শ্রীরামপুর মিশন
শ্রীরামপুর মিশন ১৮০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উইলিয়াম ওয়ার্ড ও জোশুয়া মার্শম্যানের সহায়তায় উইলিয়াম কেরীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৮০০ সালে শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন ও মিশনের মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয় । এটি ছিল ডেনিসদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি মিশন। ১৮০৮ সালে শ্রীরামপুর ডেনিসদের হাত থেকে ইংরেজদের হাতে চলে আসে।
বাংলা গদ্য চর্চায় যে সকল প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে খ্রিষ্টান মিশনারীগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘শ্রীরামপুর মিশন' সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলায় বাইবেল আনুবাদ করে প্রদেশে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারে ব্রতী হয়েছিলেন উইলিয়াম কেরি ও জোশুয়া মার্শম্যান।
বাইবেলের অনুবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা গদ্য চর্চা নতুন গতি পায়। এছাড়াও কলকাতায় চার্লস উইলকিন্সের নির্দেশনানুযায়ী পঞ্চানন কর্মকার মুদ্রণ উপযোগী বাংলা অক্ষর তৈরি করেছিলেন। বাইবেলের অনুবাদ মুদ্রণে তা ব্যবহৃত হয়। শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে পরবর্তীকালে রামায়ণ, মহাভারত, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে এই মিশন থেকে 'দিগদর্শন' ও 'সমাচার দর্পণ' নামক পত্রিকা দুটি প্রকাশিত হয়। শ্রীরামপুর মিশন থেকে রামায়ণ', ‘মহাভারত' ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। ১৮৪৫ সালে শ্রীরামপুর মিশন বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু এ প্রেস ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।
সমসাময়িক পত্রপত্রিকা
শ্রীরামপুর মিশনারী কর্তৃক প্রকাশিত 'দিগদর্শন' হলো প্রথম মুদ্রিত বাংলা সংবাদপত্র। এটি প্রকাশিত হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে। শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য পরিবেশনই ছিল এ পত্রিকার মূল লক্ষ্য। সমসাময়িক পত্রিকার তালিকা নিচে দেওয়া হল-
সমসাময়িক পত্রিকা | প্রকাশের সাল | সম্পাদক |
---|---|---|
দিগদর্শন | ১৮১৮ | জেসি মার্শম্যান |
সমাচার দর্পণ (সাপ্তাহিক) | ১৮১৮ | জেসি মার্শম্যান |
বাঙ্গালা গেজেট (সাপ্তাহিক) | ১৮১৮ | গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য |
সম্বাদ কৌমুদী | ১৮২১ | রামমোহন রায় |
সমাচার চন্দ্রিকা | ১৮২২ | ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় |
বঙ্গদূত | ১৮২৯ | নীলরত্ন হালদার |
জ্ঞানান্বেষণ | ১৮৩৩ | দক্ষিণারঞ্জন মুখ্যোপাধ্যায় |
সংবাদ প্রভাকর | ১৮৩১ | ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত |
বাংলা ছাপাখানা
১৭৭৭ সালে জেমস্ হিকি নামের একজন ভাগ্যান্বেষী প্রথম কাঠের প্রেস তৈরি করে বাংলায় মুদ্রণ ব্যবসা চালু করেন। ওয়ারেন হেস্টিংস এর অনুরোধে ব্রাসি হ্যালহেড বাংলা ব্যাকরণের বই লিখার পর ছাপার যন্ত্র বা বাংলা মুদ্রণ হরফ না থাকায় হেস্টিংস তাঁর অধীনস্ত কর্মচারী চার্লস উইলকিন্সকে হরফ তৈরির নির্দেশ দেন। উইলকিন্স পরে পঞ্চানন কর্মকারের সহায়তায় বাংলা মুদ্রণ হরফ তৈরি করেন। প্রচলিত উত্তরে পঞ্চানন কর্মকারকে বাংলা মুদ্রাক্ষরের জনক বলা হয়।মূলত পঞ্চানন কর্মকার বাংলা অক্ষর খোদাই করেন। ইংরেজরা ছাপাখানা তৈরি করেছিলেন প্রথমত ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা শেখানোর বই ও অভিধান প্রকাশ এবং দ্বিতীয়ত বাইবেলের অনুবাদ প্রকাশের জন্য।
ভারতীয় উপমহাদেশে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৪৯৮ সালে গোয়ায় (এটি ছিলো পর্তুগিজ ভাষার মুদ্রণযন্ত্র)। ১৭৭৮ সালে চার্লস উইলকিন্স হুগলিতে প্রথম বাংলা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি নিজেই বাংলা অক্ষরের নকশা তৈরি করেন বলে তাঁকে বাংলা মুদ্রাক্ষরের জনক বলা হয়। ১৮৪৭ সালে বাংলাদেশের রংপুরে 'বার্তাবহ যন্ত্র'নামে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় । ঢাকায় বাংলা প্রেস নামে ১৮৬০ সালে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এখান থেকেই দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ' প্রকাশিত হয়।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নসমূহ পড়তে ও পরীক্ষা দিতে এখানে ক্লিক করুন