সাধারণত যে পানিতে বিশেষ কিছু খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদির অধিক পরিমাণে দ্রবীভূত আয়ন থাকে যার ফলে ঐ পানিতে সহজে ফেনা উৎপন্ন হয় না বরং গাদ উৎপন্ন হয় তাকে খর পানি বা খর জল ( Hard water) বলে । আজকের টিউটরিয়ালে আমরা পানির খরতা কি , পানির খরতার কারণ , খর পানির সুবিধা , অসুবিধা , পানির খরতা দূর করার উপায় , পানি বিশুদ্ধকরণ এবং পানির বিশুদ্ধতার মানদন্ড ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব।
পানির প্রকারভেদ
১৭৮১ সালে বিজ্ঞানী ক্যাভেন্ডিস প্রমাণ করেন যে, পানি একটি যৌগিক পদার্থ ।
এটি অনুসারে পানি চার প্রকার যথা:
১. বৃষ্টির পানি
২. ঝরনার পানি
৩. নদীর পানি
৪. সমুদ্রের পানি
প্রাকৃতিক পানিতে লবন এর উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. মৃদু পানি ।
২. খর পানি ।
মৃদু পানি: যে পানিতে অল্প সাবানের সহজেই প্রচুর ফেনা হয়। এ পানিতে কোনো অপদ্রব্য থাকে না। উদাহরণ- বৃষ্টির পানি, পুকুরের পানি, রাসায়নিকভাবে তৈরি বিশুদ্ধ পানি ৷
প্রাকৃতিক যে উৎস থেকে সবচেয়ে বেশি মৃদু পানি পাওয়া যায়: বৃষ্টি ।
খর পানি: যে পানিতে সাবান ঘষলে সহজে ফেনা উৎপন্ন হয় না এবং যে পানিতে Ca, Mg ও Fe-এর দ্রবণীয় Cl, ও -এর উপস্থিতি বিদ্যমান । উদাহরন - সমুদ্রের পানি, নদীর পানি, ঝরনার পানি এবং গভীর নলকূপের পানি।
সাধারণ পানি ও কঠিন পানির পার্থক্য:
সাধারণ পানি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের যৌগ। দুই পরমাণু হাইড্রোজেন ও এক পরমাণ অক্সিজেনের সমন্বয়ে পানির অণু গঠিত হয়। অন্যদিকে ভারী পানি হলো অধিক ঘনত্বের পানি। হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম (D)
বা ভারী হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন যুক্ত হয়ে কঠিন পানি উৎপন্ন হয়। দুই পরমাণু ডিউটেরিয়াম ও এক পরমাণু অক্সিজেন যুক্ত যৌগ হলো ডিউটেরিয়াম অক্সাইড ( ) বা কঠিন পানি ।
পানিগ্রাসী পদার্থ: যেসব দানাদার জটিল পদার্থকে সাধারণ তাপমাত্রায় বায়ুতে মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে বায়ু হতে ধীরে ধীরে জলীয় বাষ্প শোষণ করে এবং শোষিত পানি দ্রবীভূত হয়ে তরলে পরিণত হয়। সেসব পদার্থকে পানিগ্রাসী পদার্থ বলে ।
উদাহরণ:
ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2),
ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2),
কস্টিক সোডা (NaOH)
পানিগ্রাহী পদার্থ: যে সব কঠিন তরল ও বায়বীয় পদার্থকে বায়ুকে খোলা অবস্থায় রেখে দিলে তারা বায়ুতে জলীয় বাষ্প শোষণ করে, কিন্তু তরলে পরিণত হয় না। এরূপ পদার্থকে পানিগ্রাহী পদার্থ
বলে।
উদাহরণ: চুন (Cao), কিউপ্রিক অক্সাইড (CuO), গ্লিসারিন
পানির খরতা
পানির খরতাঃ যে ধর্মের জন্য পানি সাবানের সাথে সহজে ফেনা উৎপন্ন করে না, অনেক সাবান খরচ করার পর ফেনা উৎপন্ন করে, পানির সে ধর্মকে পানির খরতা বলে ।
পানির খরতা দুই প্রকারঃ
[ক] অস্থায়ী খরতা
[খ] স্থায়ী খরতা
পানির খরতার কারণ :
পানির খরতার কারণ হলো পানি চক্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পানি ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসে এবং এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদী বা সাগরে পতিত হয় । এই মাটির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে মাটিতে থাকা বিভিন্ন খনিজ লবণ পানিতে দ্রবীভূত হয় ।
যেমন- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ও ফেরাস আয়রন প্রভৃতির বাই কার্বনেট এবং ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির সালফেট ও ক্লোরাইড জাতীয় লবণসমূহ পানিতে দ্রবীভূত হয়। এর ফলে খর পানি বা পানির খরতার সৃষ্টি হয় ।
কারণ এসব লবণ পানিতে সাবানের সাথে বিক্রিয়া করে অদ্রবণীয় সাবান উৎপন্ন করে, যা পানির সাথে কোনো ফেনা উৎপন্ন করে না ।
পানির খরতা দুই প্রকার যথা :
১.অস্থায়ী খরতা ও
২.স্থায়ী খরতা।
পানির অস্থায়ী খরতা: পানিতে যদি ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট বা ম্যাগনেসিয়ামের বাইকার্বনেট লবণ দ্রবীভূত থাকে তাহলে ঐ পানিকে অস্থায়ী খর পানি বলে। অস্থায়ী খরতা দূর করার উপায় হচ্ছে পানিকে উত্তপ্ত করা বা তাপ দেয়া । এতে অদ্রবণীয় বাইকার্বনেট লবণ
পাত্রের নিচে তলানী আকারে জমা হয় । এই তলানীকে ছাকনির মাধ্যমে সহজেই পানিকে খরমুক্ত করা যায় ।
পানির স্থায়ী খরতা : পানিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদির সাথে যদি ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের সালফেট ( ) বা ক্লোরাইড লবণ দ্রবীভূত থাকে তাহলে ঐ পানিকে স্থায়ী খর পানি বলে। পানির স্থায়ী খরতা সহজে দূর করা যায় না। স্থায়ী খরতা দূর করনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।
সাবান হচ্ছে উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম বা পটাসিয়াম লবণ। সাবান শিল্পে উপজাত হিসেবে গ্লিসারিন পাওয়া যায়। তৈল চর্বির ক্ষারীয় আর্দ্র-বিশ্লেষণ দ্বারা সাবান উৎপাদন করা হয়।
খর পানির সাবান অপচয়ের কারণ/ খর পানিতে সাবানের ফেনা উৎপন্ন হয় না কেন: সাবান হলো প্রধানত স্টিয়ারিক এসিডের সোডিয়াম লবণ, যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে ফেনা উৎপন্ন করে এবং ময়লা দূর করে। কিন্তু খর পানিতে সোডিয়াম সাবান দ্রবীভূত হওয়ার সময় তা খর পানি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ও ফেরাস লবণের সাথে বিক্রিয়া করে অদ্রবণীয় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি স্টিয়ারেট উৎপন্ন করে। উৎপন্ন অধঃক্ষেপগুলো এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থরূপে পানি থেকে পৃথক হয়ে যায়, ফলে সাবান ক্ষয় হতে থাকে কিন্তু ফেনা উৎপন্ন হয় না । এরূপে যতক্ষণ ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম লবণ অদ্রাব্য অধঃক্ষেপ পরিণত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সাবান ফেনা উৎপন্ন করতে পারে না ।
পানির খরতা দূর করার উপায়ঃ পানিতে দ্রবীভূত ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের লবণকে রাসায়নিকভাবে অদ্রবীভূত লবণে পরিণত করে পানি থেকে পৃথক করলে পানির খরতা দূর হয়। দুটি পদ্ধতিতে পানির খরতা দূর করা যায়।
১. অস্থায়ী খরতা দূরীকরণ: পানি ফুটিয়ে বা চুন প্রয়োগ করে ।
২. স্থায়ী খরতা দূরীকরণ: সোডা প্রণালী । এ পদ্ধতিতে পানির সাথে সোডিয়াম কার্বনেট মিশ্রিত করে পানির খরতা দূর করা হয় ।
তাছাড়া পারমুটিট পদ্ধতিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় খরতা দূর করা যায়।
বয়লার অথবা কেটলির তলায় ক্যালসিয়াম কার্বনেট-এর স্তর পড়ে। যখন খর পানিকে তার খরতা দূর করতে ফুটানো হয় তখন ক্যালসিয়াম কার্বনেট তলানী হিসেবে কেটলির তলায় জমা হয় এবং পানি মৃদুতে পরিণত হয়।
খর পানির সুবিধা এবং অসুবিধা
খর পানির সুবিধা :
১. খর পানিতে দ্রবীভূত লবণগুলো দেহ গঠনের উপাদান বলে খর পানি স্বাস্থ্যের পক্ষে সামান্য উপকারী । যেমন- হাড় ও দাঁতের অন্যতম উপাদান ক্যালসিয়াম লবণ হওয়ায় খর পানি শিশুর দেহ গঠনে সহায়ক।
২. খরপানি অপেক্ষা মৃদু পানিতে সীসা অধিক পরিমাণে দ্রবীভূত হয়। খাবার জন্য খর পানি সিসা নির্মিত সরবরাহ নলের মধ্য দিয়ে চালনা করলে অতি সামান্য পরিমাণে বিষাক্ত সিসাকে দ্রবীভূত করে, ফলে সরবরাহকৃত পানিও বিশুদ্ধতররূপে পাওয়া যায় ।
৩. এসিড শিল্পে পরিশোধিত এসিড বর্জ্যকরণে খর পানি অত্যাবশ্যকীয়।
খর পানির অসুবিধা :
১. লন্ড্রিতে ও রেয়ন শিল্পে সাবান অপচয় ।
২. বয়লারের ক্ষয় ও ধ্বংসপ্রাপ্তি ।
৩. বস্ত্রে রং দিতে অসুবিধা ।
৪. কাপড়ে লোহার দাগ পড়ে এবং অতিরিক্ত খর পানি স্বাস্থ্যের জন্য অপকারী।
পানি বিশুদ্ধকরণ
যেসব উপায়ে পানি বিশুদ্ধকরণ করা হয় তা হল-
১. ক্লোরিনেশন (Chlorination): পানিকে জীবাণুমুক্ত করার সবচেয়ে সহজ উপায়। পানিতে
প্রয়োজনীয় পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার যোগ করলে উৎপন্ন ক্লোরিন জারিত করার মাধ্যমে জীবনকে ধ্বংস করে। এই পদ্ধতিকে ক্লোরিনেশন বলে। এক্ষেত্রে পানিতে ব্লিচিং পাউডার যোগ করার পর ছেঁকে নিলে পানি পান যোগ্য হয় ।
২. ফুটানো (Boiling): পানিকে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে ফুটালে পানি জীবানুমুক্ত হয়। তবে আর্সেনিকযুক্ত পানি ফুটালে তা আরো ক্ষতিকর হয়।
৩. থিতানো (Sedimentation): এক বালতি পানিতে এক চামচ ফিটকিরি গুড়া যোগ করে আধা ঘন্টা রেখে দিলে পানির সব অপদ্রব্য থিতিয়ে তলায় জমা হয়। তারপর উপর থেকে পানি ঢেলে পৃথক করা হয় ৷
৪. ছাঁকন (Filtration): বর্তমান বাজারে জীবাণু আর্সেনিক ও অন্য দূষক দূর করতে ফিল্টার পাওয়া যাচ্ছে। এই ফিল্টার দিয়ে ছেঁকে নিলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় ।
পানির বিশুদ্ধতার মানদন্ড
প্রাণ রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা, BOD
Biological Oxygen Demand or Biochemical Oxygen Demand
নদী, পুকুর বা ডোবার পানিতে ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ও অন্যান্য অনুজীব থাকে। এরা নিজেরা এক ধরনের দূষক। আবার এই দূষক পানিতে বিদ্যমান জৈব রাসায়নিক দূষক পদার্থকে বিয়োজিত করে। জীবাণুসমূহ পানির প্রাকৃতিক জৈব পদার্থকে (মৃত জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণি) বিয়োজিত করে। ব্যাকটেরিয়া কর্তৃক জৈব পদার্থকে বিয়োজিত করতে অক্সিজেনের প্রয়োজন ।
অনুজীবের বেঁচে থাকার জন্য এবং জৈব পদার্থকে বিয়োজিত করতে যে অক্সিজেনের প্রয়োজন তা পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন থেকে ব্যবহৃত হয়। এতে পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ক্রমে হ্ৰাস পায় ৷
পানিতে উপস্থিত অনুজীব কর্তৃক জৈব ও অজৈব পদার্থকে বিয়োজিত করতে প্রয়োজনীয় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণকে প্রাণ রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা বা বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড BOD বলে। পানির BOD মান তাপমাত্রা, পানির pH, অনুজীব ও দূষক পদার্থের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। জীবাণুসমুহ জারণ প্রক্রিয়ায় জৈব পদার্থকে বিয়োজিত করে।
পানির তাপমাত্রা বেশি হলে বিয়োজনের পরিমাণ বেশি হয়। এতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমাণও বেশি হয়।
আবার অণুজীবসমূহ পানিতে অধিক সময়ে অবস্থান করলে অধিক পরিমাণে জৈব পদার্থ বিয়োজিত হয়। এর ফলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমাণও বেশি হয়।
সাধারণত 20°C তাপমাত্রা ৫ দিন সময়ে পানির অনুজীব কর্তৃক জৈব পদার্থকে বিয়োজিত করতে যে পরিমাণ দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রয়োজন তাকে বায়োলজিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (BOD) বলে ।
যেহেতু ৫ দিনের বেশি সময় অনুজীব অবস্থান করলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমাণ আরোও বেশি হবে, তাই ৫ দিনের জন্য প্রাপ্ত BOD কে আপাত BOD বলে। ভালোমান সম্পন্ন পানির BOD এর মান
এর বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে বিশুদ্ধ ও পানীয় জল হিসাবে ব্যবহৃত নিরাপদ পানির BOD এর মান 1 – 2 হওয়া উচিত ।
WHO কর্তৃক পানীয় পানিতে অনুমোদিত BOD এর মান 6ppm
কোনো পানির নমুনায় BOD -এর মান বলতে বোঝায় যে, ঐ পানির প্রতি লিটারে উপস্থিত জৈব পদার্থেও জৈব রাসায়নিক বিয়োজনের জন্য 6 mg অক্সিজেনের প্রয়োজন। পানির নমুনায় BOD কে ppm এককে প্রকাশ করলেও একই মান পাওয়া যায়। যেমন উল্লেখিত পানির নমুনায় প্রতি 100g পানিতে উপস্থিত জৈব দূষকের জৈব রাসায়নিক বিয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের পরিমাণ 6mg কোনো পানির BOD এর মান যত বেশি ঐ পানির দূষকের মাত্রা ততো বেশি। কারণ পানিতে বেশি পরিমানে জৈব দূষক উপস্থিত থাকলে ঐ দূষকের জৈব রাসায়নিক বিয়োজনের জন্য বেশি পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় । WHO এর মান থেকে জানা যায়, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কতটা কমেছে এবং কতটা কমলে ঐ পানির মাছ বাঁচবে না। পানির উৎকর্ষতা নির্ধারনে WHO নির্দেশক রূপে কাজ করে। নিচের সারণিতে তা দেখানো হলো।
BOD এর মান (নদী) (mg/L) | পানির উৎকর্ষতা |
---|---|
1 | খুব ভালো |
2 | ভালো |
3 | মোটামুটি ভালো |
10 | খারাপ |
20 | খুব খারাপ |
অর্থাৎ পরিষ্কার বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির জন্যে WHO এর মান 1 – 2
রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (Chemical Oxygen Demand, COD): পানির মধ্যে কিছু অপচনশীল বা জৈব বিয়োজনের অযোগ্য (nonbiodegradable) বস্তু থাকে যাদের বিয়োজন ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু দ্বারা সম্পন হয় না। এগুলিকে বিয়োজনের জন্য শক্তিশালী জারক পদার্থ যেমন (যা অক্সিজেন সরবরাহ করে) প্রয়োজন হয়। এরা দূষক পদার্থকে জারিত করে। পানিতে উপস্থিত বিয়োজন যোগ্য ও বিয়োজন অযোগ্য দূষক পদার্থসমূহকে জারণের জন্যে প্রয়োজনীয় মোট অক্সিজেনের চাহিদাকে রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা বলে। উল্লেখ্য যে, কোন নমুনার COD এর মান BOD এর মান অপেক্ষা বেশি হয়। কেননা COD নির্ণয়ের ক্ষেত্রে জৈব ভাঙ্গনযোগ্য বা বিয়োজন যোগ্য এবং বিয়োজন অযোগ্য এই উভয় প্রকার জৈব বস্তুই জারিত হয় । পানিতে COD এর মান বৃদ্ধির অর্থ হলো দূষণের হার বৃদ্ধি ।
মানদণ্ড | (WHO) অনুমোদিত সর্বোচ্চ মাত্রা |
---|---|
pH মান | 1.6.5-8.5 |
দ্রবীভূত অক্সিজেন ( DO ) | 2. 5.0-6.0. |
প্রাণ রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা ( BOD ) | 3. 6.0 ppm (বা, mgL-1) |
রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (COD) | 4. 10.0 ppm (বা, mgL-1) |
দ্রবীভূত ট্রেস উপাদান (TDS) | 5. 500 ppm (বা, mgL-1) |
খরতা : Ca2+ Mg2+ | 6. 100 ppm (, mgL-¹) 150 ppm (বা, mgL-1) |
সোডিয়াম ক্লোরাইড ( NaCl) | 7. 500 ppm (বা, mgL-1) |
এই জন্যই নদীর পানিতে COD এর মান বেশি থাকে ।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর
১. কোনটি পানিতে দ্রবীভূত হয় না? [ ৪১তম বিসিএস ]
উত্তর: (ঘ) ক্যালসিয়াম কার্বোনেট
ব্যাখ্যা: পানিতে দ্রবীভূত হয় না ক্যালসিয়াম কার্বনেট। সোডিয়াম যৌগ বা খাবার লবণ স্বচ্ছ বর্ণহীন কঠিন পদার্থ এবং পানিতে দ্রবণীয়। পক্ষান্তরে, ক্যালসিয়াম কার্বনেট প্রকৃতিতে চুনাপাথর মার্বেল পাথর ও অন্যান্য রূপে বিদ্যমান বিশুদ্ধ পানিতে অদ্রবণীয় হলেও অতিরিক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড মিশ্রিত পানিতে CaHCO3 রূপে দ্রবীভূত হয়।
২. কোথায় সাঁতার কাটা সহজ? [ ৪০তম বিসিএস ]
উত্তর: (ঘ) সাগরে
৩. প্রাকৃতিক কোন উৎস থেকে সবচেয়ে বেশি মৃদু পানি পাওয়া যায়? [ ২৩তম বিসিএস/ প্রতিরক্ষার মন্ত্রণালয়ের অধীন গুপ্ত সংকেত পরিদপ্তরের সাইফার অফিসারঃ ০৫/ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরে সার্কেল এ্যাডজুটেন্টঃ ০৫ ]
উত্তর: (ঘ) বৃষ্টি
৪. পানির Disinfecton কী দিয়ে করা হয়? [ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০১৯ ]
উত্তর: (ক) ক্লোরিন
৫. পানি turbidity (অস্বচ্ছতা) কিসের পরিমাপক? [ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০১৯ ]
উত্তর: (ক) ভাসমান বস্তুর
৬. পানিতে কী দ্রবীভূত থাকলে hardness হয়? [ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০১৯ ]
উত্তর: (ঘ) উপরোক্ত সব
৭. নিচের কোনটি কঠিন পদার্থ — [ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (সাধারণ) ২০১৮ ]
উত্তর: (ঘ) MgCl2
ব্যাখ্যা: MgCl2 একটি কঠিন পদার্থ। SO2 ও CO হচ্ছে বায়ু দূষণে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। জানালা, শোকেস, টেবিল, গাড়ি ইত্যাদি কাচ পরিষ্কার করার জন্য এক প্রকার তরল পদার্থ ব্যবহৃত হয়। এই তরলের মূল উপাদান হলো অ্যামোনিয়া NH3 । যে কোনো অ্যামোনিয়াম লবণকে ক্ষারসহযোগে তাপ দিলে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
৮. বয়লার অথবা কেটলির তলায় কিসের স্তর পড়ে? [ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ২০১৮ ]
উত্তর: (গ) ক্যালসিয়াম কার্বনেট
৯. সাবান শিল্পে উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়- [ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ইট্রাক্টর (ইলেকট্রিক্যাল, কম্পিউটার, সিভিল ও ইলেক্ট্রনিড) টিটিসি ২০১৮ ]
উত্তর: (ঘ) গ্লিসারিন
১০. খর পানি বলতে কি বুঝায়? [ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অধীন সহকারী আবহাওয়াবিদঃ ০৭/ থানা শিক্ষা অফিসারঃ ৯৬ ]
উত্তর: (ঘ) যে পানিতে সাবানের ফেনা হয় না
১১. হার্ড ওয়াটারকে সফট করতে লাগে - [ জেলা দুর্নীতি দমন অফিসারঃ ৯৪ ]
উত্তর: (গ) ক্যালসিয়াম অক্সাইড
ব্যাখ্যা: চুন (CaO) প্রয়োগ করে পানির খরতা দূর করা যায় ।
১২. পানির খরতার জন্য নিরে উপাদানগুলোর মধ্যে কোনটি প্রয়োজন? [ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের থানা প্রকৌশলী, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ ৯৯ ]
উত্তর: খ,ঘ
১৩. Water hardness is mainly due to the presence of the following in water [ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের সহকারী ড্রিলিং প্রকৌশলীঃ ১৮ ]
উত্তর: (ঘ) Calcium & magnesium salt
১৪. পানির খরতার কারণ- [ রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক২০১১-গোলাপ ]
উত্তর: (ক) ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট লবণ
১৫. নদীর পানির ক্ষেত্রে কোনটি সত্য? [ ৪১তম বিসিএস ]
১৬. কোন পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি? [ ৪১তম বিসিএস ]
উত্তর: (গ) নদীর পানিতে
ব্যাখ্যা: নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়াও সকালে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কমে যায়, বিকেলে অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে ।