কম্পিউটারে কাজ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয় । সেগুলো ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস উভয়ই হতে পারে যেমন- মাউস , লাইটপেন , জয়স্টিক , গ্রাফিক্স ট্যাবলেট , স্ক্যানার , বারকোড রিডার , মাইক্রোফোন , ওয়েবক্যাম , ডিজিটাল ক্যামেরা , মনিটর , প্রিন্টার , স্পিকার , প্রজেক্টর , প্লটার , হেডফোন ইত্যাদি । আবার স্টোরেজ ডিভাইসমূহকে ও কম্পিউটারের পেরিফেরালস এর অংশ হিসেবে ধরা হয় । এসব ডিভাইস কম্পিউটার সিস্টেমের জন্য অপরিহার্য উপাদান। কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত এ ধরনের ডিভাইসসমূহকে বলা হয় কম্পিউটারের পেরিফেরালস ।
ইনপুট ডিভাইস
কম্পিউটারের সাহায্যে কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রথমে কম্পিউটারকে ঐ কাজের তথ্য প্রদান করতে হয়। কম্পিউটারকে দেওয়া এই তথ্যই হচ্ছে ইনপুট (Input)। কম্পিউটারে ইনপুট প্রদানের জন্য অনেক রকম যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এসব যন্ত্রকে বলা হয় ইনপুট ডিভাইস। ইনপুট যন্ত্রপাতি তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
- কী বোর্ড (Keyboard)
- ডিরেক্ট এন্ট্রি যন্ত্রপাতি
নির্দেশক (Pointing) মাউস (Mouse), ট্রাকবল (Track Ball), লাইটপেন (Light Pen), জয়স্টিক (Joy-stick), ডিজিটাইজার (Digitizer) বা গ্রাফিক্স ট্যাবলেট (Graphics Tablet), কলমভিত্তিক সিস্টেম (Pen Based System) স্ক্যানিং স্ক্যানার (Scanner), MICR, OMR, OCR সেন্সর বারকোড রিডার (Barcode Reader), সেন্সর (Sensor) অডিও ইনপুট মাইক্রোফোন (Microphone) ভিডিও ইনপুট ওয়েবক্যাম (WebCam), ডিজিটাল ক্যামেরা (Digital Camera) - টার্মিনাল
কী বোর্ড (Keyboard)
কীবোর্ড (অন্য নাম - কন্ট্রোল বোর্ড) এর মধ্যে বর্ণ, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্নের বিভিন্ন কী-গুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে। কী-বোর্ডের ভেতরে একটি ছোট প্রসেসরযুক্ত সার্কিট এবং কতকগুলো সহায়ক আইসি (ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট) থাকে। প্রতিটি কী হচ্ছে এক ধরনের সুইচ, যা সারি এবং কলামের সমন্বয়ের ওপর বসানো থাকে। যখন কী-তে চাপ দেওয়া হয় তখন একটি বৈদ্যুতিক সংকেত নির্দিষ্ট সারি বা কলাম বরাবর কী-বোর্ড প্রসেসরে যায়। প্রসেসর সেই সংকেত দেখে নির্দিষ্ট কী এর অবস্থান বুঝতে পারে এবং এনকোডারের সাহায্যে একটি বাইনারি কোড সিপিইউতে পাঠায়। এ সকল কোডকে স্ক্যান কোড বলে। স্ক্যান কোডগুলো পূর্বনির্ধারিত ও নির্দিষ্ট। প্রতিটি কী-এর স্ক্যান কোড ভিন্ন। কম্পিউটারের মূল সার্কিট বোর্ডে (মাদারবোর্ডে) কী-বোর্ড কন্ট্রোলার নামে এক ধরনের চিপ থাকে, যা কী-বোর্ড থেকে পাঠানো স্ক্যান কোডগুলো গ্রহণ করে মেমরিতে (কী-বোর্ড বাফার নামে পরিচিত) সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে স্ক্যান কোডের ওপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেম উক্ত কী এর অর্থ নিরূপণ করে। প্রতিটি নির্দেশের জন্য অ্যাসকি কোড হবে না ইউনিকোড হবে তা অপারেটিং সিস্টেম নির্ধারণ করে দেয়। আর এজন্য একই কী-বোর্ড ব্যবহার করে যেকোনো ভাষার বর্ণ ইনপুট করানো সম্ভব হয়।
বিভিন্ন ধরনের কী-বোর্ড লে-আউট আছে। কীবোর্ডের বামপ্রান্তের উপরের প্রথম ৬টি বর্ণের ক্রম দিয়ে এই লেআউটের নামকরণ করা হয়। যেমন; QWERTY Layout, QWERTZ Layout, AZERTY Layout প্রভৃতি। সাধারণত দুই ধরনের কী-বোর্ড পাওয়া যায়। যথা: (১) স্ট্যান্ডার্ড কী-বোর্ড (২) এনহ্যান্সড কী-বোর্ড। স্ট্যান্ডার্ড কী-বোর্ডে কী থাকে ৮৩/৮৪ টি, অন্যদিকে এনহ্যান্সড কী-বোর্ডে কী থাকে ১০০টির অধিক।
ফাংশন কী (Function Keys): তথ্য সংযোজন, বিয়োজন বা নির্দেশ প্রদানের জন্য ফাংশন কী ব্যবহার করা হয়। ১২টি ফাংশন কী রয়েছে (F1-F12)
- F1 : এটি সাহায্য বা হেল্প কী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেকোনো প্রোগ্রামের হেল্প মেনু দেখতে এটি ব্যবহার করা হয়।
- F2 : সাধারণত কোনো ফাইল বা ফোল্ডারের নাম পরিবর্তন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেকোনো ফাইল বা ফোল্ডার নির্বাচন করে এই কী চেপে ফাইলের নাম বদলানো যাবে।
- F3 : মাইক্রোসফট উইন্ডোজসহ অনেক প্রোগ্রামের সার্চ সুবিধা চালু হয়। উইন্ডোজ কমান্ডে এটি চাপ দিলে আগের কমান্ডটির পুনরাবৃত্তি ঘটে।
- F4 : এই কী দিয়ে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের last action performed Repeat করা যায়। Alt + F4 চেপে সক্রিয় সব প্রোগ্রাম বন্ধ করা যায় এবং Ctrl + F4 চেপে সক্রিয় সব উইন্ডো বন্ধ করা যায়।
- F5 : এটা চেপে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে find, replace, go to উইন্ডো খোলা হয়। এছাড়া যে কোনো পেজ Refresh, পাওয়ার পয়েন্টে স্লাইড শো শুরু এবং বন্ধ করার জন্য এই বাটনটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- F6 : মাউসের কার্সরকে ইন্টারনেট ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে নিয়ে যেতে চাইলে এই কী ব্যবহার করা হয়।
- F7 : মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে বানান ও ব্যাকরণ জনিত ভুলভ্রান্তি (Spelling & grammar errors) চেকিং চালু করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- F8 : অপারেটিং সিস্টেম safe mood এ চালু করার জন্য ব্যবহৃত হয়। F8 দুই বার চাপলে একটি Word, তিনবার চাপলে একটি Sentence, চারবার চাপলে একটি Para- graph এবং পাঁচবার চাপলে পুরো Document সিলেক্ট হয়।
- F9 : কোয়ার্ক এক্সপ্রেসের মেজারমেন্ট টুলবার চালু করার জন্য এটি কাজে লাগে।
- F10 : এটি চেপে ইন্টারনেট ব্রাউজার বা কোনো খোলা উইন্ডোর মেনুবার নির্বাচন করা হয়।
- F11 : যেকোনো সক্রিয় উইন্ডো পর্দাজুড়ে (ফুলস্ক্রিন) দেখতে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে এটি ব্যবহার করা হয়।
- F12 : মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের save as উইন্ডো চালু করা হয়। কম্পিউটারে শুধু F12 চেপে বাংলা থেকে ইংরেজি বা ইংরেজি থেকে বাংলা মুডে যাওয়া যাবে। ল্যাপটপে fn + f12 চাপতে হবে।
আলফানিউমেরিক কী (Alphanumeric Keys): কীবোর্ডের যে অংশ টাইপ রাইটারের মতো বর্ণ এবং অক্ষর অর্থাৎ অ্যালফাবেট (a-z) এবং নম্বর (0-9) দিয়ে সাজানো থাকে, সেই অংশের কী গুলোকে আলফানিউমেরিক কী বলে।
নিউমেরিক কী-প্যাড (Numeric keypad): কীবোর্ডের ডান অংশে ক্যালকুলেটরের মত অর্থাৎ 0-9 এবং যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি চিহ্নিত কী গুলোকে নিউমেরিক কী-প্যাড বলা হয়। ১৭টি নিউমেরিক কী রয়েছে। এর মধ্যে আছে Num Lock, Home, End, PgDn, Ins, Del, Enter ।
মডিফাইয়ার কী (Modifier Keys): কী-বোর্ডের যে সকল বোতাম চেপে কোনো অক্ষর বা বর্ণ টাইপ করা হয় না, কিন্তু অক্ষর বা বর্ণ বিন্যাসের কাজ এবং অন্যান্য ধরনের কাজ করা হয়, সে সব বোতামকে বলা হয় মডিফাইয়ার কী। যেমন; শিফট (Shift), অপশন (Option), কমান্ড (Command), কন্ট্রোল (Ctrl), অল্টার (Alt)।
কার্সর মুভমেন্ট কী (Cursor Movement Key): কী-বোর্ডের ডানদিকে ৪টি Arrow Key (←↑↓→) আছে। এর সাহায্যে কার্সরকে বিভিন্ন দিকে নেওয়া যায়। এই কী-গুলোকে কার্সর মুভমেন্ট কী বলা হয়।
মাউস (Mouse)
মাউস হলো হাত দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ইদুর সদৃশ একটি পয়েন্টিং ডিভাইস। এটি কীবোর্ডের নির্দেশ প্রদান ছাড়াই একটি কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ১৯৬৩ সালে ডগলাস এঞ্জেলবার্ট মাউস আবিষ্কার করেন। ১৯৮৪ সালে মেকিন্টোস কম্পিউটারে সর্বপ্রথম মাউস ব্যবহৃত হয়। মাউস সমতলে নাড়ালে মনিটরের পর্দায় একটি তীর বা হাতের মতো চিহ্ন নড়াচড়া করতে দেখা যায়। একে কার্সর (Cursor) বলে। মাউস নড়াচড়া করে ইচ্ছামত কার্সরকে স্থানান্তর করা যায় । একটি স্ট্যান্ডার্ড মাউসে দুটি বা তিনটি বাটন থাকে। সাধারণভাবে বাম পাশের বাটন ব্যবহার করা হয়। তবে ডান পাশের বাটনে কিছু অতিরিক্ত অপশন রয়েছে যা কিছু কিছু প্রোগ্রামে কাজ করার সময় ব্যবহার করা হয়। স্ক্রল বাটনযুক্ত মাউসের স্ক্রল বাটন ঘুরিয়ে মনিটরে প্রদর্শনযোগ্য পৃষ্ঠাকে উপরে বা নিচে করে সহজেই দেখা যায়।
ট্রাকবল মাউস: যেসব মাউসের নিচে একটি রাবারের বল থাকে, এবং সেই বল নড়াচড়ার মাধ্যমে মাউসের পয়েন্টের কাজ করে তাকে ট্রাকবল মাউস বলে। এই ধরনের মাউসের নিচে একটি রাবারের বল থাকে যেটি চতুর্দিকে ঘুরানো যায়।
পয়েন্টিং, (Pointing): মাউস পয়েন্টারকে মনিটর স্ক্রীনের যে কোনো জায়গায় Move করানোকে পয়েন্টিং বলা হয়।
ক্লিক (Click): মাউসের বাটন একবার ক্লিক করে ছেড়ে দেওয়াকে সিঙ্গেল ক্লিক বা শুধু ক্লিক বলা হয়। মাউসের বাটন পরপর দুইবার চাপ দেওয়াকে ডাবল ক্লিক বলা হয়।
ড্রাগ এন্ড ড্রপ (Drag & Drop) : কোনো ছবি, আইকন বা উইন্ডোকে সিলেক্ট করে মাউসের বাম বাটন চেপে ধরে টেনে আনাকে ড্র্যাগ বা ড্র্যাগিং বলা হয়। যে বিষয়ে ড্র্যাগ করা দরকার সেটির উপর মাউস পয়েন্টার নিয়ে ক্লিক করে সিলেক্ট করে মাউসের বাম বাটন চেপে ধরে যেখানে নেওয়া প্রয়োজন সেখানে টেনে এনে মাউসের বোতাম ছেড়ে দিতে হবে। এভাবে ড্র্যাগ করে ছেড়ে দেওয়াকে ড্রপিং বা ড্রপ বলা হয়।
সিলেক্ট (Select) : কোনো অবজেক্ট (টেক্সট/ Drawing/ Picture ইত্যাদি) সিলেক্ট করতে হলে অবজেক্টের ডান বা বামদিকে আই-বিম ক্লিক করে মাউসে চাপ রেখে অবজেক্টের উপর দিয়ে বাম বা ডানদিকে টেনে নিয়ে যেতে হবে। এতে টেনে নিয়ে যাওয়া অংশটুকুর উপর অন্য রঙের আচ্ছাদন পড়ে যাবে। এ রকম অবজেক্টের উপর দিয়ে অন্য রঙের আচ্ছাদন পড়ে যাওয়া বা হাইলাইটেড (Highlighted) হয়ে যাওয়াকেই সিলেক্টেড হওয়া বলা হয়।
জয়স্টিক (Joystick)
জয়স্টিক হলো একটি ইনপুট ডিভাইস যাতে আয়তাকার বেসের উপর একটি দন্ড বসানো থাকে। বেসের সাথে কম্পিউটারের সংযোগ থাকে। মনিটরের পর্দায় একটি ছোট আলোক চিহ্নকে বলে কার্সর। জয়স্টিকের সাহায্যে কার্সরকে পর্দার উপর ইচ্ছামতো যে কোনো জায়গায় সরানো যায়। এটি ভিডিও গেমস খেলার কাজে মূলত ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি এবং বিভিন্ন ধরনের সিমুলেশনের কাজেও জয়স্টিকের ব্যবহার রয়েছে। কম্পিউটার ছাড়া ও জয়স্টিক অনেক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয় যেমন ক্রেন, ট্রাক, জলের তলার মানুষবিহিন যানবাহন, হুইলচেয়ার, নিরাপত্তা ক্যামেরা এবং ঘাস কাটার যন্ত্র ইত্যাদি। মোবাইল ফোনে জয়স্টিকের ক্ষুদ্রতম সংস্করন দেখা যায়।
ডিজিটাইজার (Digitizer) বা গ্রাফিক্স ট্যাবলেট (Graphics Tablet)
গ্রাফিক্স ট্যাবলেট যাকে ডিজিটাইজার বা ডিজিটাল ড্রয়িং ট্যাবলেট বা পেন ট্যাবলেট বা ডিজিটাল আর্ট বোর্ড নামেও ডাকা হয় । ডিজিটাইজারে একটি আয়তাকার চ্যাপ্টা ব্লক থাকে যাকে ডিজিটাইজার বোর্ড বলা হয়। বোর্ডের ভিতরে উপযুক্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা আছে। একটি স্টাইলাস (কলমের মতো) এর সাহায্যে বোর্ডে যা কিছু লেখা বা আঁকা যায় তা মনিটরের পর্দায় ভেসে উঠে। যদিও বর্তমানে কিছু গ্রাফিক্স ট্যাবলেটে এলসিডি মনিটর যোগ করা আছে যাতে ব্যবহারকারী বাস্তবতার স্বাদ পেতে পারেন বা সহজে ব্যবহার করতে পারেন। কিছু ট্যাবলেট মাউসের পরিবর্তে প্রাথমিক পয়েন্টিং বা নির্দেশক এবং নেভিগেশন যন্ত্র হিসেবে ডেস্কটপ কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়। ডিজিটাইজারের সাহায্যে বিভিন্ন গ্রাফ, ম্যাপ, বাড়ির নকশা ইত্যাদি সহজেই কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া যায়। বাংলাদেশ ভূমি জরিপ অধিদপ্তর ডিজিটাইজার ব্যবহার করে তাদের মৌজা ম্যাপগুলো সংরক্ষণ ও সম্পাদনা করেছে।
লাইটপেন (Light Pen)
লাইট পেন হচ্ছে কম্পিউটারের একটি ইনপুট যন্ত্র। লাইট পেন দেখতে অনেকটা কলমের মতো, এইজন্য এটির নাম দেওয়া হয়েছে লাইটপেন। এর এক মাথায় লাইট সেন্সর থাকে যা আলো অনুভব করতে পারে, অন্য প্রান্ত কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত। মনিটরের পর্দার কোন বিন্দুতে লাইটপেনের মাথা নিয়ে এলে সেই বিন্দুতে কি আছে বা সেই বিন্দুর স্থানাঙ্ক CPU বুঝতে পারে। এছাড়া এর দ্বারা VDU পর্দার কিছু লেখা বা ছবি আঁকা যায় বা পর্দার ছবিকে প্রয়োজনমতো পাল্টানো যায়। প্রকৌশল ডিজাইন, বিভিন্ন ধরনের নকশা বা ডায়াগ্রাম তৈরিতে লাইট পেন ব্যবহার করা হয়।
স্ক্যানার
স্ক্যানার একটি ইনপুট যন্ত্র। এটি কম্পিউটারের সাথে সংযোগকারী আলোক সংবেদী যন্ত্র বিশেষ। মুদ্রিত কোন ছবি, ক্যামেরায় তোলা ছবি বা লেখা হুবহু কম্পিউটারের ইনপুট করার জন্য স্ক্যানার ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে কম্পিউটারে নেওয়া ছবি, রেখা বা লেখা ইত্যাদি প্রয়োজনে ছোট বা বড় করা যায়; সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন, রংয়ের পরিবর্তন ইত্যাদি কার্যাবলি সম্পাদন করা যায়। অপটিক্যাল স্ক্যানার আলোক রেখা, লেখা ইত্যাদি তথ্য পাঠ করে থাকে। স্ক্যানার অনেকটা ফটোকপি মেশিনের মতো। এর মাধ্যমে যে কোন লেখা, ছবি, ড্রয়িং অবজেক্ট ইত্যাদি স্ক্যান করে কম্পিউটারে ডিজিটাল ইমেজ হিসেবে কনভার্ট করা যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমন, Adobe Photoshop এর মাধ্যমে ডিজিটাল ইমেজকে ইচ্ছেমতো এডিট করা যায়। স্ক্যানার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে; যথা-
- ক. ফ্লাটবেড স্ক্যানার (Flatbed)
- খ. হ্যান্ড হেল্ড স্ক্যানার (Hand Held Scanner)
- গ. ড্রাম স্ক্যানার (Drum Scanner)
MICR (Magnetic Ink Character Reader)
চৌম্বক কালি বা ফেরোসোফেরিক অক্সাইডযুক্ত কালির সাহায্যে MICR লেখা হয়। এই কালিতে লেখা কাগজ শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রে রাখলে কালির ফেরোসোফেরিক অক্সাইড চুম্বকে পরিণত হয়। এরপর এই বর্ণচুম্বকগুলো তাড়িৎ চৌম্বকীয় আবেশের দ্বারা তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন করে। এই আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের মান থেকে কোন বর্ণ পড়া হচ্ছে কম্পিউটার তা বুঝতে পারে ও সঞ্চিত রাখে। এই পদ্ধতিতে ব্যাংকের চেকের চেক নম্বর লেখা ও পড়া হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের সকল তফসিলি ব্যাংকে MICR যুক্ত চেক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ওএমআর (Optical Mark Reader - OMR)
অপটিক্যাল মার্ক রিডার এমন এক ধরনের আলোক সংবেদনশীল স্ক্যানার যন্ত্র, যা কলম বা পেনসিল দিয়ে বিশেষ কাগজে দাগাঙ্কিত কোনো পূর্বে নির্ধারিত চিহ্নকে (যেমন- গোলাকার বা বর্গাকার) রিড করে সংশ্লিষ্ট চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত তথ্য কম্পিউটারে প্রেরণ করে। কম্পিউটার উক্ত তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করে। পেন্সিলের সীসের উপাদান গ্রাফাইটের বিদ্যুৎ-পরিবাহিতা এবং কালির দাগের আলোর প্রতিফলন বিচার করে OMR দাগ (Mark) বুঝতে পারে। সাধারণত নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার উত্তরপত্র, পণ্যের বাজার জরিপ, জনমত জরিপ, পরিচিতিমূলক তথ্যাবলি ইত্যাদি ক্ষেত্রে OMR ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ডাটা ইনপুট দিতে OMR টেকনোলজি প্রথম ব্যবহার করা হয় ১৯৯৪ সনে।
ওসিআর (Optical Character Reader - OCR)
OCR বিভিন্ন আকারের দাগ, চিহ্ন এবং সব ধরনের আলফানিউমেরিক ক্যারেক্টার পড়তে পারে। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে শুধুমাত্র ছাপার লেখা না, হাতের লেখা পর্যন্ত পড়তে পারে। ওসিআর শুধু দাগই বোঝে না, বিভিন্ন বর্ণের পার্থক্যও বুঝতে পারে। OCR-এর কার্যপ্রণালি মূলত OCR সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এ ক্ষেত্রে OCR যন্ত্রটি প্রথমে ডকুমেন্টের বিটম্যাপ ইমেজ তৈরি করে। অতঃপর OCR সফটওয়্যার সেগুলোকে ASCII টেক্সটে রূপান্তরিত করে ফলে কম্পিউটার বিভিন্ন অক্ষর, বর্ণ, সংখ্যা বা বিশেষ ক্যারেক্টার চিনতে পারে।। ইনস্যুরেন্স, প্রিমিয়াম নোটিশ, চিঠির পিনকোড, ক্যাশ রেজিস্টার, ইলেকট্রিক বিল ইত্যাদি পড়ার জন্য OCR ব্যবহৃত হয়।
বারকোড রিডার (Barcode Reader)
বারকোড রিডার একটি অপটিক্যাল ইনপুট ডিভাইস। বারকোড বলতে কম-বেশি চওড়াবিশিষ্ট পর্যায়ক্রমে কতকগুলো বার বা রেখার সমাহারকে বোঝায়। একে ইউনিভার্সাল প্রোডাক্ট কোড (Universal Product Code)ও বলা হয়। দোকান থেকে বিক্রিত জিনিসের প্যাকেটের উপর বার কোডের সাহায্যে জিনিসের নাম এবং নির্মাণকারীর নাম এবং মূল্য ইত্যাদি তথ্য লেখা থাকে। অতঃপর একটি কম্পিউটার বার কোড রিডারের সাহায্যে কোডটি পড়ে তা কোন সংখ্যা বোঝায়, তা জেনে নিতে পারে। কম্পিউটারের স্মৃতিতে প্রতিটি জিনিসের বারকোড নম্বর ও দাম রক্ষিত থাকে। এ থেকে কম্পিউটার বিক্রিত জিনিসের নাম ও দাম লিখে বিল তৈরি করে এবং সাথে সাথে বিক্রিত জিনিসের স্টকও আপডেট করে।
সেন্সর (Sensor)
সেন্সর হলো এমন এক ধরনের ডিভাইস যা কোনো সংকেতকে চিহ্নিত বা সনাক্ত করতে থাকে। অধিকাংশ সেন্সরই ইলেকট্রিক্যাল হয়ে থাকে। সেন্সরগুলো এক ধরনের ট্রান্সডিউসার। এগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- লাইট সেন্সর, সাউন্ড সেন্সর, হিট সেন্সর, বায়োমেট্রিক টাইম ক্লক সেন্সর ইত্যাদি।
ওয়েবক্যাম (WebCam)
ওয়েবক্যাম হলো একটি ভিডিও ক্যামেরা যা কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে রিয়েল টাইম ইমেজ বা ভিডিও আদান-প্রদান করে। এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে ভিডিও চ্যাটিং করা যায়। এর মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে ভিডিও দেখে নিরাপত্তার কাজ করা যায় এবং ভিডিও রেকর্ডিংও করা যায়।
ডিজিটাল ক্যামেরা (Digital Camera)
চলন্ত এবং স্থির ছবি তুলে তা কম্পিউটারে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়। ডিজিটাল ক্যামেরাতে ফিল্ম থাকে না। এতে CCD (Charge Coupled Device) নামক একটি চিপ থাকে। এর কাজও ফিল্মের মতই এবং এটিও আলোকসংবেদনশীল। সিসিডি হলো টিনি লাইট সেনসিটিভ ডায়োড (Tiny Light Sensitive Diode) যা ফোটনকে ইলেকট্রনে কনভার্ট করে। অর্থ্যাৎ ফোকাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি বা লাইটকে ইলেকট্রনিক চার্জে পরিণত করে। সিসিডি এর পৃষ্ঠদেশে ছোট ছোট অনেক বর্গাকার পিক্সেল থাকে। প্রতিটি পিক্সেল একটি ছবির একটি অংশ ধরে রাখে। তাই সিসিডিতে যত বেশি পিক্সেল থাকবে সেটি তত সূক্ষ্মভাবে ছবি ধরে রাখতে পারবে।
মাইক্রোফোন
মাইক্রোফোন ও এক ধরনের ইনপুট যন্ত্র, যাকে কথ্য ভাষায় মাইক ও বলা হয়ে থাকে। এটি এক ধরনের সেন্সর হিসেবে কাজ করে, যা শব্দ শক্তিকে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তর করে। ফলে তারের মাধ্যমে সংবাহন সম্ভব হয়। কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, অডিও রেকর্ডার, শ্রবণসহায়ক যন্ত্র, মেগাফোন, রেডিও বা টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় । আধুনিক কালের বেশির ভাগ মাইক্রোফোনই তড়িৎ-চুম্বকীয় আবেশ, ক্যাপাসিট্যান্স বা ধারকত্বের পরিবর্তন, পিজোইলেক্ট্রিক ইফেক্ট অথবা বাতাসের চাপের পার্থক্য ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক সিগনাল তৈরী করে।
আউটপুট ডিভাইস
কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট বা সিপিইউ প্রাপ্ত তথ্য বা ইনপুটকে ব্যবহারকারীর দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন করে। প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন হলে তার ফল পাওয়া যায়। এই ফলকেই বলা হয় আউটপুট (Output)। প্রক্রিয়াকরণের পর যে সকল যন্ত্রের সাহায্যে ফল পাওয়া যায়, সে সকল যন্ত্রকে আউটপুট ডিভাইস (Output Device) বলা হয়। বহুল ব্যবহৃত আউটপুট ডিভাইসগুলো হলো-
- মনিটর (Monitor) : সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত আউটপুট ডিভাইস।
- প্রিন্টার (Printer)
- স্পিকার (Speaker)
- প্লটার (Plotter)
- ফিল্ম রেকর্ডার (Flim Recoder)
- প্রজেক্টর (Projector)
- হেডফোন (Head Phone)
- ইমেজ সেটার (Image Setter)
মনিটর (Monitor)
টেলিভিশনের মত দেখতে কম্পিউটার ব্যবস্থার অংশটিকে মনিটর বলা হয়। মনিটরের কাজ হলো লেখা ও ছবি দেখানো। মনিটরকে VDU (Visual Display Unit)ও বলা হয়। প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে মনিটরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১। ক্যাথোড রশ্মির টিউব মনিটর (Cathod Ray Tube - CRT): টিউবের ভিতরের দিকে ফসফর নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের প্রলেপ থাকে। সাদাকালো সিআরটি মনিটরে একটি ইলেকট্রন গান থাকে এবং রঙিন মনিটরে তিনটি মৌলিক রঙ [লাল (Red), সবুজ (Green), আসমানি (Blue)] প্রদর্শনের জন্য তিন ধরনের ইলেকট্রন গান থাকে। ইলেকট্রন গান থেকে নির্গত ইলেকট্রন ফসফরের উপর আঘাত হানে। ইলেকট্রন রশ্মিগুলো আঘাত হানার পর ফসফর দানাগুলো আলোকিত হয় এবং পর্দায় ছবি হিসেবে পরিস্ফুটিত হয়। এ ধরনের মনিটরে কম উজ্জ্বল ডিসপ্লে হয়ে থাকে। আকারে অপেক্ষাকৃত বড় এবং বিদ্যুৎ খরচ বেশি হওয়ায় মনিটরগুলোর ব্যবহার দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
২। ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটর (Flat Panel Monitor): এ ধরনের মনিটরগুলোতে ইলেকট্রন গান বা পিকচার টিউব থাকে না। সাধারণত ক্যাথোড রশ্মি টিউবের পরিবর্তে এলসিডি (Liquid Crystal Display-LCD) বা এলইডি (Light Emitting Diode-LED) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটর ওজনে অনেক হালকা, অল্প জায়গা দখল করে এবং বিদ্যুৎ খরচ কম। বর্তমানে ডেস্কটপ থেকে শুরু করে নোটবুক, ল্যাপটপ ইত্যাদিতে ক্যাথোড রশ্মি টিউবের পরিবর্তে এলসিডি বা এলইডি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ক্যালকুলেটর কিংবা ডিজিটাল ঘড়িতেও এলসিডি ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়। LED মনিটরের ডিসপ্লে কোয়ালিটি LCD মনিটর অপেক্ষা ভাল এবং LED মনিটরে বিদ্যুৎ খরচ ৪০% কম। LED মনিটরে চোখের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং স্থায়িত্বকাল বেশি। এটি তৈরি করার সময় LCD মনিটরের মতো মারকারি ব্যবহার করা হয় না বিধায় এটি বেশি পরিবেশবান্ধব।
মনিটরের বৈশিষ্ট্য :
- ডট পিচ (Dot Pitch): রঙিন মনিটরের পর্দার ভিতরের পিঠ লাল, সবুজ ও আসমানি এই তিনটি মৌলিক বর্ণের ফসফর দানার সম্মিলনে গঠিত অসংখ্য ফসফর বিন্দুত্রয়ী (Dot triad) দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। পাশাপাশি দুটি বিন্দুত্রয়ীর একই বর্ণের দুটো ফসফর বিন্দুত্রয়ীর কোনাকোনি দূরত্বকে ইংরেজিতে 'ডট পিচ' বলা হয়। ডট পিচ যত কম হবে ফসফর বিন্দুত্রয়ী (Dot triad) পরস্পরের সাপেক্ষে যত কাছাকাছি থাকবে, পর্দায় প্রদর্শিত চিত্র তত পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট হবে। ডট পিচকে মিলিমিটার এককে প্রকাশ করা হয়।
- পিক্সেল (Pixel): কম্পিউটারে তথ্য প্রদর্শনের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে পিক্সেল। এই শব্দটি ইংরেজি Picture Element এর সংক্ষিপ্ত রূপ। পিক্সেল হচ্ছে ডেটা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত মাধ্যমের (যেমন- মনিটরের পর্দা) ক্ষুদ্রতম এলাকা যার বর্ণ এবং উজ্জ্বলতা স্বাতন্ত্র্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- রেজুলেশন (Resulation): ডিসপ্লে পর্দা বা স্ক্রিনে প্রদর্শিত ছবির সূক্ষ্মতা (Sharpness) কে রেজুলেশন বলে। স্ক্রিনের প্রতি ইঞ্চিতে যত বেশি পিক্সেল থাকবে ছবি তত বেশি সুক্ষ্ম হবে।
Resolution = Vertical Pixel × Horizontal Pixel.
Resolution Pixel HD (High-definition) 1280 × 720 Full HD 1920 × 1080 4K 4000 - রিফ্রেস রেট (Refresh rate): রিফ্রেস রেট হলো পিক্সেলের উজ্জ্বলতা ঠিক রাখার জন্য প্রতি সেকেন্ডে পিক্সেলগুলো কতবার রিচার্জ হয় তার সংখ্যা। Refresh rate যত বেশি হবে ইমেজ স্ক্রিনে তত বেশি দৃঢ় দেখাবে। Refresh rate কে হার্টজ এককে প্রকাশ করা হয়।
মনিটর ও চোখের সমস্যা :
মনিটরের অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা, অপর্যাপ্ত বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আলো, চোখ থেকে মনিটরের দূরত্বের গরমিল ইত্যাদি কারণে চোখে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- 'মনিটরের আলো চোখের জন্য সহনশীল করে সেট করতে হবে। সর্বোচ্চ যতদূরে বসে মনিটরের লেখাগুলোকে স্পষ্ট পড়া যায় তত দূরত্বে বসা উত্তম। (আদর্শ দূরত্ব: ২-৩ ফুট)
- মনিটরের অবস্থান চোখের উচ্চতা থেকে ১০-১৫ ডিগ্রি নিচে হতে পারে তবে সমান উচ্চতা হলে সবচেয়ে ভাল।
প্রিন্টার (Printer)
যে যন্ত্রের সাহায্যে কম্পিউটারে প্রাপ্ত ফলাফল কাগজে ছাপানো যায়, তাকে প্রিন্টার বলা হয়। অন্যান্য আউটপুট ডিভাইসের তুলনায় প্রিন্টার একটি ধীরগতি আউটপুট ব্যবস্থা। প্রিন্টারের মান কী রকম হবে তা নির্ভর করে প্রিন্টারের রেজুলেশনের উপর। প্রিন্টারের রেজুলেশন পরিমাপক একক ডিপিআই (DPI)। DPI এর পূর্ণরূপ হলো Dots Per Inch। প্রিন্টার একটি অফ লাইন ডিভাইস। প্রিন্টারের শ্রেণিবিভাগ নিচে দেওয়া হল :
ক) ধাক্কা বা ইমপেক্ট প্রিন্টার (Impact Printer) : যে প্রিন্টারে প্রিন্টহেড যে কাগজে ছাপা হয় তাকে স্পর্শ করে, তাকে ইমপেক্ট প্রিন্টার বলা হয়। ধীরগতি সম্পন্ন এ সকল প্রিন্টারের ছাপা সাধারণ মানের (অর্থাৎ প্রিন্টারের রেজুলেশন কম) এবং প্রিন্টের সময় বিরক্তিকর শব্দ হয়।
১) লাইন প্রিন্টার (Line Printer): প্রতিবারে একটি সম্পূর্ণ লাইন ছাপা হয়। এটি ধাক্কা প্রিন্টারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রতগতির। লাইন প্রিন্টার প্রতি মিনিটে ২০০ থেকে ৩০০০ লাইন ছাপাতে পারে।
২) সিরিয়াল প্রিন্টার (Serial Printer) বা বর্ণ প্রিন্টার (Character Printer): সিরিয়াল প্রিন্টার টাইপ রাইটারের মতো একবারে মাত্র একটি বর্ণ ছাপা হয়। এগুলো ধীরগতি সম্পন্ন। এ সকল প্রিন্টারের দাম কম কিন্তু এক নাগারে ঘণ্টাখানেকের বেশি কাজ করতে পারে না- উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
ডট মেট্রিক্স প্রিন্টার (Dot Matrix Printer): আয়তাকারে সাজানো কতকগুলো বিন্দুকে ডট ম্যাট্রিক্স বলে। যেমন; বিন্দুগুলো ৮টি সারি এবং ১২টি স্তম্ভে সাজানো থাকলে তাকে বলে ৮ × ১২ ডট ম্যাট্রিক্স। এই বিন্দুগুলোর মধ্যে কিছু বিন্দু নির্বাচন করে যেকোনো বর্ণ ফুটিয়ে তোলা যায়। ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারে লেখার জন্য ছোট পিনে গ্রিড ব্যবহার করা হয়। অনেকগুলো পিনের মাথা রিবনের উপর আঘাত করে কাগজের উপর বিন্দু বসিয়ে অক্ষর তৈরি করা হয়। সাধারণত এ প্রিন্টারে ৭, ৯ অথবা ২৪ পিন থাকে, যেগুলো লাইন বরাবর চলাচল করে বিন্দুর মাধ্যমে অক্ষর তৈরি করে। এ প্রিন্টারে ছাপা অক্ষর বা প্রতীক সূক্ষ্ম হয় না। এর গতি পরিমাপক একক cps (characters per second)।
ডেইজি হুইল প্রিন্টার (Daisy Wheel Printer): ডেইজি হুইল প্রিন্টারে একটি চ্যাপ্টা চাকার সঙ্গে সাইকেলের স্পোকের মতো অনেকগুলো স্পোক লাগানো থাকে। প্রতিটি স্পোকের মাথায় একটি বর্ণ এমবস করা থাকে। স্পোকগুলোসহ চাকাকে একটি ডেইজি ফুলের মতো দেখতে বলে এর এই নাম।
খ) অধাক্কা বা নন-ইমপেক্ট প্রিন্টার (Non-Impact Printer) : যে প্রিন্টারে প্রিন্টহেড যে কাগজে ছাপা হয় তাকে স্পর্শ করে না, তাকে নন-ইমপেক্ট প্রিন্টার বলা হয়। উচ্চগতি সম্পন্ন এ সকল প্রিন্টারের ছাপা উচ্চমানের (অর্থাৎ প্রিন্টারের রেজুলেশন বেশি) এবং প্রিন্টের সময় কোনো বিরক্তিকর শব্দ হয় না।
১) ইংকজেট প্রিন্টার (Inkjet Printer) : ইঙ্কজেট প্রিন্টারে কতকগুলো নোজল দিয়ে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত তরল কালি কাগজের দিকে স্প্রে করা হয়। একটি তড়িৎক্ষেত্র এ চার্জযুক্ত কালির সুক্ষ্নকণাগুলোকে ঠিকমতো সাজিয়ে দিয়ে কাগজের উপর কোনো বর্ণ ফুটিয়ে তোলে। স্বল্পদামী প্রিন্টার হিসেবে ইঙ্কজেট প্রিন্টার জনপ্রিয়। উদাহরণ: Cannon Bubble Jet, HP Deskjet, Epson Stylus ইত্যাদি।
২) লেজার প্রিন্টার (Laser Printer): লেজার প্রিন্টারে লেজার রশ্মি (LASER Ray) এর সাহায্যে কাগজে লেখা ফুটিয়ে তোলা হয়। লেজার প্রিন্টার মুদ্রণের জন্য লেজার রশ্মি (আলোকরশ্মি) একটি আলোক সংবেদনশীল ড্রামের উপর মুদ্রণযোগ্য বিষয়ের ছাপা তৈরি করে। তখন লেজার রশ্মির প্রক্ষেপিত অংশ টোনার (গুঁড়ো কালি) আকর্ষণ করে। এরপর ড্রাম সেই টোনারকে কাগজে স্থানান্তরিত করে। কাগজের উপর পতিত টোনার উচ্চতাপে গলে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসে যায়। এভাবে লেজার প্রিন্টারে মুদ্রণের কাজ সম্পন্ন হয়। সাধারণত ডেস্কটপ পাবলিশিং এর কাজে এবং অফিস আদালতে লেজারপ্রিন্টার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উচ্চগতিসম্পন্ন এ প্রিন্টারের ছাপা খুবই উন্নতমানের। একে পেজ প্রিন্টারও বলা হয়। উদাহরণ- HP Laserjet, Samsung ML-2010, Canon LBP 3500 ইত্যাদি। এর গতি পরিমাশক একক ppm (pages per minute) ।
প্লটার (Plotter)
প্লটার এক ধরনের প্রিন্টার। প্লটারে প্রিন্ট হয় পেন এর সাহায্যে। প্লটারে অতি চিকন থেকে মোটা যে কোনো ধরনের পেন ব্যবহার করা যায়। স্থপতি, প্রকৌশলী এবং অন্য যেকোনো ধরনের নক্সাবিদ এবং যারা মানচিত্র তৈরি করেন তাদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম রেখার সুস্পষ্ট এবং সঠিক ব্যবহারের জন্য প্লটারে প্রিন্ট নেওয়ার প্রয়োজন হয়। প্লটার রেজোলিউশনের উপর নির্ভর করে ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক প্লটারগুলি ৬ থেকে ৩২ মিমি/সে গতিতে প্রিন্ট করতে পারে। প্লটার দুই রকম। যথা- ফ্লাট বেড প্লটার এবং ড্রাম প্লটার।
(১) ফ্লাট বেড প্লটারঃ এ জাতীয় প্লটারের ওপর আনুভূমিকভাবে কাগজ স্থির করে রাখা হয়। এক্ষেত্রে X ও Y উভয় অক্ষ বরাবরই পেনটি সরতে পারে। প্রোগ্রামের নির্দেশমতো CPU পেনটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, ফলে ছবি, গ্রাফ, ম্যাপ, নকশা প্রিন্ট হয়ে থাকে।
(২) ড্রাম প্লটারঃ এ জাতীয় প্লটারে একটি ঘূর্ণায়মান ড্রামের ওপর আনুভূমিকভাবে কাগজ জড়ানো থাকে। কাগজের ওপর জড়ানো পেন কেবল X অক্ষ বরাবরই যেতে পারে। ড্রামের ঘূর্ণনের জন্য কাগজ আগে পিছনে প্রয়োজনমতো সরতে পারে। এক্ষেত্রে সফটওয়্যারের নির্দেশমতো CPU পেনটি নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রয়োজনীয় ছবি আকা হয়ে থাকে।
প্রজেক্টর (Projector)
প্রজেক্টর হলো একটি ইলেকট্রো-অপটিক্যাল যন্ত্র যার মাধ্যমে কম্পিউটারের কোন তথ্য, ছবি, ভিডিও বড় স্ক্রিনে উপস্থাপন করা যায়। বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ক্লাসরুম ইত্যাদি ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। প্রজক্টর প্রধানত ২ প্রকার যথাঃ ডিএলপি (ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং) এবং এলসিডি(তরল স্ফটিক প্রদর্শন।
ডিএলপিঃ ডিএলপি প্রজেক্টর কে ওয়ান চিপ ও থ্রি চিপ হিসেবেও ধরা যায় যার প্রতিটি চিপে কয়েক মিলিয়ন আয়না থাকে এবং তা প্রতি সেকেন্ডে কয়েক হাজারের বেশি আলোক প্রতিবিম্বিত করে। ওয়ান-চিপ ডিএলপি প্রজেক্টর 16 মিলিয়নেরও বেশি রঙ উত্পাদন করতে পারে যখন থ্রি-চিপ মডেল 35 ট্রিলিয়ন এরও বেশি রঙ উত্পাদন করতে পারে। তাই এটি ভিডিও, ছবিকে আরও প্রাকৃতিক এবং জীবন্ত করে তোলে।
এলসিডিঃ এলসিডি টাইপ সাধারণত পোলারাইজড আয়নার সমন্বয়ে কাজ করে যা শুধুমাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট আলোকে প্রতিবিম্বিত করে। এই প্রযুক্তি লাল, নীল ও সবুজ প্রতিটি চ্যানেল কে আলাদা করে দেয় এবং পরে এলসিডি প্যানেল পেরিয়ে প্রিজমের মাধ্যমে পুনরায় তা ভিডিওতে রুপান্তর করে।
স্পিকার (Speaker)
স্পিকার কম্পিউটারের একটি আউটপুট যন্ত্র। কম্পিউটারে শব্দ শোনার জন্য স্পিকার ব্যবহৃত হয়। অনেক কম্পিউটারে বিল্টইন স্পিকার থাকে। একটি স্পিকার ইলেকট্রনিক শক্তিকে মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত করতে ব্যবহার করা হয়। প্রযুক্তির ভিত্তিতে অনেক ধরনের স্পিকার রয়েছে যেমন- ব্লুটুথ স্পিকার , স্টুডিও মনিটর স্পিকার , কেন্দ্রীয় চ্যানেলের স্পিকার , লাউডস্পিকার , ফ্লোর স্ট্যান্ডিং স্পিকার , স্যাটেলাইট স্পিকার , অন-ওয়াল স্পিকার , ইন-ওয়াল স্পিকার , বুকশেল্ফ স্পিকার , আউটডোর স্পিকার ইত্যাদি ।
হেডফোন (Head phone)
হেডফোন হলো কানের কাছে স্থাপিত একজোড়া ট্রান্সডুসার যা কোনো মিডিয়াপ্লেয়ার বা রিসিভার থেকে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ গ্রহণ করে সেই বৈদ্যুতিক তরঙ্গকে শ্রবণযোগ্য শব্দতরঙ্গে রূপান্তর করে। একে এয়ার ফোন, স্টেরিওফোন নামেও ডাকা হয়। হেডফোন সাধারণত একাকী শব্দ শোনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস উভয়ই
কম্পিউটারের কিছু কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে যারা ইনপুট ও আউটপুট উভয় হিসেবে কাজ করে তাদেরকে ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস বলে । যেমন:
- টাচ স্ক্রিন (Touch Screen): এই প্রযুক্তির জনক ড. স্যামুয়েল হাস্ট। টাচ স্ক্রিন হচ্ছে এমন এক ধরনের প্রযুক্তি যা দ্বারা মনিটরের বা কম্পিউটার স্ক্রীনে স্পর্শ করে মাউসের মত নির্দেশনা দেয়া যায়। মূলত টাচ স্ক্রিন হচ্ছে প্রদর্শন পর্দা। যেটি স্পর্শ পর্দা হিসেবেও কাজ করে। এই পর্দা সংবেদনশীল, যা একধরনের ইনপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করে। এর ওপর আঙুলের প্রিন্ট, নখ বা যেকোনো কাঠি দিয়ে চাপ দিলেই কাজ করে। আবার প্রদর্শিত ফলাফল প্রদর্শন করে এটি আউটপুট ডিভাইস হিসেবে ও কাজ করে থাকে ।
- মডেম (Modem) : মডেম হচ্ছে একটি হার্ডওয়্যার নেটওয়ার্ক ডিভাইস। যা ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করে থাকে । মূলত মডেম (মড্যুলেটর-ডিম্যুলেটর) হল একটি যন্ত্র যা একটি প্রাপ্ত এনালগ সংকেতকে ডিজিটাল তথ্যে রূপান্তর করে এবং ডিজিটাল তথ্যকে পাঠানোর সময় এনকোড করে এনালগ সংকেত হিসেবে প্রেরণ করে। এর উদ্দেশ্য হল সহজে সংকেত পাঠানো এবং তা আবার একই রকমভাবে অন্য প্রান্তে পাওয়া।
- পাঞ্চকার্ড (Punch Card) : একাধিক ছিদ্রযুক্ত একধরনের যন্ত্র হল পাঞ্চকার্ড যা ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ব্যবহার হয়েছিল। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী হারমান হলেরিথ (Herman Hollerith) আমেরিকার জনগণনার কাজ সম্পাদনের জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। পাঞ্চ কার্ড বা পাঞ্চড কার্ড বা আইবিএম কার্ড বা হোলেরিথ কার্ড (Hollerith card) হলো একপ্রকারের শক্ত কাগজের তৈরি কার্ড, যা এর উপরকার ছিদ্রের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে ডিজিটাল তথ্য প্রকাশ করে। পাঞ্চ কার্ডগুলোর ব্যাপক ব্যবহার হতো ঊনবিংশ শতাব্দির পোশাক শিল্পে।
- নেটওয়ার্ক কাড (Network Card) : একটি নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC) হল একটি হার্ডওয়্যার উপাদান যেটি ব্যতীত একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কম্পিউটারকে সংযুক্ত করা যাবে না। এটি একটি কম্পিউটারে ইনস্টল করা একটি সার্কিট বোর্ড যা কম্পিউটারে একটি ডেডিকেটেড নেটওয়ার্ক সংযোগ প্রদান করে।
- VCR, VCP : ভিসিআর এবং ভিসিপি হল ভিডিও প্রদর্শনের জন্য এক ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস । যার ব্যবহার বর্তমানে নাই বললেই চলে । সিডি এবং ডিভিডি আবিষ্কারের পর থেকেই এটি প্রায় বিলুপ্ত ।
- সিডি, ডিভিডি, পেনড্রাইভ
- হার্ডডিস্ক
- ক্যামেরা
- টেপরেকর্ডার
- টিভি ইত্যাদি।