বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলী

বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলী আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং গর্বের প্রতীক। এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক পথ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরম্পরা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অর্থনৈতিক উন্নতি, সমাজের সমানতা ও প্রগতির সাথে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় বিষয়াবলী যেমন- জাতীয় পতাকা , জাতীয় সঙ্গীত , জাতীয় ভাষা , জাতীয় ফুল , জাতীয় পাখি , জাতীয় পশু , জাতীয় গাছ , জাতীয় ফল , জাতীয় খেলা , জাতীয় কবি , জাতীয় নেতা , জাতীয় স্মৃতিসৌধ , জাতীয় জাদুঘর , জাতীয় গ্রন্থাগার , জাতীয় পার্ক ইত্যাদি । এই সব জাতীয় বিষয়াবলী আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে এবং আমাদের জাতীয় পরিচয় তৈরি করে।

বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আমার সোনার বাংলা' গানটির প্রথম দশ চরণ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত। বাংলা ১৩১২ সালে সর্বপ্রথম 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকায় 'আমার সোনার বাংলা' গান হিসেবে প্রকাশিত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'স্বরবিতান '-কাব্যগ্রন্থের 'স্বদেশ' শীর্ষক প্রথম গীত। পঁচিশটি চরণের সমন্বয়ে এটি রচিত। উৎসব বা অনুষ্ঠানাদিতে যন্ত্রসঙ্গীতের সুরে এর প্রথম চার লাইন বাজানো হয়। জাতীয় সঙ্গীতের ইংরেজি অনুবাদক সৈয়দ আলী আহসান। এটি বিবিসির শ্রোতা জরিপে শ্রেষ্ঠ বাংলা গান নির্বাচিত হয় (২০০৬)।

বঙ্গবিভাগের পর পূর্ব ও পশ্চিম - উভয় বাংলাকে একীভূত করার প্রতীক হিসেবে গানটি রচিত হয়েছিল। এতে বাংলার প্রকৃতির কথা প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে। কবিগুরু স্বয়ং এর সুরকার। পল্টনের জনসভায় ৩ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজ জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সাথে সাথে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় এক ছাত্র সমাবেশে তৎকালীন ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি আ. স. ম. আব্দুর রব সর্বপ্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এজন্য ২ মার্চ 'জাতীয় পতাকা দিবস' হিসাবে পালন করা হয়। জাতীয় পতাকার তখনকার রূপ ছিল সবুজ বর্গের মাঝে লাল বৃত্ত এবং লাল বৃত্তের মধ্যে সোনালী রঙের বালাদেশের মানচিত্র। মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার ছিলেন শিব নারায়ণ দাশ। শিব নারায়ণ দাস এবং ইউসুফ সালাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে সানাউল হক ইনু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০১ নং রুমে বসে প্রথমবারের মত জাতীয় পতাকার নকশা তৈরি করেন।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন দিবস হল ২ মার্চ। শেখ মুজিবুর রহমান ২৩ মার্চ ১৯৭১ তাঁর ৩২ নং ধানমন্ডি নিজের বাসভবনে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনের রূপকার শিল্পী কামরুল হাসান। জাপানের ও পালাউয়ের পতাকার সাথে বাংলাদেশের পতাকার মিল রয়েছে।।

মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার ছিলেন শিব নারায়ণ দাশ। বাংলাদেশের বাইরে সর্বপ্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতাস্থ পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনে। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ডেপুটি হাইকমিশনের প্রধান জনাব এম, হোসেন আলী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

বর্তমানে জাতীয় পতাকার বর্ণ গাঢ় সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত। জাতীয় পতাকার সবুজ বর্ণ তারুণ্যের উদ্দীপনা এবং গ্রাম বাংলার বিস্তৃত সবুজ পরিবেশের প্রতীক। লাল ভরাট বৃত্তটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক।

জাতীয় পতাকা

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আয়তাকার। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০⦂৬ বা ৫⦂৩ এবং মাঝের লাল বর্ণের বৃত্তটির ব্যাসার্ধ দৈর্ঘ্যের পাঁচভাগের এক ভাগ, পতাকার দৈর্ঘ্যের বিশ ভাগের বাম দিকের নয় ভাগের শেষ বিন্দুর উপর অঙ্কিত লম্ব এবং প্রস্থের দিক মধ্য বরাবর অঙ্কিত সরলরেখার ছেদ বিন্দু হল বৃত্তের কেন্দ্র।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধি প্রণীত হয়। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকে শহীদ দিবস (২১শে ফেব্রুয়ারি), জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট) এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোন দিবস। দেশের প্রথম পতাকা ভাস্কর্য 'পতাকা ৭১' মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত।

জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নতুন আইন চালু হওয়ায় প্রধান বিচারপতি গাড়িতে পতাকা ব্যবহার করতে পারবেন। উপমন্ত্রীগণ রাজধানীর বাইরে এবং প্রধানমন্ত্রী বিমানে পতাকা ব্যবহার করতে পারবেন।

পতাকার বিভিন্ন মাপ:

  • ভবনে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হল- ১০ ফুট × ৬ ফুট, ৫ ফুট × ৩ ফুট, ২.৫ ফুট × ১.৫ ফুট।
  • মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন মাপ হল- ১৫ ইঞ্চি × ৯ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি × ৬ ইঞ্চি।
  • আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য 'টেবিল পতাকা'র মাপ হল- ১০ ইঞ্চি × ৬ ইঞ্চি।

ব্যবহারবিধিঃ

  • স্মরণীয় দিবসে সরকারি ও বেসরকারি ভবন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও কনস্যুলেটে পতাকা উত্তোলন করতে হবে।
  • শোক দিবসে সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে বাংলাদেশ। সরকারের অনুমতি ব্যতীত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা যাবে না।
  • কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উড়োজাহাজে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারেন।
  • যে সকল ব্যাক্তিবর্গ মোটরগাড়ী ও জলযানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারেন-
    ১. জাতীয় সংসদের স্পিকার,
    ২. বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি,
    ৩. মন্ত্রীবর্গ,
    ৪. চীফ হুইপ,
    ৫. জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার,
    ৬. জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা,
    ৭. মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ,
    ৮. বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক/কনস্যুলার/মিশনসমূহের প্রধানগণ।

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হল উভয় পাশে ধানের শীষ দ্বারা বেষ্টিত পানিতে ভাসমান শাপলা ফুল, এর শীর্ষ চূড়ায় পরস্পর সংযুক্ত কুঁড়িসহ তিনটি পাতা এবং উভয় পাশে দুটি করে মোট চারটি তারকা বেষ্টিত প্রতীক। জাতীয় প্রতীকে অন্তর্ভুক্ত চারটি বিষয় (যা ৪ টি মূলনীতি নির্দেশ করে) : ভাসমান ফুটন্ত শাপলা, ধানের শীষ, কুঁড়িসহ তিনটি পাট পাতা এবং তারকা। জাতীয় প্রতীকের ডিজাইনার কামরুল হাসান। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য জাতীয় প্রতীকে ফুটে উঠেছে । জাতীয় প্রতীক ব্যবহারের অধিকার রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর । জাতীয় প্রতীকের বর্ণনা আছে সংবিধানের ৪ (ক) অনুচ্ছেদে ।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম

বর্ণনা: লাল রঙের বৃত্তের মাঝে হলুদ রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র। বৃত্তের উপরের দিকে লেখা আছে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ', নিচে লেখা 'সরকার' এবং বৃত্তের পাশে দুটি করে মোট চারটি তারকা।
ডিজাইনার: এম এন সাহা।

বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ

জাতীয় স্মৃতিসৌধ

জাতীয় স্মৃতিসৌধ (অন্য নাম সম্মিলিত প্রয়াস) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মারক স্থাপনা। এটি ঢাকা শহরের উপকন্ঠে সাভারের নবীনগরে অবস্থিত। এর স্থপতি হলেন সৈয়দ মাইনুল হোসেন। স্মৃতিসৌধটির উচ্চতা ১৫০ ফুট (৪৫.৭২ মিটার)। সৌধটি সাতটি ত্রিভুজাকৃতি দেয়াল নিয়ে গঠিত। এলাকাটির ক্ষেত্রফল ১০৯ একর। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে সৌধটি নির্মিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতিসৌধটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৭৮ সালের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসেন মুহম্মদ এরশাদ এর উদ্বোধন করেন। সাতটি ফলকবিশিষ্ট স্মৃতিসৌধটি 'সম্মিলিত প্রয়াস' নামে পরিচিত।

সৈয়দ মাইনুল হোসেনের পরিচিতি :

  • জন্ম: ১৭ মার্চ ১৯৫১ সালে, মৃত্যু: ২০১৪ সালে
  • পৈতৃক নিবাস: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী।
  • মোট নকশা করেন: ৩৮টি স্থাপনার (১৯৭৬-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত)
  • উল্লেখযোগ্য নকশা: জাতীয় স্মৃতিসৌধ , বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন (১৯৭৮), উত্তরা মডেল টাউন (১৯৮৫) ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ১,২০০ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম
  • পদক: একুশে পদক (১৯৮৮) ও শেলটেক পদক (২০০৭)

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন ঢাকার শেরে বাংলানগরে অবস্থিত। প্রখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুই কান এটির মূল স্থপতি। পূর্ব বাংলার আইনসভা হিসাবে বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলটি ব্যবহৃত হত। বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় সংসদের অধিবেশনগুলো অনুষ্ঠিত হয় পুরনো সংসদ ভবনে যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৬১ সালে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এর উদ্বোধন করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেন। একই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে বর্তমান ভবনটি প্রথম সংসদ ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সংসদভবন এলাকার আয়তন ২১৫ একর। ভবনটি ৯তলা বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদভবনের মূল ভবনের সর্বোচ্চ উচ্চতা ১১৭ ফুট। জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন লেকটি 'ক্রিসেন্ট লেক' নামে পরিচিত।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ :

  • বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্ট।
  • বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রতীক শাপলা ফুল।
  • এ পর্যন্ত দুইজন বিদেশী রাষ্ট্রপ্রধান জাতীয় সংসদে বক্তৃতা করেছেন। তাঁরা হলেন-
    প্রথম : যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল যোশেফ টিটো । সময়কাল- ৩১ জানুয়ারি, ১৯৭৪ ।
    দ্বিতীয় : ভারতের প্রেসিডেন্ট ভি ভি গিরি । সময়কাল- ১৮ জুন, ১৯৭৪

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ

ইলিশ মাছ

প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায় বলে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ রুপালি ইলিশ। এটি সাধারণত ৩০-৪০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। বিশ্বে পারস্য উপসাগর, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর, ভিয়েতনাম সাগর, লোহিত সাগর এবং চীন সাগরে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। সমুদ্র সংলগ্ন বিশ্বের কয়েকটি প্রধান নদী যেমন বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলি ; ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউক্রেটিস, পাকিস্তানের সিন্ধু, মায়ানমারের ইরাবতী এবং ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদীসমূহে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল

জাতীয় ফুল শাপলা

বাংলাদেশে প্রচুর শাপলা পাওয়া যায় বলে সাদা শাপলা ফুল বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। যার ইংরেজি নাম ‘ওয়াটার লিলি’। এটি Nymphaeaceae বা নিমফালিস নামক বর্গের সপুষ্পক উদ্ভিদ পরিবারের এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের কিছু জেলায় একে নাইল বা নাল বলা হয়। সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জনগণের প্রতীক। এটা বিশ্বাস করা হয় যে শাপলার সাদা রং আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আর পাপড়িগুলোর মতো দেশের মানুষকে একত্রিত করে। তাই শাপলা ফুল অনেক রঙের হলেও কেবল সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের পয়সা, টাকা ও দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলা বা এর জলছাপ আঁকা থাকে।

শাপলা ফুল শ্রীলঙ্কারও জাতীয় ফুল। তবে সাদা নয়, নীল শাপলা। শ্রীলঙ্কায় এই ফুল ‘নীল মাহানেল’ নামে পরিচিত। শ্রীলঙ্কার ভাষায় নীল থেকে এ ফুলকে ইংরেজিতে অনেক সময় ‘ব্লু লোটাস’ বলা হয়। দেশটির বিভিন্ন পুকুর ও প্রাকৃতিক হৃদে এ ফুল ফোটে। ওখানকার বৌদ্ধদের বিশ্বাস গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপে পাওয়া ১০৮টি শুভ চিহ্নের মাঝে একটি ছিল এই শাপলা ফুল।

সারা বিশ্বে ৫০ প্রজাতির শাপলা আছে, কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ২ প্রজাতির শাপলা জন্মে। সাদা ও লাল রঙের শাপলা। একটা রক্তকমল প্রজাতির আর অন্যটা হলো শালুক প্রজাতির। শাপলার শেকড় পানির নিচে থাকে আর ফুল ডাটা দিয়ে পানির উপর ফুটে থাকে।

বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর

জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত । এটি ১৯১৩ সালের ৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্ব নাম ঢাকা জাদুঘর। ১৯৮৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একে জাতীয় জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরের ৪টি শাখা রয়েছে যথা: আহসান মঞ্জিল, ঢাকা ; ওসমানী জাদুঘর, সিলেট ; জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, চট্টগ্রাম এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা, ময়মনসিংহ। বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে ৪৩টি গ্যালারি রয়েছে।

স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র

স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র একটি অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরিচয়পত্র, যা নিশ্চিত করবে নাগরিকের পরিচয় ও সকল নাগরিক সুবিধা। জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)-এর ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড হবে ১০ ডিজিটের। এর মধ্যে মূলত ৯টি ডিজিট র‍্যানডম তৈরি হবে এবং শেষের একটি ডিজিট চেকসাম হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কোনো (NID) নম্বরের প্রথমে ০ (শূন্য) থাকবে না। একই ডিজিট চার বা ততোধিকবার থাকবে না। ৩টি একই ডিজিট পর পর একবারের বেশি ব্যবহার করা হবে না। ক্রমানুসারে কোনো (NID) তৈরি হবে না। স্বামী-স্ত্রীর নাম উল্লেখ থাকলেও উন্নতমানের ডিজিটাল কার্ডের (স্মার্টকার্ড) উপরের অংশে স্বামী-স্ত্রীর নাম থাকবে না। তবে কার্ডের মাইক্রোচিপসে ভোটারের এ তথ্য দেয়া থাকবে। কারণ স্বামী বা স্ত্রী পরিবর্তনযোগ্য। এজন্য উন্নতমানের স্মার্টকার্ডে একজন ভোটারের নাম, পিতা ও মাতার নাম দৃশ্যমান রাখা হবে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ২২টি সুবিধা পাওয়া যায়।

স্মার্ট কার্ড: জালিয়াতি রোধে জাতীয় পরিচয়পত্রকে আধুনিকভাবে তৈরি, যন্ত্রে পাঠযোগ্য বলে একে ভোটার আইডি বলেও অভিহিত করা হয়। নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ফ্রান্স থেকে তৈরি করে আনা হয়। স্মার্ট কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) বিতরণ শুরু হয় - ২ অক্টোবর ২০১৬। অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কার্যক্রম উদ্বোধন হয় - ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫।

অন্যান্য জাতীয় বিষয়সমূহ

বোটানিক্যাল গার্ডেন : এটি বাংলাদেশের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। এটি ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। এর আয়তন ৮৪ হেক্টর। এতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার প্রজাতির গাছ আছে বলে ধারণা করা হয়। এটি ৫৭টি সেকশনে বিভক্ত। এর পাশে ঢাকা চিড়িয়াখানা অবস্থিত।

জাতীয় খেলা: বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি । ১৯৭২ সালে হাডুডু খেলাকে কাবাডি নামে জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে কাবাডিকে প্রথমবারের মত এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কাবাডি খেলা প্রথম শুরু হয় জাপানে।

জাতীয় বন: বাংলাদেশের জাতীয় বন হল সুন্দরবন। এটি বালাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের তীরের একটি ব-দ্বীপ অঞ্চল। প্রায় ১০০টি দ্বীপ রয়েছে সুন্দরবনে। এর আয়তন প্রায় ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার। এর প্রধান বৃক্ষ হল সুন্দরী। ১৮৭৫ সালে একে সংক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর এটি ইউনেস্কোর ওয়ালা হেরিটেজ সাইট (৫২২তম) হিসেবে ঘোষিত হয়। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।

জাতীয় বৃক্ষ: ভারত উপমহাদেশ ও ব্রহ্মদেশকে (বর্তমানে মিয়ানমার) আমের উৎপত্তিস্থল বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশ সরকার আমগাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করে ২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর। কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর। এর বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica । বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র আম গাছ পাওয়া যায় বলে এটিকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানচিত্র : বাংলাদেশের মানচিত্র প্রথম অংকন করেন জেমস রেনেল। ১৭৪২ সালে লন্ডনে জন্ম নেয়া এই মনীষী ব্রিটিশ সরকারের চাকরি নিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রের কাজ শুরু করেন ২১ মার্চ ১৭৬৪। দীর্ঘদিন কাজ শেষে তিনি 'মেজর অব বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার' পদে উন্নীত হয়ে ১৭৭৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন ।

বাংলাদেশের অন্যান্য জাতীয় বিষয়াবলী
জাতীয় বিষয় জাতীয় বিষয়ের নাম
জাতীয় ভাষা বাংলা
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
জাতীয় পাখি দোয়েল
জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার
জাতীয় ফল কাঠাল
জাতীয় ধর্ম ইসলাম
জাতীয় বন সুন্দরবন
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, ঢাকা
স্থপতি : আবুল হোসেন খারিয়ানি।
জাতীয় স্টেডিয়াম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, গুলিস্তান, ঢাকা
জাতীয় গ্রন্থাগার শেরে বাংলা নগর, আগারগাঁও, ঢাকা
জাতীয় পার্ক ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক, গাজীপুর।
জাতীয় নাট্যশালা শিল্পকলা একাডেমি, সেগুনবাগিচা, ঢাকা
জাতীয় চিড়িয়াখানা বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা (মিরপুর)
জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস/ BSS)
জাতীয় বিমানবন্দর বাংলাদেশ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
জাতীয় গণহত্যা দিবস ২৫ মার্চ
জাতীয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ

তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত জাতীয় বিষয়সমূহ

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধন :

  • বিশ্বে প্রথম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধন (Biometric SIM Verification) শুরু হয় - পাকিস্তানে
  • বিশ্বে প্রথম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধন (Biometric SIM Verification) শুরু হয় - ২০১৩ সালে
  • বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধন শুরু করে - বাংলাদেশ

ডিজিটাল সিটি : দেশের প্রথম 'ডিজিটাল সিটি' হচ্ছে সিলেট। এ উপলক্ষে 'ডিজিটাল সিলেট সিটি' শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পটি বস্তবায়িত হলে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল, ট্যাক্স পরিশোধ সবই করা যাবে অনলাইনে। এসব ছাড়াও সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে কখন কোন ডাক্তার বসেন, হাসপাতালে কতটি সিট খালি আছে প্রভৃতি সম্পর্কে ঘরে বসেই জানতে পারবে নগরবাসী।

ডিজিটাল জেলা: ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যশোর 'জেলা ই-সেবাকেন্দ্র' চালু হয়। ২০ ডিসেম্বর, ২০১২ সালে সরকার যশোর জেলাকে দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের জাতীয় দিবসসমূহ

জাতীয় দিবসসমূহ
দিবসের নাম তারিখ
পাঠ্যপুস্তক দিবস ১ জানুয়ারী
শিক্ষক দিবস ১৯ জানুয়ারি
জনসংখ্যা দিবস ২ ফেব্রুয়ারি
শহিদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি
স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ
জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ
মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল
জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস ৯ আগস্ট
জাতীয় সংহতি দিবস ৭ নভেম্বর
সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২১ নভেম্বর
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ১৪ ডিসেম্বর
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর

কতিপয় উল্লেখযোগ্য দিবস :

  • ১০ জানুয়ারি : বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
  • ২৪ জানুয়ারি : গণঅভ্যুত্থান দিবস
  • ২৮ জানুয়ারি : সলঙ্গা দিবস
  • ১ ফেব্রুয়ারি : কবিতা উৎসব দিবস
  • ২৮ ফেব্রুয়ারি : জাতীয় ডায়াবেটিক সচেতনতা দিবস
  • ২ মার্চ : পতাকা দিবস
  • ১৭ মার্চ : শিশু দিবস
  • ৩১ মার্চ : দুর্যোগ মোকাবেলা দিবস
  • ৫ এপ্রিল : জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস
  • ১১ মে : কুরআন দিবস
  • ১৬ মে : ফারাক্কা লং মার্চ দিবস
  • ২৮ মে : নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস
  • ৩০ মে : জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ দিবস
  • ২৩ জুন : পলাশী দিবস
  • ৩ জুলাই : জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস
  • ১৫ আগস্ট : শোক দিবস
  • ১৫ সেপ্টেম্বর : আয়কর দিবস
  • ২৪ সেপ্টেম্বর : মিনা দিবস
  • ৩০ সেপ্টেম্বর : কন্যা শিশু দিবস
  • ২ অক্টোবর : পথশিশু দিবস
  • ১ নভেম্বর : যুব দিবস
  • ৩ নভেম্বর : জেল হত্যা দিবস
  • ৪ নভেম্বর : সংবিধান দিবস
  • ১০ নভেম্বর : নূর হোসেন দিবস
  • ১৫ নভেম্বর : জাতীয় কৃষি দিবস
  • ১ ডিসেম্বর : মুক্তিযোদ্ধা দিবস
  • ৩ ডিসেম্বর : বাংলা একাডেমী দিবস
  • ৬ ডিসেম্বর : স্বৈরাচার পতন দিবস
  • ১ ডিসেম্বর : বেগম রোকেয়া দিবস
নবীনতর পূর্বতন