সংখ্যা পদ্ধতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ । মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য যেমন প্রতিনিয়ত ভাষা ব্যবহার করে থাকি তেমনি গাণিতীয় সমস্যার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত সংখ্যা ব্যবহার করি । কাজেই এই সংখ্যা পদ্ধতি আবিষ্কারের ইতিহাস ভাষার জন্মলগ্ন সময় থেকেই । কারণ সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের মধ্যে হিসাব নিকাশ বা গণনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । শুরুতে গণনার কাজে হাতের আঙ্গুলের ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে কাঠি, নুড়িপাথর, দড়ির গিট ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহৃত হয় । আজকের টিউটরিয়ালে আমরা সংখ্যা পদ্ধতি কি? সংখ্যা পদ্ধতি আবিষ্কারের ইতিহাস এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে জানব ।
সংখ্যা পদ্ধতি কি ?
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ গণনার কাজের জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন, বর্ণ, সংখ্যা বা অঙ্ক ইত্যাদি ব্যবহার করেছে। এ ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন, বর্ণ, সংখ্যা বা অঙ্ক পাশাপাশি রেখে তা প্রকাশ করার পদ্ধতিই হলো সংখ্যা পদ্ধতি। সংখ্যা হচ্ছে একটি উপাদান যা কোনো কিছু গণনা, পরিমাণ এবং পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন- ১৭৪৫ একটি সংখ্যা। সংখ্যা তৈরির ক্ষুদ্রতম প্রতীকই হচ্ছে অঙ্ক (Digit)। যেমন- ১৭৪৫ সংখ্যাটি ১, ৭, ৪, ৫ এই চারটি অঙ্কের সমন্বয়ে গঠিত।
সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি : কোনো সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ হলো ঐ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মোট মৌলিক চিহ্নসমূহের বা সাংকেতিক চিহ্নগুলোর মোট সংখ্যা। আমাদের অতি পরিচিত দশমিক পদ্ধতিতে মোট দশটি মৌলিক চিহ্ন বা প্রতীক রয়েছে। যথা- ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। সে কারণে দশমিক পদ্ধতির ভিত্তি হলো ১০। আবার বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে মোট মৌলিক চিহ্ন আছে দুইটি (০ এবং ১)। সে কারণে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ হলো ২।
সংখ্যা পদ্ধতি আবিষ্কারের ইতিহাস
সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ হিসাব-নিকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তখন গণনার জন্য নানা রকম উপকরণ যেমন- হাতের আঙ্গুল, নুডি পাথর, কাঠি, ঝিনুক, রশির গিট, দেয়ালে দাগ কাটা ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। সময়ের বিবর্তনে গণনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চিহ্ন ও প্রতীক ব্যবহার শুরু হতে থাকে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৪০০ সালে হায়ারোগ্লিফিক্স সংখ্যা পদ্ধতির মাধ্যমে সর্বপ্রথম গণনার ক্ষেত্রে লিখিত সংখ্যা বা চিহ্নের ব্যবহার শুরু হয়। পরবর্তিতে পর্যায়ক্রমে মেয়ান, রোমান ও দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়।
আদিম মানুষ যখন শিকারী হিসেবে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত তখন হিসেব রাখা বা গোনার সেরকম প্রয়োজন ছিল না। যখন তারা কৃষিকাজ করার জন্য স্থিতু হয়েছে, গবাদি পশু পালন করতে শুরু করেছে, শস্যক্ষেত্রে চাষাবাদ করেছে, গ্রাম, নগর-বন্দর গড়ে তুলেছে, রাজস্ব আদায় করা শুরু করেছে তখন থেকে গোনার প্রয়োজন শুরু হয়েছে। সেজন্য সংখ্যা পদ্ধতির ইতিহাস এবং সভ্যতার ইতিহাস খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আমাদের প্রয়োজনের কারণে এখন আমরা অনেক বড় বড় সংখ্যা ব্যবহার করতে পারি, গণিতের সাহায্যে সেগুলো নানাভাবে প্রক্রিয়া করতে পারি।
আদিম কালে মানুষেরা গাছের ডাল বা হাড়ে দাগ কেটে কিংবা কড়ি, শামুক বা নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে সংখ্যার হিসাব রেখেছে। তবে যখন আরো বড় সংখ্যা আরো বেশি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয়েছে তখন সংখ্যার একটি লিখিত রূপ বা চিহ্ন সৃষ্টি করে নিয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মোটামুটি একই সময়ে সুমেরিয়ান-ব্যবলিয়ান এবং মিশরীয় সভ্যতার শুরু হয় এবং এই দুই জায়গাতেই সংখ্যার প্রথম লিখিত রূপ পাওয়া গেছে। সুমেরিয়ান-ব্যবলিয়ান সংখ্যা ছিল ষাটভিত্তিক এবং মিশরীয় সংখ্যা ছিল দশভিত্তিক। ব্যবলিয়ান সংখ্যা পদ্ধতির রেশ পৃথিবীতে এখনো রয়ে গেছে, আমরা মিনিট এবং ঘণ্টার হিসেব করি ষাট দিয়ে এবং কোণের পরিমাপ করি ষাটের গুণিতক দিয়ে। সুমেরিয়ান-ব্যবলিয়ান সংখ্যা পদ্ধতিতে স্থানীয় মান ছিল, মিশরীয় সংখ্যা পদ্ধতিতে ছিল না। দুই পদ্ধতিতেই কোনো কিছু না থাকলে সেটি বোঝানোর জন্য চিহ্ন ব্যবহার করা হতো কিন্তু সেটি মোটেও গাণিতিক সংখ্যা শূন্য ছিল না।
পরবর্তীকালে আরো তিনটি সভ্যতার সাথে সাথে সংখ্যা পদ্ধতি গড়ে উঠে, সেগুলো হচ্ছে মায়ান সভ্যতা, চীন সভ্যতা এবং ভারতীয় সভ্যতা। মায়ান সংখ্যা পদ্ধতি ছিল কুড়িভিত্তিক, চীন এবং ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি ছিল দশভিত্তিক। (আমাদের দেশে যেসব মানুষ লেখাপড়ার সুযোগ পায়নি তারা কাজ চালানোর জন্য মৌখিকভাবে কুড়িভিত্তিক এক ধরনের সংখ্যা ব্যবহার করে থাকে।) মায়ান এবং ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতিতে স্থানীয় মান ব্যবহার করে। প্রয়োজনের কারণে সব সংখ্যা পদ্ধতিতেই শূন্যের জন্য একটি চিহ্ন থাকলেও প্রকৃত অর্থে শূন্যকে একটি সংখ্যা হিসেবে ধরে সেটিকে সংখ্যা পদ্ধতিতে নিয়ে এসে গণিতে ব্যবহার করে ভারতীয়রা এবং এই শূন্য আবিষ্কারকে আধুনিক গণিতের একটি অন্যতম যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মায়ান এবং চীন সংখ্যা পদ্ধতি মাত্র দুই-তিনটি চিহ্ন ব্যবহার করে লেখা হতো। কিন্তু হাতে লেখার সময় পাশাপাশি অসংখ্য চিহ্ন বসানোর বিড়ম্বনা থেকে বাঁচার জন্য ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতিতে 1 থেকে 9 পর্যন্ত নয়টি এবং শূন্যের জন্য একটি চিহ্ন- এভাবে দশটি চিহ্ন ব্যবহার করতে শুরু করে। আমরা এই চিহ্নগুলোকে অঙ্ক বা Digit বলি।
২৫০০ বছর আগে গ্রিকরা ব্যবিলোনিয়ান এবং মিশরীয়দের সংখ্যা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তাদের পূর্ণাঙ্গ ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি গড়ে তুলেছিল। রোমানরা গ্রিক সভ্যতার পতন ঘটানোর পর গণিতের অভূতপূর্ব বিকাশ থেমে যায়। রোমান সাম্রাজ্যে গণিতের সেরকম প্রয়োজন ছিল না। তাদের সংখ্যাগুলোতে আলাদা রূপ ছিল না এবং রোমান অক্ষর দিয়ে সেগুলো প্রকাশ করা হতো। অনাবশ্যকভাবে জটিল এবং অবৈজ্ঞানিক রোমান সংখ্যা এখনো বেঁচে আছে এবং ঘড়ির ডায়াল বা অন্যান্য জায়গায় মাঝে মাঝে আমরা তার ব্যবহার দেখতে পাই। ইসলামি সভ্যতার বিকাশ হওয়ার পর ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, যেটি আমাদের আধুনিক দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি। এই সংখ্যা পদ্ধতিকে Hindu- Arabic সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এখানে উল্লেখ্য যে শূন্য ব্যবহারের ফলে সংখ্যা পদ্ধতিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি হলেও খ্রিষ্টীয় শাসকেরা শূন্যকে শয়তানের রূপ বিবেচনা করায় দীর্ঘদিন সেটাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল । আমাদের হাতে দশ আঙুল থাকার কারণে দশভিত্তিক সংখ্যা গড়ে উঠলেও দুই, আট কিংবা ষোলোভিত্তিক সংখ্যাও আধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
মিশরীয় সংখ্যা পদ্ধতি: খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০-৩৪০০ অব্দে হায়ারোগ্লিফিক্স চিহ্ন বা সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বপ্রথম গণনার কাজে লিখিত সংখ্যা বা চিহ্নের প্রচলন শুরু হয়। ভগ্নাংশ সংখ্যা প্রথম প্রবর্তিত হয় মিশরে।
গ্রিক সংখ্যা পদ্ধতি: গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম অসীম (°) এর সংকেত প্রচলন করেন।
রোমান সংখ্যা পদ্ধতি : রোমানরা তাদের নিজস্ব বর্ণমালা ব্যবহারের মাধ্যমে রোমান (Roman) সংখ্যা পদ্ধতি চালু করে।
রোমান অঙ্ক | সংখ্যাসূচক মান |
---|---|
I | 1 |
II | 2 |
V | 5 |
X | 10 |
L | 50 |
C | 100 |
D | 500 |
M | 1000 |
দুই বা ততোধিক অঙ্ক পাশাপাশি থাকলে অঙ্কগুলোর মধ্যে যেটি বৃহত্তম তার সাথে ক্ষুদ্রতর অঙ্কগুলোর মান যোগ বা বিয়োগ করে সংখ্যার মান প্রকাশ করা হতো। যেমন-
- ক্ষুদ্রতর অঙ্কগুলো বৃহত্তম অঙ্কের ডানে থাকলে মানগুলো যোগ হতো। যেমন- VI = 5+1 = 6
- ক্ষুদ্রতর অঙ্কগুলো বৃহত্তম অঙ্কের বামে থাকলে বৃহত্তম অঙ্কের মান থেকে ক্ষুদ্রতর অঙ্কের মানগুলো বিয়োগ করা হতো। যেমন- IV = 5-1 = 4
আধুনিক সংখ্যা পদ্ধতি : চতুর্থ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে দশভিত্তিক সংখ্যার প্রচলন হয়। ভারতীয়রা 'শূন্য' ব্যবহার করতো। প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ পিংগালা কোনো কিছু নাই এরূপ বোঝাতে সংস্কৃত শব্দ শূন্য (০) ব্যবহার করেন। আরবের পণ্ডিতেরা ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতির উপর ব্যাপক গবেষণা করে দশভিত্তিক সংখ্যা প্রকাশের কৌশল ও গণনার প্রবর্তন করেন। আরবের বিজ্ঞানী আল-খারেজমি ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতির উপর আরবিতে বই প্রকাশ করেন। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিকে হিন্দু-আরবীয় সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়।
সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদ
সংখ্যা পদ্ধতিকে নন-পজিশনাল এবং পজিশনাল এই দুটি মূল পদ্ধতিতে ভাগ করা যায়:
নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে প্রতীক বা চিহ্নগুলো যেখানেই ব্যবহার করা হোক না কেন , তার মান একই থাকবে। রোমান সংখ্যা হচ্ছে নন-পজিশনাল (Non positional) সংখ্যার উদাহরণ। যেমন- রোমান সংখ্যায় 5 বোঝানোর জন্য V ব্যবহার করা হয়। V, VI কিংবা VII এই তিনটি উদাহরণে তিনটি ভিন্ন জায়গায় বসেছে, কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই V চিহ্নটি 5 বুঝিয়েছে। তথা পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির ন্যায় যতই ডান হতে বাম দিকে সরতে (স্থান পরিবর্তন) থাকুক না কেন তার স্থানীয় মানের (একক, দশক, শতক ইত্যাদির ন্যায়) কোন পরিবর্তন হয় না। এর কারণ হলো নন-পজিশনাল (অস্থানিক) সংখ্যা পদ্ধতিতে স্থানিক মানের অনুপস্থিতি। প্রাচীনকালে যখন সংখ্যাতত্ত্ব সেভাবে গড়ে উঠেনি তখন নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন ছিল।
পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে চিহ্ন বা প্রতীকটিকে কোন অবস্থানে ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর মানটি নির্ভর করে। আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ব গড়ে উঠার পর পজিশনাল (Positional) সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়েছে। আমাদের প্রচলিত দশমিক পদ্ধতি হচ্ছে পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির উদাহরণ। কারণ 555 সংখ্যাকে ডান দিকের প্রথম অঙ্কটি 5 সংখ্যাকে বোঝালেও তার বামেরটি 50 এবং এর বামেরটি 500 সংখ্যাকে বোঝাচ্ছে। এটি 10 ভিত্তিক সংখ্যা এবং প্রত্যেকটি অবস্থানের একটি মান রয়েছে। ডান দিকের প্রথম অঙ্কটির মান 1, বামেরটি 10, এর বামেরটি 100 এভাবে আগের অবস্থান থেকে আগের অবস্থান সবসময়েই 10 গুণ বেশি। যদি এটি ৮ ভিত্তিক সংখ্যা হতো তাহলে পরের অবস্থান আগের অবস্থান থেকে ৮ গুণ বেশি হতো। 16 ভিত্তিক সংখ্যা হলে প্রতিটি অবস্থান আগের অবস্থান থেকে 16 গুণ বেশি হতো।
পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতিতে প্রতিটি সংখ্যাকে ডট বা Raddix পয়েন্ট (.) দিয়ে পূর্ণাংশ (Integer) ও ভগ্নাংশ (Fraction) এ দুই অংশে ভাগ করা হয়। যেমন: ৮৬৪.১২৫ একটি সংখ্যা, এর ৮৬৪ হলো পূর্ণাংশ এবং ১২৫ হলো ভগ্নাংশ। পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক অঙ্ক বা সংখ্যা থাকে যা সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তি নামে পরিচিত। অর্থাৎ কোনো সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ হলো এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মৌলিক চিহ্নসমূহের বা অঙ্কসমূহের মোট সংখ্যা। যেমন- বাইনারি সংখ্যা ০ ও ১ এ দুটি অংকের সমন্বয়ে গঠিত। তাই বাইনারি সংখ্যার বেজ ২। সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তির ওপর নির্ভর করে পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-
দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal Number System): দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ এবং ৯ এই দশটি প্রতীক দিয়ে সব ধরনের সংখ্যা গঠন করা হয়।
দশটি প্রতীক বা অংক ব্যবহার করা হয় বলে এ সংখ্যা পদ্ধতিকে বলা হয় দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি। এ সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে ১০।
(২০৭)১০ , (১২৩)১০ , (৫.৩২)১০ ইত্যাদি হলো দশমিক সংখ্যার উদাহরণ। দশমিক
সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত ভর হচ্ছে-
............, ১০০০, ১০০, ১০, ১ বা ১০৩, ১০২, ১০১, ১০০.............
বাইনারি পদ্ধতি (Binary Number System): বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি একটি ২ ভিত্তিক সংখ্য পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ০ এবং ১ এই দুটি অংক ব্যবহৃত হয়। এ দুটি অঙ্ককে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে
যেকোনো সংখ্যাকে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে লেখা যায়। সতের শতাব্দীতে গটফ্রেইড লিবনিজ একটি আর্টিকেলে আধুনিক বাইনারি সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। বাইনারিতে দুটি অঙ্ক ব্যবহৃত হয় বিধায়
এ পদ্ধতির ভিত্তি ২। (১১০)২, (১১০০১)২, (১০১.০১১)২, ইত্যাদি হলো বাইনারি সংখ্যার উদাহরণ। কম্পিউটার বাইনারি সংখ্যার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের উপাত্ত বা ডেটা সংরক্ষণ করে থাকে।
আবার কম্পিউটারের সকল অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পন্ন হয় বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে।
বিদ্যুৎ আছে (১) অথবা বিদ্যুৎ নেই (০) শুধু এ দুটি অবস্থাই কম্পিউটার বুঝতে পারে। অর্থাৎ অন এবং অফ ধারণা থেকেই ২ ভিত্তিক বা বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। বাইনারি সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত ভর:
............, ৩২, ১৬, ৮, ৪, ২, ১ বা ২৫, ২৪, ২৩, ২২ , ২১, ২০.............
অক্টাল বা অষ্টমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Octal Number System): যে সংখ্যা পদ্ধতিতে আটটি অঙ্ক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে।
সুইডেনের রাজা সপ্তম চার্লস অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অঙ্কগুলো হলো ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭। অক্ট্যাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে ৮। (৭১৪)৮ , (১০১)৮ , (৬৪৫.১০৩)৮ , অক্ট্যাল সংখ্যার উদাহরণ।
অক্ট্যাল সংখ্যার স্থানাঙ্ক বা সংখ্যার অবস্থানগত মান-
........৪০৯৬, ৫১২, ৬৪, ৮, ১, বা ৮৪, ৮৩, ৮২, ৮১,৮০,.........
হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal Number System): যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ১৬টি অঙ্ক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে।
এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অঙ্কগুলো হলো ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, A, B, C, D, E, F। এখানে A, B, C, D, E এবং F-এর সমতুল্য দশমিক মান হচ্ছে যথাক্রমে ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ এবং ১৫।
হেক্সাডেসিমাল পদ্ধতির ভিত্তি ১৬। হেক্সাডেসিমাল মূলত অক্টাল ও ডেসিমাল নম্বরের সংমিশ্রণ । উদাহরণ: (৭৪২)১৬, (২১B)১৬, (AC. ১B)১৬, ইত্যাদি হলো হেক্সাডেসিমেল সংখ্যার উদাহরণ।
........৪০৯৬, ২৫৬, ১৬, ১, বা ১৬৩, ১৬২, ১৬১, ১৬০.........