনুবাদ' (১৮৬৬) : এটি মহাভারতের আঠার পর্বের গদ্যাকারে অনুবাদ সম্পাদন করেন। অনুবাদটি মহারানি ভিক্টোরিয়াকে উৎসর্গ করেন। নাটক: ‘বাবু’ (১৮৫৪- প্রহসন), ‘বিক্রমোবর্শী' (১৮৫৭- অনুবাদ নাটক) ‘সাবিত্রী সত্যবান' (১৮৫৮), ‘মালতীমাধব' (১৮৫৯- অনুবাদ নাটক)। |
‘হুতোম প্যাঁচার নকশা' | কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা' (১৮৬২) একটি রম্য রচনা। তিনি এ নকশায় তৎকালীন সময়ের সমাজের ক্ষত চিহ্নের ছবি অত্যন্ত করুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি এতে কলকাতার হঠাৎ ধনী হওয়া নব্যসমাজের চিত্র ব্যঙ্গাকারে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ গ্রন্থের বাচনভঙ্গি, রচনারীতি, আঙ্গিক প্রভৃতি দিক থেকে লেখক নতুনত্ব সৃষ্টি করেছেন। কালীপ্রসন্ন এ গ্রন্থে পণ্ডিতী (সংস্কৃত/সাধু) ভাষার পরিবর্তে কথ্য ভাষায় এটি রচনা করেন। তাঁর রচনার এ রীতিকে ‘হুতোমি বাংলা' বলে। এটি উপন্যাস না হলেও উপন্যাস জাতীয় রচনা। |
তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান | ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা' (১৮৫৩) [বঙ্গভাষা অনুশীলনের জন্য তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন], 'বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা' (১৮৫৫), ‘বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ' (১৮৫৬)। |
মহাভারতের অনুবাদ | কালীপ্রসন্ন সিংহের সব থেকে বড় অবদান হল, তার সম্পাদনায় আঠারো পর্ব মহাভারত গদ্য আকারে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে, যা এখনও ব্যাপকভাবে পঠিত এবং প্রকাশিত হয়। এই অনুবাদটি ১৮৫৮ থেকে ১৮৬৬ এর ভিতরে প্রকাশিত হয়েছিল। কালীপ্রসন্ন বিনামূল্যে মহাভারত বিতরণ করেছিলেন। কালীপ্রসন্ন এই বিপুল খরচ বহন করতে নিজস্ব মালিকানাধীন বিভিন্ন জমি বিক্রয় করে দিয়েছিলেন। তিনি তার রচিত মহাভারত অনুবাদটি মহারানী ভিক্টোরিয়া-কে উত্সর্গ করেছিলেন। তিনি পবিত্র হিন্দু ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-এর অনুবাদও করেছিলেন, যা তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। |
মৃত্যু | তিনি ২৪ জুলাই, ১৮৭০ সালে কলকাতায় মারা যান। |
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নসমূহ পড়তে ও পরীক্ষা দিতে এখানে ক্লিক করুন