বাংলাদেশের শক্তি সম্পদ বলতে সাধারণত বিদ্যুৎকেই বোঝানো হয়ে থাকে । বিদ্যুৎ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যতম প্রধান খাত হলেও আমাদের দেশে তা ছিল অবহেলিত। এ খাত সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ছে তার প্রধান নজির হলো বিদ্যুতের দাবিতে ২০০৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় সংঘটিত কানসাট আন্দোলন। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৬ কি.মি. দীর্ঘ সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্যে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্যে এটিই দেশের প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩-এ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত
- বাংলাদেশে বিদ্যুৎ শক্তির উৎস : প্রাকৃতিক গ্যাস (৫৫.৮৯%), ফার্নেস ওয়েল (২৭.১৮%), ডিজেল (৬.৯৮), বিদ্যুৎ আমদানি (৫.৯১%), কয়লা (২.৬৭%), পানি (১.১৭%) এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি (০.১৯%)।
- বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে : মোট জনসংখ্যার ৯৯.৮% [ সূত্র : বিদ্যুৎ বিভাগ ]
- বর্তমানে দেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ : ৬০২ কিলোওয়াট-ঘন্টা (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ) [ সূত্র : বিদ্যুৎ বিভাগ ]
- বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা : ২৩,৪৮২ মেগাওয়াট [ সূত্র : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ ]
- বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা (নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ক্যাপটিভ সহ) : ২৬,৭০০ মেগাওয়াট [ সূত্র : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ ]
- বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র : ১৫৩টি
- বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে : এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট (১৬ এপ্রিল ২০২২) । [ সূত্র : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ ]
- ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুতের বিতরণ লস / সিস্টেম লস : ৯.৩০ শতাংশ । [ সূত্র : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ ]
- বাংলাদেশে বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র : নারায়ণগঞ্জ জেলার হরিপুরে
- বাংলাদেশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র : ১০টি
- বাংলাদেশের বৃহত্তম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র : ভেড়ামাড়া (কুষ্টিয়া)
- বাংলাদেশের প্রথম গ্যাসচলিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র : সিলেটের হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র
- বাংলাদেশের প্রথম কয়লাচলিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া
- বাংলাদেশের প্রথম বার্জমাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র : খুলনার বার্জমাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র
- বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র : খুলনার বার্জমাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র
- বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া
- বাংলাদেশে পানিবিদুৎ কেন্দ্র : ১টি। যথা- কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র
- কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে : কর্ণফুলী নদীতে
- কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয় : ১৯৬২ সালে
- কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কার্যক্রম শুরু করে : ১৯৬৫ সালে
- কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা : ২৩০ মেগাওয়াট
- বাংলাদেশের একমাত্র কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করা হয়েছে : কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে
- কাপ্তাই ড্যাম অবস্থিত : কাপ্তাই বাঁধ, রাঙামাটি
- বাংলাদেশে আণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নাম : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অবস্থিত : পাবনা জেলায়
- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকারী : RSNEC
- সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে অবস্থিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নাম : বিজয়ের আলো
- বাংলাদেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হয় : নরসিংদী জেলার করিমপুর ও নজরপুরে
- বাংলাদেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র : ময়মনসিংহ সদর (৫০ মেগাওয়াট)
- বাংলাদেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হয় : ফেনীর সোনাগাজীতে
- বিদ্যুৎ বিতরণের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান :
* Dhaka Electric Supply Company Ltd (DESCO),
* Dhaka Power Distribution Company Ltd (DPDC)
* Rural Electrification Board বা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) - গ্রাম বাংলায় বিদ্যুতায়নের দায়িত্বে সরাসরিভাবে নিয়োজিত : পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB)
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : এটি বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাংলাদেশের একক বৃহত্তম প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প। এটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার অন্তর্গত পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর গ্রামে নির্মীয়মাণ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজ উদ্বোধন করা হয় ৩০ নভেম্বর ২০১৭। ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবে। এর উৎপাদন ক্ষমতা ৩ ধাপে ২৪০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে। এ প্রকল্পের নির্মাণে সহায়তা করছে রাশিয়া। এছাড়া ভারতও এ প্রকল্প নির্মাণে সহায়তাকারী দেশ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব পরমাণু ক্লাবে যুক্ত হয়। বাংলাদেশ এ ক্লাবের ৩২তম দেশ। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক ৩ + প্রজন্মের (থ্রি প্লাস জেনারেশন) 'ভিভিইআর ১২০০' প্রযুক্তির পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট স্থাপন করা হবে। আগামী ২০২৩ সালে এর প্রথম ইউনিট এবং পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার কথা। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে টানা ৬০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র: ২০ এপ্রিল ২০১৩ বাগেরহাটে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সুন্দরবন থেকে ১৪ কিমি, দুরে পশুর নদীর তীর ঘেঁষে এই প্রকল্পে ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হবে।
দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন: নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল পাড়াতলীতে দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। ২৯ অক্টোবর ২০১৫ সৌরবাংলা ১৪১ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ছোট গ্রিড (মিনিগ্রিড) কেন্দ্রটির উদ্ভোধন করা হয়। ছোট গ্রিড (মিনিগ্রিড) সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র বস্তুত বৈদ্যুতিক জেনারেটরের একটি সেট, যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর গ্রাহক চাহিদা মিটিয়ে নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের মধ্যে তা সরবরাহ করা হয়।
দেশের প্রথম সরকারি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ উদ্বোধন করা হয় কাপ্তাই ৭.৪ মেগাওয়াট সোলার পিডি গ্রিড কানেকটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটা সরকারি উদ্যোগে নির্মিত দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে বাঁধের পাশে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান।
দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র: নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সুতিয়াখালীতে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ কাজ শুরু হয়। গত ২০১৭ সালে (প্রশাসনিকভাবে প্রকল্পের স্থানটি গৌরিপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়ন)। এটি দেশের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের সর্ববৃহৎ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের যৌথ প্রতিষ্ঠান HDFC Sinpower Ltd. উল্লেখ্য, দেশের দ্বিতীয় বড় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কক্সবাজার জেলায় টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ মেগাওয়াট।
পটুয়াখালীর পায়রায় সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র : ৫ নভেম্বর ২০১৭ পটুয়াখালীর পায়রায় ৩৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জার্মানির সিমেন্স এজির সাথে চুক্তি করেছে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী লিমিটেড (NWPGCL)। আমদানি করা তরল্যায়িত প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর (LNG) এ প্রকল্পই হবে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে ২০২০ সালের জুনে। কক্সবাজার জেলায় ২৮ টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে।
প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প: চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই এবং ফেনী জেলার সোনাগাজীর মুহুরীর সেচ প্রকল্প এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত।
মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প : জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রকল্প। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়িতে গড়ে তোলা হবে। ৬০০ মেগাওয়াটের মোট দুটি ইউনিট গড়া হবে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১,২০০ মেগাওয়াট। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র শুষ্ক বন্দর ঘোষণা করা হয় ২৮ আগস্ট ২০১৭।
প্রথম বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র : বাংলাদেশের প্রথম বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে ৩-৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
- দেশের প্রথম হাইব্রিড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হবে - সোনাগাজী, ফেনীতে।
- বিদ্যুতের প্রথম স্মার্ট প্রিপেইড মিটার কারখানা - খুলনায় স্থাপন করা হচ্ছে।
- দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হবে- বাগেরহাটের মোংলা পৌরসভায়।
- বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (BREB) আওতাধীন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি - ৮০টি।