আধুনিক বিশ্বে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম। তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন – সকল ক্ষেত্রেই এর প্রভাব স্পষ্ট। বাংলাদেশও ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে সাবমেরিন কেবলের উপর নির্ভরশীল।
সাবমেরিন কেবল কি?
সাবমেরিন কেবল হলো পানির নিচ দিয়ে বিছানো অপটিক্যাল ফাইবারের তৈরি দীর্ঘ কেবল যা বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করে। এই কেবলগুলোর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট ডেটা এবং ভয়েস কল প্রেরণ করা হয়।
বাংলাদেশের সাবমেরিন কেবল
বাংলাদেশের সাবমেরিন কেবল প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন । বর্তমানে বাংলাদেশের তিনটি সাবমেরিন কেবল সিস্টেমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত। সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং উচ্চ-ক্ষমতার ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছে। এর ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি, ব্যান্ডউইডথ উন্নত, ডেটা খরচ হ্রাস, এবং ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশের সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন কক্সবাজারের ঝিলংজায় অবস্থিত । বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলে South East-Middle East-West Europe 4 (SEA-ME-WE4) কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে যোগদান করে । বাংলাদেশ ২১ মে, ২০০৬ সালে প্রথম সাবমেরিন কেবল 'সি-মি-উই-৪' এর সাথে সংযুক্ত হয়। SEA-ME-WE-4 সাবমেরিন ক্যাবল লাইনের দৈর্ঘ্য ২২,০০০ কি.মি. । বাংলাদেশ সরকার সাবমেরিন ক্যাবলস এর ১৭০ কি.মি. দূরত্বের ব্যয়ভার বহন করে । সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশ ব্রাঞ্চের দৈর্ঘ্য ১২৬০ কি.মি. । এরপর বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল 'সি-মি-উই-৫' এর সাথে সংযুক্ত হয় ১০ সেপ্টেম্বর , ২০১৭ সালে । বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল গ্রাউন্ড স্টেশন অবস্থিত পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায়। SEA-ME-WE-5 সাবমেরিন ক্যাবল লাইনের দৈর্ঘ্য ২৫,০০০ কি.মি. । বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ পাবে ১৫০০ জিবিপিএস । সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর, ২০২০ সালে 'সি-মি-উই-৬' কেবল যুক্ত হয়। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপিত হলে দেশের ব্যান্ডউইথ প্রতি সেকেন্ডে ৬ টেরাবাইট বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে প্রথম সন্দ্বীপ উপজেলায় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় । বিটিআরসির হিসাবে, ২০২৩ সালের জুলাই শেষে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ১ লাখ।
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৬
- দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল : সি-মি-উই-৬
- একনেকে অনুমোদন : ১ ডিসেম্বর, ২০২০
- বাজেট : ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা
- বাস্তবায়নকারী সংস্থা : বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কো. লি, (বিএসসিসিএল)
- বিস্তৃত : সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স (ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূ-মধ্যসাগর অবধি বিস্তৃত)।
- কোর ল্যান্ডিং স্টেশন : সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিসর ও ফ্রান্স
- বাংলাদেশের ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন : কক্সবাজার
- দৈর্ঘ্য : ১৩ হাজার ২৭৫ কি.মি.
- প্রকল্প সমাপ্ত হবে : ২০২৪ সালে
সাবমেরিন কেবল বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে আরও নতুন কেবল সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগে আরও সুবিধাভোগী হবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে আরও সমৃদ্ধ হবে।