ধাতব পদার্থ বলতে আমরা সাধারণত কঠিন পদার্থ বুঝে থাকি কিন্তু আসলে তা ঠিক নয় । রসায়নে কতিপয় বৈশিষ্ট্যের কারণেই মূলত তাদেরকে ধাতব পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে । যেমন- পারদ সাধারণত তরল অবস্থায় থাকে কিন্তু এটি ও একটি ধাতব পদার্থ । আজকের টিউটরিয়ালে আমরা ধাতব পদার্থ কি , ধাতব পদার্থ এবং তাদের যৌগসমূহ যেমন- খনিজ ও আকরিক , সোডিয়াম এর যৌগ , সালফেট লবণ সমূহ , ক্যালসিয়াম এর যৌগ , সংকর ধাতু , পদার্থের ক্ষয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করব যা বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তাছাড়া বিসিএসসহ যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য এ টিউটরিয়ালটি অবশ্যই পাঠ্য ।

ধাতব পদার্থ
ধাতু: যেসব মৌলিক পদার্থ চকচকে, বিদ্যুৎ ও তাপ সুপরিবাহী সেসব মৌলিক পদার্থকে ধাতু বলে । যৌগিক পদার্থে এরা সাধারণত তড়িৎ ধনাত্মক আয়ন হিসেবে উপস্থিত থাকে। যেমন-কপার, অ্যালুমিনিয়াম, সিলভার, গোল্ড প্রভৃতি ।
উপধাতু: যেসব মৌল কখনো ধাতু আবার কখনো অধাতুর মতো আচরণ করে সেগুলোকে উপধাতু বলে । এদের সংখ্যা খুব কম। যেমন-বোরন, সিলিকন, জার্মেনিয়াম, আর্সেনিক ইত্যাদি পদার্থকে উত্তপ্ত করলে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। আবার এদের বাষ্পকে শীতল করলে পূর্বের মতো কঠিন পদার্থে পরিণত হয়।
অধাতু: যেসব মৌল প্রধানত তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী তাদের অধাতু বলে। যৌগে এরা তড়িৎ ঋণাত্মক আয়ন হিসেবে থাকে। যেমন- নাইট্রোজেন, কার্বন, ক্লোরিন প্রভৃতি ।
ধাতুর বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মসমূহঃ
১) ধাতুসমূহ বিদ্যুৎ ও তাপ সুপরিবাহী।
২) ধাতুসমূহের বিশেষ দ্যুতি আছে। এরা আলোক বিচ্ছুরণ করতে পারে ।
৩) ধাতুসমূহ ঘাতসহ, প্রসারণশীল ও নমনীয় ।
৪) আঘাতে ধাতুসমূহ হতে টুন টুন শব্দ হয়।
ধাতুর বৈশিষ্ট্যমূলক রাসায়নিক ধর্মসমূহ হলঃ
১) ধাতুর অক্সাইডসমূহ ক্ষারকীয় এবং পানিতে দ্রবণীয় হলে ক্ষার উৎপন্ন করে ।
Na2O + H2O2 → NaOH
২) ধাতুসমূহ এসিডের হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপন করে লবণ উৎপন্ন করে ।
Zn + H2SO4 = ZnSO4 + H2
৩) ধাতুর যৌগসমূহ সাধারণত আয়নিক ও তড়িৎ বিশ্লেষ্য ।
৪) ধাতুসমূহ সাধারণত হাইড্রোজেনের সাথে যৌগ গঠন করতে চায় না।
৫) ধাতুসমূহ বিজারক।
বৈশিষ্ট্য | ধাতু |
---|---|
সবচেয়ে হালকা ধাতু | লিথিয়াম |
সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু | প্লাটিনাম |
সবচেয়ে সক্রিয় ধাতু | পটাশিয়াম |
যে ধাতুতে আঘাতে শব্দ হয় না | অ্যান্টিমনি |
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে | পারদ এবং সিজিয়াম |
গলনাঙ্ক সবচেয়ে কম | পারদ |
সবচেয়ে ভারী তরল পদার্থ | পারদ |
সবচেয়ে দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় | দস্তা |
প্রথম ব্যবহার করা শেখা ধাতু | তামা |
যে ধাতু পানিতে ভাসে | সোডিয়াম |
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ধাতু | লোহা |
ভূপৃষ্ঠে সবচেয়ে বেশি প্রাপ্ত | অ্যালুমিনিয়াম |
যে ধর্মের জন্য ধাতুকে পাতলা পাতে পরিণত করা যায়: ঘাতসহতা।
যে ধর্মের জন্য ধাতুকে সরু তারে পরিণত করা যায়: নমনীয়তা ।
প্রাকৃতিক মৌলের মধ্যে ধাতুর সংখ্যা: ৭০।
যে ধাতুর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা সবচেয়ে বেশি: রূপা ।
ধাতুগুলো ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী কেন: ধাতুতে বিমুক্ত ইলেকট্রন থাকার কারণে ।
দুটি ধাতুর কোনটি বেশি ভারী - তা কিভাবে নির্ণয় করা যায়: ধাতুর পারমাণবিক ওজন জানা থাকলে কোন ধাতু বেশি ভারি তা সহজেই নির্ণয় করা যায় । যেমনঃ যদি বলা হয় লোহা ও পারদের মধ্যে কোনটি বেশি ভারি? উত্তর হবে পারদ কারণ লোহার পারমাণবিক ওজন ৫৫.৮৫ এবং পারদের পারমাণবিক ওজন ২০০.৫৯।
ধাতুসমূহের সক্রিয়তা ক্রম: পটাসিয়াম > সোডিয়াম > ক্যালসিয়াম > ম্যাগনেসিয়াম > অ্যালুমিনিয়াম > জিংক > আয়রন> লেড > হাইড্রোজেন > কপার > সিলভার ।
যে ধাতুটি পানিতে ভাসে: সোডিয়াম ও পটাশিয়াম উভয় ধাতুই পানির চেয়ে হালকা। এদের ঘনত্ব যথাক্রমে ০.৯৭ গ্রাম/সি.সি. ও ০.৮৬২ গ্রাম/সি.সি. ।
সোডিয়াম ধাতুকে পেট্রোল বা কেরোসিনের নীচে রাখা হয় কেন :
সোডিয়াম কক্ষ তাপমাত্রায় আর্দ্র বাতাসের সংস্পর্শে সোডিয়াম অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা বাতাসের জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন করে ।
এটি আবার বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে ধীরে ধীরে সোডিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয়। এ কারণে সোডিয়াম ধাতুকে পেট্রোল বা কেরোসিনের নীচে রাখা হয়, যেন তা বাতাসের সংস্পর্শে না আসে।
যে ধাতুর ব্যবহার দেখে একটি দেশ কতটা শিল্পোন্নত তা বোঝা যায়: লোহা ।
ধাতুর নিষ্ক্রিয়তা: আয়রন, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি কয়েকটি ত্রিযোজী ধাতুর বিশেষ ধর্ম হল এরা লঘু নাইট্রিক এসিডের সাথে সহজেই বিক্রিয়া করে কিন্তু অতি গাঢ় বা ধূমায়মান নাইট্রিক এসিডের সংস্পর্শে ডুবালে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে অর্থাৎ বিভিন্ন বিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না । ধাতুর এ অবস্থাকে নিষ্ক্রিয় অবস্থা এবং এই ধর্মকে ধাতুর নিষ্ক্রিয়তা বলা হয় ।
ধাতুর নিষ্ক্রিয়তার কারণ : আয়রনের একটি খণ্ডকে গাঢ় বা ধূমায়মান নাইট্রিক এসিডে ডুবালে খণ্ডের পৃষ্ঠদেশে ট্রাই আয়রন টেট্রাক্সাইড (Fe3O4) এর একটি পাতলা স্তরের সৃষ্টি হয়, যা খণ্ডটিকে বিভিন্ন বিক্রিয়কের সংস্পর্শে আসতে দেয় না।
ধাতুর নিষ্ক্রিয়তা কিভাবে দূর করা যায়: খণ্ডটিকে ভালভাবে ঘষলে নিষ্ক্রিয়তা দূর হয় ।
থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহারের সুবিধা :
১. বিশুদ্ধ পারদ পানি ও অন্যান্য তরলের ন্যায় কাচের দেওয়ালের সাথে আটকে থাকে না, ফলে
নলের মধ্যে সহজে উঠানামা করতে পারে ।
২. অল্প তাপে পারদের আয়তন অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। ফলে পারদ-থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা
সূক্ষ্মভাবে মাপা যায়।
৩. পারদ তাপের সুপরিবাহী। তাই উষ্ণবস্তুর সংস্পর্শে আসামাত্রই বস্তুর তাপমাত্রা গ্রহণ করে । তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে পারদের প্রসারণ একই মাত্রায় হয়।
৪. পারদের হিমাঙ্ক-39°C এবং স্ফুটনাঙ্ক 357°C। ফলে এর মাঝের যে কোন তাপমাত্রা পারদ -থার্মোমিটার দ্বারা মাপা যায় ।
রোধ থার্মোমিটারে যে ধাতু ব্যবহার করা হয়: প্লাটিনাম
বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্ট যে ধাতু দিয়ে তৈরি:
টাংস্টেন ধাতু দিয়ে তৈরি যার রোধাঙ্ক খুব বেশি কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রায়ও না গলে কঠিন অবস্থায় থাকে। বৈদ্যুতিক বাল্বের (Electric bulb) ভিতরে ফিলামেন্ট নামক বিশেষ এক ধরনের তারের কুন্ডলী থাকে, যার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়।
থার্মাইট: একভাগ অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণ ও তিনভাগ ফেরিক অক্সাইডের মিশ্রণ।
থার্মাইট পদ্ধতির ব্যবহারিক প্রয়োগ: রেললাইন, জাহাজের ভাঙ্গা অংশ প্রভৃতি বড় লোহার খণ্ড জোড়া লাগাতে ।
শিখা পরীক্ষার মাধ্যমে কিভাবে ধাতু সনাক্ত করা যায়: ধাতব আয়ন দ্বারা সৃষ্ট বর্ণ -
ধাতু | শিখায় সৃষ্ট বৰ্ণ |
---|---|
লিথিয়াম | উজ্জ্বল লাল বা সূর্যাস্তের বর্ণ |
সোডিয়াম | উজ্জ্বল সোনালী হলুদ |
পটাশিয়াম | বেগুনি |
ক্যালশিয়াম | ইটের ন্যায় লাল বর্ণ (অস্থায়ী) |
বেরিয়াম | হলুদাভ সবুজ |
ম্যাগনেশিয়াম / বেরিলিয়াম | বর্ণহীন |
ধাতু | অপর নাম |
---|---|
লেড | সীসা |
জিঙ্ক | দস্তা |
কপার | তামা |
পারদ | মারকারী |
খনিজ ও আকরিক
খনিজ ( mineral) : ভূ-গর্ভে বা ভূ-পৃষ্ঠে কোনো কোনো শিলাস্তুপে প্রচুর পরিমাণে যৌগ অথবা মৌল হিসাবে মূল্যবান ধাতু অথবা অধাতু পাওয়া যায়, তাদেরকে খনিজ বলে। মূলত, এগুলো অজৈব পদার্থ এবং সাধারণভাবে কেলাসরূপে বিদ্যমান থাকে। যেমন: লোহা, তামা, সোনা, রুপা প্রভৃতি ।
আকরিক (Ore): আকরিক দ্বারা কোন প্রাকৃতিক পাথর বা শিলাকে বোঝানো হয় যার মধ্যে মূল্যবান খনিজ পদার্থ থাকে। বিশেষ করে ধাতব খনিজ পদার্থ। আকরিক হল এমন এক খনিজ পদার্থ যার সাহায্যে প্রয়োজনীয় ধাতুকে অল্প খরচে এবং সহজ উপায়ে নিষ্কাশন করা যায়। এইসকল শিলাকে মাটি খুঁড়ে উত্তোলন করা যায়, বাজারজাত করা যায় এবং বিক্রি করে লাভও করা যায়। মূলত প্রকৃতিতে ধাতুসমূহ মুক্ত অবস্থায় থাকে না, যৌগ হিসেবে থাকে। যেসব ধাতব যৌগ হতে লাভজনকভাবে ধাতু নিষ্কাশন করা যায়, তাদের আকরিক বলা হয়।
ধাতুর নাম | প্রাপ্ত আকরিক |
---|---|
সোডিয়াম (Na) | রকসল্ট (NaCl) চিলি সল্টপিটার (NaNO3) বোরাক্স (NaB4O7.10H2O) ন্যাট্রোন (NaNO3.H2O) |
পটাশিয়াম (K) | সল্ট পিটার (KNO3) |
ক্যালসিয়াম (Ca) | চুনাপাথর (CaCO3) জিপসাম (CaSO4, 2H2O) ডলোমাইট [CaMg,(CO3)2] |
ম্যাগনেসিয়াম (Mg) | ইপসম লবণ (MgSO4.7H2O) অ্যাসবেস্টস [Mg3Ca (SiO3)4]: অগ্নিনিরোধক খনিজ পদার্থ |
অ্যালুমিনিয়াম (AI) | বক্সাইট (Al2O3.2H2O) কোরান্ডাম (Al2O3) ক্রায়োলাইট (AlF3.3NaF) |
লেড (Pb) | গেলেনা বা লিড সালফাইড (PbS) |
কপার (Cu) | কপার পাইরাইট (CuFeS2) কিউপ্রাইট (Cu2O) |
জিংক (Zn) | জিংক ব্লেন্ড (Zns) ক্যালামাইন (ZnCO3) জিংকাইট (ZnO) |
আয়রন (Fe) | ম্যাগনেটাইট(Fe2O4) হেমাটাইট (Fe2O3) আয়রন পাইরাইট্স (FeS2) লিমোনাইট (Fe2O3.3H2O) |
টাইটেনিয়াম | রুটাইল (TiO2) ইলমোনাইট (FeTiO2 বা Fe[O] TiO2) |
ক্লোরিন | রকসল্ট ( NaCl) সিলভাইন (KCI) |
মার্কারি | সিন্নাবার (HgS) |
সিলভার | সিলভার গ্লাস (Ag2S) |
ভ্যানাডিয়াম | ভ্যানাডিনাইট [3Pb3(VO4)2.PbCl2 ] |
ক্রোমিয়াম | ক্রোমাইট (FeO.Cr2O3 / FeCr2O4) |
ম্যাঙ্গানিজ | পাইরোসাইট (MnO2) |
কোবাল্ট | লিনাসাইট [(Fe, Co, Ni)3 S4 ] |
নিকেল | পেন্টল্যান্ডাইট (Ni, Cu, Fe) S / ( Ni, Fe)S |
কালো সোনা বা ভারী মণিক (Heavy Mineral): জিরকন, ম্যাগনেটাইট, ইলমেনাইট, কোরান্ডাম, মোনাজাইট, রুটাইল প্রভৃতির সমন্বয়ে গঠিত মূল্যবান খনিজ কালোসোনা নামে পরিচিত। সোনার ন্যায় মূল্যবান বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। সাধারণ মণিকের তুলনায় বেশি ঘনত্বপূর্ণ মণিক, যা বেশি ঘনত্বের কারণে ভারী তরল ব্রোমোফর্ম (আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.৯) এর মাধ্যমে বালি থেকে তলানিরূপে আলাদা করা যায়। অর্থাৎ কালো সোনা বা Heavy Mineral-এর আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.৯ এর বেশি। অন্যদিকে বালির প্রধান উপাদান, কোয়ার্টজ, ফেলসপার ইত্যাদি কম ঘনত্বের কারণে ভারী তরল ব্রোমোফর্ম-এ ভাসমান অবস্থায় থাকে বলে এদেরকে বা হালকা মনিক বলে। ভারী মনিকের মধ্যে রুটাইল, জিরকন, ইলমেনাইট, ম্যাগনেটাইট, গারনেট, মোনাজাইট, কোরনডাম ইত্যাদি অন্যতম । বাংলাদেশের পূর্ব এবং দক্ষিণ উপকূল বরাবর মোট ১৭টি কালো সোনা মজুদের আবিষ্কার ঘটে, যার ১৫টি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সমুদ্র সৈকত ও দ্বীপসমূহে এবং বাকি দুটির একটি নিঝুম দ্বীপ ও একটি কুয়াকাটায় অবস্থিত।
ব্যবহার: ইলমেনাইট রং শিল্পের উপাদান TiO2-এর উৎস হিসেবে ও ওয়েলডিং রড তৈরিতে। ম্যাগনেটাইট নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরে, এক্সরে মেশিন যন্ত্রে রেডিয়েশন শিল্ড ব্লক তৈরিতে। মোনাজাইট বেয়ার আর্থ ও থোরিয়াম ধাতুর উৎস হিসেবে। গারনেট শিরিস কাগজ ও কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
চুনী পাথর, নীলকান্ত মণি, পান্না প্রভৃতি মূল্যবান পাথরগুলো আসলে কিসের যৌগ: অল্প পরিমাণে অন্য ধাতুর অক্সাইড মিশ্রিত অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al2O3) ।
গুরুত্বপূর্ণ ধাতব যৌগের নাম ও সংকেত
যৌগের নাম | রাসায়নিক নাম ও সংকেত |
---|---|
খাবার লবণ | সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) |
টেস্টিং লবণ | মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (C5H8NO4Na ) |
কস্টিক সোডা | সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) |
খাবার সোডা | সোডিয়াম বাই কার্বনেট (Na2HCO3) |
সোডা অ্যাশ | অনার্দ্র সোডিয়াম কার্বনেট (Na2CO3) |
কাপড় কাঁচা সোডা | আর্দ্র সোডিয়াম কার্বনেট (Na2CO3.10H2O) |
গ্লুবার লবণ | আর্দ্র সোডিয়াম সালফেট (Na2SO4.10H2O) |
হাইপো | সোডিয়াম থায়োসালফেট (Na2S2O3) |
চক | ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) |
চুন/ পোড়াচুন | ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) |
কলিচুন বা স্ল্যাকড লাইম | ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Ca(OH)2] |
প্লাস্টার অফ প্যারিস | ক্যালসিয়াম সালফেট [(CaSO4)2.H2O] |
ব্লিচিং পাউডার | ক্যালসিয়াম ক্লোরা হাইপোক্লোরাইট [Ca(OCl)Cl] |
সোহাগা (বোরাক্স) | সোডিয়াম পাইরোবোরেট (NaB4O7.10H2O) |
ম্যাগনেসিয়া | ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড (MgO) |
ফিটকিরি বা পটাশ এলাম | পটাশিয়াম অ্যালুমিনিয়াম সালফেট (Al2(SO4)3K2.SO4.24H2O) |
অ্যালুমিনো | অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al2O3) |
দার্শনিকের উল | জিংক অক্সাইড ( ZnO ) |
রেডলেড বা সিঁদুর | ট্রাই প্লাম্বিক টেট্রাঅক্সাইড (Pb3O3) |
লেডের চিনি | লেড অ্যাসিটেট (CH2COO)2Pb |
মরিচা | Fe2O3.nH2O |
জুয়েলার বর্জ্য বা রুজ পাউডার | ফেরিক এক্সাইড (Fe2O3) |
ফুলস গোল্ড বা নির্বোধের সোনা | আয়রন ডাই সালফাইড(FeS2) |
তরল সোনা | মিথেন (CH4) |
গ্যালেনা | লেড সালফাইড (Pbs) |
লিথার্জ বা ম্যাসিকট | লেড মনোক্সাইড (PbO) |
সোডিয়াম এর যৌগ
সাধারণ লবণ কি : সাধারণ লবণ বা খাদ্য লবণের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)। সমুদ্র পানিতে ২.৬% খাদ্য লবণ দ্রবীভূত থাকে। এই সমুদ্রের পানিকে জলাধারে রেখে সূর্যতাপ ও বায়ু প্রবাহে পানিকে বাষ্পীভূত করে সোডিয়াম ক্লোরাইডের কেলাসকে পৃথক করা হয়। সোডিয়াম ক্লোরাইডে অবিশুদ্ধি হিসাবে সোডিয়াম সালফেট, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড প্রভৃতি মিশে থাকে। খাদ্য লবণের সঙ্গে কিছু আয়োডিন মিশ্রিত করা হয় ।
ব্যবহার: খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়; ধাতব সোডিয়াম কাপড় কাচা সোডা, সোডিয়াম বাই কার্বনেট, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য লবণ তৈরতে ব্যবহার করা হয় । এই হিমমিশ্র মাছ, মাংস সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
খাদ্য লবণে কি কি ভেজাল থাকে: খাদ্য লবণের মধ্যে প্রধানত ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সালফেট, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট এবং সামান্য পরিমাণে অন্যান্য লবণ ভেজাল হিসেবে থাকে ।
বর্ষাকালে খাদ্য লবণ ভিজে যায় কেন : খাদ্য লবণে অশুদ্ধি হিসেবে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCl2) এবং ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড (MgCl2) থাকে। সোডিয়াম ক্লোরাইড জলাকর্ষী পদার্থ নয়, কিন্তু ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড এবং ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড উভয়েই উদগ্রাহী পদার্থ। বর্ষাকালে এরা বায়ু থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে ঐ জলীয় বাষ্পতে দ্রবীভূত হয়। এর ফলে খাদ্য লবণকে ভিজে ভিজে লাগে ৷
কস্টিক সোডা: কস্টিক সোডার রাসায়নিক নাম হল সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH)। কেলনার সলভে (solvay) পদ্ধতিতে সোডিয়াম ক্লোরাইডের গাঢ় দ্রবণে পারদ ক্যাথোড এবং গ্রাফাইট অ্যানোড ব্যবহার করে তড়িৎ চালনা করে সোডিয়াম পারদ সংকর উৎপন্ন করা হয়। উৎপন্ন পারদ সংকরে পানি দিয়ে কস্টিক সোডার দ্রবণ তৈরী করা হয় । অতপর ঐ দ্রবণকে বাষ্পীভূত করে কস্টিক সোডা তৈরী করা হয়।
ব্যবহার: কাগজ এবং সাবান শিল্পে ডিটারজেন্ট তৈরীতে এবং কাষ্টনার পদ্ধতিতে ধাতব সোডিয়াম নিষ্কাশনে ব্যবহৃত হয়।
কাপড় কাচা সোডা: কাপড় কাচার সোডার রাসায়নিক নাম সোডিয়াম বাই কার্বনেট। প্রতি অণু সোডিয়াম কার্বনেটের সঙ্গে দশ অণু পানি থাকে । সলভে পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্বারা সম্পৃক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইডের গাঢ় জলীয় দ্রবণে ৩০° সে. ৪০° সে. তাপমাত্রায় এবং ২-৫ বায়ুর চাপে CO2 গ্যাস চালনা করে অ্যামোনিয়াম বাই কার্বনেট উৎপন্ন করা হয়। উৎপন্ন অ্যামোনিয়াম বাই কার্বনেটের সঙ্গে NaCl এর বিক্রিয়া করিয়ে সোডিয়াম বাই কার্বনেট উৎপন্ন করা হয়। ব্যবহার: সাধারণ জামাকাপড় পরিস্কার করতে, সাবান এবং কস্টিক সোডা প্রস্তুত করতে, কাঁচ, রেয়ন, সোডিয়াম সিলিকেট প্রস্তুতে কাগজ এবং বয়ন শিল্পে এবং পানি খরতা দূরীকরণে ব্যবহৃত হয়।
সোডা অ্যাশ: শিল্পক্ষেত্রে সলভে পদ্ধতিতে সোডা অ্যাশ তৈরি করা হয়। অনার্দ্র সোডিয়াম কার্বনেটকে (NaCO3) সোডা অ্যাশ বলে । NaCl-এর গাঢ় জলীয় দ্রবণকে NH3 গ্যাস দ্বারা সম্পৃক্ত করলে উৎপন্ন NH4Cl এর উপর দিয়ে CO চালনা করা হলে (NH4)2,CO3 উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন (NH4)2.CO3 আবার অধিক পানি ও CO2 -এর সাথে NH4HCO3 তৈরি করে। NaCl-এর সাথে উৎপন্ন NH4HCO3 বিক্রিয়া করে NaHCO3 ও NH4Cl-এ পরিণত হয়। NaHCO3 - কে 180°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে Na2CO3 বা সোডা অ্যাশে পরিণত হয়। Solvay পদ্ধতিতে সোডা অ্যাশ শিল্পক্ষেত্রে তৈরি করা হয় ।
সোডা ব্লিচ: সোডিয়াম পার অক্সাইড (Na2O2) ও লঘু হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মিশ্রণ।
সাজিমাটি: সোডিয়াম কার্বনেট ।
ব্রাইন: সোডিয়াম ক্লোরাইডের গাঢ় জলীয় দ্রবণ।
পানি কাঁচ (Water glass): সোডিয়াম সিলিকেটের জলীয় দ্রবণ ।
স্বর্ণকারদের বহুল ব্যবহৃত সোহাগার রাসায়নিক নাম: সোডিয়াম পাইরোবোরেট (NaB4O7.10H2O).
আল্ট্রামেরিন ব্লু :
সোডিয়াম অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট এবং সালফারের বিক্রিয়ায় যে গাঢ় নীল রঙের রঙ উৎপন্ন হয় তাকে আল্ট্রামেরিন ব্লু বলা হয়। খনি থেকে Lapis Lazuil নামে এক প্রকার প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ পাওয়া যায় যার রংও গাঢ় নীল রং এর। এই Lapis Lazuil থেকে কৃত্রিমভাবে পস্তুত পদার্থকেই আল্ট্রামেরিন ব্লু বলে ।
ব্যবহার: লন্ড্রীতে নীল রং হিসাবে, সাদা রঙ তৈরী করতে এবং কাপড় ও কাগজকে ধবধবে সাদা করতে ব্যবহার হয় । তাছাড়া কম সালফার যুক্ত আল্ট্রামেরিন কালি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
সালফেট লবণ সমূহ
লবণের নাম | সংকেত |
---|---|
সাদা ভিট্রিয়ল / হোয়াইট ভিট্রিয়ল | আর্দ্র জিংক সালফেট ( ZnSO4. 7H2O) |
সবুজ ভিট্রিয়ল / গ্রীন ভিট্রিয়ল | FeSO4.7H2O |
ব্লু ভিট্রিয়ল (তুঁতে) | আর্দ্র কপার সালফেট ( CuSO4.5H2O) |
গ্লুবার লবণ | Na2SO4.10H2O |
ইপসম লবণ | MgSO4.7H2O |
জিপসাম লবণ | CaSO4.2H2O |
হোয়াইট ভিট্রিয়ল:
ধাতব জিঙ্ক, জিঙ্ক অক্সাইড বা কার্বনেটের সঙ্গে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় জিঙ্ক সালফেট দ্রবণ উৎপন্ন হয়। এই দ্রবণকে গাঢ় করে ধীরে ধীরে শীতল করলে
ZnSO4.H2O -এর বর্ণহীণ কেলাস দ্রবণ থেকে পৃথক হয়ে পড়ে । এই কেলাসকেই হোয়াইট ভিট্রিয়ল বলে । এটি একটি উদ্বায়ী কেলাস এবং পানিতে খুবই দ্রাব্য ।
ব্যবহার: জামা কাপড় রঙ করতে, চামড়া এবং কাঠের পচন নিবারক রূপে, চোখের লোশন প্রস্তুত করতে এবং সাদা রং প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা হয়।
গ্রীন ভিট্রিয়ল:
গ্রীন ভিট্রিয়লের রাসায়নিক নাম সোদক ফেরাস সালফেট। আয়রণ কিংবা আয়রণ সালফাইডের সঙ্গে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় ফেরাস সালফেট উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন ফেরাস সালফেট দ্রবণকে ছেঁকে গাঢ় করে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করলে হালকা সবুজ বর্ণের FeSO4.7H2O এর কেলাস দ্রবণ থেকে পৃথক হয়ে পড়ে।
ব্যবহার: ফাউন্টেনপেনে কালি প্রস্তুত করতে, রঞ্জন শিল্পে, কৃষিকাজে আগাছা দমন করার জন্য এবং বিজারক দ্রব্য হিসাবে গ্রীন ভিট্রিয়ল ব্যবহৃত হয়।
তুঁতে বা ব্লু ভিট্রিয়ল: সোদক কিউপ্রিক সালফেটকে (CuSO4. 5H2O) তুঁতে বা ব্লু ভিট্রিয়ল বলা হয়। কপার সালফেটের প্রতিটি অণুতে ৫ অণু পানি থাকে। অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রায় কপার পাইরাইটিস (Cu2S, Fe2S3) কে বায়ু প্রবাহে জারিত করে উৎপন্ন পদার্থকে পানিতে দ্রবীভূত করে সোদক কপার সালফেট বা তুঁতে প্রস্তুত করা হয়। এটি গাঢ় নীল রঙের অজৈব কার্বন পদার্থের কেলাস।
ব্যবহার: তামার ইলেক্ট্রপ্লেটিং ও ইলেক্ট্ৰটাইপিং এ তুঁতে জলীয় দ্রবণ ব্যবহার হয় । কাঠ এবং চামড়া সংরক্ষণে, কীটনাশক হিসাবে ফুল সংরক্ষণে, রং শিল্পে এবং ছাপার কাছে এবং শাকসব্জী রঙ করতে তুঁতে ব্যবহার হয় ।
ব্লু ভিট্রিয়ল দোকানে যে নামে পরিচিত: তুঁতে।
সমরূপতা: যদি দুই বা তার অধিক কঠিন পদার্থ একই আকৃতির স্ফটিক তৈরি করে তাহলে ঐ পদার্থের একটিকে অপরটির সমরূপী বলে এবং এ বিষয়টিকে সমরূপতা বলে। যেমন— সাদা ভিট্রিওল ও ইপসম লবণ। এরা একই আকৃতির ক্লোস বা স্ফটিক গঠন করে। অতএব, এদের একটিকে অপরটির সমরূপী বলে ।
কেলাস বা স্ফটিক: সুনির্দিষ্ট ও সুষম জ্যামিতিক গঠনবিশিষ্ট সূক্ষ্ম প্রান্তযুক্ত সমতল পৃষ্ঠদেশ দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষুদ্রাকার কঠিন বস্তুকে কেলাস বা স্ফটিক বলে । যেমন- চিনি, মিছরি, তুঁতে, লবণ প্রভৃতির দানা। কোনো একটি পদার্থের স্ফটিকগুলোর আয়তন বিভিন্ন হতে পারে। তবে এদের আকার সব সময়ই একই রকম হবে। বিভিন্ন পদার্থের স্ফটিকের আকার সাধারণত বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন— লবণের স্ফটিকের পৃষ্ঠ সমতল আবার ফিটকিরির স্ফটিক অষ্টতলবিশিষ্ট। কেলাসের আকার সুষম জ্যামিতিক থাকে ।
ক্যালসিয়াম এর যৌগ
পোড়াচুন:
পোড়াচুনের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) । মার্বেল পাথর, চুনাপাথর, খাড়িমাটি প্রভৃতি ক্যালসিয়াম কার্বনেট সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পদার্থকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করে পোড়াচুন বা কুইকলাইম তৈরী করা হয়।
পোড়াচুন সাদা, অনিয়তাকার কঠিন অজৈব পদার্থ, এটি একটি ক্ষারীয় অক্সাইড।
ব্যবহার: ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রস্তুত করতে, কষ্টিক সোডা প্রস্তুত করতে, লাইম ওয়াটার প্রস্তুত করতে, পানির খরতা দূর করতে এবং CO2 এর শোষক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কলিচুন:
কলিচুনের রাসায়নিক নাম হল ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Ca(OH)2] । পোড়াচুনে পানি মিশিয়ে কলিচুন তৈরী করা হয়। এটি সাদা অনিয়তাকার, অজৈব পদার্থ এবং তীব্র ক্ষারক পদার্থ।
ব্যবহার: বাড়ীঘর চুন করাতে, সিমেন্ট, ব্লিচিং পাউডার, সুপার ফসফেট প্রস্তুত করতে, কাঁচ ও কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
জিপসাম: আর্দ্র ক্যালসিয়াম সালফেট (CaSO4.2H2O)- কে জিপসাম বলে। বিশুদ্ধ অবস্থায় কদাচিৎ পাওয়া যায়। কাদা, চুন, পাথর, সিলিকা, লৌহ যৌগ ইত্যাদির সাথে মিশ্রিত অবস্থায় জিপসাম খনিতে পাওয়া যায়। এর রং ধূসর, বাদামি বা লালাভ বাদামি হয়।
জিপসাম থেকে প্রস্তুতকৃত প্লাস্টারসমূহের নাম নিম্নরূপ :
১. প্লাস্টার অব প্যারিস
২. কস্টিং প্লাস্টার
৩. সিমেন্ট বন্ড প্লাস্টার
৪. প্রিপেয়ার্ড ফিনিস প্লাস্টার
৫. জয়েন্ট ফিলার
৬. কেনির সিমেন্ট
৭. হার্ডওয়াল প্লাস্টার
৮. ফিনিস প্লাস্টার
৯. বকস্টিক্যাল প্লাস্টার
১০. টেকচার স্প্রে
প্লাস্টার অব প্যারিস : প্লাস্টার অব প্যারিস এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ, যা জলসংযোগে শক্ত হয়ে যায়। জিপসামকে ১২০-১৩০ ডিগ্রি সে. উষ্ণতায় নিয়ে গেলে জলীয় অংশ কমে গিয়ে চূর্ণ অবস্থায় আসে,
যা অনার্দ্র ক্যালসিয়াম সালফেট মেশালে তা জমাট বাধে। এর সাধারণ নাম প্লাস্টার অব প্যারিস।
ব্যবহার : ১. শল্য চিকিৎসায় ব্রান্ডেজ ২. ঢালাইয়ের কাজে ৩. ভাস্কর্যে।
প্লাস্টার অব প্যারিস যে কাজে লাগে: ভাঙ্গা হাড়ের চিকিৎসায় -- প্লাস্টার করতে।
চুনের পানিতে ফুঁ দিলে ঘোলাটে হয় কেন:
চুনের পানিতে ফুঁ দিলে মুখ হতে নিঃসৃত কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে চুনের পানির বিক্রিয়ার ফলে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের সাদা অধঃক্ষেপ পড়ে। ফলে এটি ঘোলাটে দেখায় ।
CaO + CO2 = CaCO3↓
সোডা লাইম: স্ল্যাকেড লাইমের সাথে কস্টিক সোডার শুষ্ক কঠিন মিশ্রণকে সোডা লাইম বলে ।
ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের পরিষ্কার পানীয় দ্রবনকে বলে: লাইম ওয়াটার।
জলজ শামুক, ঝিনুকের খোলস যা দিয়ে গঠিত: ক্যালসিয়াম কার্বনেট, CaCO3.
ডিমের নরম খোসা শক্ত হওয়ার কারণ : ডিমের নরম খোসা শক্ত হওয়ার জন্য বাতাসের সংস্পৰ্শই প্রধানত দায়ী। ডিম হাঁস, মুরগি বা অন্য প্রাণীর পেটে নরম অবস্থায় থাকে। কিন্তু দেহের বাহিরে বাতাসে আসামাত্রই নরম ডিমের উপরের অংশ শক্ত আস্তরণে পরিণত হয়, এক্ষেত্রে আলোর প্রয়োজন পড়ে না ।
টুথপেস্টের রাসায়নিক উপাদান: টুথপেস্টে ৩০% চক পাউডার, ১৫% সাবান, ১০% ডাই ও ট্রাই ক্যালসিয়াম ফসফেট এবং ৫.৫% গাম ট্রগোকান্থা মিউসিলেজ থাকে। টুথপেস্ট তৈরির উপাদান হিসেবে মেনথল বা মিনট ব্যবহৃত হয়। এটি পিপারমিন্ট জাতীয় অয়েল থেকে পাওয়া যায়।
বাজারে ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট বিক্রি করা হয় কেন: ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে দাঁতের চারপাশে ক্যালসিয়াম ফ্লোরো অ্যাপাইটাইটের একটি স্তর গঠিত হয়। এ স্তর দাঁতের ক্ষয়রোধ করে এবং দাঁতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ।
সাদা টুথ পাউডারের প্রধান উপাদান: চক পাউডার।
বেকিং পাউডার: সোডিয়াম বাই-কার্বনেট, অ্যালুমিনিয়াম সালফেট ও পটাসিয়াম হাইড্রোজেন টারট্রেটের মিশ্রণ । এই মিশ্রণকে উত্তপ্ত করলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয় বলে পাউরুটি, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি প্রস্তুত করার সময় ইহা ব্যবহৃত হয়। এর প্রভাবে এ সমস্ত খাদ্য উপাদান ফুলে ওঠে ।
ফিটকিরি যে কাজে লাগে: ফিটকিরি পানি পরিশোধনে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া রঞ্জন, চর্ম এবং কাগজ শিল্প প্রভৃতিতে এটি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
চাইনিজ হোয়াইট: জিঙ্ক অক্সাইড, যা সাদা রং হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দার্শনিকের উল: জিঙ্ক অক্সাইডকে দার্শনিকের উল বলা হয়। ধাতব জিঙ্ক বায়ু প্রবাহের উপস্থিতিতে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করে জিঙ্ক অক্সাইড উৎপন্ন করে। এটি পানিরত অদ্রাব্য সাদা পাউডার এবং উভধর্মী অক্সাইড। ব্যবহার: দরজা, জানালা এবং কড়ি ইত্যাদির টায়ার প্রস্তুত করতে, অয়েল ক্লথ এবং এনামেল প্রস্তুত করতে পরিপূরক জিঙ্ক অক্সাইড ব্যবহার করা হয়।
জিঙ্ক হোয়াইট:
জিঙ্ক অক্সাইডকে জিঙ্ক হোয়াইট বলা হয়। ধাতব জিঙ্ককে বাষ্পীভূত করলে ৪১৯° সে. তাপমাত্রায় জারণ বিক্রিয়ায় জিঙ্ক বাষ্প দ্রুত অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জিঙ্ক অক্সাইড উৎপন্ন হয়। সাদা রঙের এই পেইন্টকে 'চাইনিজ' হোয়াইট বলা হয় ।
ব্যবহার: ইমালসন পেইন্ট হিসাবে, গরম এবং স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় যেখানে ফাঙ্গাস উৎপন্ন হয় সেই সমস্ত ক্ষেত্রে এই পেইন্ট খুবই কার্যকরী।
জিংক ডাস্ট: ধাতব জিংকচূর্ণ এবং জিংক অক্সাইডের মিশ্রণ ।
ধাতুর দ্রব্যের উপর জিংক ডাস্টের প্রলেপ দেওয়াকে কি বলে: শেয়ার ডাইজিং ।
শেয়ার ডাইজিং: লৌহ ইস্পাত নির্মিত ছোট ছোট দ্রব্যাদি যেমন-নাট, বল্টু, স্ক্রু, কব্জা ইত্যাদির উপর জিংকের প্রলেপ দেওয়ার জন্য এদের গায়ে জিংক চূর্ণ ও জিংক অক্সাইড পাউডার ছিটিয়ে দেয়া হয় । পরে এদেরকে একটি বদ্ধ ও ঘূর্ণায়মান ড্রামের ভিতরে নিষ্ক্রিয় পরিবেশে ৩-৪ ঘন্টা ধরে উত্তপ্ত করলে এদের গায়ে শক্তভাবে জিংক ও আয়রণ সংকরের একটি আবরণ পড়ে। এরূপ জিংক দ্বারা প্রলেপন প্রক্রিয়াকে শেয়ার ডাইজিং বলে ।
সাপের বিষে থাকে: জিঙ্ক সালফাইড ।
লেডের পাইপে সরবরাহকৃত পানি ক্ষতিকারক কেন: লেড পানিতে দ্রবণীয় এবং লেডের লবণ বিষাক্ত ৷
সোনায় মরিচা ধরে না কেন: লোহা বা লোহা জাতীয় পদার্থকে আর্দ্র বাতাসে উন্মুক্ত স্থানে দীর্ঘদিন রেখে দিলে ঐ পদার্থের ওপরে বাদামি বর্ণের একটি আন্তরণ পড়ে। একে মরিচা (nH2O.Fe2O3) বলে । মূলত লোহা বা লোহা জাতীয় পদার্থ বাতাসে জলীয় বাষ্প ও অক্সিজেনের সাথে আর্দ্র ফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন করে । সোনা একটি বিশুদ্ধ মৌলিক পদার্থ, যা সাধারণ অবস্থায় কোনো মৌলের সাথে বিক্রিয়া করে না অর্থাৎ সোনায় মরিচা ধরে না।
তরল সোনা: প্রাকৃতিক গ্যাস ।
সুরমার রাসায়নিক নামঃ গুড়া স্টিব নাইট ।
ম্যাট: কপার সালফাইড ও আয়রন সালফাইডের মিশ্রণ ।
সংকর ধাতু (Alloy)
সংকর ধাতু: একাধিক বিগলিত ধাতুকে মিশ্রিত করে যে কঠিন পদার্থ পাওয়া যায় তাই সংকর ধাতু।
ঢালাই লোহা: এতে লোহার সাথে ২ - ৪.৫% কার্বন থাকে। একে কাস্ট আয়রন/ পিগ আয়রনও বলে। কাস্ট আয়রণ ফার্নেস প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়।
ঢালাই লোহা যে কাজে ব্যবহৃত হয়: ঢালাই লোহা প্রধানত বিভিন্ন ঢালাই কারখানায় কড়াই, বাটখারা, টিউব-ওয়েলের মাথা ইত্যাদি প্রস্তুতিতে এবং ইস্পাত ও পেটা লোহা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
ধাতু সংকর | উপাদান ও সংযুক্তি | ব্যবহার |
---|---|---|
স্টিল | লোহা 99% , কাৰ্বন 1% | রেলের চাকা ও লাইন, ইঞ্জিন, জাহাজ, যানবাহন, ক্রেন, যুদ্ধাস্ত্র, ছুরি, কাঁচি, ঘড়ির স্প্রিং, চুম্বক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। |
মরিচাবিহীন ইস্পাত (স্টেইনলেস স্টিল) | লোহা 74% , ক্রোমিয়াম 18% , নিকেল 8% | ছুরি, কাঁটা চামচ, পাকঘরের সিঙ্ক, রসায়ন শিল্পের বিক্রিয়া পাত্র, অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। |
পিতল (ব্রাস) | কপার 65% , জিংক 35% | অলংকার, কলকবজার বিয়ারিং, বৈদ্যুতিক সুইচ, দরজার হাতল, ডেকচি পাতিল ইত্যাদি। |
কাঁসা (ব্রোঞ্জ) | কপার 90% , টিন 10% | ধাতু গলানো যন্ত্রাংশ, থালা, গ্লাস ইত্যাদি। |
ডুরালমিন | অ্যালুমিনিয়াম 95% , কপার 4% , ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও লোহা 1% | উড়োজাহাজের বডি, বাইসাইকেলের পার্টস ইত্যাদি |
24 ক্যারেট স্বর্ণ | স্বর্ণ 100% | ডেন্টিস্ট্রি, মুদ্রা, ইলেকট্রনিক সংযোগ |
22 ক্যারেট স্বর্ণ | স্বর্ণ 91.67% , কপার এবং অন্যান্য ধাতু 8.33% | অলংকার |
21 ক্যারেট স্বর্ণ | স্বর্ণ 87.5% , কপার এবং অন্যান্য ধাতু 12.5% | অলংকার |
ম্যাগনেলিয়াম | অ্যালুমিনিয়াম ৮৮-৯৮%, ম্যাগনেসিয়াম ২-১২% | |
নাইক্রোম | নিকেল-৬৬%, আয়রন-২৫%, ক্রোমিয়াম-১৫% |
ইস্পাত (Steel): ইস্পাত হল লোহার সংকর ধাতু। এতে লোহার সাথে সুনিয়ন্ত্রিত পরিমাণ কার্বন মেশানো হয়। ইস্পাতে কার্বনের শতকরা পরিমাণ ০.১৫-১.৫%।
ইস্পাত যে কাজে ব্যবহৃত হয়: ইস্পাত রেলের চাকা ও লাইন, ইঞ্জিন, জাহাজ, যানবাহন, দালান-কোঠার ফ্রেম, মেশিন গান, ছুরি, কাঁচি, ঘড়ির স্প্রিং, কৃষি ও অস্ত্রোপচার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
√ কংক্রিটের মধ্যে ইস্পাতের রড দেওয়া হয় কেন: মজবুত করার জন্য ।
√ পেটা লোহা যে কাজে ব্যবহৃত হয়: পেটা লোহা সাধারণত শিকল, তার, তারজালি, বৈদ্যুতিক চুম্বক, পিয়ানোর তার ইত্যাদি প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
√ স্পাইজেল: লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ ও কার্বনের মিশ্রণ ।
√ অ্যামালগামঃ সংকর ধাতুর মধ্যে যদি একটি উপাদান মারকারি থাকে, তবে সেই সংকর ধাতুকে অ্যামালগাম বলে।
√ উড়োজাহাজ বা মোটরগাড়ির খোলস নির্মাণে যে সংকর ধাতু ব্যবহৃত হয়:
ডুরালুমিন। উড়োজাহাজ তৈরিতে সাধারণত ব্যবহার করা হয় অ্যালুমিনিয়াম ।
√ বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি এবং হিটারে যে সংকর ধাতুর তার ব্যবহার করা হয়: নাইক্রোম ।
উড মেটাল, গান মেটাল, টাইপ মেটাল, বেল মেটাল, মোনেল মেটাল :
উল্লিখিত সবগুলোই সংকর ধাতু। এদের উপাদানসমূহের সংযুক্তির শতকরা হার-----
উডস্ মেটালঃ বিসমাথ ৫০%, সীসা ২৫%, ক্যাডমিয়াম ১২.৫%. টিন ১২.৫%।
টাইপ মেটালঃ সীসা ৭৫%, অ্যান্টিমনি ২০%. টিন ৫% ।
গান মেটালঃ তামা ৮৮%, টিন ১০%. দস্তা ২% ।
বেল মেটালঃ তামা ৮০%, টিন ২০%।
মোনেল মেটালঃ তামা ৩০%, নিকেল ৬৭%, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজ (৩%)।
ছাপার হরফ কিসের তৈরী: ছাপার অক্ষর সংকর ধাতুর তৈরি। এতে থাকে - সীসা, অ্যান্টিমনি ও তামা ।
পদার্থের ক্ষয়
ধাতু ও সংকর ধাতুর ক্ষয় হবার কারণ ও লক্ষণ: লোহা বা লোহার সংকর ধাতুর তৈরি জিনিসপত্র জানালার গ্রিল, আলমিরা ইত্যাদি খোলা জায়গা বা বাতাসে দীর্ঘদিন থাকলে এসব জিনিসপত্রের উপর লালচে বাদামি বর্ণের এক ধরনের পদার্থ তৈরি হয়। এই বাদামি পদার্থকে লোহার মরিচা বলা হয়। মরিচা তৈরির মাধ্যমে লোহা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। বিশুদ্ধ কপার বা পিতল বা কাঁসার তৈরি জিনিসপত্র দীর্ঘদিন বাতাসে থাকার ফলে এদের উপর কালো বা বাদামি বা সবুজ বর্ণের একটি আস্তরণ পড়ে। এই আস্তরণকে কপারের তাম্রমল বলা হয়। তাম্রমল তৈরির মাধ্যমে তামা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
সাধারণত বিশুদ্ধ ধাতু বা সংকর ধাতু দীর্ঘদিন বাতাসে থাকার ফলে ধাতু বা সংকর ধাতুর উপর ভিন্ন বর্ণযুক্ত একটি নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়াকে ধাতুর ক্ষয় বলে।
লোহা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে লালচে বাদামি বর্ণের মরিচা তৈরি হয় সেটি হলো আর্দ্র ফেরিক অক্সাইড (Fe2O3.nH2O)। আবার বিভিন্ন বর্ণের তাম্রমলে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ উপস্থিত থাকে। যেমন—কোনো কোনো তাম্রমলে কিউপ্রাস অক্সাইড (Cu2O) উপস্থিত থাকে। কোনো কোনো তাম্রমলে কিউপ্রাস সালফাইড বা চালকোসাইট (Cu2S) উপস্থিত থাকে। তাম্রমলকে কোনো নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংকেতে প্রকাশ করা যায় না। কারণ তাম্রমলের সব জায়গায় একই ধরনের পদার্থ তৈরি হয় না। সাধারণত কোনো কোনো ধাতু বা সংকর ধাতু যখন বায়ুমণ্ডলে থাকে তখন ধাতুসমূহ ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। এখানে একটি জারণ বিক্রিয়া হয়। আবার, ধাতু যে ইলেকট্রন ত্যাগ করে বায়ুমণ্ডলের কোনো উপাদান সেই ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়। এখানে একটি বিজারণ বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। অতঃপর ধনাত্মক আয়ন এবং ঋণাত্মক আয়নের মধ্যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ তৈরি হয়। নতুন যৌগটি রুপান্তরিত হয়ে বা অন্যান্য যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে। এভাবে ধাতু বা সংকর ধাতু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
মরিচা: লোহাকে বহুদিন আর্দ্র বাতাসে রেখে দিলে তার উপর বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্প বিক্রিয়ায় পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা মরিচা নামে পরিচিত। মরিচার ধর্ম লোহা, অক্সিজেন ও পানি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
রডে কার্বনের পরিমাণ বেশি হলে ১. রড hard হবে ২. Ductility কমে যাবে ৩. সহজে ভেঙ্গে যাবে।
ধাতু ক্ষয়রোধের উপায়
ধাতু বা সংকর ধাতু যদি বাতাসের অক্সিজেন এবং পানির সংস্পর্শে না আসে তবে ধাতু ক্ষয়প্রতি হয় না। এটি বিভিন্নভাবে করা যায়, যেমন (i) রং করে (ii) ইলেকট্রোপ্লেটিং ও (iii) গ্যালভানাইজিং করে ইত্যাদি। তোমরা বাড়িতে লোহার তৈরি দরজা-জানালা রং কর যেন লোহা বাতাসের অক্সিজেন এবং পানির সংস্পর্শে না আসে। আমরা জানি কম সক্রিয় ধাতু সাধারণত বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে না। কিন্তু বেশি সক্রিয় ধাতু বাতাসের অক্সিজেন এবং পানির সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে। অতএব, বেশি সক্রিয় ধাতুর ক্ষয় হওয়া থেকে ধাতুকে রক্ষা করার জন্য বেশি সক্রিয় থাতুর উপর কম সক্রিয় ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়। এভাবে বেশি সক্রিয় ধাতুকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। একটি অধিক সক্রিয় ধাতুর উপর কম সক্রিয় ধাতুর প্রলেপ দুইভাবে দেওয়া যায় যথা- ইলেকট্রোপ্লেটিং ও গ্যালভানাইজিং ।
ইলেকট্রোপ্লেটিং (Electroplating) : সাধারণত তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে একটি ধাতুর উপর আরেকটি ধাতুর প্রলেপ দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ইলেকট্রোপ্লেটিং। এক্ষেত্রে যে ধাতুর প্রলেপ দিতে হবে তাকে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয়৷ যে ধাতুর উপর প্রলেপ দিতে হবে তাকে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করা হয়। এরপর তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে ইলেকট্রোপ্লেটিং করা হয়। যেমন— লোহার উপর কপার ধাতুর প্রলেপ দেওয়ার জন্য CuSO4 এর একটি দ্রবণ নেওয়া হয় এবং কপার দণ্ডকে ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের সাথে এবং লোহা দণ্ডকে ব্যাটারির ঋণাত্মক প্রান্তের সাথে যুক্ত করে দ্রবণে তড়িৎ প্রবাহিত করা হয়। তড়িৎ প্রবাহকালে Cu দন্ডের কপার 2টি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Cu2+ হিসেবে দ্রবণে চলে যায়
Cu → Cu2+ + 2e- জারণ বিক্রিয়া]
এবার এই Cu2+ দ্রবণের মধ্য দিয়ে Fe দণ্ড থেকে 2টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cu এ পরিণত হয় এবং Fe দণ্ডের উপর লেগে যায়।
Cu2+ + 2e- → Cu [বিজারণ বিক্রিয়া]
গ্যালভানাইজিং (Galvanizing): যেকোনো ধাতুর উপর জিংকের প্রলেপ দেওয়াকে গ্যালভানাইজিং বলে। এক্ষেত্রে তড়িৎ বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। কোনো ধাতুর উপর যেকোনোভাবে জিংকের প্রলেপ দিয়ে গ্যালভানাইজিং করা হয়।
√ গ্যালভানাইজিং করার উদ্দেশ্য: লোহার জিনিসকে মরিচার হাত হতে রক্ষা করা।
√ ঘরের ছাদ হিসেবে যে টিন ব্যবহার করা হয়, তা প্রকৃতপক্ষে জিংকের প্রলেপযুক্ত ইস্পাতের পাত।
√ ঘড়ির চেইন রূপার মত উজ্জ্বল কেন: লোহার উপর ক্রোমিয়ামের প্রলেপ দেয়া থাকে ।
√ পানির পাইপে দস্তার প্রলেপ দেয়া থাকে কেন: পানি ও বাতাসের সংস্পর্শে আসলে লোহায় মরিচা ধরে এবং লোহা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । এজন্য মরিচা প্রতিরোধে লোহার পাইপে দস্তার প্রলেপ দেয়া হয় ৷