সংক্রামক রোগ | infectious disease

সংক্রামক রোগ হলো এমন রোগ যা একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এগুলি জীবাণু, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক এবং পরজীবীর মাধ্যমে সৃষ্ট হয়। সংক্রামক রোগ বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে যেমন- শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে , স্পর্শের মাধ্যমে , খাদ্য বা পানির মাধ্যমে , যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে , কীটপতঙ্গের মাধ্যমে ইত্যাদি ।

  • সংক্রামক রোগ : যে সকল রোগের জীবাণু বায়ু, পানি বা অন্য কোন মাধ্যমের সাহায্যে শরীরে প্রবেশ করে তাদের সংক্রামক রোগ বলে। যেমন- কলেরা, প্লেগ, বসন্ত, এইডস ইত্যাদি।
  • ছোঁয়াচে রোগ: যে সকল রোগের বিস্তার রোগীর সংস্পর্শে বা ছোঁয়ায় বিস্তার লাভ করে তাদের ছোঁয়াচে রোগ বলে। যেমন: কলেরা, জলবসন্ত, হুপিংকাশি, যক্ষ্মা, মাম্পস, টিটেনাস, ফাইলোরিয়া, করোনা প্রভৃতি।

কোন কোন সংক্রামক রোগ সাধারণত একবারের বেশি হয় না: হাম, বসন্ত, পীতজ্বর প্রভৃতি সংক্রামক রোগ সাধারণত একবারের বেশি হয় না। এসব রোগের জীবাণু আক্রমণে কোনো রোগ হলে শরীরের মধ্যে এদের এন্টিবডি তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে রোগ প্রতিরোধ করে। আস্তে আস্তে এ এন্টিবডিসমূহ কমে গেলেও বিশেষ বিশেষ রোগের এন্টিজেনের সান্নিধ্যে আবার বেড়ে ওঠে যাকে বুস্টার প্রতিক্রিয়া বলে।

কলেরা

কলেরা বা উদরাময়: এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে সংক্রমিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট রোগ কলেরা। এ রোগের প্রধান উপসর্গ মারাত্মক ডায়রিয়া। কলেরা রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আগে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অধিকাংশ রোগী মারা যেত। এখন পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে। বিশেষতঃ খাবার স্যালাইন বা লবণ-গুড় পানির সরবত ডায়রিয়ার চিকিৎসায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।

বসন্ত রোগ

  • বসন্ত রোগের উপসর্গ ও প্রতিষেধক : বসন্ত ভাইরাস জনিত রোগ। বাতাসের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। এ রোগ অতিশয় সংক্রামক এবং সাধারণত মহামারীরূপে দেখা যায়। বসন্ত রোগে আক্রান্ত রোগীর কপালে, নাকে, হাতে-পায়ে গুটি ওঠে। বুকে পিঠেও সামান্য গুটি দেখা যায়। এ রোগে খুব জ্বর এবং শরীর ব্যথাযুক্ত হয়। বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে টিকা দেয়া হয়। একবার টিকায় না সারলে বারবার টিকা দিতে হয়।
  • জলবসন্ত কি ধরনের রোগ: জলবসন্ত ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগ সাধারণত শিশু কিশোরদের মধ্যে মহামারী আকারে দেখা যায়। এ রোগে পিছনের স্নায়ুমূল এবং স্নায়ুগুটিকাতে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত স্নায়ু কর্তৃক সরবরাহকৃত ত্বকে পানিপূর্ণ ফোস্কা সৃষ্টি হয়। জলবসন্ত রোগে গায়ে ফোস্কা উঠার আগে জ্বর থাকে এবং গা ম্যাজ ম্যাজ করে। ফোস্কা উঠার পরেও জ্বর থাকে এবং ফোস্কাসমূহ ঝাঁকে ঝাঁকে উঠতে থাকে।
  • গুটি বসন্তের টিকা তৈরির প্রক্রিয়া গুটি বসন্ত দ্বারা আক্রান্ত কোনো প্রাণীর দেহ থেকে প্রথমে গুটি বসন্তের জন্য দায়ী নির্দিষ্ট প্রজাতির ভাইরাস সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত এই নির্দিষ্ট প্রজাতির ভাইরাসকে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে গুটি বসন্তের টিকা তৈরি করা হয়।
  • বসন্তের টিকা আবিষ্কারক: জেনার

মাম্পস রোগ

মাম্পস হলো একটি সংক্রামক রোগ যা মাম্পস ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, তবে বড়দেরও হতে পারে। এটি কর্ণগ্রন্থির প্রদাহজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ হলে কথা বলা বা চিবানো কষ্টকর ও ব্যথাদায়ক হয়।

মাম্পস রোগের লক্ষণ: Infection, Poliomyelitis, জ্বর, মাথাব্যথা, গলায় ঘা, Respiratory paralysis , কানের কাছে লালাগ্রন্থিতে ফোলাভাব ইত্যাদি।

  • প্রতিকার: Vaccination

Rabies' বা জলাতংক রোগ

জলাতঙ্ক হলো একটি ভাইরাসজনিত প্রাণঘাতী রোগ যা স্তন্যপায়ী প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি রেবিস ভাইরাস নামক এক ধরণের নিউরোট্রপিক ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। জলাতঙ্ক রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই এবং রোগ নির্ণয়ের পর প্রায়শই মৃত্যু ঘটে।

  • Rabies virus এ রোগের জন্য দায়ী।
  • Rabied প্রাণী , যারা Rabies virus ধারণ করে তাদের কামড়ে এই রোগ হয়। যেমন- কুকুর, বিড়াল।
  • বৈশিষ্ট্য: জ্বর, ক্ষুধামন্দা, অনুভূতিহীনতা, দ্বিধাদ্বন্বতা, মুখে লালা আসা, ব্যাথাময় পেশির সংকোচন, পানির প্রতি ভয় ইত্যাদি।
  • প্রতিকারসমূহ: ৫টি টিকা দেয়া হয় ০, ৩, ৭.১৪, ২৮ দিনে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৪ দিনে ১৪টি টিকা দেয়া হয়।
  • লুই পাস্তুর কি আবিষ্কার করেছিলেন: জলাতঙ্ক রোগের টিকা।

চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ১৯৫৩ সালে তানজানিয়ায় চিকুনগুনিয়া জ্বরের ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে। তবে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়ার অস্তিত্ব ধরা পড়ে এবং দ্বিতীয় বার সংক্রমণের ঘটনা ঘটে ২০১১ সালে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশাই চিকুনগুনিয়া জ্বরের ভাইরাসের বাহক।

লক্ষণ: - প্রচন্ড জ্বর (1020 -1040 ফাঃ) - গিরায় তীব্র যন্ত্রণা। - মাথা ব্যাথা। - পেশির যন্ত্রণা। - হাড়ের সংযোগস্থল ফোলা ও চর্মরোগ। মশা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ৩-৭ দিনের মধ্যে চিকুনগুনিয়া রোগের লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।

চিকিৎসা:

  1. রোগের লক্ষণ দেখা গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  2. চিকুনগুনিয়ার জন্য কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা নেই।
  3. কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া যাবে না।
  4. ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে।
  5. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
  6. জ্বর এবং গায়ে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে।

প্রতিরোধের উপায়:

  1. হালকা রঙের ফুলহাতা জামা ও ট্রাউজার ব্যবহার করতে হবে।
  2. মশা বংশবিস্তার করে এমন আবদ্ধ পানিযুক্ত জায়গা যেমন পুরাতন কন্টেইনার, ফুলের টব ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে।
  3. দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে অথবা সম্ভব হলে নেট ব্যবহার করতে হবে।
  4. মশা প্রতিরোধক লোশন বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
  5. মশারির ভিতর ঘুমাতে হবে।
  6. ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলায় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় চিকুনগুনিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ইবোলা

ইবোলা হলো ভাইরাস ঘটিত একটি মনুষ্য রোগ। Ebola virus এর সংক্রমণে এই রোগটি হয়ে থাকে। মধ্য আফ্রিকার গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো উপত্যকায় প্রবাহিত একটি নদীর নাম ইবোলা। ১৯৭৬ সালের জুন মাসে এই নদী তীরের একটি গ্রামে প্রথম এ রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং এ জীবাণু শনাক্ত করা হয়। সেই থেকে এ রোগের নাম ইবোলা।

ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ পদ্ধতি :

  1. আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রস (রক্ত, লালা, পায়খানা, বমি, বীর্য, মূত্র, ঘাম, অশ্রু, নাকের পানি, এমনকি বুকের দুধ) সুস্থ ব্যক্তির মুখ, নাক চোখ, যৌনাঙ্গ, ক্ষতস্থানের সংস্পর্শে আসলে ইবোলা ভাইরাস শরীরের প্রবেশ করে।
  2. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়।
  3. আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত দূষিত সূচ, সিরিঞ্জ এবং অন্যান্য ব্যবহারকৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়।
  4. আক্রান্ত পশুপাখি, বানর, শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ফলহারী বাদুড়ের সংস্পর্শে কিংবা মাংস খেলে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়।
  5. আক্রান্ত পশুপাখির শরীরে লালার সংস্পর্শে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায়।
  6. আক্রান্ত ব্যক্তির লালা যুক্ত পানি, পানীয়, খাবার ভাগাভাগী করে খেলে ইবোলা ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাতাস, পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ইবোলা ভাইরাস ছড়ায় না।

লক্ষণ: ইবোলা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ২১ দিন লাগতে পারে এ রোগের লক্ষণসমূহ পরিলক্ষিত হওয়ার জন্য। এই রোগের লক্ষণসমূহ সাধারণ ফ্লু এর মতই। সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ডায়েরিয়া ও জ্বর এই রোগের প্রধান উপসর্গ।

প্রতিরোধ:

  1. সবসময় হাত সাবান এবং গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে।
  2. চোখ, নাক অথবা মুখে হাত লাগানোর আগে হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
  3. আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাওয়ার সময় শরীর ঢেকে মাস্ক পরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  4. আক্রান্ত ব্যক্তির বডি লিকুইড (বীর্য, রক্ত) যাতে আপনার সংস্পর্শে কোনোভাবেই না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  5. যদি কোনো কারণে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে, যাতে অন্য কেউ এ রোগে আক্রান্ত না হয় এবং দ্রুত চিকিৎসার পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

চিকিৎসা: এই রোগের কোনো স্বীকৃত ঔষধ নেই। তবে আশার কথা, সম্প্রতি গবেষণায় দুটি নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে, যা এখনও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। সুতরাং এ রোগের চিকিৎসা হবে অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো লক্ষণ নির্ভর এবং এর সাথে প্রয়োজন রোগীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ।

এভিয়ান ফ্লু/ সোয়াইন ফ্লু (Swine Flu)

এভিয়ান ফ্লু বা H1N1 নামক ভাইরাসের কারণে সোয়াইন ফ্লু (Swine flu) রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। ২০০৯ সালে প্রথম এ ভাইরাস মানুষের নজরে আসে ।

এভিয়ান ফ্লু: এভিয়ান ফ্লু হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি প্রকার। 'এ' টাইপের ভাইরাস হিসেবে একে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সনাক্ত করা হয়। 'এ' টাইপের ভাইরাস প্রকৃতিতে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে আছে। এটি দ্বারা প্রথমত উড়ন্ত পাখি, হাঁস-মুরগি আক্রান্ত হয়। তাই একে 'এভিয়ান ফ্লু' বলা হয়। এ ভাইরাসটি যখন কোনো মানুষকে সংক্রমিত করে তখন তাকে বলে 'বার্ড ফ্লু'। বার্ড ফ্লুর অপর নাম এভিয়ান ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা।

জিকা ভাইরাস

জিকা ভাইরাস আবিষ্কৃত হয় ১৯৪৭ সালে। এটি একটি মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস সমগোত্রীয় RNA ভাইরাস। ইয়েলো ফিভার গবেষকরা উগান্ডার জিকা বনে বানরের উপর গবেষণা করার সময়ে বানরের শরীরে এই ভাইরাসের দেখা পান। তখন জিকা বনের নাম অনুসারেই এই ভাইবাসের নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে নাইজেরিয়াতে প্রথম মানুষের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। এরপর সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে থাকা এই ভাইরাসটি দেশে দেশে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

লক্ষণ: প্রতি পাঁচজন জিকা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের মাঝে একজনের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের লক্ষণগুলো হলো :

  1. জ্বর হওয়া;
  2. গায়ে র‍্যাশ ওঠা:
  3. গাঁটে ব্যথা;
  4. চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখের পর্দার প্রদাহ ইত্যাদি। এছাড়াও মাথাব্যথা ও পেশি ব্যথা থাকতে পারে।

নিবারণ: জিকা ভাইরাস নিবারণের জন্য এখনো কোনো টিকা বা নির্দিষ্ট ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি । আক্রান্ত রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পানীয় খাবার খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।

নিয়ন্ত্রণ: এই ভাইরাস থেকে নিয়ন্ত্রণের উপায় হলো-

  1. মশা থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখা;
  2. ঘরবাড়ি মশা মুক্ত রাখা;
  3. ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার রাখা;
  4. মশার বিস্তার রোধ করা;
  5. মশানাশক ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদে থাকা।

সার্স (SARS)

সার্স একটি ভাইরাসবাহিত রোগ। (SARS-এর পূর্ণরূপ Severe Actue Respiratory Syndrone') করোনা নামক ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এ রোগ হয়। এ রোগের কোনো চিকিৎসা না থাকলেও আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৫%।

লক্ষণ:

  1. এ রোগে জ্বরের মাত্রা ১০১ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।
  2. এ রোগে কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
  3. এ রোগে মাথা ব্যাথা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।

মার্স ভাইরাস

MERS-এর পূর্ণরূপ Middle East Respiratory Syndrome। এটি ভাইরাসজনিত শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যা ২০১২ সালে সর্বপ্রথম সৌদি আরবে শনাক্ত হয়। এটি একটি PNA ভাইরাস। এটি করোনা ভাইরাস দলের। তাই একে MERS-COV নামেও প্রকাশ করা হয়।

এইচআইভি, এইডস

১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ কিছু সমকামীর মধ্যে জীবাণু সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট মারাত্মক নিউমোনিয়ার কারণ সনাক্ত করতে গিয়ে AIDS এর সন্ধান পাওয়া যায়। এর দু'বছর পর রোগটির জন্য দায়ী ভাইরাস সনাক্ত করা হয়। প্রথমে ভিন্ন নাম দেয়া হলেও বর্তমানে এই ভাইরাসটির সর্বজনস্বীকৃত নাম HIV. Human Immune Deficiency Virus-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হল HIV. এটি এইডস রোগের ভাইরাস। এটি শরীরের 'T Lymphocyte' নামক কোষ ধ্বংস করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। ইনজেকশন, এইচআইভি জীবাণুঘটিত রক্ত গ্রহণ এবং অনিয়ন্ত্রিত। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। ইনকিউবেশন সময় → ৬ মাস--৬ বছর/বেশি।

এইচআইভি এইডস্ এ রূপ নিতে কত সময় লাগে: এইচআইভি শরীরে প্রবেশ করার পর তা এইডস্ এ রূপ নেয়ার মধ্যকার সময়সীমার তারতম্য থাকতে পারে, তবে গড়ে ৮ থেকে ১০ বছর লাগে। এই তারতম্যের কারণ সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। মধ্যবর্তী সময়ে বেশীরভাগ এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি সুস্থ থাকেন কিন্তু তার কাছ থেকে ভাইরাস অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এইচআইভি সংক্রমনের কয়েক মাসের মধ্যে রক্তে এইচআইভি'র এন্টিবডি পাওয়া যায়। অধিকাংশ এইচআইভি পরীক্ষায় এই এন্টিবডির উপস্থিতি দেখে এইচআইভি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

HIV ছড়ায়:

  1. যৌন পথে (৭৫%-৮৫%)।
  2. ভাটিকাল সঞ্চারণ → অমরা দিয়ে, জন্মের সময়, বুকের দুধের মাধ্যমে।
  3. রক্ত দিয়ে সঞ্চারণ → রক্ত এবং রক্তের উপাদান দিয়ে ব্যবহৃত সূচ।
  4. যে কোন চামড়া ছিদ্র করণের মাধ্যমে।
  5. অন্যান্য পথে → রেজর, টুথব্রাশ, চিরুনি (রোগীর ব্যবহৃত)

রক্ত, রক্তজাত সামগ্রী ও সংক্রমিত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কিভাবে এইডস ভাইরাস সংক্রমিত হয় : রক্ত, রক্তজাত সামগ্রী (মানুষের রক্ত থেকে তৈরী সামগ্রী, যেমন- প্লাজমা, রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান, লোহিত রক্ত কণিকা ইত্যাদি) এবং সংক্রমিত সূচ ও সিরিঞ্জ এইচআইভি ছড়ানোর বিপদজ্জনক মাধ্যম, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে এই বিপদের আশঙ্কা বেশি থাকে। জীবাণু মুক্ত না করে একই সূচ ও সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করার ফলে শিরার মাধ্যমে মাদক দ্রব্য সেবনকারীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি থাকে যেহেতু শিরায় মাদকদ্রব্য প্রবেশকরানোর আগে সাধারণত কিছু রক্ত সিরিঞ্জে টেনে আনা হয়। অন্য যেসব ক্ষেত্রে এইচআইভি সংক্রমণের খুবই সামান্য ঝুঁকি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কান ফুটো করা, খৎনা করা, উল্কি নেয়া এবং নাপিতের দোকান বা সেলুনে একই ক্ষুর দিয়ে শেভ করা। দাঁতের পরিচর্যা প্রদানের মাধ্যমেও এইচআইভি ও হেপাটাইটিস বি ও সি এর মতো অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে যেমন - একই টুথব্রাশ ব্যবহার করা ।

মা থেকে শিশুতে কিভাবে এইডস্ সংক্রমণ হয়: এইচআইভি ভাইরাস গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় কিংবা প্রসব-পরবর্তীকালে মায়ের কাছে থেকে তার গর্ভের ভ্রূণে কিংবা শিশুর দেহে সংক্রমিত হতে পারে। সংক্রমিত মা থেকে গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পর তার সন্তানের সংক্রমিত হওয়ার আশংকা ২০% থেকে ৪০% প্রসব পরবর্তী কালে বুকের দুধের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এইচআইভি সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব যতই ব্যাপক হচ্ছে, সংক্রমিত গর্ভবর্তী মায়েদের কাছ থেকে তাদের গর্ভের ভ্রূণে ব্য সন্তানের দেহে সংক্রমণের হার ততই বাড়ছে এবং তা শিশুদের এইডস রোগীদের শতকরা ৭৫ ভাগের বেশি তাদের মায়েদের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও অপুষ্টি এবং যেখানে খুব কম মায়েরাই এইচআইভি সংক্রমিত, যেসব দেশে শিশুদের অন্যান্য রোগ মৃত্যুর ঝুঁকির চেয়ে বুকের দুধের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম হওয়ার কথা।

কি কি উপায়ে এইচআইভি ছড়ায় না:

  1. সংক্রমিত লোকের ব্যবহৃত গ্লাসে পানি পান করলে;
  2. এইচআইভি/এইডস্ আক্রান্ত লোকদের ব্যবহৃত পুকুর বা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলে;
  3. মশা বা অন্যান্য রক্তচোষা পোকা-মাকড় সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত চুষে তারপর সুস্থ ব্যক্তিদের কামড়ালে;
  4. এইচআইভি/এইডস রোগীদের সাথে সামাজিক মেলামেশা বা সাময়িকভাবে অবস্থান করলে;
  5. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত লোকের ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে;
  6. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত লোকের সাথে করমর্দন করলে ;
  7. এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত লোকের সাথে আলিংগন করলে বা তাকে চুম্বন করলে;
  8. এইচআইভি এইডস আক্রান্ত লোকের সাথে খাবার, কাপড়-চোপড় বা বাসনপত্র গ্রহন বা ব্যবহার করলে ;
  9. কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ও
  10. রক্ত দানের সুযোগ-সুবিধা যথাযথ ব্যবস্থাপনাধীনে রক্ত দান করলে

চামড়া কাটা ফাটা না হলে বা সুস্থ থাকলে এবং মিউকাস মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ না হলে বা শুকালে তার মধ্যে দিয়ে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে না। কারণ যেসব কোষের সাথে এইচআইভি ভাইরাসের সংযুক্তি ঘটে সেগুলো চামড়ার উপরিভাগে বা মুখের টিস্যুতে থাকে না।

থুথু, চোখের পানি বা প্রস্রাবে এইডস্ ছড়ায় কি: থুথু, চোখের পানিতে এক ধরনের অম্ল ও জীবাণুনাশক এনজাইম থাকে, এজন্য এগুলোতে এইডস্ জীবাণু কম থাকে। এ কারণে থুথু, চোখের পানি বা প্রস্রাবে এইডস্ ছড়ায় না। তবে এগুলোতে যদি রক্ত মেশানো থাকে (যেমন- জিহ্বায় কাটা বা দাঁতের রক্ত মেশানো থুথু ইত্যাদি) তখন রক্তের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

কি কি কারণে বাংলাদেশে এইচআইভি বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে:

  1. প্রতিবেশী দেশগুলোতে এইচআইভি সংক্রমণের উচ্চ প্রকোপ।
  2. এইচআইভি সংক্রমণ এবং সংক্রমণের উপায়সমূহ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব
  3. বিবাহ-পূর্ব ও বিবাহ বহির্ভূত অরক্ষিত যৌন আচরণ।
  4. কনডম ব্যবহারের নিম্ন হার।
  5. যৌনকর্মীর সংখ্যাধিক্য যাদের অনেকেই নিরাপদ যৌন আচরণ মেনে চলে না।
  6. বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে নিয়োজিতদের মধ্যে এসটিআই-র প্রকোপ
  7. শহর এলাকায় সমকামিতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি
  8. সিরিঞ্জ ভাগাভাগি করে শিরায় মাদক দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশেষ করে যারা ইনজেকশন পেথিড্রিন ও টিডিজেসিক গ্রহণ করেন ও
  9. রুটিন এইচআইভি স্ক্রীনিং এর জন্য অধিকাংশ ব্লাড ব্যাংকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব।

যে রোগে শরীরের ইমিউনিটি নষ্ট হয়ে যায় সে রোগের নাম কিঃ 'এইডস'। এইডস একটি মরণ ব্যাধি। এটি হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবজনিত লক্ষণ।

AIDS: এইডস অপ্রতিরোধযোগ্য ভয়ংকর এক সংক্রামক ব্যাধি। AIDS (Acquired Immune Deficiency Syndrome); অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঘাটতির লক্ষণ সমষ্টি' অর্থাৎ এইডস জন্মগত নয়। HIV (Human Immunodeficiency Virus) নামক ভাইরাসের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। ফলে কোনো রোগের জীবাণু, যেমন- যক্ষা, ডায়রিয়া ইত্যাদি সহজে আক্রমণ করতে পারে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকায় রোগী ক্রমে মৃত্যু মুখে পতিত হয়। এইডস-এর কোনো চিকিৎসা নেই কিংবা এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার টিকাও আবিষ্কৃত হয়নি। ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম AIDS ধরা পড়ে।

কিভাবে এইচআইভি/এইডস ছড়ায় :

  1. আক্রান্ত পুরুষ অথবা মহিলার সাথে অরক্ষিত যৌন মিলনের মাধ্যমে।
  2. আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণের মাধ্যমে।
  3. আক্রান্ত ব্যক্তির সিরিজ, রেজার, ব্লেড বা ক্ষুর জীবাণুমুক্ত না করে পুনরায় ব্যবহার করলে।
  4. আক্রান্ত মা থেকে গর্ভাবস্থায় প্রসবকালে অথবা বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে এই রোগ ছড়ায়।
নবীনতর পূর্বতন