ভাইরাস, রিকেটস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের অণুজীব আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা অধিকাংশই আমাদের উপকার করে। তবে কিছু কিছু অণুজীব আছে যারা আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে। তেমনি একটা অণুজীব ভাইরাস সম্পর্কে আজকে আমরা জানব । ভাইরাস একটি ল্যাটিন শব্দ । যার অর্থ বিষ। ১৮৯২ সালে ভাইরাস আবিষ্কার করেন - রুশ জীবাণুবিদ আইভানোভস্কি। প্রাণীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভাইরাস - Herpes virus এবং সবচেয়ে ছোট ভাইরাস - Polio virus । ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া ভাইরাসদেরকে দেখা যায় না। এরা সরলতম জীব। ভাইরাসের দেহে কোষপ্রাচীর, প্লাজমালেমা, সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি কিছুই নেই। ভাইরাসের নিজস্ব কোনো বিপাকীয় এনজাইম নেই। তাই ভাইরাস দেহকে অকোষীয়ও বলা হয়। এরা শুধুমাত্র আমিষ আবরণ ও নিউক্লিক এসিড (ডিএনএ বা আরএনএ) নিয়ে গঠিত। এদের আমিষ আবরণ থেকে নিউক্লিক এসিড বের হয়ে গেলে এরা জীবনের সকল লক্ষণ হারিয়ে ফেলে। তবে অন্য জীবদেহে যেইমাত্র আমিষ আবরণ ও নিউক্লিক এসিডকে একত্র করা হয়, তখনি এরা জীবনের সব লক্ষণ ফিরে পায়। অর্থাৎ জীবিত জীবদেহ ছাড়া বা জীবদেহের বাইরে এরা জীবনের কোন লক্ষণ দেখায় না। এ কারণে ভাইরাস প্রকৃত পরজীবি। ভাইরাসদের মধ্যে ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস একটি পরিচিত ভাইরাস। ভাইরাস গোলাকার, দণ্ডাকার, ব্যাঙাচির ন্যায় ও পাউরুটির ন্যায় হতে পারে। ভাইরাস মানবদেহে বসন্ত, হাম, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। বসন্ত, হাম, সর্দি ইত্যাদি বায়ুবাহিত রোগ। ধানের টুংরো ও তামাকের মোজায়েক রোগ ভাইরাসের কারণে হয়। যে সকল প্রাণী এক মানবদেহ থেকে অন্য মানবদেহে রোগ জীবাণু বহন করে, তাকে ভেক্টর বলে ।
ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য
- ভাইরাস হল অতি আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রাসায়নিক বস্তু যা প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড দ্বারা গঠিত।
- পোষক দেহের অত্যন্তরে সক্রিয় হয় এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে। পোষক দেহের বাহিরে জড় পদার্থের ন্যায় অবস্থান করে।
- ভাইরাসকে জীব ও জড়ের যোগসূত্র স্থাপনকারী বলা হয় কারণ ভাইরাসে জীব ও জড় উভয়ের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
- এতে DNA বা RNA আছে।
- জীব কোষের অভ্যন্তরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
- পরিব্যক্তি দেখা যায়।
- জেনেটিক রিকম্বিনেশন ঘটতে দেখা যায় ।
- কোষপ্রাচীর, কোষঝিল্লী, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস, সজীব অঙ্গাণু ও বিপাকীয় এনজাইম নেই। তাই এটি অকোষীয় রাসায়নিক বস্তু।
- জৈবনিক কার্যকলাপ সজীব কোষের বাহিরে হতে পারে না।
- ব্যাকটেরিওফাজ: এক ধরনের ভাইরাস যা ব্যাক্টরিয়ার দেহে পরজীবী হিসাবে বাস করে।
ভাইরাস ঘটিত রোগ
ভাইরাস উদ্ভিদের দেহে যেসব রোগ তৈরি করে:
- তামাক, শিম, পাট, পেঁপের মোজাইক রোগ
- ধানের ডোয়ার্ফ বা বামন
- ধানের টুংগো রোগ
- টমেটোর বুশিস্ট্যান্ড রোগ
- কলার বানচি টপ রোগ
ভাইরাস প্রাণিদেহে যেসব রোগ তৈরি করে:
গরু, ভেড়া, ছাগল, শুকুর মহিষের পা ও মুখের ঘা, গরুর বসন্ত রোগ তৈরি করে। এছাড়া মুরগীর রাণীক্ষেত, কুকুরের জলাতংক, গবাদিপশুর ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজ ।
ভাইরাস মানবদেহে যেসব রোগ তৈরি করে:
- বসন্ত : বসন্তরোগ দু'ধরনের - জলবসন্ত (Chicken Pox) ও গুটি বসন্ত- (Small Pox)। উভয় রোগই ভাইরাসের কারণে হয়
- গুটি বসন্ত : Varicella Zoster ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় - জলবসন্ত।
- জল বসন্ত : Variola Virus এর কারণে সৃষ্টি হয়- গুটি বসন্ত (Small Pox)।
- জন্ডিস (হেপাটাইটিস)
- জলাতঙ্ক : জলাতঙ্ক (Rabies) হল ভাইরাস জনিত এক ধরনের জুনোটিক রোগ (অর্থাৎ যে রোগ টি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়)। র্যাবিস ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাস দিয়ে এই রোগ হয়। র্যাবিস ভাইরাসকে স্ট্রিট ভাইরাস ও (Street virus) বলা হয় । এই রোগ সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী ও বন্য প্রাণীদের প্রথমে সংক্রমিত করে। কুকুর, সিংহ, বাঘ, বেজি, শিয়াল, বিড়াল ইত্যাদির কামড় থেকে জলাতঙ্ক হতে পারে । জলাতঙ্কের টিকা ও রোগজীবাণুতত্ত্ব আবিষ্কার করেন - লুইপাস্তর।
- এইডস
- সার্স : SARS এর পূর্ণরুপ -Severe Acute Respiratory Syndrome. এটি হংকং ভাইরাস নামে পরিচিত ।
- পোলিও : পোলিও ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় পোলিও রোগ। পোলিও ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে দূষিত খাদ্য ও পানি দ্বারা । ১৯৫৪ সালে পোলিও ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার করেন- যুক্তরাষ্ট্রের জেনাস সক।
- হাম : রুবেলা ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় হাম। হাম একটি বায়ুবাহিত রোগ। হাম (Measles) হলো লাইভ ভ্যাক্সিন (live vaccine)।
- হার্পিস : হার্পিস ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ হার্পিস রোগ।
- মাম্পস : প্যারামিক্সো ভাইরাস ফ্যামিলির ভাইরাসের কারণে মাম্পস হয়। মাম্পস হলো ভাইরাসজনিত প্যারোটিড নামের লালাগ্রন্থির প্রদাহ। এটি অত্যন্ত সংক্রামক (ছোঁয়াচে)। হাঁচি-কাশির (ড্রপলেট) মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এর ফলে জ্বর, মাথা ব্যথার সঙ্গে কানের সামনে ও নিচে বা চোয়ালের ওপরে দুই পাশে লালাগ্রন্থি ফুলে যায়, খাবার গিলতে বা চিবাতে ব্যথা হতে পারে।
- চিকুনগুনিয়া : চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। প্রধানত Aedes aegypti ও Aedes albopictus মশকীর কামড়ের মাধ্যমে মানব শরীরে চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। মানবদেহ থেকে মশা ও মশা থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) : ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমিত হয় বায়ুর মাধ্যমে ।
- ডেঙ্গু : ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ডেঙ্গু ভাইরাস বা ডেঙ্গি ভাইরাস । এটি ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবার ও ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত এক ধরনের আরএনএ(RNA) ভাইরাস। এ কারণে এটি ফ্ল্যাভি ভাইরাস নামে ও পরিচিত । ডেঙ্গু জ্বর সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্ল্যাভি ভাইরাসের বাহক এডিস (Aedes aegypti) নামক মশকী। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হলো উচ্চজ্বর, পেশী, হাড় ও মাথা ব্যথা, র্যাশ, শরীরের বিভিন্ন স্থান হতে রক্তপাত হতে পারে। এ রোগে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। Aedes aegypti ( এডিস মশা ) পীতজ্বরের জীবাণুও বহন করে। একই মশা ইয়েলো ফিভার ভাইরাস, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক। এছাড়া কিউলেক্স মশা ফাইলেরিয়া ; অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে।
- পীতজ্বর : ইয়েলো ফিভার ভাইরাসের (Yellow Fever Virus) কারণে সৃষ্ট রোগ পীতজ্বর।
- ভাইরাল ডায়রিয়া
- চোখ ওঠা : এটি ও ভাইরাস জনিত রোগ ।
- সাধারণ ঠান্ডা
- কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস ১৯) : করোনা ভাইরাস হলো এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতর বংশবৃদ্ধি করতে পারে। COVID-19 হলো একটি RNA virus.
- কয়েক প্রকার ক্যান্সার যেমন- সার্ভিকাল ক্যান্সার , কাপোসি সারকোমা
ভাইরাস ঘটিত পশু-পাখির রোগ :
- বার্ড-ফ্লু : Avian Influenza ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় - হাঁস মুরগির বার্ড ফ্লু।
- ক্যানাইন ডিস্টেম্পার
- ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিসিজ
ভাইরাস আমাদের যেসব উপকারে লাগে:
- টীকা তৈরিঃ বসন্ত, পোলিও, জলাতঙ্ক, জন্ডিস রোগের টীকা ভাইরাস হতে তৈরি করা হয়।
- ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ব্যাক্টেরিওফাজ ব্যবহৃত করা হয়।
- জেনেটিক প্রকৌশলে বাহক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
AIDS
AIDS কবে প্রথম ধরা পড়ে: ১৯৮১ সালের ৫ জুন আমেরিকার জর্জি রাজ্যের আটলান্টার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল সর্বপথম এইডস আবিষ্কার করেন।
- AIDS এর পূর্ণরূপ: Acquired Immuno Deficiency syndrome.
- AIDS এর জন্য কোন ভাইরাস দায়ী: HIV ভাইরাস (Human Immunodeficiency Virus).
কোন রোগে শরীরের ইমিউনিটি (immunity) নষ্ট হয়: AIDS এর জন্য দায়ী ভাইরাস HIV ভাইরাস (Human Immunodeficiency Virus). যা মানবদেহের শ্বেতকণিকার ম্যাক্রোফায এবং T-cell লিম্ফোসাইটকে আক্রমণ ও ধ্বংস করে। এর ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি (immunity) একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।
AIDS কিভাবে ছড়ায়: এইডস্ প্রধানত তিন ভাবে ছড়ায়ঃ
- HIV+ve রোগীর রক্ত কোন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে। যেমনঃ এইডস রোগীর রক্তগ্রহণ, এইডস রোগীর ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার করা ইত্যাদি।
- HIV+ve রোগীর সাথে যৌন সংগম।
- HIV+ve মায়ের কাছ থেকে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
এইডস ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এইচআইভি (HIV) সংক্রমণের সর্বশেষ পর্যায়। এ ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করে দেয় ফলে রোগীর একমাত্র পরিণতি মৃত্যু।
- ৫ জুন ১৯৮১ বিশ্বের প্রথম এইডস রোগী চিহ্নিত করা হয় - যুক্তরাষ্ট্রে।
- বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী চিহ্নিত করা হয়-১৯৮৯ সালে।
- HIV এইডস আক্রমণ ও ধ্বংস করে- শ্বেত রক্তকণিকার ম্যাক্রোফাজ এবং T-Cell লিম্ফোসাইটকে।
- এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই আক্রান্ত হতে পারে- নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ডায়রিয়ায়।
- পেনিসিলিন, বা অন্য কোনো ওষুধ দ্বারা সারানো সম্ভব নয় - এইডস।
- এইডস চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক বা কার্যকর ঔষধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় লোকের মৃত্যু অবধারিত বলে এটি ঘাতক ব্যাধি নামে পরিচিত।
- মানবদেহে HIV ভাইরাস প্রবেশ করার পর শরীরে এইডস-এর লক্ষণ প্রকাশ পায় - ৬ মাস থেকে ১০ বছরের মধ্যে।
- এইডস-এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই।
- এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য যেসব রোগে আক্রান্ত হয় তার লক্ষণগুলো হলো- শরীরের ওজন অতি কত দ্রুত হ্রাস পায়। দীর্ঘদিন (২ মাসেরও বেশি সময়) ধরে পাতলা পায়খানা: পুনঃপুন জ্বর হওয়া বা রাতে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া; অতিরিক্ত অবসাদ অনুভব করা; শুকনা কাশি হওয়া।
- মানবদেহে HIV বেশি থাকে- রক্ত, বীর্য ও বুকের দুধে ।
- AIDS রোগী মৃত্যুর কারণ কি: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় বলে বিভিন্ন রোগ জীবাণু আক্রমণ করে। এতেই রোগীর মৃত্যু হয়।
জন্ডিস বা হেপাটাইটিস
এটি আসলে কোন রোগ নয় , এটি রোগের লক্ষণ মাত্র । হেপাটাইটিস A, B, C, D ও E ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগীর লিভার বড় হয় ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেরোসিস হয়ে যায়। একে হেপাটাইটিস রোগ বলে। এ রোগের ফলে রোগীর প্রস্রাব চোখের সাদা অংশের রঙ হলদে হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ অবস্থাকে জন্ডিস বলে।
- জন্ডিস বা হেপাটাইটিস এর কারণ: Hepatitis A, B, C, D, E virus.
- হেপাটাইটিস- A, B, C, D, E এর মধ্যে শুধু হেপাটাইটিস B-ই হলো DNA ভাইরাস আর অন্যগুলো RNA ভাইরাস।
- কোন হেপাটাইটিস ভাইরাস গর্ভবতী মহিলাদের হেপাটাইটিস এর জন্য দায়ী: Hepatitis E.
- হেপাটাইটিস ভাইরাস বেশি খারাপ: হেপাটাইটিস B, C (chronic hepatitis) এর জন্য দায়ী।
- খাদ্য, পানির মাধ্যমে ছড়ায় কোন Hepatitis ভাইরাস: Hepatitis A, E.
- রক্ত ও যৌন সংগমের মাধ্যমে ছড়ায় কোন Hepatitis ভাইরাস: Hepatitis B, C, D.
- Chronic Hepatitis হলে ক্ষতি হয়: লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে।
আরো কয়েকটি ভাইরাস
সোয়াইন ফ্লু : সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সোয়াইন ফ্লু শূকরের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। H₁N₁ এবং H5N₁ ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় সোয়াইন ফ্লু রোগ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় মানুষ ও শুকুর।
নিপাহ ভাইরাস : নিপা ভাইরাসকে বলে জুনটিক ভাইরাস, অর্থাৎ পশুর থেকে মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। এই ভাইরাসের বাহক বলা হয় বাদুড়কে। ফ্লাইং ফক্স (বৈজ্ঞানিক নাম পিটারোপাস মিডিয়াস) নামে এক ফলভোজী বাদুড় এই ভাইরাসের বাহক। বাদুড় থেকে কুকুর, বিড়াল, ছাগল, ঘোড়া বা ভেড়ার শরীরের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। আক্রান্ত পশুদের দেহের অবশিষ্টাংশ, বা মলমূত্র থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
জিকা ভাইরাস : জিকা ভাইরাস ( ইংরেজি Zika virus) হচ্ছে ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবারের ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত একটি RNA ভাইরাস। এটি আসলে সংক্রামক নয়। মূলত ২ ধরনের এডিস মশা Aedes aegypti ও Aedes albopictus দিয়ে এই ভাইরাস ছড়ায়। জিকা ভাইরাসের নামকরণ করা হয় উগান্ডার জিকা বনের নামানুসারে। ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম আবিষ্কৃত হয়।
ইবোলা ভাইরাস : এ ভাইরাসের নামকরণ করা হয়- ইবোলা নদীর নাম অনুসারে। এ ভাইরাস প্রথম দেখা দেয়- গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে (১৯৭৬ সালে)। ইবোলা ভাইরাস আবিষ্কার করেন বেলজিয়ামের চিকিৎসক ডা. পিটার কিয়োট (২৭ বছর বয়সে)। সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহতম ভাইরাস হলো ইবোলা। কঙ্গোর ইবোলা নদী এর উৎপত্তিস্থল হলেও মধ্য আফ্রিকার কয়েকটি দেশ লাইবেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন ও নাইজেরিয়ায় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় যাদের মধ্য থেকে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি লোক মারা গেছে। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ইবোলা নদীর নাম অনুসারে ইবোলা ভাইরাস নামকরণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে বেলজিয়ামের চিকিৎসক ডা. পিটার কিয়োট ২৭ বছর বয়সে সর্বপ্রথম এ ভাইরাস আবিষ্কার করেন। এ ভাইরাসের ভ্যাকসিনের নাম ভি এসভি এবো। সাধারণত ইবোলা আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর লক্ষণ দেখা যায়। এর লক্ষণগুলো হলো জ্বর, গলা ব্যথা, পেশির ব্যথা এবং মাথা ধরা। এখন পর্যন্ত এ ধরনের রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।