অধাতব পদার্থসমূহ

সাধারণত যেসব উপাদান তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী , আঘাত করলে তেমন ঝনঝন শব্দ হয় না,পিটিয়ে পাত করা যায় না সেসব উপাদানকে অধাতু বলে । যেমন~ অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ,সালফার , ফসফরাস ,সিলিকন , হ্যালোজেনসমূহ ইত্যাদি । আজকের টিউটরিয়ালে আমরা অধাতু কি , এর বৈশিষ্ট্যসমূহ , কার্বনের বহুমুখী ব্যবহার , অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ,সালফার , ফসফরাস ,সিলিকন , হ্যালোজেনসমূহের গঠন , উপাদান , ধর্ম ও বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে আলোচনা করব যা বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাছাড়া বিসিএসসহ যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য এ টিউটরিয়ালটি অবশ্যই পাঠ্য ।

অধাতব পদার্থসমূহ

অধাতু

অধাতুর বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মসমূহ:
১) অধাতু সমূহ প্রধানত বিদ্যুৎ ও তাপ অপরিবাহী।
২) অধাতুসমূহের দ্যুতি নেই। এরা আলোক বিচ্ছুরণে অক্ষম।
৩) অধাতুসমূহ ঘাতসহ ও নমনীয় নয়।
৪) অধাতুকে আঘাত করলে শব্দ হয় না।

অধাতুর বৈশিষ্ট্যমূলক রাসায়নিক ধর্মসমূহ হলঃ
১) অধাতুর অক্সাইডসমূহ প্রধানত অম্লীয় ।
২) একটি অধাতু কখনোই একটি এসিডের হাইড্রোজেন আয়নকে প্রতিস্থাপন করে লবণ উৎপন্ন করবে না ।
৩) অধাতুর যৌগসমূহ প্রধানতঃ সমযোজী, উদ্বায়ী ও তড়িৎ অবিশ্লেষ্য ।
৪) অধাতুসমূহ হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়ে সমযোজী হাইড্রাইড উৎপন্ন করে।
৫) অধাতুসমূহ জারক ।

অধাতুর সক্রিয়তা সিরিজ :
ফ্লোরিন (F) > অক্সিজেন (O) > ক্লোরিন ( Cl ) > নাইট্রোজেন ( N ) > নিকেল ( Ni ) > ব্রোমিন ( Br ) > সালফার ( S ) > কার্বন ( C ) > আয়োডিন ( I ) > আর্সেনিক ( As ) > বোরন ( B ) > সিলিকন ( Si ) > এন্টিমনি ( Sb )

আবিষ্কৃত মৌলের মধ্যে অধাতুর সংখ্যা: ১৯ টি।

বিবিধ বৈশিষ্ট্যের অধাতু:
বৈশিষ্ট্য অধাতু
সবচেয়ে সক্রিয় অধাতু ফ্লোরিন
তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম অধাতু গ্রাফাইট
বিদ্যুৎ অর্ধপরিবাহী অধাতু সিলিকন
সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থার অধাতু ব্রোমিন
যৌগিক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কার্বন
প্রকৃতিতে সবচেয়ে শক্ত পদার্থ হীরক
নিজে জ্বলে কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে না হাইড্রোজেন
নিজে জ্বলে না কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে অক্সিজেন
নিজে জ্বলে না, অন্যকে জ্বলতেও সাহায্য করে না কার্বন ডাই অক্সাইড
হিমায়িত CO2-কে বলা হয় ড্রাই আইস
ধূমায়িত সালফিউরিক এসিড কে বলা হয় ওলিয়াম
সবচেয়ে হালকা অধাতু / গ্যাস / মৌল হাইড্রোজেন

কার্বনের বহুমুখী ব্যবহার

বহুরূপতা: প্রকৃতিতে একই মৌলের বিভিন্ন ভৌত রূপে অবস্থান করার প্রবণতাকে বহুরূপতা বলে । কার্বন (C), ফসফরাস (P), সিলিকন (Si), সালফার (S), জার্মেনিয়াম (Ge), নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, বোরন (B), টিন (Sn) ইত্যাদি মৌল বহুরূপতা প্রদর্শন করে ।

কার্বনের বহুরূপতা: কার্বন একটি কঠিন বহুরূপী মৌলিক পদার্থ। এর ইলেকট্রন বিন্যাস ২, ৪। কার্বন একটি অধাতু এবং এর যোজনী হলো 4। এটি প্রধানত সমযোজী বন্ধন গঠন করে। কার্বন খুবই গুরূত্বপূর্ণ মৌলিক পদার্থ, কারণ জীবজগৎ প্রধানত কার্বনের যৌগসমূহ দ্বারা গঠিত। এছাড়া কার্বন যৌগের সংখ্যা অনেক বেশী । অন্য সকল মৌল দ্বারা গঠিত যৌগসমূহের চেয়ে কার্বন যৌগের সংখ্যা বহুগুণ বেশী । প্রকৃতিতে কার্বন পরমাণু মুক্ত ও যৌগ উভয় অবস্থায়ই বিদ্যমান থাকে। মুক্ত অবস্থায় কার্বন পরমাণু বিভিন্ন রকম রাসায়নিক কাঠামো ও ভৌত রূপে থাকতে পারে। এর ফলে কার্বনের বিভিন্ন রূপভেদ প্রকৃতিতে পাIয়া যায় । এই বিভিন্ন রূপভেদে কার্বনের অস্তিত্বকেই কার্বনের বহুরূপতা বলে । এর বিভিন্ন রূপভেদগুলোকে প্রধানত দু শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা: ১. দানাদার ও ২. অদানাদার।

১. দানাদার: দানাদার কার্বন প্রধানত দুপ্রকার। যথা: [ক] হীরক এবং [খ] গ্রাফাইট। হীরক ও গ্রাফাইট উভয়েই একই মৌল কার্বন দ্বারা গঠিত হওয়া সত্ত্বেও এদের ধর্মে বিভিন্ন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন—
• হীরক সর্বাপেক্ষা কঠিন পদার্থ, গ্রাফাইট খুব নরম ও পিচ্ছিল ।
• হীরক বর্ণহীন স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল, গ্রাফাইট ধূসর কালো ও অস্বচ্ছ।
• হীরক তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী অথচ গ্রাফাইট বিদ্যুৎ পরিবাহী।

২. অদানাদার: যথা: কোক কার্বন, চারকোল (অঙ্গার), কয়লা এবং কার্বন ব্লাক। এরা প্রকৃতপক্ষে গ্রাফাইটের খুব সূক্ষ্ম কণা দ্বারা গঠিত।

অকেলাসিত বা অদানাদার রূপে প্রকৃতি বা খনিতে যে কার্বন পাওয়া যায় তার নাম খনিজ কয়লা । এছাড়াও কাঠ কয়লা, প্রানীজ কয়লা ও সক্রিয় কয়লা কার্বনের আরও তিনটি রূপভেদ। তাপ উৎপাদন ক্ষমতা ও কার্বনের পরিমানের উপর ভিত্তি করে কয়লা তিন প্রকারঃ [ক] অ্যান্থ্রাসাইট [খ] বিটুমিনাস [গ] পীট কয়লা

প্রকৃতিতে সবচেয়ে শক্ত পদার্থ কোনটি :
হীরক। একটি হীরক খণ্ড প্রকৃতপক্ষে একটি বৃহৎ অণু। অসংখ্য কার্বন পরমাণু পরস্পরের সাথে বন্ধনযুক্ত হয়ে এই অণু তৈরি করে। একটি হীরক খণ্ডকে টুকরো করতে হলে অনেকগুলো শক্তিশারী সমযোজী বন্ধন ছিন্ন করতে হয় বলে হীরক অত্যন্ত কঠিন এবং সকল পদার্থের মধ্যে কঠিনতম ।

হীরক বিদ্যুৎ অপরিবাহী কেন: কোন মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না।
হীরক রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় কেন: প্রতিটি কার্বন পরমাণু অপর চারটি কার্বন পরমাণুর সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে।
কাঁচ কাটতে যা ব্যবহৃত হয়: হীরক ।
সোডিয়াম ধাতুর নিষ্কাশনে কিসের অ্যানোড ব্যবহৃত হয়: গ্রাফাইট।
পেন্সিলের শীশরূপে যা ব্যবহৃত হয়: গ্রাফাইট ।

গ্রাফিন (graphere) কার্বনের একটি রূপ, যা একটি সরু চাকতিরূপে বিরাজ করে, চাকতিটির ক্ষেত্রফল যত বড়ই হোক না কেন পুরুত্ব হয় মাত্র একটি পরমাণুর আকারের সমান। এক্ষেত্রে পরমাণুগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত হয় যে, একটি দ্বিমাত্রিক মৌচাকের মত আকৃতি গঠিত হয়। এটি কাচের মত স্বচ্ছ। ইস্পাতের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সব মৌল ও যৌগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। প্লাস্টিকের মধ্যে শতকরা মাত্র ১ ভাগ গ্রাফিন মেশালে তা তড়িৎ সুপরিবাহীতে পরিণত হতে পারে। ২০০৪ সালে অক্টোবরে গ্রাফিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এটি আবিষ্কারের জন্য আন্দ্রে গেইম এবং কনস্টানটিন নভোসেলভ ২০১০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস

কার্বন ডাই অক্সাইড (রাসায়নিক সংকেত CO2) একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক যৌগ যা দুইটি অক্সিজেন পরমাণু ও একটি কার্বন পরমাণু দিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি অক্সিজেন পরমাণু একটি কার্বন পরমাণুর সাথে দ্বি-বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে। কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসের তুলনায় ভারী বলে একে আগুনের উপর ছেড়ে দিলে সেখানে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং অক্সিজেনের অভাবে আগুন নিভে যায় ।

‘ড্রাই আইস' নামকরণের তাৎপর্য: প্রচণ্ড চাপে এবং -৭৮.৫°C তাপমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস তরল না হয়ে সরাসরি কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। কঠিন কার্বন ডাই-অক্সাইড দেখতে বরফের মত সাদা, অথচ ধরলে হাত ভিজিয়ে দেয় না। তাই এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।

সোডা ওয়াটার: ফানটা, সেভেন আপ, পেপসি প্রভৃতি প্রস্তুতকালে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে পানিতে দ্রবীভূত করা হয় । একে সোডা ওয়াটার বলে ।

কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস -------এসিডধর্মী নাকি ক্ষারীয়: এসিডধর্মী । কারণ অধাতুর অক্সাইডসমূহ প্রধানত অম্লীয় । CO2 + H2O → H2CO3

মোমবাতি কিভাবে জ্বলে অদৃশ্য হয়: মোম হলো কার্বন ও হাইড্রোজেনের একটি যৌগিক পদার্থ। দহনে কার্বন অক্সিজেনের সাথে মিশে কার্বন মনোঅক্সাইড বা কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে এবং হাইড্রোজেন অক্সিজেনের সাথে মিশে পানি উৎপন্ন করে বাষ্পীভূত হয়।

গুহা বা পুরানো কুয়ায় মাঝেমাঝে প্রাণহানী ঘটে কেন: কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাস অপেক্ষা ভারী বলে গুহা বা পুরানো কুয়ায় সঞ্চিত হতে থাকে । কার্বন ডাইঅক্সাইড বিষাক্ত নয়। শ্বাসপ্রস্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব এক্ষেত্রে প্রাণহানীর কারণ হয়ে দাড়ায়।

অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারে যা থাকে: অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডারে বর্তমানে তরল কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যবহৃত হয়। তবে এসিড সোডা জাতীয় দ্রব্য সিলিন্ডারে পূর্বে বেশি ব্যবহৃত হতো।

সিলিন্ডারে যে গ্যাস বিক্রি হয় তার নাম: সিলিন্ডারে করে বাজারে যে গ্যাস বিক্রি করা হয় তার মূল উপাদান হলো বিউটেন, যা সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে, কিন্তু উচ্চ চাপে তরল অবস্থায় পরিবর্তিত করা হয় যা উচ্চ চাপযুক্ত আধারে সংরক্ষণ, ব্যবহার ও স্থানান্তরের জন্য সুবিধাজনক ।

রাসায়নিক অগ্নিনির্বাপক কিভাবে কাজ করে: অক্সিজেন সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ।
কার্বন মনোক্সাইড বিষাক্ত কেন: কার্বন মনোক্সাইড রক্তের হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্থ করে ।
ওয়াটার গ্যাস: কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণ। (CO + H2)
প্রোডিউসার গ্যাস: কার্বন মনোক্সাইড ও নাইট্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণ। (2CO + N2)

অক্সিজেন

অক্সিজেন হল একটি রাসায়নিক উপাদান যা প্রকৃতিতে একটি গ্যাস হিসাবে পাওয়া যায় যার পারমাণবিক সংখ্যা 8 এবং প্রতীক O । আমাদের চারপাশের অতি পরিচিত এই গ্যাসটির মজার বিষয় হলো এই গ্যাস দেখা যায় না, এর কোনো রং নেই, কোনো স্বাদ নেই, গন্ধও নেই। কার্ল উইলহেম শীলি নামের একজন জার্মান রসারনবিদ ১৭৭১ সালে অক্সিজেন আবিষ্কার করেন। আইজাক আসিমভ তাকে "hard-luck Scheele" বা "হতভাগ্য শেলে" বলেছিলেন কারণ তার বেশিরভাগ রাসায়নিক আবিষ্কারের কৃতিত্ব অন্য কেউ পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি অক্সিজেন আবিষ্কার করেন অথচ জোসেফ প্রিস্টলির গবেষণাপত্রগুলি আগে প্রকাশিত হওয়ার কারণে তিনি অক্সিজেন আবিষ্কারকের স্বীকৃতি পান নি ।

• আবিষ্কার: বিজ্ঞানী জোসেফ প্রিস্টলি ১৭৭৪ সালে।
• নামকরণ: ল্যাভয়সিয়ে।
• অক্সিজেনকে আগ্নেয় বায়ু বা প্রাণ বায়ু বলা হয়।
• অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে।
• অক্সি-অ্যাসিটিলিন শিখা: অক্সিজেনের সহিত অ্যাসিটিলিন গ্যাস মিশ্রিত করে প্রজ্জ্বলনের ফলে অক্সি অ্যাসিটিলিন শিখা উৎপন্ন হয়। তাপমাত্রা 3200-3500 ডিগ্রি পর্যন্ত। অক্সিডাইজিং শিখায় অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিনের অনুপাত ১.৫:১ ।
• রকেটের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় - তরল অক্সিজেন ।
• উভধর্মী অক্সাইড: Al2O3, ZnO, SnO
• প্রশম অক্সাইড: H2O, CO, N2O, NO
• অক্সিজেনের বহুরূপতা - ওজোন ।

হাইড্রোজেন

হাইড্রোজেন (H) বা উদজান সবচেয়ে হালকা মৌলিক পদার্থ এবং একটি অধাতু । এটি পর্যায় সারণীর প্রথম রাসায়নিক মৌল। এর পারমাণবিক সংখ্যা ১ ও প্রতীক H। সাধারণত এটি বর্ণহীন গন্ধহীন অত্যন্ত দাহ্য গ্যাস । যার প্রতি অণুতে দুটি পরমাণু থাকে।

• আবিষ্কারক: হেনরি ক্যাভেন্ডিস
• হাইড্রোজেন বা পানি উৎপাদক নামকরণ: ল্যাভয়সিয়ে
• হাইড্রোজেন নিজে জ্বলে, কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে না ।
• হাইড্রোজেন বর্ণহীন , গন্ধহীন ও স্বাদহীন গ্যাস ।
• ওয়াটার গ্যাস = কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোজেন গ্যাস (CO + H2)
অক্সি-হাইড্রোজেন শিখা: অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের মিশ্রণের ফলে উৎপন্ন শিখাকে অক্সি হাইড্রোজেন শিখা বলে। (2800°C তাপ উৎপন্ন হয়)।

নাইট্রোজেন

নাইট্রোজেন একটি মৌল বা মৌলিক পদার্থ যার বাংলা নাম যবক্ষারজান। যার প্রতীক N , রাসায়নিক সংকেত N2 এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৭। যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় এটি বায়বীয় পদার্থ । তারপর ও ড্রাই আইসের মত তরল নাইট্রোজেনের ও প্রধান ব্যবহার হয় হিমায়ক হিসেবে। এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সর্বাধিক বিদ্যমান, যা ৭৮.০৯ শতাংশ । এটি একটি বর্ণহীন এবং গন্ধহীন সংকুচিত গ্যাস যা অ-দাহ্য এবং অ-বিষাক্ত। নাইট্রোজেন প্রথম আবিষ্কার করেন স্কটিশ পদার্থবিদ ড্যানিয়েল রাদারফোর্ড ১৭৭২ সালে। তিনিই প্রথম এটিকে বায়ু থেকে আলাদা করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি এর নাম দেন নক্সাস এয়ার বা ফিক্সড এয়ার।

• আবিষ্কারক: রাদারফোর্ড ১৯৭২ সালে ।
• নাইট্রোজেনকে অ্যাজোট নাম দেন: ল্যাভয়সিয়ে।
• নাইট্রোজেনের সবচেয়ে বড় উৎস: বায়ুমন্ডল।
• প্রডিউসার গ্যাস = CO + N2(কার্বন মনোক্সাইড ও নাইট্রোজেনের মিশ্রন)।
• সকল ধাতুর যে লবণ পানিতে দ্রবণীয় = নাইট্রেট ।
• লাফিং গ্যাস = নাইট্রাস অক্সাইড ( N2O ) .
• বরফ তৈরি এবং পচনশীল দ্রব্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয় - তরল অ্যামোনিয়া।

নাইট্রিক অ্যাসিডের ব্যবহারে কেন সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার: যাবতীয় জৈব পদার্থ নাইট্রিক অ্যাসিডের সংস্পর্শে এলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর ধর্ম অস্বাভাবিক ক্ষয়কারী। মানুষ বা জীবজন্তুর ত্বকে লাগলে সেস্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, আর গাঢ় হলুদ দাগ পড়ে যায়। উক্ত কারণে নাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করার সময় যথেষ্ট সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়।

রাজম্ল (Aquaregia): এক মোল গাঢ় নাইট্রিক এসিড ও তিন মোল গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক এসিডের আনুপাতিক মিশ্রণকে রাজম্ল বা অ্যাকোয়া রেজিয়া (Aquaregia) বলে। স্বর্ণ, প্লাটিনাম প্রভৃতি অভিজাত ধাতু যে কোন গাঢ়তার হাইড্রোক্লোরিক এসিড বা নাইট্রিক এসিডে দ্রবীভূত হয় না। কিন্তু এরা অ্যাকোয়া রেজিয়া মিশ্রণে দ্রবীভূত হয় । স্বর্ণ শিল্পে অ্যাকোয়া রিজিয়া ব্যবহৃত হয়।

সালফার

সালফার একটি বহুযোজী অধাতব রাসায়নিক পদার্থ। এর পারমাণবিক সংখ্যা ১৬ ও প্রতীক "S"। সালফার প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ রূপে অথবা সালফাইড বা সালফেট রূপে পাওয়া যায়। বহু ধাতব খনিজ প্রাকৃতিতে প্রধানত সালফাইড রূপে বিদ্যমান (যেমন পাইরাইট, চাল্কোপাইরাইট)। আমরা যে আমিষ খাদ্য গ্রহণ করি সেখানে সালফার থাকে। আমিষ হলো কার্বন(C), নাইট্রোজেন(N), হাইড্রোজেন(H), অক্সিজেন(O) এবং সালফারের(S) সমন্বয়ে তৈরি একটি যৌগ।

• সালফার হলুদ বর্ণের পদার্থ ।
• ফ্রাশ (Frasch) পদ্ধতিতে সালফারের খনি থেকে সালফার নিষ্কাশন করা হয় ।
• সালফার 115°C তাপমাত্রায় গলে যায়।
• সালফারের ব্যবহার:
১. সালফিউরিক এসিড প্রস্তুতিতে সালফার ব্যবহার করা হয়।
২. রাবারকে টেকসই করার জন্য রাবারের মধ্যে সালফার যোগ করা হয়।
৩. সালফানাইড দ্বারা বিভিন্ন প্রকার ঔষধ তৈরি করা হয় । সালফানাইড ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। সালফানাইড প্রস্তুতিতে সালফার ব্যবহার করা হয়।
• প্রাচীনকালে জলন্ত পাথর (Burning Stone) বলা হত - সালফারকে
• ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষায় থাকে - সালফার ।
• সালফারের রূপভেদঃ
[ক] দানাদারঃ ১) রম্বিক বা α-সালফার ২) মনোক্লিনিক বা β-সালফার
[খ] অদানাদারঃ ৩) প্লাস্টিক বা γ -সালফার ৪) দুগ্ধ বা δ -সালফার
[গ] তরলঃ ৫) λ-সালফার ৬) μ-সালফার

• সবচেয়ে স্থায়ী রূপ সালফারের - রম্বিক সালফার ।
• হাইড্রোজেন সালফেট এর গন্ধ - পচা ডিমের মত ।
• সালফান = ১০০% বিশুদ্ধ সালফিউরিক এসিড।
• ওলিয়াম = ধূমায়িত সালফিউরিক এসিড (পাইরো সালফিউরিক এসিড (H2S2O7 )
• ওয়েল অব ভিট্রিয়ল = সালফিউরিক এসিড

ফসফরাস

ফসফরাস আবিষ্কৃত মৌলগুলোর মধ্যে ১৫ তম। এ‌ কারণে এবং বিস্ফোরক, বিষ ও নার্ভ অ্যাজেন্ট তৈরিতে এটি ব্যবহারের কারণে একে প্রায়ই 'শয়তানের মৌল' নামে ডাকা হয়। ফসফরাস আবিষ্কারের কৃতিত্ব জার্মান রসায়নবিদ হেনিখ ব্রান্ডকে দেয়া হয়, যিনি ১৬৬৯ সালে এটি আবিষ্কার করেন। কিডনিতে পাথর, এবং যকৃতের রোগ ইত্যাদির মতো রোগীদের জন্য শরীরের মধ্যে ফসফরাসের ঘাটতি পূরণ করার জন্য এই ড্রাগ ফসফেটের আকারে ফসফরাস সরবরাহ করে। সাধারণ তাপমাত্রায় বায়ুতে তথা অক্সিজেনের সংস্পর্শে সাদা ফসফরাস স্বতঃজারিত হয়ে ফসফরাস ট্রাইঅক্সাইড উৎপন্ন করে। এই স্বতঃজারণের সময় এক ধরনের সবুজ শিখার সৃষ্টি হয় যাতে হাত দিলে তাপ অনুভূত হয় না। এজন্য একে শীতল শিখা বলে। ফসফরাস খাবারে পাওয়া যায় (জৈব ফসফরাস) এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, মুরগি, মাছ, বাদাম, মটরশুটি এবং দুগ্ধজাত খাবারে পাওয়া যায়। প্রাণীজ খাবারে পাওয়া ফসফরাস উদ্ভিদের খাবারে পাওয়া ফসফরাসের চেয়ে বেশি সহজে শোষিত হয়।

ফসফরাসের রূপভেদ: ফসফরাসের দুইটি রূপভেদ আছেঃ লোহিত ফসফরাস ও শ্বেত ফসফরাস।

ফসফরাসের সুস্থিত রূপভেদ: লোহিত ফসফরাস ।
ফসফরাস কোন রূপভেদ বেশি সক্রিয়: শ্বেত ফসফরাস।
কোন ফসফরাস খুবই বিষাক্ত: শ্বেত ফসফরাস।
শ্বেত ফসফরাসকে হলুদ ফসফরাসও বলা হয় কেন: শ্বেত ফসফরাসকে আলোতে রাখলে এর উপর হলুদ বর্ণের আস্তরণ পড়ে।
শ্বেত ফসফরাসকে পানির নিচে রাখা হয় কেন: শ্বেত ফসফরাস কক্ষ তাপমাত্রায় অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে জারিত হয়; সে সময় ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় এবং আগুন ধরে যেতে পারে ।
সাদা ফসফরাসের গন্ধ: রসুনের মত ।

সাদা ফসফরাসের সাহায্যে কিভাবে চমক লাগানো যায়:
[ক] সাদা ফসফরাসের একটি টুকরো CS2-র মধ্যে দ্রবীভূত করে, একটি কাচখন্ডে সামান্য তুলো জড়িয়ে তুলি তৈরী করে তা ফসফরাসের দ্রবণ ভিজিয়ে নিতে হবে । এবার সে তুলিটি দিয়ে অন্ধকার ঘরে কিছু লিখলে মুহূর্তের মধ্যে হাল্কা সবুজ আলোয় লেখাটি জ্বলজ্বল করতে থাকবে ।
[খ] একটি কাঁচের জারে এক টুকরো পটাসিয়ামক্লোরেট ও ফসফরাস রেখে পানি ফেলে দিতে হবে। এবার ঘন H2SO4 সাদা ফসফরাসের উপরে ফেললে যাদুমন্ত্রের মত পানির মধ্যে আগুণ জ্বলতে শুরু করবে।

ফসফরাসের অন্যতম প্রধান উৎস: অস্থিভস্ম।
নিরাপদ দিয়াশলাইয়েল কাঠির মাথায় ও বক্সের পার্শ্বে যে ফসফরাস ব্যবহৃত হয়: লোহিত ফসফরাস। দিয়াশলাই শিল্পে লোহিত ফসফরাস, জিংক ও বেরিয়াম লবণ, ক্যালসিয়াম সিলিকেট, পটাসিয়াম সিলিকেট, পটাসিয়াম ক্লোরেট প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়।
গ্যাস মাস্কের প্রধান উপাদান: ফসফরাস পেন্টাক্সাইড। (নিরুদক হিসাবে ব্যবহৃত হয় )
অক্সিজেনের রূপভেদের নাম: ওজোন (O3)।
মার্ক পারহাইড্রোল: হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের ৩০% দ্রবন ।
পুরাতন তৈলচিত্র শুভ্র করতে যা ব্যবহৃত হয়: হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড।

সিলিকন

সিলিকন একটি মৌল, এর প্রতীক Si ও পারমাণবিক সংখ্যা ১৪। ভর হিসেবে এটি বিশ্বের অষ্টম সর্বাধিক প্রাপ্ত মৌল তবে এটি প্রকৃতিতে খুব কমই বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এটি মূলত ধুলি, বালি গ্রহাণুপুঞ্জ এবং গ্রহসমুহে সিলিকনের অক্সাইড (সিলিকা) বা সিলিকেট আকারে থাকে। সিলিকন একটি গাঢ় ধূসর এবং ধাতুর মতো দেখতে কঠিন পদার্থ। তবে, সিলিকন কোনো ধাতু নয় (কিংবা অ-ধাতুও নয়); এটি উপধাতু নামে পরিচিত উপাদানের একটি বিশেষ শ্রেণীর অধীন যার মধ্যে ধাতু এবং অধাতু উভয়েরই কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি সিলিকা (Silica) নামেও পরিচিত। এর রাসায়নিক সংকেত SiO2। এটি বালি এবং কাচের মধ্যে থাকে। এটি ইলেকট্রনিক উপাদানগুলির জন্য একটি অর্ধপরিবাহী উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সিলিকনে 14টি প্রোটন, 14টি ইলেকট্রন এবং 14টি নিউট্রন রয়েছে। সিলিকন 1824 সালে একজন সুইডিশ বিজ্ঞানী জনস জ্যাকব বারজেলিয়াস আবিষ্কার করেছিলেন।

সিলিকনের রূপভেদ: সিলিকনের দুইটি রূপভেদ আছে। যথাঃ দানাদার ও অদানাদার ।
সিলিকার রাসায়নিক নাম: সিলিকন ডাই অক্সাইড (SiO2)
সিলিকার বিশুদ্ধ রূপ: কোয়ার্টজ।
বালুর প্রধান উপাদান: সিলিকা ।
কাদামাটির প্রধান উপাদান: বিভিন্ন অ্যালুমিনোসিলিকেট ।
সিলিকা জেলের সংকেত: SiO2. H2O

সাধারণ কাঁচের রাসায়নিক উপাদান: সাধারণ কাঁচ হচ্ছে সিলিকা, সোডিয়াম সিলিকেট ও ক্যালসিয়াম সিলিকেটের মিশ্রণ। এর মোটামুটি সংযুক্তি হলঃ Na2[O] Ca[O] 5SiO2.

সাধারণ কাঁচ তৈরীর কাঁচামাল: সিলিকা, সোডা অ্যাশ ও চুনাপাথর ।

কস্টিক সোডা কাঁচ ক্ষয় করে কেন: কস্টিক সোডা কাঁচের উপাদান সিলিকার সাথে বিক্রিয়া করে।

ইট মৃত্তিকার রাসায়নিক সংযুক্তি: সিলিকা ৫৫%, অ্যালুমিনা ৩০%, আয়রন অক্সাইড ৮%, ম্যাগনেশিয়া ৫%, চুন ১%, জৈব পদার্থ ১%।

সিমেন্টের রাসায়নিক সংযুক্তি: চুন ৬২%, সিলিকা ২২%, অ্যালুমিনা ৭.৫%, আয়রন অক্সাইড ২.৫%, ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড ২.৫%, সালফার ট্রাইঅক্সাইড ১.৫%। সিমেন্টে Alumina থাকার ফলে Setting ধীরে হয়।

সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল: চুনাপাথর, চায়না ক্লে ( চায়না ক্লে একধরণের সাদা চিনামাটি। এটি সর্বপ্রথম চীনারা ব্যবহার করে সিরামিক দ্রব্য উৎপন্ন করতে। এটি কেওলিন, হাইড্রেডেটেড অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট প্রভৃতি নামে পরিচিত। অর্থাৎ এটি হচ্ছে, পানি, অ্যালুমিনিয়াম ও সিলিকনের সমস্বয়ে সৃষ্ট যৌগ। ) ও জিপসাম ।
সিমেন্টে জিপসাম যোগ করা হয় কেন: দ্রুত জমাট রোধ করার জন্য।

কোয়ার্টজ (Quartz): কোয়ার্টজ হচ্ছে সিলিকন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত একটি বর্ণহীন মনিক, দেখতে কাঁচের মতো স্বচ্ছ এবং কাঁচের মতোই ভঙ্গুর, তবে কাঁচের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন । কোয়ার্টজ হলো চাপ-বিদ্যুৎ বস্তু (Piexo-electrical)। যখন একটি Quartz স্ফটিকের দুটি তলে চাপ দেয়া হয়, তখন এ স্ফটিকের মধ্যে বৈদ্যুতিক গতির সৃষ্টি হয়। আবার যখন বিদ্যুৎ উভয় তলে প্রয়োগ করা হয় তখন স্ফটিক সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এ বৈশিষ্ট্য থাকার ফলে এবং এত বৈদ্যুতিক নিদের্শক উপাদান থাকার ফলে কোয়ার্টজ রেডিও, টেলিভিশন, রাডার এবং ঘড়ির পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু হিসেবে গণ্য করা হয়। ঘড়িতে কোয়ার্টজ দোলক ব্যবহারের ফলে এ জাতীয় ঘড়ি নির্ভুল সময় দেয় ।
ফটোগ্রাফিক প্লেটে কি আবরণ থাকে: সিলভার ব্রোমাইডের

সালফিউরিক এসিড রাসায়নিক পদার্থসমূহের রাজা বলা হয় কেন:
প্রায় প্রত্যেক শিল্পে কোন না কোন স্তরে H2SO4 ব্যবহৃত হয়। সব রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে H2SO4 বেশি উৎপন্ন ও ব্যবহৃত হয় বলে একে রাসায়নিক পদার্থসমূহের রাজা হয় ।

লাফিং গ্যাস: নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) এর মৃদু মিষ্টি গন্ধ আছে । নি:শ্বাসের সাথে এটি অল্প পরিমান গ্রহন করলে হাসির উদ্রেক করে। এজন্য একে লাফিং গ্যাস বলে ।

নাইট্রোজেন চক্র: আকাশে বিদ্যুৎ ক্ষরণের ফলে নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ তৈরি হয়, যা পানির সাথে মিশে নাইট্রিক এসিড উৎপন্ন করে। এ নাইট্রিক এসিড বৃষ্টির পানির সাথে মিশে মাটিতে পতিত হয় এবং জমির ক্ষারীয় উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রেট লবণ উৎপন্ন করে। উদ্ভিদ এ নাইট্রেট গ্রহণ করে তাকে প্রোটিনে রূপান্তরিত করে, যা প্রাণিসকল গ্রহণ করে। উদ্ভিদ ও প্রাণির জীবন অবসানের পর পচন ক্রিয়ায় প্রোটিনের কিছু অংশ নাইট্রোজেন গ্যাসে পরিণত হয়। এভাবে প্রকৃতিতে “নাইট্রোজেন চক্র” চলে।

এসিড বৃষ্টির কারণ: শিল্প কারখানা হতে নির্গত সালফারের বিভিন্ন অক্সাইড (প্রধান) এবং নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড ।
এসিড বৃষ্টির দেখা যায়: শিল্প সমৃদ্ধ জনবহুল এলাকায় ।
স্বর্ণের খাদ বের করতে যে এসিড ব্যবহার করা হয়: নাইট্রিক এসিড (HNO3) ।
ধূমায়মান নাইট্রিক এসিড: 96-98% ঘনমাত্রার নাইট্রিক এসিডে অধিক নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2) দ্রবীভূত থাকে। NO2 গ্যাস বের হয়ে বায়ুতে ধোয়া উৎপন্ন করে। তাই এই ঘনমাত্রার নাইট্রিক এসিডকে ধূমায়মান নাইট্রিক এসিড বলে ।
নেসলার দ্রবন: নেসলার দ্রবন হল পটাশিয়াম মারকিউরিক আয়োডাইড (KHgI3) ও পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের ক্ষার মিশ্রিত দ্রবণ ৷
অ্যামোনিয়া গ্যাস ও অ্যমোনিয়াম যৌগ সনাক্তকরণে নেসলার দ্রবন কাজে লাগে ।
প্রস্রাব থেকে যে গন্ধ আসে তা: অ্যামোনিয়ার ।
নিশাদলের রাসায়নিক নাম: অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl)।
আতশবাজি: গন্ধক, পটাশিয়াম নাইট্রেট এবং কাঠকয়লার গুড়ার মিশ্রণ

উপধাতু / অর্ধধাতুঃ যে সব মৌল কখনো ধাতু বা কখনো অধাতুর ন্যায় আচরণ করে তাদের উপধাতু বলে । যেমনঃ বোরন, সিলিকন, জার্মেনিয়াম, সেলেনিয়াম, আর্সেনিক, অ্যাসট্যাটিন ইত্যাদি।

আর্সেনিক: আর্সেনিক একটি মৌলিক পদার্থ। এর ধাতব ও অধাতব বৈশিষ্ট উভয়ই থাকাতে একে অপধাতু বলা হয়। বিশ স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আমাদের দেশের নলকুপের পানিতে আর্সেনিকের গ্রহনযোগ্য মাত্রা ০.০৫ মিলিগ্রাম/লিটার বা 50 ppb

হ্যালোজেন

রসায়নবিজ্ঞানে একটি পরিচিত নাম হ্যালোজেন। বিভিন্ন লবণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই হ্যালোজেন মৌলগুলো মূলত সমুদ্রে এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক পদার্থে পাওয়া যায়। হ্যালোজেন বলতে পর্যায় সারণীর সপ্তম শ্রেণীভুক্ত সমধর্মী এক গুচ্ছ মৌলিক পদার্থকে বোঝায়। এগুলো আধুনিক পর্যায় সারণীতে ১৭নং গ্ৰুপের অন্তর্ভুক্ত। যে পাঁচটি মৌলিক পদার্থ হ্যালোজেন হিসেবে চিহ্নিত সেগুলো হলো ফ্লোরিন (F), ক্লোরিন (Cl), ব্রোমিন (Br), আয়োডিন (I), এবং অ্যাস্টাটিন (At)। ফ্লোরিন ( F2 ) কে সুপার হ্যালোজেন বলা হয় কারণ এটির মধ্যে উচ্চ তড়িৎঋণাত্মকতা এবং উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীলতা রয়েছে। অন্য সমস্ত হ্যালোজেনের মধ্যে ফ্লোরিন হল সর্বোচ্চ তড়িৎঋণাত্মক উপাদান।

হ্যালোজেনের সক্রিয়তার ক্রম : ফ্লোরিন (F) > ক্লোরিন (Cl) > ব্রোমিন (Br) > আয়োডিন (I) > অ্যাস্টাটিন (At)। সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হ্যালোজেন ফ্লোরিন এবং সবচেয়ে কম সক্রিয় হ্যালোজেন অ্যাস্টাটিন । তবে প্রশ্ন অ্যাস্টাটিন না থাকলে আয়োডিন উত্তর হবে ।
হ্যালোজেন শব্দের অর্থ: সামুদ্রিক লবন উৎপাদক ।
হ্যালোজেনগুলোর নাম: ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন, আয়োডিন এবং অ্যাস্টাটিন ।
হ্যালোজেন নামকরণের তাৎপর্য: সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমানে ক্লোরিন, ব্রোমিন এবং আয়োডিনের লবন পাওয়া যায়। সমুদ্রে ফ্লোরিনের লবন পাওয়া না গেলেও ফ্লোরিনের সোডিয়াম লবনের সাথে সামুদ্রিক লবন NaCl এর সাদৃশ্য রয়েছে। এজন্য এদের একসাথে হ্যালোজেন বলে ।
সমুদ্রের পানিতে যে লবনের পরিমান সর্বোচ্চ: সোডিয়াম ক্লোরাইড (২.৫৬%)।
আয়োডিনের প্রধান উৎস: সামুদ্রিক শৈবাল ।
কেল্প: সামুদ্রিক শৈবাল ভস্ম ।
পর্যায় সারণিতে হ্যালোজেনগুলোর অবস্থান কোথায়: VIIA গ্রুপে।
হ্যালোজেনগুলো প্রকৃতিতে কি অবস্থায় পাওয়া যায়: সাধারণ তাপমাত্রায়, F2 ও Cl2 - গ্যাসীয়, Br2 - তরল, I2 - কঠিন পদার্থ ।
হ্যালোজেনগুলো: F2 - ফিকে হলুদ; Cl2 - সবুজাভ হলুদ; Br2 – লাল; I2 - বেগুনি ।
হ্যালোজেন এসিডগুলোর শক্তির ক্রম: HI > HBr > HCl > HF
যে এসিড কাচক্ষয় করে: HF ।
টিংচার আয়োডিন: আয়োডিন, পটাসিয়াম আয়োডাইড, পানি ও রেকটিফাইড স্পিরিটের মিশ্রণকে একত্রে টিংচার আয়োডিন বলে ।
টিংচার আয়োডিন যে কাজে লাগে: পচন নিবারক এবং জীবাণুনাশক হিসেবে হাসপাতালে টিংচার আয়োডিন ব্যবহৃত হয় ।
পানীয় জল জীবাণুমুক্ত করতে যে রাসায়নিকদ্রব্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়: ক্লোরিন।
রেফ্রিজারেটর যন্ত্রে হিমায়ক “ফ্রেয়ন” তৈরিতে দরকার - ফ্লোরিন।
ক্যালিচি - অবিশুদ্ধ প্রাকৃতিক সোরা বা চিলি সল্ট পিটারকে ক্যালিচি বলে ।
আন্তঃহ্যালোজেন যৌগ : হ্যালোজেনসমূহ নিজেদের মধ্যে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন যৌগ গঠন করতে পারে, এদেরকে আন্তঃহ্যালোজেন যৌগ বলে। ClF3, ICl5, IF7 ইত্যাদি আন্তঃহ্যালোজেন যৌগ।

নবীনতর পূর্বতন