কম্পিউটার মেমরি বলতে কোন কম্পিউটার ব্যবস্থায় স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণকারী ডিভাইসসমূহকে বোঝায়। কম্পিউটারের মেমোরি হিসাবে র্যাম, রম, হার্ডডিস্ক, সিডি, ডিভিডি, পেনড্রাইভ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সিপিইউ এর সাথে সরাসরি যুক্ত কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ স্মৃতিকে প্রধান মেমরি বলা হয়। ডাটা ইনপুট হিসেবে প্রবেশ করানোর পর তা প্রক্রিয়াকরণের সময় প্রধান মেমরিতে অবস্থান করে। যখন কম্পিউটার বন্ধ করা হয় তখন এ মেমরি হতে ডাটা মুছে যায়। তাই প্রধান মেমরিকে ভোলাটাইল মেমরিও বলা হয়। প্রধান মেমরি দু' ধরনের - যথাঃ প্রাইমারি মেমরি ও সেকেন্ডারি মেমরি ।
কম্পিউটার মেমরি কি ?
কম্পিউটারে ডেটা, তথ্য, প্রোগ্রাম ইত্যাদি স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসকে বলা হয় কম্পিউটার মেমরি বা স্মৃতি। মেমরি লক্ষ লক্ষ স্মৃতি কোষ নিয়ে গঠিত। মেমোরিতে দুই ভাবে অর্থাৎ স্থায়ী ও অস্থায়ী ভাবে তথ্য ও উপাত্ত সংরক্ষণ করা যায়। এসব তথ্য ও উপাত্ত কম্পিউটার কোন কাজ সম্পাদন করার আগে হার্ড ডিস্ক থেকে সিস্টেম মেমরিতে সংরক্ষণ করে নেয়। অতঃপর তথ্য ও উপাত্ত প্রসেসিং করে আমাদের সামনে ফলাফল প্রদর্শন করে ।
- বিট (Bit): বাইনারি নাম্বার পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ০ এবং ১ এর অঙ্ক দুটির প্রত্যেকটিকে একটি বিট বলা হয়। ইংরেজি বাইনারি (Binary) শব্দের Bi এবং ডিজিট (Digit) শব্দের t নিয়ে বিট (Bit) শব্দটি গঠিত। যেমন: বাইনারি ১০০১ সংখ্যাটির ৪টি বিট আছে। ১০১০১ সংখ্যাটিতে পাঁচটি বিট আছে। কম্পিউটারের স্মৃতিতে ০ ও ১ এর কোড দিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে। মেমরির ধারণক্ষমতা পরিমাপের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে বিট।
- বাইট (Byte): ৮ বিটের কোড দিয়ে যে কোনো বর্ণ, অঙ্ক বা বিশেষ চিহ্নকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ৮টি বিট দিয়ে গঠিত শব্দকে বাইট (Byte) বলা হয়। যেমন: ১০০০১০১০ হলো ১টি বাইট। বাইট হলো বাইনারি পদ্ধতিতে তথ্য প্রকাশের মৌলিক একক । কম্পিউটারে স্মৃতি ধারণক্ষমতা বাইটে প্রকাশ করা হয়।
- শব্দ দৈর্ঘ্য (Word length): কম্পিউটারের ওপর নির্ভর করে শব্দের সাইজ। কোনো শব্দে যতগুলো বিট থাকে সেই বিটের সংখ্যাকে বলে শব্দ দৈর্ঘ্য।
১ টি শব্দ = ২ বাইট = ১৬ বিট - স্মৃতিকোষ (Memory Cell): মেমরির প্রতিটি সুনির্দিষ্ট স্থানকে মেমরি সেল বা স্মৃতি কোষ বলে। ইলেকট্রনিকস বর্তনীর দ্বারা মেমরি সেল তৈরি প্রতিটি স্মৃতিকোষে একটি বিট (০ বা ১) জমা রাখা যায়।
- স্মৃতি ঠিকানা (Memory Address): ডেটা রাখার জন্য মেমরিতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট স্থান বা সেল থাকে এবং সেলগুলো শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকে। এ ধরনের ব্যবস্থাকে মেমরি অ্যাড্রেস বলে। মেমরি সেলকে শনাক্ত করার জন্য প্রতিটি মেমরি সেলের একটি নির্দিষ্ট অ্যাড্রেস থাকে। যদি অ্যাড্রেস রেজিস্টারে nটি বিট জমা থাকে তাহলে তার সাহায্যে ২n টি অ্যাড্রেস রাখা যায়। স্মৃতিস্থানের ঠিকানা একটি স্থায়ী সংখ্যা অর্থাৎ ঠিকানার পরিবর্তন হয় না। শুধুমাত্র স্মৃতিস্থানে রক্ষিত। ডেটার পরিবর্তন হয়।
- পঠনক্রিয়া (Read Operation): মেমরির কোনো নির্দিষ্ট অ্যাড্রেসে অবস্থিত বাইনারি ওয়ার্ডকে খুঁজে নেওয়া হলে তাকে রিড অপারেশন বলে।
- লিখন অপারেশন (Write Operation): মেমরির একটি নির্দিষ্ট সেলে নতুন ওয়ার্ড সংরক্ষণ করাকে লিখন বলা হয়। তবে যখন মেমরির কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ওয়ার্ড বা তথ্য লেখা হয় তখন ওই স্থানে অবস্থিত আগের ওয়ার্ডটি মুছে যায় ।
- ভোলাটাইল বা উদ্বায়ী মেমরি (Volatile Memory): বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে যে মেমরির তথ্য মুছে যায় তাকে উদ্বায়ী স্মৃতি বা ভোলাটাইল মেমরি বলে। যেমন- RAM।
- নন-ভোলাটাইল মেমরি বা অনুদ্বায়ী (Non-Volatile Memory) : বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে যে মেমরির তথ্য মুছে যায় না তাকে অনুদ্বায়ী স্মৃতি বা নন-ভোলাটাইল মেমরি বলে। যেমন- ROM।
- ধ্বংসাত্মক (Destructive) মেমরি: যদি কোনো মেমরি পঠনের পর সংরক্ষিত তথ্য মুছে যায় তাহলে তাকে ধ্বংসাত্মক মেমরি বলা হয়। যেমন- চৌম্বক কোর মেমরি।
- অধ্বংসাত্মক (Non-Destructive) মেমরি: যদি পঠনের পর সংরক্ষিত তথ্য মুছে না যায় তাহলে তাকে অধ্বংসাত্মক মেমরি বলে। যেমন- চৌম্বক টেপ।
মেমরির ধারণক্ষমতা (Capacity)
কম্পিউটার মেমরিতে ডেটা সংরক্ষণের পরিমাণকে মেমরির ধারণক্ষমতা বলে। একে প্রকাশ করা হয় বাইট, কিলোবাইট, মেগাবাইট, গিগাবাইট ইত্যাদি দ্বারা।
মেমোরির ধারণক্ষমতা | বাইনারী পদ্ধতি | দশমিক পদ্ধতি |
---|---|---|
1 বাইট বা 1 অক্ষর | ৪ বিট (Bit) | |
1 নিবল (Nibble) বা অর্ধ বাইট | 4 বিট (Bit) | |
1 কিলোবাইট (KB) | 210 বাইট বা 1024 বাইট | 103 বাইট (B) |
1 মেগাবাইট (MB) | 220 বাইট বা 1024 কিলোবাইট | 106 বাইট (B) বা 10 3 কিলোবাইট (KB) |
1 গিগাবাইট (GB) | 230 বাইট বা 1024 মেগাবাইট | 109 বাইট (B) |
1 টেরাবাইট (TB) | 240 বাইট বা 1024 গিগাবাইট | 1012 বাইট (B) |
1 পিটাবাইট (PB) | 250 বাইট বা 1024 টেরাবাইট | 1015 বাইট (B) |
1 এক্সাবাইট (EB) | 260 বাইট বা 1024 পিটাবাইট | 1018 বাইট (B) |
1 জেট্টাবাইট (ZB) | 270 বাইট বা 1024 এক্সাবাইট | 1021 বাইট (B) |
1 ইয়োট্টাবাইট (YB) | 280 বাইট বা 1024 জেট্টাবাইট | 1024 বাইট (B) |
স্টোরেজ ডিভাইস (Storage Device)
স্টোরেজ ডিভাইস বিভিন্ন তথ্য, নির্দেশাবলি, অডিও, ভিডিও, ইমেজ স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা যায়। স্টোরেজ ডিভাইসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
ক) প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইস (Primary Storage Device): এটি মাইক্রোপ্রসেসরের কর্মক্ষেত্র। প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে কম্পিউটারে প্রোগ্রামের বিভিন্ন তথ্য ও ফলাফলকে অস্থায়ীভাবে সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসসমূহকে প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইস বলা হয়। যেমন- র্যাম।
খ) সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস (Secondary Storage Device): কম্পিউটারে বিপুল পরিমাণে তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হার্ডওয়্যারসমূহকে বলা হয় সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস। ফ্লপি ডিস্ক, হার্ডডিস্ক, সিডি, ডিভিডি, পেনড্রাইভ, জিপ ড্রাইভ, ম্যাগনেটিক টেপ, মেমোরি কার্ড, স্মার্ট কার্ড ইত্যাদি সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইসের উদাহরণ। অধুনালুপ্ত অন্যান্য সহায়ক স্মৃতি হচ্ছে জিপ ডিস্ক (ZIP Disk), ডিজিট্যাল টেপ (Digital Tape), চৌম্বক টেপ (Magnetic Tape), চৌম্বক ড্রাম (Magnetic Drum) প্রভৃতি।
তথ্যসমূহ অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে তথ্যসমূহ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহৃত হয়। সেকেন্ডারি স্টোরেজ ডিভাইসের ধারণক্ষমতা প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের তুলনায় অনেক বেশি। বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে প্রাইমারি স্টোরেজের তথ্যসমূহ মুছে যায় কিন্তু সেকেন্ডারি স্টোরেজের তথ্যসমূহ মুছে যায় না।
মেমরির শ্রেণিবিভাগ
মেমরির শ্রেণিবিভাগ নিয়ে NCTB এর সপ্তম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বইতে মেমরিকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- প্রধান মেমরি এবং সহায়ক মেমরি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ (মৌলিক কম্পিউটার শিক্ষা) বইতে মেমরিকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- প্রধান মেমরি, সহায়ক মেমরি এবং ইন্টারনাল মেমরি। প্রচলিত উত্তর মতে দুই প্রকার মেমোরিই অধিক গ্রহণযোগ্য । তবে আলোচনার সুবিধার্থে এখানে তিন প্রকার মেমরির আলোচনাই যুক্ত করা হল ।
১ । প্রধান মেমরি (Main Memory) বা প্রাথমিক/ মুখ্য মেমরি (Primary Memory): কম্পিউটারের কর্ম এরিয়া অত্যন্ত দ্রুতগতির। প্রধান মেমরির অ্যাকসেস সময় ন্যানোসেকেন্ড বা তার কম সময় হয়ে থাকে। র্যাম (RAM) ও রম (ROM) হলো এ ধরনের মেমরির উদাহরণ। কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের (CPU) সঙ্গে প্রধান মেমরির সরাসরি সংযোগ থাকে। প্রধান মেমরিতে সর্বদা প্রয়োজন হয় এমন তথ্য ও নির্দেশ জমা থাকে। কম্পিউটার চালু করার পর অপারেটিং সিস্টেমের একটি অঙ্ক সহায়ক মেমরি হতে প্রধান মেমরিতে সংরক্ষিত হয়ে কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে কম্পিউটারের প্রোগ্রামের বিভিন্ন তথ্য ও ফলাফলকে অস্থায়ীভাবে প্রধান মেমরি সংগ্রহ করে রাখে। কাজ শেষে তাদের আবার সহায়ক মেমরিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কম্পিউটার বন্ধ করলে বা বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হলে প্রধান মেমরিতে সংরক্ষিত তথ্যসমূহ সাধারণত মুছে যায় ।
২। সহায়ক মেমরি বা গৌণ মেমরি (Secondary Memory or Mass Memory): কম্পিউটারের যে মেমরিতে বিভিন্ন তথ্য, নির্দেশাবলি, অডিও, ভিডিও, ইমেজ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তাকে সহায়ক মেমরি বলা হয়। এ ধরনের মেমরির কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের (CPLJ) সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকে না বিধায় ধীরগতি সম্পন্ন হয়। এতে বিপুল পরিমাণ তথ্য বা প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করা যায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে বা কম্পিউটার বন্ধ করলেও তথ্য বা প্রোগ্রাম হারিয়ে বা মুছে যায় না। হার্ডডিস্ক, সিডি, ডিভিডি, পেনড্রাইভ, জিপ ড্রাইভ, ম্যাগনেটিক টেপ, পেন ড্রাইভ ইত্যাদি এ ধরনের সহায়ক মেমরির উদাহরণ। এ ধরনের মেমরিকে নন-ভোলাটাইল মেমরিও (Non-Volatile Memory) বলা হয়।
৩। ইন্টারনাল মেমরি (Internal Memory): কম্পিউটারের ইন্টারনাল মেমরি বলতে রেজিস্টার ও ক্যাশ মেমরিকে বোঝানো হয়।
রেজিস্টার (Register) : মাইক্রোপ্রসেসরের অস্থায়ী মেমরি। মাইক্রোপ্রসেসর যখন হিসাব- নিকাশের কার্যাবলি সম্পাদন করে তখন ডেটাকে সাময়িকভাবে জমা রাখার জন্য রেজিস্টারসমূহ ব্যবহৃত হয়। এগুলোর কাজ করার ক্ষমতা অত্যন্ত দ্রুত । রেজিস্টার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- অ্যাকুমুলেটর, ইনস্ট্রাকশন রেজিস্টার, প্রোগ্রাম কাউন্টার ইত্যাদি।
ক্যাশ মেমরি (Cache Memory) : কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য মাইক্রোপ্রসেসর এবং প্রধান স্মৃতির মাঝে অতি উচ্চগতির এবং কম ধারণক্ষমতাসম্পন্ন যে বিশেষ মেমরি ব্যবহার করা হয়, তাকে ক্যাশ মেমরি বলা হয় । এটি এক ধরনের স্ট্যাটিক স্মৃতি। সিপিইউয়ের কোনো নির্দেশ প্রয়োজন হলে প্রথমে ক্যাশ মেমরি পরীক্ষা করে, সেখানে না পেলে পরে প্রধান মেমরিতে খোঁজ করে, সেখানেও না পেলে সহায়ক মেমরিতে খোঁজ করে। কোনো অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামে কাজ করার জন্য যে তথ্যগুলো বারবার ব্যবহৃত হয়, সেই তথ্যগুলোকে ক্যাশ স্মৃতিতে জমা রাখা হয়। ফলে ঐ তথ্যগুলো খোঁজার জন্য অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামকে বারবার ডিস্কে যেতে হয়না। কাজেই। অ্যাপ্লিকেশনের কাজ করার গতি বৃদ্ধি পায়।
কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে ক্যাশ মেমরিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) অভ্যন্তরীণ ক্যাশ বা লেভেল-১ ক্যাশ (L1/Internal Cache) ও
খ) বহিঃস্থ ক্যাশ বা লেভেল-২ ক্যাশ (L2/External Cache)
মাইক্রোপ্রসেসরের অভ্যন্তরে যে ক্যাশ স্মৃতি কাজ করে সেটিকে অভ্যন্তরীণ ক্যাশ স্মৃতি বলা হয়। অপরদিকে যে স্মৃতি কম্পিউটারের প্রধান বোর্ড বা মাদারবোর্ডের ওপর অবস্থান করে তাকে বহিঃস্থ ক্যাশ স্মৃতি বলে।
প্রসেসর যখন ক্যাশ স্মৃতিতে কোনো ডেটা খুঁজে পায় তাকে ক্যাশ হিট বলে। আর প্রসেসর যখন ক্যাশ স্মৃতিতে কোনো ডেটা খুঁজে পায় না তাকে ক্যাশ মিস বলে।
অর্ধপরিবাহী মেমরি (Semiconductor Memory)
অর্ধপরিবাহী বস্তু বা সেমিকন্ডাক্টর (যেমন- সিলিকন) দিয়ে তৈরি মেমরিই হলো অর্ধপরিবাহী মেমরি বা সেমিকন্ডাক্টর মেমরি। আধুনিক কম্পিউটারগুলোর প্রধান মেমরি বলতে অর্ধপরিবাহী মেমরিকেই বুঝায়। চৌম্বক কোরের তুলনায় অর্ধপরিবাহী মেমরি অনেক ছোট ও দামে সস্তা। অর্ধপরিবাহী মেমরি বা প্রধান মেমরিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- র্যাম (RAM) এবং রম (ROM)। অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর মেমরি প্রধানত দুটি উপায়ে তৈরি করা হয়। যথা-
ক) বাইপোলার মেমরি : ট্রানজিস্টর ট্রানজিস্টর লজিক (Transistor Transistor Logic TTL) দিয়ে বাইপোলার মেমরি তৈরি করা হয়। যেমন- SRAM, PROM ইত্যাদি।
খ) ইউনিপোলার মেমরি: ইউনিপোলার মেমরি মেটাল অক্সাইড সেমিকন্ডাক্টর ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর (Metal Oxide Semiconductor Field Effect Transistor: MOSFET) বা কমপ্লিমেন্টারি মেটাল অক্সাইড সেমিকন্ডাক্টর (Complementory Metal Oxide Semiconductor: CMOS) দিয়ে তৈরি করা হয়। যেমন- DRAM, EPROM, EAPROM ইত্যাদি।
র্যাম (RAM = Random Access Memory) : র্যামে অত্যন্ত সহজে তথ্য সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে তথ্য মুছে ফেলা যায়। তথ্য পড়া ও লেখা উভয় প্রকার কাজই র্যামে সম্পাদন করা যায় বলে র্যামকে লিখন/পঠন (Read/Write Memory) স্মৃতিও বলা হয়। কম্পিউটার চালু করার সাথে সাথেই কম্পিউটার পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম ও ডেটা র্যাম স্মৃতিতে চলে আসে। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে র্যামে সংরক্ষিত সকল তথ্য মুছে যায়। তাই একে অস্থায়ী স্মৃতি (Volatile Memory) বলা হয়। র্যামের failure ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। সাধারণত RAM দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
১। স্ট্যাটিক র্যাম (SRAM - Static Random Access Memory) : মেমরি ফ্লিপ-ফ্লপ দ্বারা গঠিত, যা বাইনারি বিট (০ বা ১) ধারণ করে এবং ধারণকৃত ডেটা ততক্ষণ পর্যন্ত মেমরিতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে। SRAM অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন হওয়ায় ভিডিও র্যাম, ক্যাশ মেমরি ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। SRAM বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যথা- ASRAM, SBSRAM, PBSRAM ইত্যাদি।
২। ডাইনামিক র্যাম (DRAM - Dynamic Random Access Memory) : সাধারণত মসফেট ট্রানজিস্টর (MOSFET- Metal Oxide Semiconductor Field Effect Transistor) ও ক্যাপাসিটরের সাহায্যে তৈরি। সাধারণ SRAM-এর তুলনায় এ ধরনের মেমরির স্মৃতি কোষ আকারে ছোট এবং দামেও সস্তা। DRAM-এর আরো সুবিধা হলো প্রতি 'আইসিতে বিটের সংখ্যা বেশি, বিট প্রতি খরচও কম এবং বিদ্যুৎ শক্তি কম লাগে। এসব কারণে DRAM এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। মেইনফ্রেম, মিনিফ্রেম এবং মাইক্রোকম্পিউটারের প্রধান মেমরি হিসেবে সাধারণত DRAM বাবহৃত হয়ে থাকে। DRAM-এর ক্যাপাসিটরের চার্জ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় বলে প্রায় 72ms পর পর প্রত্যেক স্মৃতি কোষে লেখা তথ্য নতুন করে লিখতে হয়। একে Refreshing বলে। DRAM দুই ধরনের হয় যথা-SDRAM (Synchronous DRAM) ও ASDRAM (Asynchronous DRAM) । DRAM চিপগুলো DIMM (Dual In-line Memory Module) মডিউল এর মাধ্যমে মাদারবোর্ডের স্লটে বসানো থাকে।
রম (ROM = Read Only Memory)
ROM এক ধরনের নন-ভোলাইটল মেমরি (Non-Volatile Memory)। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলেও রমে সংরক্ষিত তথ্য মুছে যায় না।
ম্যানুফেকচারার কর্তৃক কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসর ও হার্ডওয়্যারের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি সম্পাদনের প্রোগ্রাম রমে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা থাকে। সংরক্ষিত তথ্য শুধু পড়া যায়, লেখা যায় না।
তাই একে Read Only Memory (ROM) বলা হয়। তবে এটা মুছে পুনঃপুনঃ প্রোগ্রাম করা যায় এমন রমও আছে। কম্পিউটার যখন অন করা হয় তখন রমের সংরক্ষিত প্রোগ্রামের সহায়তায় কম্পিউটারের সাথে
সংযুক্ত হার্ডওয়্যার বা ডিভাইসসমূহ পরীক্ষা করে দেখে এবং সেগুলোকে কার্যোপোযোগী করে। বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে রম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
এমরম (MROM Mask Read Only Memory) : আইসি আকারের এ ধরনের রম ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী তৈরি। ফটোগ্রাফিক মাস্ক ব্যবহার করে প্রোগ্রামের মাধ্যমে এতে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়, যা পরবর্তীতে পরিবর্তন করা যায় না। এ ধরনের রমে একবার প্রোগ্রাম করা হলে পুনঃ প্রোগ্রাম করা যায় না।
পিরম বা প্রম (PROM: Programmable Read Only Memory): সাধারণত বাজারে যে সমস্ত প্রোগ্রাম করা রম পাওয়া যায় তাতে ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী সমস্ত কাজ হয় না। এসব ক্ষেত্রে PROM ব্যবহার করা হয়। প্রমে নতুন অবস্থায় কোনো প্রোগ্রাম সংরক্ষিত থাকে না। ব্যবহারকারী প্রোগ্রামকে মাইক্রোপ্রোগ্রামে রূপান্তরিত করে নিজেই পিরমে ডেটা সংরক্ষণ করতে পারেন। তবে PROM কে একবার প্রোগ্রাম করা হলে পুনঃ প্রোগ্রামের কোনো সুযোগ থাকে না।
ইপ্রম (EPROM : Eraseable Programmable Read Only Memory): রম বা প্রমে একবার তথ্য সংরক্ষণ করা হলে আর পরিবর্তন করা যায় না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের রম তৈরি করা হয়েছে, যার নাম ইপ্রম। ইপ্রমে সংরক্ষিত তথ্যকে মুছে আবার নতুন করে বিশেষ প্রোগ্রামের সাহায্যে প্রোগ্রাম করা যায়। EPROM-এর সংরক্ষিত তথ্য মুছে ফেলার জন্য একে আল্ট্রাভায়োলেটের অতিবেগুনি রশ্মিতে কিছুক্ষণ রাখতে হয় তাহলে সংরক্ষিত তথ্য মুছে যায়। সাধারণত ফেট (FET-Field Effect Transistor) ব্যবহার করে এ ধরনের রম তৈরি করা হয়।
ইইপ্রম (EEPROM: Electrically Erasable PROM) : ইপ্রমের প্রধান অসুবিধা হলো এতে সংরক্ষিত তথ্য মুছতে প্রায় আধাঘণ্টা সময় লাগে এবং আংশিকভাবে কোনো তথ্য মুছা যায় না। এ অসুবিধা দূর করার জন্য ইইপ্রম তৈরি করা হয়েছে। এ ধরনের রমের আংশিক বা সম্পূর্ণ ডেটা মোছা যায়। তবে তথ্য মুছতে EEPROM কে সার্কিট থেকে খুলতে হয় না বরং প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ প্রবাহ চালিয়ে তথ্য মুছে ফেলা যায় এবং নতুন তথ্য সংযোজন করা যায়। অবশ্য সংরক্ষিত তথ্য মুছতে EPROM-এর তুলনায় অনেক কম সময় লাগে।
ইএপ্রম (EAPROM: Electricaly Alterable PROM): এ ধরনের রমের তথ্য মুছে নতুনভাবে তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। তবে সংরক্ষিত তথ্য মোছার জন্য অনেকক্ষণ যাবৎ (প্রায় অর্ধঘণ্টা) অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে রাখতে হয় এবং সংশ্লিষ্ট আইসিকে সার্কিট থেকে বের করে আনতে হয়। ফলে কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।
ফ্লপি ডিস্ক (Floppy Disk)
১৯৭৩ সালে ফ্লপি ডিস্কের প্রচলন শুরু হয়। এটি ডিসকেট (Diskette) নামে ও পরিচিত। গানের রেকর্ডের মতো দেখতে এই স্মৃতি পাতলা প্লাস্টিকের চাকতির ওপর ম্যাগনেটিক অক্সাইডের প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা হয়। এর ধারণ ক্ষমতা খুবই কম (সর্বোচ্চ ১.৪৪ মেগাবাইট)। এ ধরনের ডিস্কের সাহায্যে সহজেই এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। বর্তমানে ফ্লপি ডিস্কের ব্যবহার দেখা যায় না বললেই চলে। এটি আকারে হার্ডডিস্কের চেয়ে অনেক ছোট।
হার্ড ডিস্ক (Hard Disk)
হার্ডডিস্ক হচ্ছে পাতলা গোলাকার ধাতব পাতের সমন্বয়ে গঠিত সহায়ক মেমোরি। ধাতব পাতের উভয়পৃষ্ঠে চুম্বকীয় পদার্থ ফেরিক অক্সাইডের প্রলেপ থাকে। এজন্য এ ডিস্ককে চুম্বকীয় ডিস্ক (Magnetic Disk)ও বলা হয়। ডিস্কের গোলাকার ধাতব পাতগুলো দেখতে গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো। গোলাকার ধাতব পাতগুলো একটির উপরে একটি স্তরে বসানো থাকে। পাতগুলোর পৃষ্ঠে অনেকগুলো এককেন্দ্রিক বৃত্তে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। এসব বৃত্তকে ট্র্যাক (Track) বলা হয়। প্রতিটি বৃত্তকে কয়েকটি সমান ভাগে ভাগ করা হয়। এরূপ এক একটি ভাগকে সেক্টর (Sector) বলা হয়। প্রতিটি সেক্টরের ধারণক্ষমতা 512 বাইট। ডিস্কের পৃষ্ঠদেশের ট্র্যাক অদৃশ্য ক্ষুদ্র চুম্বকীয় বিন্দু আকারে তথ্য লিখিত হয় বাইনারি পদ্ধতিতে। পাতগুলোর মাঝখানে আধাইঞ্চির মতো ফাঁকা স্থান থাকে। এই ফাঁকা জায়গায় একটি দন্ড (Shaft) থাকে। এই দন্ডের সাহায্যে পাতগুলো একটির উপর আর একটি বসানো থাকে এবং সেই দন্ডের সাহায্যে কাজের সময় পাতগুলো প্রতি মিনিটে ৭২০০ বা আরও বেশি বার আবর্তিত হয়।
হার্ডডিস্ক থেকে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য হার্ডডিস্ককে মাদারবার্ডের সাথে যুক্ত করতে হয়। এজন্য IDE (Integrated Device Electronics) ইন্টারফেস এবং প্রয়োজনে দ্রুত গতির SCSI (Small Computer System Interface) ইন্টারফেস ব্যবহৃত হয়। অবশ্য বর্তমানে SATA (Serial Advanced Technology Attachment) এবং SAS (Serial Attached SCSI) ইন্টারফেসও ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ডিস্কের ধারণক্ষমতা = পৃষ্ঠের সংখ্যা × ট্র্যাকের সংখ্যা × প্রতি ট্র্যাকে সেক্টরের সংখ্যা × প্রতি সেক্টরে ধারণক্ষম বাইটের সংখ্যা
হার্ডডিস্কের ধারণক্ষমতা নির্ণয় করা হয় গিগাবাইট, টেরাবাইট ইত্যাদি এককে। 20TB ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন হার্ডডিস্ক এখন বাজারে পাওয়া যায়। Seagate, Toshiba বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হার্ডডিস্ক ড্রাইভ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
বাবল মেমরি (Bubble Memory)
ম্যাগনেটিক বাবল মেমরি সেমিকন্ডারের তৈরি এক ধরনের সহায়ক মেমরি। এ ধরনের মেমরিতে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ফিল্মের ওপর ধনাত্মক চার্জযুক্ত বাবল স্থাপন করা হয়। বাবলের উপস্থিতি বাইনারি ১ এবং অনুপস্থিতিতে বাইনারি ০ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি এক ধরনের নন-ভোলাইটল মেমরি। এ ধরনের মেমরি সাধারণত টেলিফোন সিস্টেম, রোবট, সামরিক ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়।
ম্যাগনেটিক টেপ (Magnetic Tape)
ম্যাগনেটিক টেপ সাধারণত অডিও বা ভিডিও টেপের মতোই যা আয়রন অক্সাইডের প্রলেপযুক্ত এক ধরনের প্লাস্টিকের ফিতা। এ ফিতা রিলে জড়ানো অবস্থায় বা ক্যাসেট আকারে পাওয়া যায়। এ ধরনের টেপের ডেটা সংরক্ষণ পদ্ধতি হার্ডডিস্কের সংরক্ষণ পদ্ধতির অনুরূপ।
অপটিক্যাল স্টোরেজ সিস্টেম (Optical Storage System)
যে সমস্ত ডিস্কে Optical Storage Technology-এর মাধ্যমে ডেটা সংরক্ষণ করা হয়, তাকে Optical Disc বলা হয়। যেমন- CD-ROM Disk বা CD Disk, DVD ইত্যাদি।
সিডিরম (CD ROM: Compact Disc Read Only Memory) সিডিরম একটি জনপ্রিয় বহনযোগ্য স্টোরেজ মিডিয়া। অপটিক্যাল ডিস্কে বা সিডিতে লেজার রশ্মির সাহায্যে লিখন ও পঠনের কার্য সম্পন্ন করা হয়। ঘূর্ণায়মান অপটিক্যাল ডিস্কে লেজার রশ্মির সাহায্যে লেখার সময় অ্যালুমিনিয়ামের পাতের অতি সূক্ষ গর্ত (Pit) সৃষ্টি করা হয়। এ ধরনের গর্তের গভীরতা ০.১২ মাইক্রোমিটার এবং প্রস্থ ০.৬ মাইক্রোমিটার। পিট ও ল্যান্ড বাইনারি ডিজিট '০' এবং '১' এর প্রতিনিধিত্ব করে। গর্তের সারি দিয়ে তৈরি হয় স্পাইরাল ট্র্যাক। প্রতিটি স্পাইরাল ট্র্যাকের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো ১.৬ মাইক্রোমিটার। প্রতি ইঞ্চিতে ট্র্যাকের সংখ্যা প্রায় ১৬,০০০। সাধারণত সিডির ধারণক্ষমতা ৭৫০ মেগাবাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রথম তৈরিকৃত সিডি ড্রাইভের ডেটা পড়ার হার ছিল ১৫০ কিলোবাইট/সেকেন্ড। এ ধরনের ড্রাইভের গতি 1X নামে পরিচিত। বর্তমানে 52X গতির সিডি ড্রাইভ বেশি ব্যবহৃত যার ডেটা পড়ার হার 7800 কিলোবাইট/সেকেন্ড।
ডিভিডি (DVD) : DVD এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Digital Versatile Disc (বহুমুখী ডিজিটাল ডিস্ক) বা Digital Video Disc। ১৯৯৬ সালের দিকে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন অপটিক্যাল ডিস্কের উন্নতমানের সংস্করণ ডিভিডির উদ্ভব হয়। ডিভিডি এর ধারণক্ষমতা ১৭ গিগাবাইট পর্যন্ত দেখা যায়। ব্লু রে ডিভিডি এর ধারণক্ষমতা ১০০ গিগাবাইট পর্যন্ত হতে পারে। DVD-এর গঠন ও আকার সিডির মতোই।
ফ্ল্যাশ মেমোরি (Flash memory)
ফ্ল্যাশ মেমোরি হলো একটি ইলেক্ট্রনিক অপরিবর্তনীয় কম্পিউটার স্টোরেজ মাধ্যম যা বৈদ্যুতিকভাবে মুছা এবং পুনরায় প্রোগ্রাম করা যায়। ফ্ল্যাশ মেমরি ইইপিরম থেকে উদ্ভাবন করা হয়।
মেমোরি কার্ড (Memory Card) : মেমোরি কার্ড এক ধরনের ফ্লাশ মেমোরি ডিভাইস যাতে ব্যবহারকারী সহজেই ডেটা, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে পারেন এবং এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে স্থানান্তর করতে পারেন। এটি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় স্টোরেজ মিডিয়া যা পার্সোনাল কম্পিউটার, মোবাইল ডিভাইস (যেমন; ডিজিটাল ক্যামেরা, স্মার্ট ফোন, পোর্টেবল মিডিয়া প্লেয়ার) ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। একটি মেমোরি কার্ডে কয়েকশত গিগা বাইট পর্যন্ত ডেটা সংরক্ষণ করা যায়। মেমোরি কার্ডের ডেটা ট্রান্সফার রেট বেশি (1MBps - 20 MBps পর্যন্ত)।
সলিড স্টেট ডিভাইস (Solid State Device) : এসএসডি এক ধরনের হালকা কিন্তু অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন স্টোরেজ ডিভাইস। এতে ডেটা সংরক্ষণের জন্য ফ্লাশ মেমোরি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে হার্ডডিস্কের বিকল্প হিসেবে এসএসডি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসএসডি এর ডেটা ট্রান্সফার রেট অনেক বেশি। অ্যাকসেস সময় ০.১ মিলিসেকেন্ড যা হার্ডডিস্ক থেকে ৮০ গুণ বেশি। এতে কম বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হয়।
ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভ (USB Flash Drives) : সিডি, ডিভিডি, জিপ ডিস্কের তথ্য ধারণক্ষতা বেশি হলেও এগুলোতে তথ্য সংরক্ষণ এবং পড়ার জন্য ড্রাইভের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের USB (Universal Serial Bus) পোর্টে লাগিয়ে সহজে তথ্য লেখা এবং পড়ার নতুন এক সহায়ক স্মৃতি মাধ্যম বের হয়েছে। অত্যন্ত হালকা ও সহজে বহনযোগ্য কলমের ক্যাপের মতো দেখতে এ মাধ্যমটিকে পেন ড্রাইভ (Pen Drive) বলে। USB পোর্ট থেকে পাওয়ার গ্রহণ করে বলে এর আলাদা কোনো পাওয়ার সাপ্লাইয়ের প্রয়োজন হয় না। পুয়া কেইন সেং (তাইওয়ান) কে পেন ড্রাইভ এর জনক বলা হয়।
মেমরির ধারণক্ষমতার ক্রম
অ্যাকসেস টাইম (Access Time) : মেমরি হতে ডেটার রিড বা রাইট অপারেশনে যে সময় লাগে তাকে অ্যাকসেস টাইম বলে। প্রধান মেমরির টাইম (সময়) বলতে বোঝায় মেমরির নির্দিষ্ট অ্যাড্রেসে অ্যাকসেস করা এবং তা থেকে একটি শব্দ পড়া বা লেখার মোট সময়। অ্যাকসেস সময় যত কম হয়, কম্পিউটার তত দ্রুতগতিতে কাজ করে। ডিস্ক অ্যাকসেস সময় মিলিসেকেন্ডে পরিমাপ করা হয়।
র্যান্ডম অ্যাকসেস (Random Access): যেকোনো মেমরি সেলের বিট বা শব্দকে যদি সরাসরি অ্যাকসেস করা যায় তাহলে তাকে র্যান্ডম অ্যাকসেস বলা হয়। এ ধরনের পদ্ধতিতে অ্যাকসেস সময় খুবই কম হয় এবং সকল মেমরি স্থানের অ্যাকসেস সময় একই থাকে। যেমন- অর্ধপরিবাহী মেমরি RAM , ROM র্যান্ডম অ্যাকসেস ব্যবস্থার মেমরি।
সিরিয়াল বা সিকুয়েন্সিয়াল অ্যাকসেস (Sequential Access) : মেমরি লোকেশন হতে বিট বা শব্দের একটি নির্দিষ্ট অ্যাড্রেস খুঁজে বের করতে যখন প্রথম অ্যাড্রেস থেকে শুরু পর পর প্রতিটি অ্যাড্রেস খুঁজে নির্দিষ্ট অ্যাড্রেসে যেতে হয় তখন তাকে সিকুয়েন্সিয়াল অ্যাকসেস বলে। এ ক্ষেত্রে বিটের অবস্থান যত পরে হবে, অ্যাকসেস সময় তত বেশি হবে। এ ধরনের অ্যাকসেসে একটির অ্যাকসেসের সময় অন্যটির অ্যাকসেস সময় একই থাকে না। সহায়ক মেমরিতে এ ধরনের পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন- ম্যাগনেটিক টেপ ডিস্ক, ম্যাগনেটিক বাবল মেমরি ইত্যাদিতে এ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
সিক টাইম (Seek Time) ও ল্যাটেন্সি টাইম (Latency time): চৌম্বক ডিস্কের ক্ষেত্রে রিড- রাইট হেডকে সঠিক ট্র্যাকে নিয়ে যেতে যে সময় লাগে তাকে সিক টাইম বলে। আর রিড-রাইট হেড থেকে ট্র্যাকে নিয়ে যাওয়ার পরে সঠিক শব্দে পৌঁছতে যে সময় লাগে তাকে ল্যাটেন্সি টাইম বলে।
ধারণক্ষমতা বেশি হলে অ্যাকসেস টাইম বেশি হবে। রেজিস্টারের ধারণক্ষমতা কম হলেও এর গতি যেমন সবচেয়ে বেশি, খরচও তেমনি সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে অপটিক্যাল ডিস্কের ধারণক্ষমতা বেশি হলেও গতি কম এবং দামও তুলনামূলক কম।