সাধারণত বীজ থেকে শিশু উদ্ভিদ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে অঙ্কুরোদগম বলে। যথাযথভাবে অঙ্কুরোদগম হওয়ার জন্য মাটি , পানি, তাপ ও অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। তবে মাটি ছাড়া ও অঙ্কুরোদগম হতে পারে যেমন- সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের
অঙ্কুরোদগম হয় জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম যেখানে মাটির প্রয়োজন পড়ে না । অঙ্কুরোদগমকে যথাযথভাবে বোঝার জন্য আমরা একটি ছোলা বীজের অঙ্কুরোদগম বর্ণনা করছি ।
একটি বাটির মধ্যে একটি ফিল্টার পেপার রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে তার উপর ৮/১০টি ভেজা ছোলার বীজ ৩/৪ দিন ঢেকে রেখে দিলে এগুলো থেকে অঙ্কুর বের হবে।
বীজের সূঁচালো অংশের কাছে একটি ছিদ্র আছে, একে মাইক্রোপাইল বা ডিম্বকরন্ধ্র বলে। এর ভিতর দিয়ে ভ্রুণমূল বাইরে বেরিয়ে আসে। অঙ্কুর বের হওয়া বীজটিকে দুই আঙ্গুল দিয়ে সামান্য চাপ দিয়ে
ছোলা বীজের আবরণটি সরিয়ে ফেললে হলুদ রঙের একটি অংশ বের হবে, এটিকে আরও একটু চাপ দিলে পুরু বীজপত্র দুটি দুই দিকে খুলে যাবে। এ দুটো যেখানে লেগে আছে সেখানে সাদা রঙের একটি লম্বাটে অঙ্গ দেখা যাবে।
এর নিচের দিকের অংশকে ভ্রুণমূল এবং উপরের অংশকে ভ্রুণকাণ্ড বলে।
ভ্রূণকাণ্ডের নিচের অংশকে বীজপত্রাধিকান্ড (এপিকোটাইল) ও ভূণমূলের উপরের অংশকে বীজপত্রাবকাণ্ড (হাইপোকোটাইল) বলে। ভ্রুণমূল , ভ্রুণকাণ্ড ও বীজপত্রকে একত্রে ভ্রুণ এবং বাইরের আবরণটিকে বীজত্বক বলে। বীজত্বক দু'স্তরবিশিষ্ট। বাইরের অংশকে টেস্টা এবং ভিতরের অংশকে টেপমেন বলে।
ছোলা বীজের অঙ্কুরোদগম : এক্ষেত্রে মৃদগত অঙ্কুরোদগম হয়। এ প্রকার অঙ্কুরোদগমে বীজপত্র দু'টি মাটির নিচে রেখে ভ্রুণকাণ্ড উপরে উঠে আসে। বীজ পত্রাধিকাণ্ডের অতিরিক্ত বৃদ্ধি এর কারণ। ছোলাবীজ একটি অসস্যল দ্বিবীজপত্রী বীজ। মাটিতে ছোলা বীজ বুনে পরিমিত পানি, তাপ ও বায়ুর ব্যবস্থা করলে দুই তিন দিনের মধ্যে বীজ হতে অঙ্কুর বের হবে এবং মাটির উপরে উঠে আসবে। পানি পেয়ে বীজটি প্রথমে ফুলে উঠে এবং ডিম্বকরন্ধ্রের ভিতর দিয়ে ভ্রুণমূল বেরিয়ে আসে। এটি ধীরে ধীরে প্রধান মূলে পরিণত হয়। দ্বিতীয় ধাপে ভ্রুণকাণ্ড মাটির উপরে উঠে আসে। এক্ষেত্রে বীজপত্র দুটি মাটির নিচে থেকে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ভ্রুণ তার খাদ্য বীজপত্র থেকে পেয়ে থাকে।
অঙ্কুরোদগমের প্রকারভেদ : সুপ্তবস্থা কাটিয়ে ভ্রুনের বৃদ্ধি হওয়াকে অঙ্কুরোদগম বলে। অঙ্কুরোদগম মূলত উদ্ভিদের বংশ বিস্তারের প্রক্রিয়া যার সাহায্যে উদ্ভিদ টিকে আছে এবং বংশবিস্তার করতে পারছে । এই অঙ্কুরোদগম সংঘটিত না হলে উদ্ভিদকূল টিকে থাকত না । আর সমস্ত প্রাণী ও টিকে থাকত পারত না । কারণ প্রাণীকূল উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল । যার ফলস্বরুপ পৃথিবীর অস্তিত্বে প্রাণের সন্ধান আর খুজে পাওয়া যেত না । এই অঙ্কুরোদগম তিন প্রকার যথা : মৃদগত অঙ্কুরোদগম , মৃদভেদী অঙ্কুরোদগম , জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম ।
মৃদগত অঙ্কুরোদগম : যখন ভ্রূণকান্ড মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসে কিন্তু বীজপত্রটি মাটির ভিতরে থেকে যায় তখন তাকে মৃদগত অঙ্কুরোদগম বলে, যেমন- ছোলা, ধান ইত্যাদি।
মৃদভেদী অঙ্কুরোদগম : যদি বীজপত্রসহ ভ্রূণমুকুল মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসে তখন তাকে মৃদভেদী অঙ্কুরোদগম বলে। কুমড়া, রেড়ী, তেঁতুল ইত্যাদি বীজে মৃদভেদী অঙ্কুরোদগম দেখা যায়।
জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম : লবণাক্ত মাটি বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযোগী নয় , তাই এই মাটিতে বসবাসকারী উদ্ভিদের বীজের অঙ্কুরোদগম ফলের মধ্যেই উদ্ভিদের সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থায় হয় বলে একে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম বলে । যেমন- কেওড়া , সুন্দরী ইত্যাদি ।
এই প্রকার অঙ্কুরোদগমে প্রথমে ফল ভেদ করে বীজের ভ্রুণমূল অংশ বাইরে বেরিয়ে আসে । তারপর বীজ পত্রাবকান্ড বেরিয়ে স্ফীত হয়ে গদার আকৃতি ধারণ করে এবং ফলসহ অঙ্কুরিত বীজটি উদ্ভিদ থেকে বিচ্যুত হয় এবং বীজ পত্রাবকান্ড সহ ভ্রুণমূল মাটিতে গেঁথে যায় এবং ভ্রুণমূল অংশ মাটির উপরে থাকে ।
- বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান: পানি-তাপ-বায়ু।
- ছোলাবীজে মৃৎগত ধরনের অঙ্কুরোদগম হয়।
- শিমবীজে মৃৎভেদী ধরনের অঙ্কুরোদগম হয়।
- তামাক বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য অন্ধকার প্রয়োজন।
- সীম বীজে মৃৎগত অংকুরোদগম হয়।