সৌরজগৎ | Solar System

সূর্য এবং তার গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, অসংখ্য ধূমকেতু ও অগণিত উল্কা নিয়ে সৌরজগৎ গঠিত । সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। গ্রহগুলো মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। সৌরজগতের যাবতীয় গ্রহ-উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলো সূর্য। সূর্যকে ভিত্তি করে সৌরজগতের যাবতীয় কাজ-কর্ম চলে। এই মহাবিশ্বের বিশালতার মধ্যে সৌরজগৎ নিতান্তই ছোট।

আবিষ্কার : প্রাচীনকাল হতে মানুষের ধারণা ছিল পৃথিবী বিশ্বজগতের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরিতেছে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় অব্দে জ্যোতির্বিদ অ্যারিস্টর্কাস (Aristarchus) প্রথম প্রস্তাব করেন, 'পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করিতেছে' কিন্তু অ্যারিস্টর্কাস এর কথা মানুষ বিশ্বাস করেনি। 'সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবী সূর্যের চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করিতেছে'- ষোড়শ শতাব্দীতে নিকোলাস কোপার্নিকাস (Nicolaus Copernicus) গাণিতিক মডেলসহ এ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন যা Heliocentrism নামে পরিচিত।

সূর্য

সূর্য (Sun): সূর্য একটি নক্ষত্র। এটি একটি মাঝারি আকারের হলুদ বর্ণের নক্ষত্র। এর ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার এবং ভর প্রায় ১.৯৯×১০১৩ কিলোগ্রাম। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষ্ক। সূর্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ। পৃথিবী, অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহের তাপ ও আলোর মূল উৎস সূর্য। সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবী চির অন্ধকার থাকত এবং পৃথিবীতে জীবজগৎ ও উদ্ভিদজগতের কিছুই বাঁচত না। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ। সূর্য থেকে গ্রহগুলো দূরত্ব অনুযায়ী পর পর যেভাবে রয়েছে তা হলো বুধ (Mercury), শুক্র (Venus), পৃথিবী (Earth), মঙ্গল (Mars), বৃহস্পতি (Jupiter), শনি (Saturn), ইউরেনাস (Uranus) এবং নেপচুন (Neptune)। গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃহস্পতি এবং ছোট বুধ। বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি বেশ উজ্জ্বল এবং কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই দেখা যায়। ইউরেনাস ও নেপচুন এতটা কম উজ্জ্বল যে দূরবীক্ষণ ছাড়া এদের দেখা যায় না।

 সৌরজগৎ
  • গতিবেগ : গ্যালাক্সিতে সূর্যের গতিবেগ ২২০ কি:মি:/ সেকেন্ড।
  • উপাদান : সূর্যের প্রধান গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন, আসলে মোট ভরের তিন চতুর্থাংশই হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেনের পরেই সবচেয়ে প্রাচুর্য্যময় মৌল হিলিয়াম। উপাদানগুলোর মধ্যে হাইড্রোজেন ৯১.২%, হিলিয়াম ৮.৭%, অন্যান্য ০.১%।
  • ব্যাস : ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কি:মি। ব্যাসে সূর্য পৃথিবীর ১০৯ গুণ এবং চাঁদের চেয়ে ৪০০ গুণ বড়।
  • আয়তন : আয়তনে সূর্য পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লক্ষ গুণ বড় এবং চাঁদের চেয়ে ২ কোটি ৩০ লক্ষ গুণ বড়।
  • বয়স : ৫০০০ মিলিয়ন বৎসর
  • তাপমাত্রা : কেন্দ্রভাগেঃ প্রায় ১৫০,০০০,০০০° সে । পৃষ্ঠভাগেঃ প্রায় ৬,০০০° সে.।
  • আবর্তন : সূর্য নিজ অক্ষের উপর এক বার আবর্তন করতে ২৫ দিন সময় লাগে।
  • সৌরকলঙ্ক : সূর্যপৃষ্ঠের যে সব স্থানের তাপমাত্রা এর পার্শ্ববর্তী স্থান অপেক্ষা কম, পৃথিবী থেকে সে স্থানগুলো কালো দেখায়, তাদের সৌরকলঙ্ক বলে। সৌর কলঙ্কগুলোকে সর্বপ্রথম গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন।
  • সৌর ঝলক : সৌর ঝলক হল সূর্য থেকে উৎক্ষিপ্ত চার্জযুক্ত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। সূর্য সাধারণত প্রতি ৩-৪ বছরে একবার কয়েকটন পরিমাণ চার্জযুক্ত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম আলোর ঝলকানিসহ মহাশূন্যে ছুঁড়ে দেয় যা ৫ কোটি কি.মি. জুড়ে বিস্তৃত হয়। সৌর ঝলকের কারণে পৃথিবীতে বেশকিছু সমস্যা বিশেষ করে চৌম্বক ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে টেলিফোন সংযোগ, বৈদ্যুতিক তার ও ইলেকট্রনিক ট্রান্সমিশনে সাময়িক বিঘ্ন ঘটতে পারে।

গ্রহ

সৌরজগতের গ্রহ ৮টি। সূর্য থেকে সৌরজগতের গ্রহগুলো দূরত্ব অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে অবস্থান করছে। পৃথিবী (Earth) ছাড়া অন্যান্য সকল গ্রহ এবং উপগ্রহের নাম গ্রিক বা রোমান পৌরাণিক কাহিনী হতে নেওয়া হয়েছে।

  1. বুধ (Mercury): রোমান বাণিজ্য দেবতার নামানুসারে
  2. শুক্র (Venus): রোমান ভালবাসা এবং সৌন্দর্যের দেবীর নামানুসারে
  3. পৃথিবী (Earth): .......
  4. মঙ্গল (Mars): রোমান যুদ্ধদেবতার নামানুসারে।
  5. বৃহস্পতি (Jupiter): রোমান দেবতাদের রাজার নামানুসারে।
  6. শনি (Saturn): রোমান কৃষি দেবতার নামানুসারে।
  7. ইউরেনাস (Uranus): রোমান স্বর্গের দেবতার নামানুসারে।
  8. নেপচুন (Neptune): রোমান সমুদ্র দেবতার নামানুসারে।

বামন গ্রহ : বামন কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল ছোটো আকার বা খর্বাকৃতি। অর্থাৎ বামন গ্রহ বলতে বোঝায় ছোটো আকৃতির গ্রহ। এগুলো এমন একটি গ্রহীয়-ভরযুক্ত বস্তু যা গ্রহগুলির মতো মহাকাশে সেটির অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে না, আবার যা একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহও নয়। অর্থাৎ, বামন গ্রহগুলি সূর্যকে প্রত্যক্ষভাবে প্রদক্ষিণ করে এবং নির্দিষ্ট আকার পাওয়ার জন্য এগুলির ভর যথেষ্টই রয়েছে। সৌরজগতে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত এমন ৫টি বামন গ্রহ রয়েছে। যথাঃ
১. সেরেস (Ceres)
২. প্লুটো (Pluto)
৩. হাউমিয়া (Haumea)
৪. মেকমেক (Makemake)
৫. এরিস (Eris)

উপগ্রহ : সৌরজগতের সর্বমোট ৪৯টি উপগ্রহ আছে। শনির সর্বাধিক ২২টি উপগ্রহ আছে। বুধ ও শুক্রের কোন উপগ্রহ নেই। পৃথিবীর ১টি, মঙ্গলের ২টি, বৃহস্পতির ১৬টি, ইউরেনাসের ৫টি, নেপচুনের ২টি এবং প্লুটোর ১টি উপগ্রহ রয়েছে। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ বৃহস্পতির গ্যানিমেড এবং সবচেয়ে ছোট উপগ্রহ বৃহস্পতির লেডা ।

উপগ্রহগুলোর আকারের ক্রম:
গ্যানিমেড > টাইটান > ক্যালিস্টা > লো > চাঁদ > ..... > লেডা

গ্রহাণুপুঞ্জ : মঙ্গল গ্রহের পর ৫৬.৩১ কোটি কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গ্রহ নেই । এই বিস্তীর্ণ মহাশূন্যে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জ্যোতিষ্ক রয়েছে। ১.৬ কিলোমিটার থেকে ৮০৫ কিলোমিটার ব্যাস সম্পন্ন এ সব জ্যোতিষ্ককে গ্রহাণু বলে। বিজ্ঞানীগণ এরূপ সহস্রাধিক গ্রহাণুর কক্ষপথ সুনির্দিষ্ট করেছেন। দলবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বলে এগুলোকে একত্রিতভাবে গ্রহাণুপুঞ্জ বলে।

বুধ (Mercury): বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ। এটি সৌরজগতের দ্রুততম গ্রহ। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার; এর ব্যাস ৪,৮৫০ কিলোমিটার। সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকায় সূর্যের আলোর তীব্রতার কারণে সবসময় একে দেখা যায় না। সৌরজগতের গ্রহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে বুধের সময় লাগে ৮৮ দিন। সুতরাং বুধ গ্রহে ৮৮ দিনে এক বছর হয়। বুধের মাধ্যাকর্ষণ বল এত কম যে এটি কোনো বায়ুমন্ডল ধরে রাখতে পারে না। এখানে নেই মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস ও পানি। সুতরাং প্রাণির অস্তিত্ব নেই। ১৯৭৪ সালে মার্কিন মহাশূন্যযান মেরিনার-১০ বুধের যে ছবি পাঠায় তা থেকে দেখা যায় যে, বুধের উপরিতল একদম চাঁদের মতো। ভূত্বক অসংখ্য গর্তে ভরা এবং এবড়ো-থেবড়ো। এখানে আছে অসংখ্য পাহাড় ও সমতলভূমি। বুধের কোনো উপগ্রহ নেই।

শুক্র (Venus): শুক্র পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ। একে 'পৃথিবীর জমজ গ্রহ' বলা হয়। বুধের মতো শুক্র গ্রহকেও ভোরের আকাশে শুকতারা এবং সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা হিসেবে দেখা যায়। শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা আসলে কোনো তারা নয়। কিন্তু নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে বলেই আমরা একে ভুল করে তারা বলি। শুক্র গ্রহটি ঘন মেঘে ঢাকা। তাই এর উপরিভাগ থেকে সূর্যকে কখনই দেখা যায় না। শুক্রের মেঘাচ্ছন্ন বায়ুমন্ডল প্রধানত কার্বন ডাইঅক্সাইডের তৈরি। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহ। সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের দূরত্ব ১০.৮ কোটি কিলোমিটার। এর দিন ও রাতের মধ্যে আলোর বিশেষ কোনো তারতম্য হয় না। এখানে বৃষ্টি হয় তবে এসিড বৃষ্টি। শুক্রের ব্যাস ১২,১০৪ কিলোমিটার। সূর্যকে ঘুরে আসতে শুক্রের সময় লাগে ২২৫ দিন। সুতরাং শুক্রে ২২৫ দিনে এক বছর। শুক্রের কোনো উপগ্রহ নেই। সকল গ্রহ এদের নিজ অক্ষের উপর পশ্চিম থেকে পূর্বে পাক খেলেও একমাত্র শুক্র গ্রহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাক খায়।

পৃথিবী (Earth): পৃথিবী আমাদের বাসভূমি। সূর্য থেকে দূরত্বের ক্রম অনুসারে পৃথিবী সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ৯৩ মিলিয়ন মাইল বা ১৫ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস প্রায় ১২,৬৬৭ কিলোমিটার। সূর্য হতে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সে. বা ৮.৩২ মিনিট । পৃথিবী একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। তাই এখানে ৩৬৫ দিনে এক বছর। চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ (ইটালিয়ান ভাষায় লুনা) । পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের একবার ঘুরতে সময় লাগে ২৯ দিন। আয়তন এবং ব্যাসে পৃথিবী চাঁদের চেয়ে যথাক্রমে ৫০ গুণ এবং ৪ গুণ বড় । পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব ৩,৮১,৫০০ কিমি বা ২,৩৮,৪৩৭ মাইল। পৃথিবী থেকে চাঁদের সর্বনিম্ন দূরত্ব ৩,৫৬,৩২৯ কি:মি: বা ২.২২,৭০৫ মাইল এবং সর্বোচ্চ দূরত্ব ৪,০৬,৬৭১ কিমি: বা ২.৫২,৫৯০ মাইল। চাঁদ হতে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগবে প্রায় ১.৩ সেকেন্ড। পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যার বায়ুমন্ডলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও তাপমাত্রা রয়েছে যা উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বসবাসের উপযোগী। সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে।

মঙ্গল (Mars): মঙ্গল পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী। বছরের অধিকাংশ সময় একে দেখা যায়। খালি চোখে মঙ্গল গ্রহকে লালচে দেখায় কারণ মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে খুবই স্বল্প পরিমাণ অক্সিজেন রয়েছে। অক্সিজেনের সংস্পর্শে এ গ্রহের পাথরগুলো মরচে পড়ে গেছে । মঙ্গল গ্রহের আকাশের রঙ গোলাপী। সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ২২.৮ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস ৬,৭৮৭ কিলোমিটার এবং পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় অর্ধেক। এই গ্রহে দিনরাত্রির পরিমাণ পৃথিবীর প্রায় সমান। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে মঙ্গলের সময় লাগে ৬৮৭ দিন। মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে রয়েছে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান কার্বন ডাইঅক্সাইড (৯৯%)। এ গ্রহে অক্সিজেন ও পানির পরিমাণ খুবই কম এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি (শতকরা ৯৯ ভাগ) যে প্রাণীর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। মঙ্গলে ফোবোস ও ডিমোস নামে দুটি উপগ্রহ রয়েছে।

বৃহস্পতি (Jupiter): বৃহস্পতি সৌরজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম গ্রহ। সবচেয়ে বড় গ্রহ বলে একে গ্রহরাজ বলা হয়। এর ব্যাস ১,৪২,৮০০ কিলোমিটার। আয়তনে বৃহস্পতি পৃথিবীর চেয়ে ১,৩০০ গুণ বড়। এটি সূর্য থেকে প্রায় ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে। তাই পৃথিবীর সাতাশ ভাগের একভাগ তাপ পায়। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে তৈরি। বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে তাপমাত্রা খুবই কম এবং অভ্যন্তরের তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি (প্রায় ৩০,০০০° সেলসিয়াস)। সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে বৃহস্পতির সময় লাগে ৪,৩৩১ দিন বা প্রায় ১২ বছর । বৃহস্পতির উপগ্রহের সংখ্যা ৭৯টি। এর প্রধান উপগ্রহ লো, ইউরোপা, গ্যানিমেড ও ক্যালিস্টো। এ গ্রহে জীবের অস্তিত্ব নেই।

শনি (Saturn): শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ১৪৩ কোটি কিলোমিটার। এটি গ্যাসের তৈরি বিশাল এক গোলক। এর ব্যাস ১,২০,০০০ কিলোমিটার। শনির ভূত্বক বরফে ঢাকা। এর বায়ুমন্ডলে আছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মিশ্রণ, মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে শনির সময় লাগে পৃথিবীর প্রায় ২৯.৫ বছরের সমান। শনি গ্রহকে ঘিরে রয়েছে হাজার হাজার বলয় এবং এর ৮২টি উপগ্রহ আছে। শনির প্রধান উপগ্রহ টাইটান, হুয়া, ডাইওন, ক্যাপিটাস, টেথ্রিস।

ইউরেনাস (Uranus): ইউরেনাস সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ। এটি সৌরজগতের শীতলতম গ্রহ। ইউরেনাসকে সবুজ গ্রহ বলা হয় কারণ এটির বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উপস্থিত হওয়ায় এটিকে সবুজ রঙের দেখা যায়। এ গ্রহটি সূর্য থেকে ২৮৭ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এ গ্রহের সময় লাগে ৮৪ বছর। এ গ্রহের গড় ব্যাস ৪৯,০০০ কিলোমিটার। এ গ্রহটি হালকা পদার্থ দিয়ে গঠিত, আবহমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ অধিক। শনির মতো ইউরেনাসেরও কয়েকটি বলয় আবিষ্কৃত হয়েছে, তবে শনির বলয়ের ন্যায় এ বলয়গুলো উজ্জ্বল নয়। এর উপগ্রহ সংখ্যা ২৭টি। মিরিন্ডা, এরিয়েল, আম্ব্রিয়েল, টাইটানিয়া এবং ওবেরন ইউরেনাসের ৫টি উপগ্রহ।

নেপচুন (Neptune): নেপচুন সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী গ্রহ। সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। এখানে সূর্যের আলো ও তাপ খুব কম। এর ব্যাস ৪৮,৪০০ কিলোমিটার। এ গ্রহ আয়তনে প্রায় ৭২টি পৃথিবীর সমান এবং ভর ১৭টি পৃথিবীর ভরের সমান। এর বায়ুমণ্ডলে বেশিরভাগই মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস। এর উপগ্রহ সংখ্যা ১৪টি। ট্রাইটন ও নেরাইড নেপচুনের দুইটি উপগ্রহ । গ্রহসমূহের মধ্যে নেপচুনের সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে নেপচুনের সময় লাগে ১৬৫ বছর।

প্লুটো [Pluto] : ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট প্লুটো গ্রহের মর্যাদা হারায়। প্লুটোকে বর্তমানে 'বামন গ্রহ' (dwarf planet) এর মর্যাদা দেওয়া হয়। প্লুটোর উপগ্রহের নাম ক্যারন।

নবীনতর পূর্বতন