বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস | History of Bangladesh Independence War

একটি সভ্য জাতির কাছে স্বাধীনতার চেয়ে প্রিয় আর কিছু নেই। তাই বাঙালি জাতির ইতিহাসে তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম। এ সাহসী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ শুধু একখণ্ড ভূমির অধিকার পাবার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি দেয়ার পাশাপাশি এ সংগ্রাম অন্য জাতির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে আমাদের রক্ষা করে জাতি গঠন ও আত্মবিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঙালি জাতির প্রেরণা রূপে কাজ করে যাবে যুগ যুগ ধরে। এ চেতনা বাঙালি জনগোষ্ঠীকে একতাবদ্ধ করে জাতিকে নিয়ে যেতে পারে-চিরকাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের শীর্ষদেশে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণী ( ১৯৪৭ - ১৯৭১ )

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দুটি এলাকা নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করে। দেশবিভাগের সময় আসাম হতে সিলেট জেলাকে পূর্ববঙ্গের সাথে যুক্ত করা হয় এবং ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে আসামের সংযোগ সাধনের জন্য সিলেট জেলার করিমগঞ্জ মহকুমার বেশিরভাগ অংশ ভারতকে দেয়া হয়।

  • ১৯৪৭ : পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভ
    জুলাই : 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাক্ট' পাস। এর মাধ্যমে ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।
    আগস্ট ১৪: পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল
    মধ্যরাত্রে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল পদ গ্রহণ করেন। লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। পূর্ববাংলার প্রথম গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন যথাক্রমে এ.কে. ফজলুল হক ও খাজা নাজিমউদ্দীন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান ২৪ বছর একত্রে ছিল।
    আগস্ট ১৭: র‍্যাডক্লিফ রোয়েদাদ
    স্যার সাইরিল র‍্যাডক্লিফের নেতৃত্বে গঠিত সীমানা কমিশনের সুপারিশ 'র‍্যাডক্লিফ রোয়েদাদ' মোতাবেক ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়। ভারত -পাকিস্তান বিভক্তকারী সীমারেখার নাম র‌্যাডক্লিফ লাইন । এটির স্থপতি স্যার সিরিল র‍্যাডক্লিফের নামে নামকরণ করা হয়েছিল, যিনি দুটি প্রদেশের জন্য দুটি সীমানা কমিশনের যুগ্ম সভাপতি ছিলেন।
  • ১৯৪৮ : বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা - পক্ষে প্রস্তাব
    ফেব্রুয়ারি ২৩ : পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন ।
    মার্চ ১১ : উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়ায় দেশব্যাপী হরতাল পালিত হয় । মিছিল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ডাকসু নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হন । সেই থেকে এ দিনটি 'রাষ্ট্রভাষা দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
    মার্চ ২১: পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন।
    মার্চ ২৪: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মি. জিন্নাহ পুনরায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে উপস্থিত ছাত্ররা এর তীব্র প্রতিবাদ করে।।
  • ১৯৪৯ : আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন
    জুন ২৩ : নারায়ণগঞ্জে এক শ্রমিক সম্মেলনে 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্ব বাংলায় এটিই ছিল প্রথম মুসলিম লীগ বিরোধী দল। এর প্রতিষ্ঠাতা পরিষদ নিম্নরূপ ছিল:
    সভাপতি : মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী
    সহ-সভাপতি : আবুল মনসুর আহমেদ
                      আতাউর রহমান খান
                      আব্দুস সালাম খান
    সাধারণ সম্পাদক : শামসুল হক
    যুগ্ম সম্পাদক : শেখ মুজিবুর রহমান
                       রফিকুল আহসান
                       খন্দকার মোশতাক আহমেদ
    পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালের ২৪ অক্টোবর 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় 'আওয়ামী লীগ'। এর মাধ্যমে সংগঠনটিকে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ( ১৯৫৩-১৯৬৬ ) ।
  • ১৯৫০ : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা ও পূর্ববঙ্গে জমিদারী প্রথা বিলোপ
    পূর্ববঙ্গে জমিদারী উচ্ছেদ : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান আমলে ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চ আইনসভায় পূর্ববঙ্গ জমিদারি দখল ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন-উপস্থাপিত হয়। অনেক তর্কবিতর্কের পর ১৯৫০ সালের ডিসেম্বরের আইনসভায় গৃহীত জমিদারী দখল উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ করা হয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক জমিদারী প্রথা রদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর পূর্বে ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাসত্ব আইন পাস হলে জমিদারদের উৎপীড়ন থেকে প্রজাদের অধিকার বহুলাংশে সুরক্ষিত ও নিশ্চিত হয়।
  • ১৯৫৪ : প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভ
    মার্চ ১০ : পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করে এবং মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ২৩৭ আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত ৭২ আসনের মধ্যে ১৩টি আসন লাভ করে ।
    এপ্রিল ৩ : শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা গঠন ।
    মে ৩০ : প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা বরখাস্ত।
  • ১৯৫৬ : পাকিস্তানে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন
    মার্চ ২৩ : পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণীত। সংখ্যাসামোর ভিত্তিতে পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র রচিত হয়। এ শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তান 'ইসলামী প্রজাতন্ত্র' নাম ধারণ করে। এর ফলে দুই প্রদেশের নামকরণ হয় 'পূর্ব পাকিস্তান' এবং 'পশ্চিম পাকিস্তান। ইস্কান্দার মীর্জা পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।
    মার্চ ২৪ : শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর নিযুক্ত।
  • ১৯৫৭ : কাগমারী সম্মেলন ও ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ গঠন
    ফেব্রুয়ারি ৭ : কাগমারী সম্মেলন
    মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে টাঙ্গাইলের সন্তোষে কাগমারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী। এতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও বৈদেশিক নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সম্মেলনে মওলানা ভাসানী পাকিস্তানকে ’আসসালামু আলাইকুম' জানানোর চুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
    জুলাই ২৫ : ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ গঠন
    রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ২৫ জুলাই ঢাকার বারমহল সিনেমা হলে তাঁর সমমনাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এখানে পাকিস্তান ন্যাপ এবং পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপ গঠন করা হয়। মওলানা ভাসানী উভয়টির সভাপতি নির্বাচিত হন ।
  • ১৯৫৮ : পাকিস্তানে সামরিক শাসন
    অক্টোবর ৭ : ইস্কান্দার মীর্জা দেশে সামরিক আইন জারি করেন এবং আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক শাসক নিয়োগ করেন।
    অক্টোবর ২৭ : জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল
  • ১৯৬০ : সামরিক শাসন প্রত্যাহার
    মার্চ ২৩ : আইয়ুব খান সামরিক শাসন প্রত্যাহার করেন।
  • ১৯৬১ : মুসলিম পারিবারিক আইন জারি
    অক্টোবর ৭ : মুসলিম পারিবারিক আইন জারি মুসলিম নারী সমাজের কল্যাণার্থে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান "মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১" জারি করেন। জারিকৃত এই আইনে ১১টি ধারা রয়েছে। এ আইনে অরেজিস্ট্রিকৃত বিবাহসমূহ অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
  • ১৯৬২: মৌলিক গণতন্ত্র
    মার্চ ১ : মৌলিক গণতন্ত্র চালু। এ শাসনবিধানের লক্ষণীয় বিষয় ছিল শাসন ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্টের চিরস্থায়ীত্ব। সারা পাকিস্তানী এসময় ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী ভোটার ছিল যারা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতেন। এ সময়ে পাকিস্তানের রাজধানী করাচি থেকে ইসলামাবাদে স্থানান্তর করা হয়। এ শাসনতন্ত্রের দ্বারা মন্ত্রিপরিষদ, গভর্নর, প্রভৃতির ক্ষমতাকে সংকুচিত করা হয় এবং প্রকৃত ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়।
  • ১৯৬৪ : ভোটাধিকার
    মার্চ ২৯ : প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল পালিত।
  • ১৯৬৫ : প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
    জানুয়ারি ২৪ : মিস ফাতেমা জিন্নাহকে পরাজিত করে আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে, সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ভগ্নী ফাতেমা জিন্নাহ। তবে মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আইয়ুব খান।
    সেপ্টেম্বর ৬ : পাক-ভারত যুদ্ধ
    কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধ । ১৭ দিন স্থায়ী এ যুদ্ধ পরবর্তীতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘটে। ১০ জানুয়ারি ১৯৬৬ উজবেকিস্তানের তাসখন্দে সোভিয়েত মধ্যস্থতায় পাক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি তাসখন্দ শাস্তিচুক্তি নামে পরিচিত।
  • ১৯৬৬ : শেখ মুজিবের ছয় দফা উত্থাপন
    ফেব্রুয়ারি ৫ : লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দলের সভায় শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা উত্থাপন করেন।
    মার্চ ১৬ : ছয় দফাকে স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের নীল নকশা বলে অভিহিত করেন আইয়ুব খান। তিনি শেখ মুজিব ও তাঁর দলের বিরুদ্ধে অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগের হুমকি দেন।
    মার্চ ২৩ : আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা প্রকাশ।
  • ১৯৬৮: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের।
    জানুয়ারি ১৮ : এ দিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় নাম ছিল 'রাষ্ট্রদ্রোহিতা বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য' মামলার মোট আসামী ছিল ৩৫ জন।
    জুন ১৯ : এ দিন ঢাকা সেনানিবাসে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
  • ১৯৬৯ : গণঅভ্যুত্থান
    ফেব্রুয়ারি ২২ : গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ মুজিবের মুক্তিলাভ।
    ফেব্রুয়ারি ২৩ : শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি প্রদান।
    মার্চ ২৪ : আইয়ুব খানের পদত্যাগ। ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দ্বিতীয়বারের মত সামরিক শাসন প্রবর্তন করে সংবিধানসহ জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ বাতিল করেন।
  • ১৯৭০ : নির্বাচনের ঘোষণা
    মার্চ ২৮ : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান 'এক ব্যক্তি এক ভোট' নীতির ভিত্তিতে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।
    মার্চ ৩০ : নির্বাচনের ভিত্তি এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আইনগত কাঠামো-আদেশ জারি করেন।
    নভেম্বর ১২ : ঘূর্ণিঝড়
    প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে কয়েক লক্ষ লোকের মৃত্যু।
    নভেম্বর ৭ : জাতীয় পরিষদের নির্বাচন
  • ১৯৭১: প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন
    মার্চ ১ : জাতীয় পরিষদের ৩ মার্চের নির্ধারিত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা। এ ঘোষণার বিরুদ্ধে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান ফুঁসে ওঠে।
    মার্চ ২ : জাতীয় পতাকা উত্তোলন
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ঐ সমাবেশে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়।
    মার্চ ৩ : পল্টন ময়দানের বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
    মার্চ ৫ : গণপ্রতিরোধের মুখে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
    মার্চ ৬ : জাতীয় পরিষদ আহবানের ঘোষণা
    প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান ।
    মার্চ ১০ : লেঃ জেনারেল টিক্কা খান গভর্নর হিসেবে শপথ নিতে ব্যর্থ হন। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি তাকে শপথ পাঠ করানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন ।
    মার্চ ১১ : জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত জাতিসংঘের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে সদর দপ্তরে ফিরে যাবার নির্দেশ দেন ।
    মার্চ ১৬-২৩ : ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনা ব্যর্থ।
    মার্চ ১৭ : অপারেশন সার্চ লাইট চূড়ান্ত।
    গভর্নর টিক্কা খান জিওসি মেজর জেনারেল খাদেম হোসেন রাজাকে 'চূড়ান্ত ব্যবস্থা' গ্রহণের নির্দেশ দেন।
    মার্চ ২৫ : দিবাগত রাত্রে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণহত্যা।
    মার্চ ২৬ : রাত ১২ টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা । এর পর পরই তিনি গ্রেফতার হন।

ভাষা আন্দোলন

  • ১৯০১ সালে রংপুরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক শিক্ষা সম্মেলনে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী বাংলা ভাষাকে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকারের আহবান জানান। পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। পক্ষান্তরে সমগ্র পাকিস্তানে উর্দু ভাষাভাষীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩.২৭ ভাগ।
  • ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় জনাব তাসাদ্দুক হোসেন সভাপতিত্বে পূর্বপাকিস্তান যুবকর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের অফিস ও আইন আদালতের ভাষা এবং শিক্ষার বাহন হিসেবে বাংলাকে চালু করার দাবি জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
  • ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর 'তমদ্দুন মজলিশ' (Tamuddun Majlis) নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে চালু করার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসে 'তমদ্দুন মজলিশ'। তমদ্দুন মজলিশ ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু' প্রকাশ করে। এ পুস্তিকার লেখক ছিলেন তিনজন- অধ্যাপক আবুল কাসেম, ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন এবং আবুল মনসুর আহমদ।
  • ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার উদ্দেশ্যে ঢাকায় 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ' (State Language Movement Association) গঠিত হয়।
  • ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তান প্রথম গণপরিষদ অধিবেশনে ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু ভাষাতে অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হলে পূর্ব বাংলার গণপরিষদ সদস্য কুমিল্লার ধীরন্দ্রনাথ দত্ত এর প্রতিবাদ করেন এবং বাংলা ভাষাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষারূপে সরকারী স্বীকৃতির দাবি জানান। কিন্তু গণপরিষদ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করলে পূর্ব বাংলার ছাত্র শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী মহলে অসন্তোষ দেখা দেয়।
  • ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ কামরুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' (All Parties State Language Movement Association) গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ রাষ্ট্রভাষার ক্ষেত্রে সরকারের ষড়যন্ত্র রোধ করার জন্য ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ঐ দিন ঢাকায় বহুছাত্র আহত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকে গ্রেফতার হন। এজন্য ১৯৪৮-৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময়কালে প্রতি বছর ১১ মার্চ 'ভাষা দিবস' (Language day) হিসাবে পালন করা হত।
  • ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা দেন, 'উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' ২৪ মার্চ কার্জন হলে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করলে উপস্থিত ছাত্ররা 'না না' বলে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
  • ১৯৪৮ সালে করাচিতে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে ইসলামী আদর্শের খাতিরে বাংলা ভাষার জন্য 'আরবি হরফ' বা প্রকারন্তরে 'উর্দু হরফ' গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়।
  • ১৯৪৯ সালে পূর্ব বাংলা সরকার বাংলা ভাষ্য সংস্কারের নামে 'পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি' গঠন করে। মওলানা আকরাম খাঁ ছিলেন এ কমিটির সভাপতি।
  • ১৯৫০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঘোষণা করেন, 'উর্দুই পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে।'
  • ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় এক জনসভায় ঘোষণা করেন, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।'
  • পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ঐ দিনই অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহবায়ক করে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি ' (All Parties State Language ovement Committee) গঠন করা হয়।
  • সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি ' ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার 'রাষ্ট্রভাষা দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সারাদেশে হরতাল কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ছাত্র আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে নুরুল আমিন সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ২১ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সংগঠিতভাবে ৪৪ ধারা ভঙ্গ করে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' শ্লোগান দিতে দিতে বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে সমবেত হয়। পুলিশ উপস্থিত ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করলে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ এক পর্যায়ে গুলি বর্ষণ করলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে শহীদ হন।
  • পুলিশের গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিশাল শোভা যাত্রা বাহির হয়। এ শোভাযাত্রার উপরও পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। ফলে শফিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন।
ভাষা শহীদদের পরিচিতি
নাম পরিচিতি
১. আবদুস সালাম শুল্ক বিভাগের পিয়ন
২. আবুল বরকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
৩. রফিকউদ্দিন আহমেদ মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র, ঢাকার বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের পুত্র- ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ।
৪. আবদুল জব্বার ময়মনসিংহের দরিদ্র কৃষক সন্তান
৫. অহিউল্লাহ শিশু শ্রমিক (৮/৯ বছর বয়সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় শহীদ হন)
৬. আবদুল আউয়াল বালক (অনেকের মতে রিক্সাচালক)
৭. অজ্ঞাত বালক (অধিকাংশের মতে আখতারুজ্জামান বা আবদুর রহীম)
৮. শফিউর রহমান হাইকোর্টের কর্মচারী ('হৃদয়ে আমার ফেব্রুয়ারি' ডাকসু সংগ্রহশালার মতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ক্লাসের ছাত্র এবং হাইকোর্টের কর্মচারী ছিলেন)
  • ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন
  • ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন
  • ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের গভর্নর মালিক মোহাম্মদ ফিরোজ খান নুন
  • ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে (২১ (৪) এর অনুচ্ছেদ) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান করা হয়।
  • ভাষা শহীদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালে মুর্শিদাবাদ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ভাষার জন্য আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সকল ভাষা শহীদকে ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
  • ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র সাপ্তাহিক সৈনিক তমদ্দুন মজলিস থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত।
  • ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছিল ৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮।
  • একুশের প্রথম গান 'ভুলব না, ভুলব না' এর রচয়িতা ভাষা সৈনিক আ ন ম গাজীউল হক।
  • একুশের ১ম নাটক 'কবর' রচনা করেন মুনির চৌধুরী।
  • ২১শে ফেব্রুয়ারির উপর প্রথম কবিতা রচনা করেছিলেন চট্টগ্রামের মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী (কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি)।
  • বাংলাদেশের বাইরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ম্যানচেস্টার ওল্ডহ্যামের ওয়েস্টউড নেবারহুড নামক স্থানে। এটি উদ্বোধন করা হয় ১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর। আর বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বিদেশে নির্মিত প্রথম শহিদ মিনারটি অবস্থিত জাপানের রাজধানী টোকিও-এর ইকেবুকুরো নিশিগুচি পার্কে।
  • মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম শহীদ মিনার ওমান (দেশের বাইরে ৩য়)
  • ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।

শহীদ মিনার : প্রথম শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন (২২ ফেব্রুয়ারী) শহীদ শফিউর এর পিতা। প্রথম শহীদ মিনারের নকশা প্রনয়ন করেন সাইদ হায়দার। ১৯৫৭ সালে সরকারী ভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। শহীদ মিনারের স্থপতি হামিদুর রহমান। ১৯৬৩ সালে শহীদ বরকতের মা মিনারটি উদ্বোধন করেন।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গঠিত সংগ্রাম পরিষদ বা কমিটি
নাম গঠন আহবায়ক
রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১ অক্টোবর ১৯৪৭ এ এম এম নূরুল হক ভূইয়া
সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ (দ্বিতীয়বারের মতো) ২ মার্চ ১৯৪৮ শামসুল আলম
বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বা কমিটি ১১ মার্চ ১৯৫০ আব্দুল মতিন
সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় বাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বা কমিটি ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ কাজী গোলাম মাহবুব
ভাষা শহীদদের নামে গ্রাম
ভাষা শহীদ গ্রামের নাম উপজেলা , জেলা
আব্দুল জব্বার বর্তমান নাম : জব্বারনগর
পূর্ব নাম : পাচুয়া
গফরগাঁও , ময়মনসিংহ
রফিকউদ্দীন আহমদ বর্তমান নাম : রফিকনগর
পূর্ব নাম : পারিল
সিঙ্গাইর , মানিকগঞ্জ
আবদুস সালাম বর্তমান নাম : সালামনগর
পূর্ব নাম : লক্ষ্মণপুর
দাগনভূঁইয়া , ফেনী
  • একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম সাহিত্য সংকলনের সম্পাদক মোঃ সুলতান, পুঁথি পত্র প্রকাশনী, ১৯৫৩ সাল। ভাষা আন্দোলনের সংকলন সম্পাদনা করেছেন হাসান হাফিজুর রহমান।
  • একুশের ঘটনাবলী প্রথম প্রতিবাদ করেন রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের কর্মচারীবৃন্দ। প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন কবি সিকান্দার আবু জাফর , কবি ফররুখ আহমদ, আব্দুল আহাদ, আব্দুল লতিফ, ফয়ীদি সিদ্দিকী প্রমুখ।
  • একুশের বহুল পরিচিত গান 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী'র রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, প্রথম সুরকার আব্দুল লতিফ।
  • একুশের প্রথম নাটক কবর রচনা করেন মুনীর চৌধুরী। নাটকটি প্রথম অভিনয় অংশ নেন অজয় রায়, নলিনী দাস প্রমুখ। ১৯৫৩ সালের ১৭ মুনীর চৌধুরী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকাকালে নাটকটি রচনা করেন। নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
  • একুশের কাহিনী সম্বলিত প্রথম উপন্যাস 'আরেক ফাল্গুন' রচনা করেছেন জহির রায়হান।
  • ৫২' এর একুশে ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হওয়ার পর অব্যবহিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিন। ১৯৫৬ সালে ২৩ শে মার্চ সংবিধানের ২১৪ অনুচ্ছেদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়।
  • ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর ৩১ তম বৈঠকে। এটি ছিল ইউনেস্কোর ৩০ তম সাধারণ অধিবেশন। প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় ২০০০ সালে ১৮৮ টি দেশে। মাতৃভাষার জন্য আমাদের রক্তদানের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করে বাংলায় বয়ে আনে ব্যাপক আনন্দের জোয়ার।

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন

১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্ট : নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগকে চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর সমমনা কয়েকটি বিরোধীদল 'যুক্তফ্রন্ট' নামে একটি ঐক্যজোট গঠন করে। যুক্তফ্রন্ট মূলত ৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত। এগুলো হল-

  1. মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ
  2. এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক পার্টি
  3. হাজী দানেশের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী গণতন্ত্রী দল
  4. মওলানা আতাহার আলীর নেতৃত্বাধীন নেজাম-ই-ইসলামী

যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে ছিলেন এ.কে ফজলুল হক। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা এবং ২১ দফা কর্মসূচীর (21 Point Programme) ভিত্তিকে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। একুশ দফা কর্মসূচী প্রণয়ন করেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল মনসুর আহমেদ। একুশ দফা দাবীর প্রথম দাবী ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করা। ভাষা সম্পার্কত মোট দফা ছিল ৫টি (১, ১০, ১৬, ১৭, ১৮)। ১৯৫৪ সালের ১১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় যুক্তফ্রন্ট এবং নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (সোহরাওয়ার্দী)। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ৩০৯টি আসনের মধ্য ২৩৬টি আসনে জয়লাভ করে।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনী ফলাফল
মুসলিম ২৩৭ টি আসন অমুসলিম ৭২ টি আসন
দলের নাম প্রাপ্ত আসন দলের নাম প্রাপ্ত আসন
যুক্তফ্রন্ট ২২৩ তফসিলি ফেডারেশন ২৭
খিলাফতে রব্বানী যুক্তফ্রন্ট ১৩
মুসলিম লীগ বৌদ্ধ সম্প্রদায়
স্বতন্ত্র নির্দলীয়
কংগ্রেস ২৪
কমিউনিস্ট পার্টি

১৯৫৪ সালে ৪ এপ্রিল প্রাদেশিক নির্বাচনের পর যুক্তফ্রন্ট পূর্ব বাংলায় মন্ত্রিসভা গঠন করে। মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী হন এ.কে ফজলুল হক। উল্লেখ্য, শেখ মুজিবুর রহমান এই মন্ত্রিসভায় কৃষি, সমবায়, পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। শেখ মুজিব যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হন মাত্র ৩৪ বছর বয়সে। যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভা কার্যকর ছিল মাত্র ৫৬ দিন। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ৩০ মে ফজলুল মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রের শাসন জারি করেন (১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ৯২[ক] ধারা বলে)।

পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র ও কাগমারী সম্মেলন

পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র : পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র রচিত হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। কার্যকর হয় ২৩ মার্চ ১৯৫৬। তাই ২৩ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় দিবস। এ শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোকে একত্রিত করে একটি ইউনিট গঠনের ফলে এর নাম হয় 'পশ্চিম পাকিস্তান' এবং পূর্ব বাংলার নাম হয় 'পূর্ব পাকিস্তান'। পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন ইস্কান্দর মীর্জা।

  • গণপরিষদে 'পাকিস্তান শাসনতন্ত্র বিল' উত্থাপিত হয় - ১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি।
  • পাকিস্তান শাসনতন্ত্র বিল উত্থাপন করেন - আই আই চন্দ্রীগড়।
  • 'পাকিস্তান শাসনতন্ত্র বিল' গণপরিষদে পাস হয় - ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি।
  • পাকিস্তারে প্রথম শাসনতন্ত্রেও নাম - ইসলামী প্রজাতন্ত্র সংবিধান।
  • ইসলামী প্রজাতন্ত্র সংবিধান কার্যকর হয় - ২৩ মার্চ ১৯৫৬।
  • ইসলামী প্রজাতন্ত্র সংবিধান বাতিল হয় -৭ অক্টোবর ১৯৫৮।
  • শেখ মুজিব ব্যতীত জাতীয় পরিষদের সকল সদস্য (৩০৯ জন) এ সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।

কাগমারী সম্মেলন : ১৯৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সার্বিক তত্ত্ববধায়নে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যা 'কাগমারী সম্মেলন' নামে পরিচিত। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সম্মেলনের প্রধান এজেন্ডা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও বৈদেশিক নীতি। অনুষ্ঠানে মওলানা ভাসানী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, যদি পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ অব্যাহত থাকে তবে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানকে 'আসসালামুআলাইকুম' জানাতে বাধ্য হবেন। মাওলানা ভাসানীর জন্মস্থান সিরাজগঞ্জে।

সামরিক শাসন জারি : ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর এক ঘোষণাবলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা পাকিস্তানে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন। তিনি প্রধান সেনাপতি জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক শাসনকর্তা নিয়োগ করেন । মাত্র ২০ দিনের মাথায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন এবং দেশত্যাগে বাধ্য করেন। ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান নিজেকে পাকিস্তানের স্বনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি পাকিস্তানের প্রধান সেনাপতি ও সামরিক শাসকের পদেও বহাল থাকেন । 'মৌলিক গণতন্ত্র ' নামে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করেন আইয়ুব খান। তিনি ১৯৬০ সালে মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থাভোটে পাকিস্থানের ১ম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬০ সালের ২৩ মার্চ সামরিক শাসন প্রত্যাহার করেন।

পাকিস্তানের দ্বিতীয় শাসনতন্ত্র : প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের শাসনামলে ১৯৬২ সালে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সংবিধান প্রণীত হয়। এ সংবিধানে পাকিস্তানকে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় পাকিস্তানের রাজধানী করাচি থেকে ইসলামাবাদে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের ১৩ সদস্য এই সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি।

হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন : ছাত্ররা ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গণতান্ত্রিক শিক্ষার দাবিতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং স্বৈরাচার আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী হরতাল পালন করে। এটাই ছিল স্বৈরাচার আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রথম গণঅভ্যুত্থান।

১৯৬৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন : প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেন এবং নিজে কনভেনশন মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। এমতাবস্থায় অধিকাংশ বিরোধী দল মিলিত হয়ে 'কর্ণ' (COP Combined Opposition Party) নামে একটি সম্মিলিত জোট গঠন করে। এ জোটের প্রার্থী ছিলেন মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ভগ্নী ফাতেমা জিন্নাহ। এ নির্বাচনে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রী পন্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ : ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয় পাক-ভারত যুদ্ধ। ১৭ দিন ব্যাপী এ যুদ্ধে বাঙালী সৈন্যরা অসম্ভব সাহসিকতা দেখায়। অতঃপর জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে উভয়পক্ষের যুদ্ধ বিরতি হয়।

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক পূর্ব বাংলার গভর্নর : ১৯৫৬ সালের ২৪ মার্চ শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক পূর্ব বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন (অপসারিত হন ৪ এপ্রিল ১৯৫৮)। এছাড়াও তিনি অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণাবলি ও প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে 'ডক্টর অব ল' ডিগ্রি প্রদান করেন।

ছয়-দফা আন্দোলন, ১৯৬৬

বঙ্গবন্ধু ৬ দফা কর্মসূচিকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ৬ দফা দিবস ৭ জুন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পূর্ববাংলার নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বাংলার জনগণকে কিছুটা অবাক করে। ফলে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এর জন্য বাঙ্গালী ঐক্যবদ্ধ হয়। মূলত ১৯৪৭ সালের পরবর্তী সময়কালে পূর্ববাংলার প্রতি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চিমাঞ্চলের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে যে জনমত সৃষ্টি হয় তারই বহিঃপ্রকাশ সে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা প্রণয়ন করেন।

১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষার দাবি সংবলিত একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ইতিহাসে এটি ৬ দফা কর্মসূচী নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ২৩ মার্চ, ১৯৬৬ লাহোরের এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ দফা ঘোষণা করেন। ১৮ মার্চ '৬৬ ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বার্ষিক সম্মেলনে ৬ দফা অনুমোদিত হয়। ছয় দফা কর্মসূচী ঐতিহাসিক 'লাহোর প্রস্তাব' (১৯৪০) এর ভিত্তিতে রচিত। ছয় দফা দাবির প্রথম দাবি ছিল পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন। ছয় দফা কর্মসূচী বাঙালি জাতির 'মুক্তির সনদ' (Charter of Freedom) / 'ম্যাগনাকার্টা' হিসাবে পরিচিত। এর প্রথম দফা ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। ছয় দফার ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম দফা অর্থনীতি বিষয়ক ছিলো। দফাগুলো নিম্নরূপ:

  1. পাকিস্তানের সংবিধান হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং সরকার ব্যবস্থা হবে সংসদীয় যাতে আইন সভার বিষয়সমূহ প্রদেশগুলোর হাতে ন্যস্ত থাকে।
  2. যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে কেবল দুটি বিষয় থাকবে। দেশরক্ষা এবং পররাষ্ট্র। অবশিষ্ট বিষয়গুলো প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে।
  3. দেশের দুই অংশের দুটি পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা প্রচলিত থাকবে অথবা উভয় অংশে রিজার্ভ ব্যাংকসহ একটি মুদ্রা থাকবে।
  4. কর ও শুষ্ক ধার্য করবার দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যগুলারে উপর ন্যস্ত থাকবে।
  5. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বহির্বাণিজ্যের জন্য পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
  6. প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের অধীনে আঞ্চলিক সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী থাকবে।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা ভারতের সহায়তায় সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে ভারতের আগরতলায় ষড়যন্ত্র করেছে, এমন অভিযোগ এনে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী মামলা দায়ের করে। আইয়ুব খানের শাসনামলের এ মামলা 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' নামে পরিচিত। এ মামলার শিরোনাম ছিল 'রাষ্ট্রদ্রোহিতা বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য'। ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকায় এই মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলার মোট আসামী ছিলেন ৩৫ জন এবং প্রধান আসামী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমির হোসেন এ মামলার খবর ফাঁস করে দেন। এ মামলার বিচারকার্যের জন্য তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এস.এ. রহমানের নেতৃত্বে ঢাকায় একটি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে এ মামলার বিচারকার্য শুরু হয় (বেলা ১১টায়)।

১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি আসাদুজ্জামান নামের এক ছাত্রনেতা, ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে হত্যার প্রতিবাদে মামলার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণ-আন্দোলন দেখা দেয়। নিজের দুর্বল অবস্থান অনুমান করতে পেরে আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দান করেন। কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তৎকালীন রেসকোর্সের ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) এক বিশাল গণসংবর্ধনা এবং ঐ দিনই ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ তাঁকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেন।

  • আগরতলা - ত্রিপুরার রাজধানী
  • শহীদ আসাদ - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র (বাড়ি নরসিংদী)
  • শহীদ আসাদ দিবস - ২০ জানুয়ারি
  • বর্তমান আসাদ গেটের পূর্বনাম - আইয়ুব গেট।
  • শহীদ আসাদকে নিয়ে কবিতা - আসাদের শার্ট (শামসুর রাহমান)
  • ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ১ম শহীদ বুদ্ধিজীবী - ড. শামসুজ্জোহা
  • ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস - চিলেকোঠার সেপাই।

গণঅভ্যূত্থান ১৯৬৮-৬৯

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের দুটি গ্রুপ এবং জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ নিয়ে ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি একটি সর্বদলীয় 'ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' (Student Action Committee-SAC) গঠিত হয়। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এ সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফা কর্মসূচী (11 Point Programme) ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগের ৬ দফা কর্মসূচিও এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৯৬৯ সালের ৮ জানুয়ারি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ ঢাকায় মিলিত হয়ে ৮ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে 'গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ' (Democratic Action Committee) গঠন করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা এবং ৬ দফার ভিত্তিতে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হলে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড গণ-অভ্যুত্থান হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা এই আন্দোলনে শহীদ হন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন

'৬৯ গণঅভ্যুত্থানের ফলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আগা মুহম্মদ ইয়াহিয়া খানের নিকট ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতি থেকে সরে দাড়ান। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ রাতে সারা দেশে দ্বিতীয় বারের মত 'মার্শাল ল' জারি করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণের পর জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন। পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদ নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার।

একনজরে ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের নির্বাচনের ফলাফল
জাতীয় পরিষদ
নির্বাচিত আসন সংরক্ষিত আসন মোট আসন
জাতীয় পরিষদ ৩০০ ১৩ ৩১৩
পূর্ব পাকিস্তান ১৬২ ১৬৯
পশ্চিম পাকিস্তান ১৩৮ ১৪৪
আওয়ামী লীগের অবস্থান ১৬০ ১৬৭
পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ
নির্বাচিত আসন সংরক্ষিত আসন মোট আসন
প্রাদেশিক পরিষদ ৩০০ ১০ ৩১০
আওয়ামী লীগের অবস্থান ২৮৮ ১০ ২৯৮

বি: দ্র: জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানে কোন আসন লাভ করেনি ।

'স্বাধীনতার ইশতাহার' ঘোষণা

একাত্তরের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ এবং ডাকসুর সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আ.স.ম আব্দুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন এ চার নেতা মিলে এক বৈঠকে 'স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করেন। একাত্তরের ৩ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আহূত পল্টন সমাবেশে 'স্বাধীনতার ইশতাহার' পাঠ করা হয়। এতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে 'জাতির পিতা' ঘোষণা করা হয়।

সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকসু ভিপি আ. স. ম. আব্দুর রব ১৯৭১ সালের ২ মার্চ সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার ঘোষণা করা হয় ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ। সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো আন্দোলন। এদিন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে আয়োজিত জনসভায় স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।

ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। ইশতেহারে বলা হয়, ৫৪ হাজার ৫০৬ বর্গমাইল বিস্তৃত ভৌগোলিক এলাকার ৭ কোটি মানুষের আবাসিক ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এ রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালাবোসি' সংগীতটি। পাকিস্তানি পতাকার বদলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার ও উত্তোলনের নির্দেশনা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। 'জয় বাংলা' নির্ধারিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে।

একাত্তরের ৩ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আহত জনসভায় শেখ মুজিব জনগণকে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর দলমত নির্বিশেষে ৮ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। রেসকোর্সের বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। তিনি আরও বলেন, 'রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিব, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।'

বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চ ভাষণের বিষয়বস্তু ছিল চারটি। যথা-
ক) চলমান সামরিক আইন প্রত্যাহার
খ) সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া
গ) গণহত্যার তদন্ত করা
ঘ) নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

  • এর ভিডিওচিত্র ধারণ করেন আবুল খায়ের।
  • ভাষণটি ১৮ মিনিটের ছিলো (বিকাল ২.৪৫ থেকে ৩.০৩ মি.)
  • বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে UNESCO'র বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে (৩০ অক্টোবর ২০১৭)। UNESCO' ও মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে।

পাকিস্তানী শাসকদের কতিপয় দম্ভোক্তি : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, "এদেশের মানুষ চাইনা, মাটি চাই। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনারেল ইয়াহিয়া খান দম্ভোক্তি করে বলেছিল, "লোকটি এবং তার দল পাকিস্তানের শত্রু, এবার তারা শাস্তি এড়াতে পারবে না।"

শেখ মুজিবের জাতীয় পতাকা উত্তোলন : ২৩ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানের জাতীয় দিবস বাংলাদেশে কালো দিবস (প্রতিরোধ দিবস) হিসেবে পালন করা হয়। এদিন শেখ মুজিবুর রহমান ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে তার বাসভবনে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়

২৫ মার্চের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা : ১৯ মার্চ, ১৯৭১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশ্রস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে গণহত্যামূলক অভিযান চালিয়েছিল তার নাম দিয়েছিল 'অপারেশন সার্চ লাইট'। এর মূল পরিকল্পনায় ছিলেন ইয়াহিয়া খান এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। প্রথম আক্রমণের শিকার হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইন, বিডিআর পিলখানা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ মেজর আবদুল গণি এ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন।)

স্বাধীনতার ঘোষণা : বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য যুদ্ধ প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। পৃথিবী দুটি দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির ৩২ নং বাসা হতে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন দিনের বেলা যে কোন জরুরী ঘোষণা প্রচারের উপলক্ষে তিনি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রকৌশলী নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনে একটি ট্রান্সমিটার স্থাপন করেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে উল্লেখ আছে। বন্দি হবার পূর্বে মধ্যরাতে (২৫ মার্চ দিবাগত রাত) অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এ ঘোষণা EPR (East Pakistan Rifles) এর ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামে প্রেরণ করেন। পরের দিন বিবিসির প্রভাতী অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি প্রচারিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা হিসাবে ধরে নিয়ে ১৯৮০ সালে ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস বা জাতীয় দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ২৬ মার্চ, ১৯৭১ দুপুরে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি প্রচার করেন। ২৭ মার্চ, ১৯৭১ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে মেজর জিয়াউর রহমান প্রথমে নিজ নামে এবং পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। অধ্যাপক ইউসুফ আলী ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ মেহেরপুরের মুজিবনগরে (বৈদ্যনাথতলা) স্বাধীনতার ঘোষণা (পত্র) পাঠ করেন। একই দিনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী এবং এম মনসুর আলী অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প ও যোগাযোগ মন্ত্রী হিসবে শপথ গ্রহণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য : ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পর ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করে। একাত্তরের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে, তখন তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে যোগদানের জন্য জেনেভায় ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে পদত্যাগ করেন।

  • ১৯৮০ সালের ৩ অক্টোবর ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
  • স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ - ২৬ মার্চ ১৯৭১
  • স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ ১৭ এপ্রিল ১৯৭১

স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে দেশের সকল রেডিও স্টেশন পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। চট্টগ্রামের কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতার উদ্যোগে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র হতে যন্ত্রপাতি স্থানান্তরিত করে চট্টগ্রামে কালুরঘাট প্রেরণ কেন্দ্রটিকে বেতার কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হয় এবং নাম দেওয়া হয় 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র'। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ মেজর জিয়ার অনুরোধে 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র' হতে বিপ্লবী অংশটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র'। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ হানাদার বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণের ফলে বেতার কেন্দ্রটি নীরব হয়ে যায়। একই বছর ২৫ মে কলকাতার বালিগঞ্জে বেতারকেন্দ্রটি দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্প্রচার শুরু করে।

স্বাধীন বাংলা বেতারের অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি অনুষ্ঠান ছিল 'চরমপত্র' ও 'জল্লাদের দরবার'। জল্লাদের দরবার-এ জেনারেল ইয়াহিয়া খানের অমানবিক চরিত্র ও পাশবিক আচরণকে 'কেল্লা ফতেহ খান' চরিত্রের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে। চরমপত্র সিরিজটির পরিকল্পনা করেন জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল মান্নান এবং স্থানীয় ঢাকাইয়া ভাষায় এর স্ক্রিপ্ট লেখা ও তার উপস্থাপক ছিলেন এম আর আকতার মুকুল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রণাঙ্গন পরিদর্শন শেষে এম, আর আখতার মুকুল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বরচিত অনুষ্ঠান "চরমপত্র" স্বকণ্ঠে পাঠ করতেন, যা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস। এ কারণে তিনি 'চরমপত্র' খ্যাত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন। উল্লেখ্য, চরমপত্র ছাড়া স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান-রণাঙ্গন কথিকা, জল্লাদের দরবার, বজ্রকন্ঠ, পিণ্ডির প্রলাপ, রক্ত স্বাক্ষর, মুক্তিবাহিনীর জন্য প্রচারিত অনুষ্ঠান অগ্নিশিক্ষা, দেশাত্মবাধেক গান ইত্যাদি।

মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলি

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর থেকে জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার/ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে। এই সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে। এ সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তাঁরই নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ করা হয় মুজিবনগর এবং অস্থায়ী সরকারও পরিচিত হয় 'মুজিবনগর সরকার' নামে। এ সরকার 'প্রবাসী সরকার' ও 'অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার' নামেও পরিচিত। এ দিন ১০ এপ্রিল জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। মন্ত্রিদের দপ্তর বন্টন করা হয় ১৮ এপ্রিল। এ সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়। এটি কার্যকর হয় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে। মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ৬ জন।

এক নজরে মুজিবনগর সরকার
নাম পদবী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি ( অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি )
তাজউদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী
এ. এইচ. এম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী
এম মনসুর আলী অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী
খন্দকার মোস্তাক আহমদ পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
নাম পদবী
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী প্রধান সেনাপতি
লে. কর্নেল আব্দুর রব সেনাপ্রধান
গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার উপসেনাপ্রধান ও বিমান বাহিনীর প্রধান
  • মুজিবনগর সরকারের অর্থনীতি বিষয়ক ও পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা, তথ্য প্রচার এবং টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রাম এবং সমাজকল্যাণ সংস্থাপন এবং প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।
  • মুজিবনগর সরকারের মুখ্য সচিব ছিলেন - রুহুল কুদ্দুস।
  • মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী সচিবালয় প্রথমে মুজিবনগর (অল্প সময়ের জন্য); পরবর্তীতে ৮ নং থিয়েটার রোড, কলকাতা, ভারত ।
  • এই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশ পরিচালিত হয়।
  • স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধান সংযোজন হয় পঞ্চদশ সংশোধনীতে।
  • ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকার নাম ছিল - জয় বাংলা।

বাংলাদেশ বাহিনী : কলকাতার ৮ নং থিয়েটার রোডে বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপিত হয়। ১২ এপ্রিল থেকে এই সদর দপ্তর কার্যক্রম শুরু করে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম. এ. রব এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে খন্দকারকে যথাক্রমে চীফ অব স্টাফ এবং ডেপুটি চীফ অব স্টাফ নিয়োগ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যের সরকারগুলো সীমান্ত বরাবর শরণার্থী শিবির স্থাপন করে। এ শিবিরগুলো থেকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই করা হতো। পাকিস্তানি সৈন্যদের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার অদম্য বাসনায় ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে যুদ্ধের কৌশল, অস্ত্র চালনা ও বিস্ফোরক সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিভিন্ন সেক্টরে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত করা হয়।

সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি : বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফ্ফর), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) ও কংগ্রেস বিপ্লবী সরকারের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন জানায়। এ চারটি দলের প্রধান যথাক্রমে কমরেড মনি সিং, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শ্রী মনোরঞ্জন ধর এবং ৫ জন আওয়ামী লীগ সদস্য নিয়ে ৯ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। এ উপদেষ্টা কমিটির প্রধান ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

  • বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
  • বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ
  • বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট বা উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম
  • বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী
  • স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রী পরিষদ সচিব: এইচ টি ইমাম
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার ছিলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী।

মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল

তেলিয়াপাড়া রণকৌশল: ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সিলেটের তেলিয়াপাড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর উচ্চপদস্থ বাঙ্গালী সদস্যরা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এক সম্মিলিত আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।

মুক্তিবাহিনী সরকারী পর্যায়ে দুইভাগে বিভক্ত ছিল যথাঃ নিয়মিত বাহিনী এবং অনিয়মিত বাহিনী

নিয়মিত বাহিনী / Regular Forces

ক) সেক্টর ট্রুপস (Sector Troops) : প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল এম এ জি ওসমানী সুষ্ঠভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র যুদ্ধ ক্ষেত্রকে ১১ টি সেক্টরে এবং ৬৪টি সাবসেক্টরে ভাগ করেন। প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্ব একজন সেক্টর কমান্ডারের উপর ন্যস্ত করা হয়।

খ) ব্রিগেড ফোর্স (Brigade Forces): ১১ টি সেক্টর ও অনেকগুলো সাব সেক্টর ছাড়াও রণাঙ্গনকে তিনটি ব্রিগেড ফোর্সে বিভক্ত করা হয়। ফোর্সের নামকরণ করা হয় অধিনায়কদের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে।

  • অধিনায়ক : মেজর জিয়াউর রহমান
    ফোর্সের নাম: জেড ফোর্স (৭ জুলাই ১৯৭১)
    সদর দপ্তর: তেলডালা
  • অধিনায়ক:মেজর কে এম শফিউল্লাহ
    ফোর্সের নাম: এস ফোর্স (অক্টোবর ১৯৭১)
    সদর দপ্তর: আগরতলা
  • অধিনায়ক: মেজর খালেদ মোশাররফ
    ফোর্সের নাম: কে ফোর্স (সেপ্টেম্বর ১৯৭১)
    সদর দপ্তর: হেজামারা

অনিয়মিত বাহিনী/ Irregular Forces

এ বাহিনীতে ছিল ছাত্র ও যুবকেরা। গোরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার জন্য এদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এদেরকে বলা হত ফ্রিডম ফাইটার্স (এফ. এফ) সরকারী নাম ছিল অনিয়মিত বাহিনী বা গণবাহিনী।

আঞ্চলিক বাহিনী

কাদেরিয়া বাহিনী (টাঙ্গাইল), হেমায়েত বাহিনী (গোপালগঞ্জ, বরিশাল), আকবর বাহিনী (মাগুরা) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঢাকার গেরিলা দল যা 'ক্র্যাক প্লাটুন' নামে পরিচিত। এরা 'হিট এন্ড রান' পদ্ধতিতে অসংখ্য আক্রমণ পরিচালনা করে।

মুজিব বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত একটি মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী। আওয়ামী লীগ ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে এই বাহিনী গঠন করা হয়। প্রায় ৫ হাজার সদস্যের এ বাহিনীকে ৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং এর নেতৃত্বে ছিল ১৯ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমান্ড।

মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর
সেক্টর সেক্টর কমান্ডার ও সেক্টর এলাকা
• মেজর জিয়াউর রহমান (এপ্রিল-জুন)
• মেজর রফিকুল ইসলাম (জুন- ডিসেম্বর)
• [ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং নোয়াখালী জেলার মুহুরী নদী পূর্বপাড় পর্যন্ত। ]
• মেজর কে এম খালেদ মোশাররফ (এপ্রিল- সেপ্টেম্বর)
• মেজর এটিএম হায়দার (সেপ্টেম্বর ডিসেম্বর)
• [ কুমিল্লা, আখাউড়া-ভৈরব এবং ঢাকা শহর, ফরিদপুর ও নোয়াখালী জেলার অংশ বিশেষ। ]
• মেজর কে এম শফিউল্লাহ (এপ্রিল- সেপ্টেম্বর)
• মেজর এ এন এম নুরুজ্জামান (সেপ্টেম্বর ডিসেম্বর)
• [ হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশ বিশেষ। ]
• মেজর সি আর (চিত্ত রঞ্জন) দত্ত
• ক্যাপ্টেন এ রব
• সিলেট জেলার অংশবিশেষ
• মেজর মীর শওকত আলী
• [সিলেট জেলার অংশবিশেষ এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী অঞ্চল ]
• উইং কমান্ডার এম কে বাশার
• [ রংপুর ও দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহাকুমা । ]
• মেজর নাজমূল হক, সুবাদার মেজর এ রব, মেজর কাজী নুরুজ্জামান।
• [ রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া জেলা এবং ঠাকুরগাঁও ছাড়া দিনাজপুরের অবশিষ্ট অংশ। ]
মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (আগস্ট পর্যন্ত)
মেজর এম. এ. মঞ্জুর (আগস্ট-ডিসেম্বর)
[ কুষ্টিয়া (মুজিবনগর) ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অংশবিশেষ এবং দৌতলদিয়া-সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলার এলাকা । ]
• মেজর আবদুল জলিল (এপ্রিল- ডিসেম্বর পর্যন্ত)
• মেজর এম. এ. মঞ্জুর (অতিরিক্ত দায়িত্ব)
• মেজর জয়নাল আবেদীন
• [দৌতলদিয়া-সাতক্ষীরা সড়কসহ খুলনা জেলার সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল এবং বৃহত্তর বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা]
১০ মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিংপ্রাপ্ত নৌ কমান্ডারগণ যখন যে সেক্টরে কাজ করেছেন, তখন সেসব সেক্টর কমান্ডারগণের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেছেন। নৌবাহিনীর ৮ জন বাঙালি কর্মকর্তা সেক্টর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন ছিলেন এই ১০নং সেক্টরের একজন কর্মকর্তা।
[এ সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ কমান্ডোরা, সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ]
১১ • মেজর এম আবু তাহের (এপ্রিল- নভেম্বর)
• ফ্লাইট লেঃ এম হামিদুল্লাহ (নভেম্বর-ডিসেম্বর)
• [কিশোরগঞ্জ ব্যতীত ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা]

অপারেশন জ্যাকপট : ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্টে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বাংলাদেশে নৌপথের সৈন্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের দেয় এবং চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, মংলা ও নোয়াখালী অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান নৌবাহিনীর কার্গো জাহাজ এমভি ওহরমাজদ ও এমভি আল আবাসসহ সাতটি জাহাজ ধ্বংস করা হয়। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে অনুরূপ কয়েকটি অপারেশন চালিয়ে তাদের সমুদ্রগামী ও উপকূলীয় জাহাজ বন্দরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল মুক্তিফৌজ গঠন করা হয়। ৯ এপ্রিল ১৯৭১ এর নামকরণ করা হয় মুক্তিবাহিনী। পরবর্তীতে জেনারেল এমএজি ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি করা হলে তিনি যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করেন।

মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনী : ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ঐতিহাসিক সেক্টর কমান্ডারদের কনফারেন্সের ঘোষণা মোতাবেক বাংলাদেশ নৌবাহিনী আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী যাত্রা শুরু করে ভারত থেকে উপহার পাওয়া পদ্ম' ও 'পলাশ' নামে দুটি ছোট টহল গানবোর্ট এবং বাঙালি অফিসার ও নাবিকদের নিয়ে। নৌপথে 'অপারেশন জ্যাকপট' নামে পরিচালিত অভিযানে শুধু একদিনে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০টি এবং মংলা বন্দরে ৫০ টি জাহাজ ধ্বংস করেন মুক্তিযাদ্ধো নৌ-কমান্ডোগণ।

মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনী : ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি ভারত সরকার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে একটি স্বাধীন বিমানবাহিনী গঠনের জন্য আমেরিকার তৈরি ১টি পুরানো ডিসি-৩ বিমান, কানাডার তৈরি অটার বিমান এবং ফ্রান্সের তৈরি ১টি অ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার উপহার দেয়। এর সাথে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে একটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিত্যক্ত রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। সীমিত সম্পদ নিয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। সশস্ত্র বাহিনী গঠনে গোপনীয়তা রক্ষার্থে এর গোপন নাম হয় 'কিলো ফ্লাইট'।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানসূচক খেতাব

বাংলাদেশের বীরত্বসূচক উপাধি (মর্যাদার ক্রমানুসারে):

  1. বীরশ্রেষ্ঠ
  2. বীরউত্তম
  3. বীরবিক্রম
  4. বীরপ্রতীক
বীরত্বসূচক খেতাবপ্রাপ্ত সর্বমোট মুক্তিযোদ্ধা (৬৭৬ জন)
পদক ১৯৭৩ গেজেট পরবর্তীতে দেয়া হয় ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ বাতিল করার ঘোষণা
বীরশ্রেষ্ঠ
( ৭ জন )
৭ জন
সেনাবাহিনী-৩
ই.পি.আর-২
নৌ বাহিনী-১
বিমান বাহিনী- ১
বীরউত্তম
( ৬৮ জন )
৬৮ জন
সেনাবাহিনী - ৪২
নৌবাহিনী - ৮
বিমান বাহিনী - ৬
বিডিআর - ৭ জন
সিভিল - ৫
১ জন
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল উদ্দীন আহমেদ। বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের আগস্টে বাঁচানোর চেষ্টার জন্য তাঁকে ২০১০ সালে মরণোত্তর বীরউত্তম পদক প্রদান করা হয়।
১ জন (শরিফুল হক ডালিম)
বীরবিক্রম
( ১৭৭ জন )
১৭৫ জন ৩ জন
-মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী
-ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোজাফফর আহমেদ
-আবদুল খালেক (৬জুন, ২০২০)
১ জন (নূর চৌধুরী)
বীরপ্রতীক
( ৪২৪ জন )
৪২৬ জন ২ জন (মেজর রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন)
  • মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র আদিবাসী বীরবিক্রম : ইউকে চিং মারমা (ইপিআর সদস্য হিসেবে ৬নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন)
  • মুক্তিযুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মহিলা (২ জন) :
    ক্যাপ্টেন ডা, সেতারা বেগম (২নং সেক্টর)
    তারামন বিবি (১১ নং সেক্টর) দীর্ঘ ২৪ বছর পর ডিসেম্বর ১৯৯৫-এ চিহ্নিত করা হয়। ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫ খেতাব প্রদান করা হয়।
  • খেতাবহীন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা : সুনামগঞ্জের খাসিয়া সম্প্রদায়ের কাঁকন বিবি 'মুক্তিবেটি' নামে পরিচিত। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা আদিবাসী নারী কাঁকন বিবিকে (কাকত হেনইঞ্চিতা। রাষ্ট্রীয়ভাবে বীর প্রতীক উপাধি স্বীকৃতি দিলেও তা রাষ্ট্রীয় গেজেটে প্রকাশিত হয়নি ।
  • সর্বকনিষ্ঠ খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা : শহীদুল ইসলাম (বীরপ্রতীক) । তিনি ১১ নং সেক্টরে লড়াই করেছেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর।
  • মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বিদেশী নাগরিক : ডব্লিউ এস ওডারল্যান্ড (বীরপ্রতীক) ।
    ১৯১৭ সালের নেদারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ছিল তাঁর পিতৃভূমি। অপারেশন সার্চলাইটের সময় তিনি লুকিয়ে সে রাতের ভয়াবহতার কিছু ছবি তুলে পাঠিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এছাড়া আগস্ট মাসের দিকে তিনি টঙ্গীতে বাটা কোম্পানীর ভিতরে গেরিলা ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেন। ২০০১ সাল তিনি মারা যান। মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর ছিলো ১ এবং ২ নং।
  • মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী নাগরিক শহীদ হন : মাদার মারিও ভেরেনজি । ইতালির নাগরিক তিনি ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল মারা যান।
  • মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা - (মর্যাদার ক্রমানুসারে)
    ১) বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা (১জন)
    ২) বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা (১৫ জন)
    ৩) মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (৩১১ জন ও ১১টি সংগঠন)
    'বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা ' দেওয়া হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ।
সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ পরিচিতি
নাম পরিচিতি
ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ জন্মঃ ১৯৪৩ সালে ফরিদপুর জেলায়।
কর্মস্থলঃ ই.পি. আর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)
পদবীঃ ল্যান্স নায়েক
যে সেক্টরে যুদ্ধ করেনঃ ১নং।
মৃত্যুঃ ৭ এপ্রিল, ১৯৭১। [সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া ]
৮ এপ্রিল, ১৯৭১। [সূত্রঃ বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান ]
২০ এপ্রিল, ১৯৭১। [সূত্রঃ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ]
বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন।
সমাধি স্থলঃ রাঙামাটি জেলার নানিয়ার চরে
সিপাহী মোস্তফা কামাল জন্মঃ ভোলা জেলায়-১৯৪৯ সালে [ সূত্রঃ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ]
১৯৪৭ সালে [ সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া ]
কর্মস্থলঃ সেনাবাহিনী
পদবীঃ সিপাহী।
যে সেক্টরে যুদ্ধ করেনঃ ২ নং।
মৃত্যুঃ ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১। [সূত্রঃ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ]
১৭ এপ্রিল, ১৯৭১। [সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া ]
সমাধি স্থলঃ ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আখাউড়ার মোগড়া গ্রামে।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান জন্মঃ ১৯৪১ সালে ঢাকা জেলায়।
কর্মস্থলঃ বিমানবাহিনী।
পদবীঃ লেফটেন্যান্ট।
• মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান (ছদ্ম নাম 'ব্লু-বার্ড') ছিনতাই করে নিয়ে দেশে ফেরার পথে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।
মৃত্যুঃ ২০ আগস্ট, ১৯৭১ সালে।
সমাধি স্থলঃ পাকিস্তানের করাচির মৌরিপুর মাশরুর ঘাটিতে ছিল তাঁর সমাধিস্থল। ২০০৬ সালের ২৪ জুন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫ জুন মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয় ।
ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ জন্মঃ ১৯৩৬ সালে নড়াইল জেলায়।
কর্মস্থলঃ ই.পি.আর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)
পদবীঃ ল্যান্সনায়েক।
যে সেক্টরে যুদ্ধ করেনঃ ৮নং।
মৃত্যুঃ ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে।
সমাধি স্থলঃ যশোরের শর্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে।
সিপাহী হামিদুর রহমান জন্মঃ ১৯৫৩ সালে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুরে
কর্মস্থলঃ সেনাবাহিনী
পদবীঃ সিপাহী
যে সেক্টরে যুদ্ধ করেনঃ ৪নং
মৃত্যুঃ ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১ সালে। তিনি ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ
সমাধি স্থলঃ প্রথমে সমাধি ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলস এর একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে। ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন জন্মঃ ১৯৩৫ সালে ফেনী জেলায়।
কর্মস্থলঃ নৌবাহিনী
পদবীঃ স্কোয়াড্রন ইঞ্জিনিয়ার।
যে সেক্টরে যুদ্ধ করেনঃ ২ নং এবং ১০ নং।
মৃত্যুঃ ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে। (সূত্রঃ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ]
৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে। (সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া ]
সমাধি স্থলঃ খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর তীরে।
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জন্মঃ বরিশাল জেলায়- ১৯৪৯ সালে [ সুত্রঃ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ]
১৯৪৮ সালে (সূত্রঃ বাংলাপিডিয়া ]
কর্মস্থলঃ সেনাবাহিনী।
পদবীঃ ক্যাপ্টেন।
যে সেক্টরে যুদ্ধ করেনঃ ৭নং।
মৃত্যুঃ ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১। বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে সবশেষে শহীদ হন।
সমাধি স্থলঃ চাঁপাই নবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ প্রাঙ্গনে।

২০০৭ সালে বীরশ্রেষ্ঠদের স্মরণে তাঁদের গ্রামের নামকরণ বীরশ্রেষ্ঠদের নামে করা হয়:

বীরশ্রেষ্ঠদের গ্রামের বর্তমান নাম
পূর্ব নাম বর্তমান নাম
১. রামনগর (রায়পুরা, নরসিংদী) মতিউর নগর
২. মহিষখোলা (নড়াইল) নূর মোহাম্মদ নগর
৩. মৌটুপী (আলিনগর, ভোলা) মোস্তফাকামাল নগর
৪. খোর্দা (খালিশপুর, ঝিনাইদহ) হামিদনগর
৫ . বাগপাচড়া (নোয়াখালী) রুহুল আমিন নগর
৬. সালামতপুর (ফরিদপুর) রউফনগর

১৯৭১ সালে মিত্রবাহিনী বিভিন্ন দেশের হৃদয়বান যেসব রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক , সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠন নানাভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা করেন। তাদের তিন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ২৫ জুলাই ২০১১ ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দরা গান্ধীকে বিদেশীদের জন্য বাংলাদেশের সবোর্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান 'বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা' প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুরু করে কৃতজ্ঞতা জানানোর উদ্যোগ।
০ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা দেয়া হয় ১৫ জনকে।
০ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা পান ৩১২ জন এবং ১০টি সংগঠন।

  • মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ : ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ সারাদেশে হরতাল পালিত হওয়ার সময় রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শঙ্কু সমজদার। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম গেজেটভুক্ত। তাকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
  • শহিদ শাফি ইমাম রুমী : শহিদ শাফি ইমাম রুমী ছিলেন জাহানারা ইমামের একমাত্র সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ঢাকায় কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়েন এবং নিখোঁজ হন। জাহানারা ইমামকে তাঁর পুত্রের মহান আত্মত্যাগের জন্য 'শহীদ জননী ' বলা হয়। তিনি ক্রাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন।
  • বীরাঙ্গনাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৪১ জন বীরাঙ্গনাকে প্রথমবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনার সংখ্যা মোট ৪০০ জন। ২০১৬ সালে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা দেয়া হয়।

কাঁকন বিবি বীরপ্রতীক ( ১৯১৫ - ২৩ মার্চ , ২০১৮ ) : কাঁকন বিবি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা। তার আসল নাম কাঁকাত হেনিনচিতা। তিনি খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে। তিনি যুদ্ধ করেছেন ৫ নম্বর সেক্টরে। ১৯৯৭ সালে তার বীরত্বগাথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তাকে ঢাকায় ডেকে নেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন সংবর্ধনা দিয়ে তাকে বিশেষ 'বীরপ্রতীক' ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি এখনো গেজেটভুক্ত হয়নি।

তারামন বিবি বীরপ্রতীক ( ১৯৫৭ - ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ) : তারামন বিবি একাত্তরের রণাঙ্গণের মুক্তিযাদ্ধো। বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত তারামন বিবির গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাঠি ইউনিয়নের কাছাড়িপাড়ার শংকর মাধবপুর গ্রামে। তিনি ১১নং সেক্টরে কমান্ডার আবু তাহেরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করে। এ মুক্তিযোদ্ধার নাম জনসমাজে আসে ১৯৯৫ সালে। ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫ তার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। তার স্বামী আবদুল মজিদ; ছেলে আবু তাহের ও মেয়ে মাজেদা খাতুন। তার বাবার নাম আবদুস সোবহান ও মায়ের নাম কুলসুম বিবি।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ( ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ - ০৬ মার্চ ২০১৮ ) : প্রখ্যাত ভাস্কর শিল্পী। তার জন্ম খুলনায়। তিনি ২০১০ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। ১১ আগস্ট ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব প্রদান করে। তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ 'নিন্দিত নন্দন' প্রকাশ ২০১৪। তার শিল্পকর্মের সংখ্যা আনুমানিক ৪০০টি।

ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম বীর প্রতীক ( ০৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ - ) : মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন ।

হামিদুল হক বীরপ্রতীক (মৃত্যু ৫ এপ্রিল ২০১৮) : জন্মস্থান - টাঙ্গাইলের সখীপুরের কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলে গঠিত কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে বেশ, কয়েকটি সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও নেতৃবৃন্দ

মুক্তিযুদ্ধকালে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ
দেশ/ সংস্থা পদ ব্যক্তির নাম
জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট
ভারত প্রেসিডেন্ট বরাহগিরি ভেঙ্কট গিরি
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং
জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়
সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নি
প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই গ্রোমিকো
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম পি রজার্স
নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার
চীন প্রধানমন্ত্রী ঝু এনলাই

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা: ভারত সরকার ২৫শে মার্চ থেকে সংঘটিত পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা করে। গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দেয় এবং তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। ভারতের মাটিতে এপ্রিলের শেষ দিকে বাঙালি যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া শুরু হয় যা নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে। পাশাপাশি কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা ও 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' নামে এই সরকারের বেতার কেন্দ্র স্থাপনে ভারত সহায়তা করে। এছাড়া ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী, নেতা ও কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন। ৩রা ডিসেম্বর ভারতের বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তান বিমান হামলা চালালে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তেও পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ৬ই ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ইতোমধ্যে নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয় যৌথ-কমান্ড।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সেদেশের সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে। সরকারের পাশাপাশি ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংগঠন, লেখক-শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সম্প্রদায় সকলেই এ সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। বাঙালি শরণার্থীদের ব্যয় নির্বাহের জন্য ভারত সরকার এ সময় শরণার্থী কর' নামে নতুন একটি কর আরোপ করে। এছাড়া প্রবাসী সরকারের ব্যাংকে ভারত, সরকার ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা প্রদান করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে চার হাজার ভারতীয় অফিসার ও জোয়ান প্রাণ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা: আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল। এপ্রিলের শুরুতেই সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট পদগনি বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে চিঠি দেন। এছাড়া, তিনি ইয়াহিয়াকে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বলেন। ৩রা ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উদ্দেশ্য ছিল যেন যৌথ বাহিনী সামরিক বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ পায়। এই বাহিনী ঢাকা দখল করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে কোনো প্রকারে যুদ্ধবিরতির পদক্ষেপকে ঠেকিয়ে রাখাই নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েতের ভেটো দানের উদ্দেশ্য ছিল। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল হয়।

মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার সরকারি নীতি ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। প্রথমদিকে অস্ত্র এবং সমর্থন দিয়ে মার্কিন সরকার পাকিস্তানকে সহায়তা করে। তবে নিজ দেশের বিরোধী দলের চাপে মার্কিন সরকার ভারতে অবস্থানরত বাঙালি শরণার্থীদেরও আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। ২১ নভেম্বর ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারত বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী গঠিত হয়েছিল। একাত্তরের ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রচন্ড ভারত-বিরোধী ও পাকিস্তান ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করতে থাকে। স্বভাবতই তাদের এ ভূমিকা বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন স্বরূপ ভারত মহাসাগরে তাদের সপ্তম নৌবহর পাঠায় তবে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করে শেষ পর্যন্ত তারা সে নৌবহরকে কাজে লাগায়নি। পাকিস্তানের পরাজয়ের মুখে যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভন্ডুল করতেও জাতিসংঘে কুটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন আইনসভা কংগ্রেস ও সিনেটের অনেক সদস্য, বিভিন্ন সংবাদপত্র শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ প্রায় সর্বস্তরের মার্কিন জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা পালন করে। নিইউয়র্কে মার্কিন শিল্পী জর্জ হ্যারিসন 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ' আয়োজন করে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থ মুজিবনগর সরকারের কাছে তুলে দেন।

নোট: সপ্তম নৌবহর এ কয়েকটি জাহাজের সমন্বয়ে 'টাস্কফোর্স ৭৪' গঠন করা হয়েছিল। এই টাস্কফোর্স এর নেতৃত্বদানকারী জাহাজের নাম-USS enterprise (ইউ এস এস এন্টারপ্রাইজ) সামরিক নাম: CBN 65

মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকা: পৃথিবীব্যাপী আধিপত্যের লড়াইয়ে ধনতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিরাধে যখন স্পষ্ট তখন রাশিয়ার ক্রুশ্চেভ প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি ঘোষণা করলে একে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে রাশিয়ার প্রভাব ঠেকানোর জন্য চীনও একই পথে পা বাড়ায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীন টেবিল টেনিস কূটনীতির মাধ্যমে একটি সম্পর্ক গড়ে নেয়। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় চীন পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে। এছাড়া, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভে চীন ভেটো দেয়। এভাবে চীনের বিরোধিতা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দু'তিন বছর অব্যাহত ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী শক্তির তৎপরতা এবং ভূমিকা

রাজাকার, আলবদর এবং আল-শামস হলো ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত আধাসামরিক বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে উঠেছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি সহযোগী সংগঠন-

শান্তি কমিটি: ৪ এপ্রিল '৭১ জনাব নুরুল আমিনের নেতৃত্বে অধ্যাপক গোলাম আযম ও খাজা খয়েরউদ্দীন টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন। ৯ এপ্রিল গঠিত হয় ১৪০ সদস্যবিশিষ্ট 'ঢাকা নাগরিক শান্তি কমিটি'। ১৭ এপ্রিল '৭১ এই কমিটির নাম পরিবর্তন করে শান্তি কমিটি রাখা হয়।

রাজাকার: পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম আযম "রাজাকার" বাহিনী গঠন করে সে বাহিনীর আমির পদ গ্রহণ করেন। জামায়াত নেতা মওলানা একে এম ইউসুফ এর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনার আনসার ক্যাম্পে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান সহযোগী হিসেবে এই বাহিনী দায়িত্ব পালন করে।

আল বদর: ১৯৭১ সালের আগস্টে ময়মনসিংহে এই বাহিনী গঠিত হয়। এই বাহিনীর কার্যকলাপের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড অন্যতম।

আল-শামস : আল-শামসের লক্ষ্য ছিল জামায়াতে ইসলামের নীতি অনুসরণ করা এবং পাকিস্তানি সেনাবাহীকে সহযাগিতা করা। এই বাহিনীর আরেকটি লক্ষ ছিল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা, যেহেতু তাদের তথাকথিত 'ভারতীয় চর'ও পাকিস্তানের শত্রু মনে করা হতো । এই ধরনের ধর্মভিত্তিক সংকীর্ণ নীতির বশবর্তী হয়ে আল-শামস বাহিনী বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে অংশগ্রহণ করেছিল।

The Concert for Bangladesh

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নির্বিচার গণহত্যার ফলে প্রায় এক কোটি শরণার্থী পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি এবং শরণার্থীদের সাহায্যে সংগ্রহের জন্য বিশ্বখ্যাত ভারতীয় সেতারবাদক রবিশঙ্কর তার বন্ধু সাবেক বিটলস সঙ্গীতদলের লিড গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনকে আমেরিকাতে একটি দাতব্য সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজনের কথা বলেন। জর্জ হ্যারিসন তার অনুরোধে সম্মতি জানান।

১৯৭১ সালের পহেলা আগষ্ট রবিবার দুপুর ২.৩০ এবং অপরাহ্ন ৮.০০ ঘটিকায় নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে 'The Concert for Bangladesh এর সময় নির্ধারিত হয়। সেতারবাদক রবি শংকর ও বিখ্যাত সরোদবাদক ওস্তাদ আলী আকবর খান যন্ত্রসঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করেন। তাঁদের সাথে তবলায় ছিলেন ওস্তাদ আল্লা রাখা খান। লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন ৪০,০০০ লোকের সমাগমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডভিত্তিক গান পরিবেশন করেন। এই সঙ্গীতানুষ্ঠানে বিশ্বখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের এক বিশাল দল অংশ নিয়েছিলেন যাদের মধ্যে বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, লিয়ন রাসেল, বিলি প্রিস্টন, বডি ফিঙ্গার এবং রিঙ্গো রকস্টারের নাম উল্লেখযোগ্য। কনসার্ট হতে সংগীত অর্থ ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে শরণার্থীদের জন্য দিয়ে দেয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরচিত আক্রমণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরগুলোতে অশ্রয় নেয়। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি হয়।

ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অক্সফাম শরণার্থী শিবিরগুলোতে ত্রাণ ও চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে। যুক্তরাজ্যের নাগরিক জুলিয়ান ফ্রান্সিস এ সময় অক্সফামের ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয়ক হিসেবে কলকাতায় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর নিরলস সাধনায় ১১ অক্টোবর, ১৯৭১ অক্সফাম কর্তৃক প্রকাশিত হয়। 'টেস্টিমনি অব সিক্সটি অন দ্য ক্রাইসিস ইন বেঙ্গল' (বাঙালী মানুষের সংকটে ষাট জনের সাক্ষ্য) নামের একটি সংকলন। বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো এই দলিলে মাদার তেরেসা, সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেড়ি ও হোলিংওয়ার্থের মতো বিশ্বখ্যাত ৬০ জন মানুষের লেখা স্থান পায়; যাতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ও শরণার্থীদের দুর্ভোগের চিত্র ফুটে উঠেছিল। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য জুলিয়ান ফ্রান্সিসকে 'মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননা' (Friends of Liberation War Honour) দেয়া হয়।

১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ভারতের কলকাতা থেকে নৌকায় করে বাংলাদেশের যশোর সীমান্তে পৌছান। সীমান্তবর্তী শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাসকারী উদ্বাস্তুদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান। দেশে ফিরে গিন্সবার্গ একটি কবিতা লেখেন: 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর কবিতাটি নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসে মিশন গঠন:

  • ভারত ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১
  • যুক্তরাষ্ট্র ৪ আগস্ট , ১৯৭১
  • নেপাল ৩ অক্টোবর, ১৯৭১
  • সুইজারল্যান্ড ২ নভেম্বর, ১৯৭১
  • ইন্দোনেশিয়া ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭১

মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ

  • ২১ নভেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথ কমাও গঠন করে। এজন্য ২১ নভেম্বর, 'সশস্ত্র বাহিনী দিবস' হিসেবে পালিত হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী (ভারতের সেনাবাহিনী ) সমন্বয়ে এটি গঠিত হয়।
  • ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের বিমান ঘাটিতে হামলা চালালে সেদিনই তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে (ভুটান প্রথম)। এদিন মুক্তিবাহিনীর সাথে ভারতীয় মিত্রবাহিনী পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম প্রথম জেলা হিসাবে যশোর শত্রুমুক্ত হয়।
  • মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ৭ ডিসেম্বর যশোর সেনানিবাস দখল করে। ৮ থেকে ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নোয়াখালী শহর মিত্রবাহিনীর দখলে আসে।

বাংলার বুদ্ধিজীবীদের হত্যা

  • মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনিবার্য হয়ে পড়লে পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের মিত্র আল বদর বাহিনী ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাঙালির তৎকালীন শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে এক কলঙ্কময় ইতিহাসের সৃষ্টি করে। এজন্য প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর 'শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস' হিসেবে পালিত হয়।
  • পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে অন্যূন দশ জনের একটি কমিটি কর্তৃক বুদ্ধিজীবী নিধনের নীলনকশা প্রণীত হয়।
  • পাকবাহিনীর অস্ত্র সাহায্য নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় বুদ্ধিজীবী হত্যা করে - আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী।
  • ঢাকা শহরের প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাংলা কলেজের পশ্চাৎভাগ, হরিরামপুর গোরস্থান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি, মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত ও রায়েরবাজার।
  • শহীদ বুদ্ধিজীবী: ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ১৩ জন সাংবাদিক, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ২ জন।

পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) পাক হানাদার বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) বাংলাদেশ ও ভারতের সম্মিলিত মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সেনাপতি লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নিকট আত্মসমর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ৯৩ হাজার সদস্য সেদিন আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে এবং শাসনক্ষমতা গ্রহণ করে।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তি দিলে তিনি লন্ডন -দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছেন।

কূটনীতিকদের আনুগত্য প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানের কলকাতা হাইকমিশনের অফিস প্রধান এম. হোসেন আলী পাকিস্তান দূতাবাসের ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়ে মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন। লাভ করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম রাষ্ট্রদূত হওয়ার দুর্লভ সম্মান। তিনি হাইকমিশনার হিসেবে প্রথম বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তবে কূটনীতিক হিসেবে নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের কূটনীতিকদ্বয় কে এম শাহাবুদ্দীন এবং আমজাদুল হক ৬ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশের প্রতি প্রথম আনুগত্য প্রকাশ করেন।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মুদ্রা ও ডাকটিকেট :

  • মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানি টাকায় বাংলাদেশের সিল মেরে বাংলাদেশের মুদ্রার প্রচলন ঘটায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন নিজস্ব ডাকটিকেট প্রবর্তন করা হয়। ২৯ জুলাই, ১৯৭১ ডাক বিভাগের প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল ছিলেন মওদুদ আহমেদ। প্রথম ৮টি ডাকটিকেটের নকশা করেন বিমান মল্লিক। এগুলো ইংল্যান্ডের ফরম্যাট ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস থেকে ছাপানো হয়। স্বাধীনতার পর ২০ পয়সা মূল্যের প্রথম ডাকটিকিটের যাত্রা শুরু হয় ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২। এর ডিজাইনার ছিলেন বিপি চিতনিশ। এতে শহীদ মিনারের ছবি ছিল।
  • স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্বরুপ ১৯৭৩ সালে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়।
  • নোট: প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ করে মুজিবনগর সরকার।
  • ১০ পয়সা, ২০ পয়সা, ৫০ পয়সা, এক টাকা, দুই টাকা, তিন টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা মূল্যের

সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড : মার্কিন কবি অ্যালেন গিনেসবার্গ ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতায় আগমন করেন। তিনি কলকাতা-বেনাপালে সড়ক 'যশোর রোড' এর উপর আশ্রয় নেয়া অসহায় উদ্বাস্তুদের দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতিক্রিয়া কাছ থেকে দেখেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে তার বিখ্যাত কবিতা 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড'। ১৫১ লাইনের দীর্ঘ এ কবিতাটি রচিত হয় ১৪-১৬ নভেম্বর ১৯৭১।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল : ১৯৭১ সালে প্রবাসী বাঙালি খেলোয়াড় ও কোচ-কর্মকর্তাদের নিয়ে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠিত হয়। এ দল ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১২টি ম্যাচে অংশ নিয়ে জনমত ও অর্থ সংগ্রহে ভুমিকা রাখে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু এবং কোচ ছিলেন তানভীর আজহার তান্না।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি : ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট সদস্যবিশিষ্ট একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ 'গণআদালত' এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার অনুষ্ঠান করে। গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১০টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।

বাংলার রাজধানী ঢাকা: ঢাকা শহরের গোড়াপত্তন হয় মুঘল আমলে। বল্লাল সেন নির্মিত ঢাকেশ্বরী মন্দির নামের ঢাকা + ঈশ্বরী থেকে ঢাকা শব্দের উৎপত্তি। ঢাকা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি শহর এবং বর্তমানে বাংলাদেশের রাজধানী। ১৬১০ সালে মুঘল সুবেদার ইসলাম খান বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করেন এবং ঢাকার নাম রাখেন জাহাঙ্গীরনগর। ঢাকা এ পর্যন্ত পাঁচবার বাংলার রাজধানী হয়। যথা-

  • প্রথম ১৬১০ সালে (সুবা বাংলার)
  • দ্বিতীয় ১৬৬০ সালে (সুবা বাংলার)
  • তৃতীয় ১৯০৫ সালে (পূর্ববঙ্গ ও আসামের)
  • চতুর্থ ১৯৪৭ সালে (পূর্ব পাকিস্তানের)
  • পঞ্চম ১৯৭১ সালে (বাংলাদেশের)

বাংলা এ পর্যন্ত দুইবার বিভক্ত হয়। যথা-
• প্রথম : ১৯০৫ সালে (বঙ্গভঙ্গের ফলে)
• দ্বিতীয় : ১৯৪৭ সালে (ভারত বিভাগের ফলে)

নবীনতর পূর্বতন