শ্বাসতন্ত্রের রোগ

শ্বাসতন্ত্রের রোগ হলো এমন রোগ যা শ্বাস-প্রশ্বাসের অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। শ্বাসতন্ত্রের মূল অঙ্গগুলি হলো ফুসফুস, ব্রঙ্কি, ট্র্যাকিয়া এবং নাক। শ্বাসতন্ত্রের রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ, অ্যালার্জি, দূষণ এবং ধূমপান। শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো হলো ব্রঙ্কাইটিস , হাঁপানি , নিউমোনিয়া ও ডিপথেরিয়াসহ অন্যান্য রোগ ।

ব্রঙ্কাইটিস

ব্রঙ্কাইটিস হলো শ্বাসনালীর ভিতরে আবৃত ঝিল্লিতে প্রদাহ বা সংক্রমণ । শ্বাসনালী হলো ফুসফুসের সাথে বাইরের বাতাসের সংযোগকারী নল। ব্রঙ্কাইটিস তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ধূলিকণা মিশ্রিত আবহাওয়া, ঠান্ডা লাগা এবং ধূমপান থেকে এ রোগ হতে পারে।

লক্ষণ:

  1. কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়।
  2. কাশির সাথে কফ থাকে।
  3. জ্বর হয়।
  4. শরীর ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়।

প্রতিকার:

  1. ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
  2. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে ।

হাঁপানি

হাঁপানি হলো দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। এটি শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সংকোচনের কারণে হয়, ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা, বুকে চাপ অনুভূত হয় এবং শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মা জমা হয়। এতে মাঝে মাঝে কাশি ও শ্বাসকষ্ট রোগীকে অত্যন্ত যন্ত্রণা দেয়। হাঁপানি যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।

কারণ: এলার্জি আছে এমন কোনো জিনিস খেলে, বাতাসে উপস্থিত ধোঁয়া ও ধূলা প্রশ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানী হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি থেকে হাঁপানি হতে পারে।

লক্ষণ:

  1. হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
  2. শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মতো হয়।
  3. জোরে জোরে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে।
  4. ফুসফুসের বায়ুথলিতে ঠিকমতো অক্সিজেন সবরাহ হয় না বলে বেশি কষ্ট হয়।
  5. শ্বাস নেওয়ার সময় রোগীর পাঁজরের মাঝের চামড়া ভেতর দিয়ে ঢুকে যায়।
  6. কাশির সাথে কখনও সাদা কফ বের হয়।
  7. জ্বর থাকে না।

প্রতিকার:

  1. পরিষ্কার মুক্ত বাতাসে থাকার চেষ্টা করা।
  2. যে জিনিসের সংস্পর্শে আসলে বা খেলে হাঁপানি বাড়ে তা থেকে বিরত থাকা।
  3. ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলা।
  4. ধোঁয়া, ধূলা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা।
  5. ধূমপান ছেড়ে দেয়া।

তীব্র শ্বাসকষ্টের সময় তাৎক্ষণিক রোগীকে এমনভাবে শোয়াতে হয় যাতে শ্বাস গ্রহণ বা বর্জনের সময় বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণভাবে কোনো বাধা না থাকে। এ সময় রোগীকে চিৎ করে শুইয়ে দিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়। রেসপিরেটরী অর্গানসমূহকে যেকোনো চাপ থেকে মুক্ত করে রোগীকে মাথা সামান্য উঁচুতে রেখে চিৎ করে ভূমির সমান্তরালে শুইয়ে দেয়াই Supine position.

নিউমোনিয়া

নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের একটি রোগ, যা কক্কাস ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস কর্তৃক সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ রোগে ফুসফুস আক্রান্ত হয় এবং ফুসফুসের থলিতে অস্বস্তিকর যন্ত্রণা হয়। যে কোন বয়সের মানুষের নিউমোনিয়া রোগ হতে পারে। তবে শিশু ও ৫০ বছরের বেশি বয়সের মানুষ যাদের ফুসফুস, হার্ট, কিডনির রোগ, ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর লক্ষণগুলো হচ্ছে জ্বর হওয়া, বুকে ব্যথা, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট অনুভূত হওয়া ইত্যাদি।

ডিপথেরিয়া

জীবাণুঘটিত একটি অতি পরিচিত সংক্রামক ব্যাধি হলো ডিপথেরিয়া। এ রোগের জীবাণু সাধারণত শ্লেষ্মা ঝিল্লির উপর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, তবে ত্বকের উপরে বৃদ্ধি ঘটতে পারে। এটি শ্লেষ্মা ঝিল্লির উপর আপাত পর্দার মতো প্রসারণশীল জাতীয় পর্দা তৈরি করে যা কণ্ঠনালী ও শ্বাসনালী বন্ধ করতে পারে। আগে এ রোগের বিস্তার ছিল সারা পৃথিবী জুড়ে, কিন্তু ডিপথেরিয়া টক্সয়েড দ্বারা সার্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির ফলে আজকাল এ রোগের প্রকোপ অনেক কমে এসেছে। ডিপথেরিয়ার বাহক হিসেবে যেসব প্রাণীকে দায়ী বলে গণ্য করা হয় তাদের মধ্যে বিড়াল, ঘোড়া ও শুকর উল্লেখযোগ্য। ডিপথেরিয়া রোগের আবিষ্কারক সিজাচিক।

নবীনতর পূর্বতন