প্রণালী , অন্তরীপ ও খাল | Straits, barriers and canals

প্রণালী হলো দুটি জলভাগ, যেমন দুটি সমুদ্র, দুটি মহাসাগর, দুটি উপসাগর, বা দুটি নদীর সংযোগকারী একটি সংকীর্ণ জলপথ। প্রণালীগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং জাহাজ চলাচলের জন্য দুরত্ব কমিয়ে দিয়ে সময়কে সাশ্রয় করতে পারে । যার ফলস্বরুপ বিভিন্ন দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল এবং বাণিজ্যকে সহজতর করে তোলে । নিচের চিত্রটি বুঝতে পারলে অনেক সহজেই প্রণালীগুলোর A to Z মনে রাখা যাবে । Strait অর্থ প্রণালী। এখানে প্রণালীটি- পৃথক করেছেঃ দেশ-১ হতে দেশ-২ কে। সংযুক্ত করেছে: সাগর-১ কে সাগর-২ এর সাথে।

প্রণালী

বিশ্বের বিখ্যাত প্রণালীসমূহ

এক নজরে বিশ্বের বিখ্যাত প্রণালীসমূহ
প্রণালী সংযুক্ত করেছে পৃথক করেছে
পক প্রণালী ভারত মহাসাগর-আরব সাগর ভারত-শ্রীলঙ্কা
জিব্রাল্টার প্রণালী উত্তর আটলান্টিক-ভূমধ্যসাগর আফ্রিকা-ইউরোপ
দার্দনেলিস প্রণালী ইজিয়ান সাগর-মর্মর সাগর এশিয়া-ইউরোপ
বসফরাস প্রণালী কৃষ্ণসাগর-মর্মর সাগর এশিয়া-ইউরোপ
কার্চ প্রণালী কৃষ্ণসাগর-এডেন সাগর ক্রিমিয়া-রাশিয়া
বাব-এল-মানদেব এডেন সাগর-লোহিত সাগর এশিয়া-আফ্রিকা
বেরিং প্রণালী বেরিং সাগর- উত্তর সাগর এশিয়া-উত্তর আমেরিকা
ডেভিস প্রণালী ব্যাফিন সাগর-লাব্রাডার সাগর গ্রিনল্যান্ড-কানাডা
ডোভার প্রণালী ইংলিশ চ্যানেল-উত্তর সাগর ফ্রান্স-ব্রিটেন
ইংলিশ চ্যানেল আটলান্টিক মহাসাগর-উত্তর সাগর ফ্রান্স-ব্রিটেন
নর্থ চ্যানেল আটলান্টিক মহাসাগর-আইরিস সাগর উত্তর আয়ারল্যান্ড-স্কটল্যান্ড
ফ্লোরিডা প্রণালী মেক্সিকো উপসাগর-আটলান্টিক মহাসাগর ফ্লোরিডা-কিউবা
ফারমোজা প্রণালী পূর্বচীন সাগর-টংকিং সাগর তাইওয়ান-চীন
কোরিয়া প্রণালী পূর্বচীন সাগর-জাপান সাগর কোরিয়া-জাপান
মালাক্কা প্রণালী বঙ্গোপসাগর-জাভা সাগর সুমাত্রা-মালয়েশিয়া
সুন্দা প্রণালী ভারত মহাসাগর-জাভা সাগর সুমাত্রা-জাভা
হরমুজ প্রণালী পারস্য উপসাগর- ওমান উপসাগর আরব-ইরান
মেসিনা প্রণালী টিরহেনিয়ান সাগর-আইওনিয়ান সাগর ইতালি-সিসিলি
সিসিলি প্রণালী টিরহেনিয়ান সাগর-ভূমধ্যসাগর সিসিলি-আফ্রিকা
ড্রাগন'স মাউথ পারস্য উপসাগর-ক্যারিবিয়ান সাগর ভেনিজুয়েলা-ত্রিনিদাদ

☞ জিব্রাল্টার প্রণালী (Strait of Gibraltar) পূর্বে ভূমধ্যসাগরকে পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযোগকারী সমুদ্র প্রণালী। এটি উত্তর আফ্রিকাকে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের সাইবেরীয় উপদ্বীপ থেকে পৃথক করেছে। প্রণালীটি ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর প্রস্থ অবস্থানভেদে ১৩ থেকে ৩৯ কিলোমিটার হতে পারে। প্রণালীর মধ্যে দিয়ে একটি ৮ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ৩০০ মিটার গভীর চ্যানেল চলে গেছে।

অন্তরীপ (Cape)

ভূ-ভাগের কোন অংশ যদি সরু হয়ে সাগরের মধ্যে প্রসারিত থাকে, তবে ভূভাগের সে অংশটিকে অন্তরীপ বলে। যেমন- দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ।

  • কন্যাকুমারী অন্তরীপ : ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশে, যা ভারত মহাসাগরে পড়েছে।
  • চেলুস্কিন অন্তরীপ : এশিয়ার সর্ব উত্তরের বিন্দু। এখানে তুন্দ্রা অঞ্চল অবস্থিত।
  • গার্ছাফুই অন্তরীপ : সোমালিয়ার অগ্রভাগ, আরব সাগরে অবস্থিত।
  • মাতাপান অন্তরীপ : গ্রীসের বর্ধিতাংশ, ভূ-মধ্যসাগরে পড়েছে।
  • কাসাউ অন্তরীপ : ভিয়েতনামের অগ্রভাগ, দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত।

খাল (Canal)

গ্রান্ড খাল :

  • অবস্থান: চীন
  • দৈর্ঘ্য: ১৭৭৬ কি.মি.
  • পৃথিবীর প্রাচীনতম কৃত্রিম খাল। ৫৮১-৬১৮ খ্রিস্টাব্দে এই খালের প্রাচীনতম অংশের খনন কাজ করা হয়।
  • এটি চীনের বেইজিং এবং হ্যাংচ্যাং এর মধ্যে অবস্থিত। এর অন্য নাম বেইজিং-হাংজু গ্র্যান্ড খাল।
  • পৃথিবীর দীর্ঘতম কৃত্রিম খাল।

সুয়েজ খাল :

  • অবস্থান: মিশর
  • দৈর্ঘ্য: ১৯২ কি.মি.
  • ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত করেছে। এই খাল খননের ফলে এশিয়ার সাথে ইউরোপের জলপথে দূরত্ব অনেক কমে আসে।
  • ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজখালের খনন কাজ শুরু হয় এবং পুরো খননকাজে ১০ বছর সময় লাগে। ১৮৬৯ সালে এর খনন কাজ শেষ হয়।
  • ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার ফার্দিনেন্দ দ্য লিসেপস খালটি খনন করেন।
  • ১৮৬৯ সালে খালটির উদ্বোধন করা হয়।
  • ১৮৮২ সালে ব্রিটেন খালটি দখল করে নেয়।
  • ১৯৫৬ সালের ২৬ জুলাই মিশর খালটির জাতীয়করণ করে।
  • ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে সাময়িকভাবে খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
  • ১৯৭৫ সালে পুনরায় জাহাজ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
  • নতুন সুয়েজ খাল নামে এই খালের বর্ধিতাংশে জাহাজ চলাচল শুরু হয় আগস্ট ২০১৫ তে।
  • সুয়েজ খালের দুপাশে অবস্থিত বন্দর সৈয়দ ও বন্দর তৌফিক (সুয়েজ বন্দর)।

পানামা খাল :

  • অবস্থান: পানামা
  • দৈর্ঘ্য: ৮০ কি.মি.
  • আটলান্টিক মহাসাগরকে প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে যুক্ত করে।
  • বনভূমি কেটে তৈরিকৃত ৮০ কিমি দীর্ঘ ও ৯১ মিটার প্রস্থ এই খাল।
  • পৃথিবীর গভীরতম খাল। গভীরতা-১৪ মিটার।
  • পানামা খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছিল ফ্রান্স। তারা ১৮৮৯-১৮৯৪ পর্যন্ত কাজ করে ছেড়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
  • পরবর্তীতে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে পানামা খালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
  • ১৯১৪ সালের ১৫ আগস্ট খালের উদ্বোধন করা হয়।
  • পানামা খাল ভ্রমণের উদ্যোগ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওরি রুজভেল্ট।
  • যুক্তরাষ্ট্র পানামা খালের খনন কাজ করেছিল। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র এই খালটি পানামার নিকট হস্তান্তর করে।
অন্যান্য খাল
খালের নাম অবস্থান
গোটা খাল সুইডেন
কিয়েল খাল জার্মানি [ জার্মানি ও ডেনমার্ক সীমান্তে অবস্থিত ]
ত্রলক ট্রেড খাল জার্মানি
ম্যানচেস্টার খাল ইংল্যান্ড
উইল্যান্ড খাল কানাডা
প্রিন্সেস জুলিয়ানা খাল নেদারল্যান্ড
আমস্টারডাম খাল নেদারল্যান্ড
  • সুয়েজ খালের উভয় পাশে অবস্থিত পোর্ট সৈয়দ ও সুয়েজ বন্দর।
  • সুয়েজ খাল নিয়ন্ত্রণ করে সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ (SCA)।
  • ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজগুলো যাতায়াত করে সুয়েজ খাল দিয়ে।
  • দীর্ঘতম, প্রাচীনতম, কৃত্তিম খাল গ্র্যান্ড খাল।
  • গভীরতম খাল পানামা খাল।
  • প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবেশদ্বার বলা হয় পানামা খাল কে।
নবীনতর পূর্বতন