জীববৈচিত্র্য | Biodiversity

একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে আন্তঃপ্রজাতিক এবং বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যই জীববৈচিত্র্য। প্রকৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অঞ্চলে সাফল্যমণ্ডিতভাবে বংশবিস্তার করে টিকে থাকার উদ্দেশ্যে জীবের বিভিন্ন প্রজাতির বহিঃঅঙ্গসংস্থান ও অন্তঃঅঙ্গসংস্থান, আকার, আকৃতি, প্রকৃতি ইত্যাদির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করে অভিযোজিত হওয়ার ফলে জীবদের মধ্যে যে বৈচিত্র্যময়তার উদ্ভব ঘটে তাকে জীববৈচিত্র্য বলে। মানবজাতির জন্য জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজন অপরিসীম। কারণ মানুষের জীবন-যাপন নির্ভর করে অন্যান্য প্রজাতির উপর এবং ঐসব প্রজাতি-সৃষ্ট বাস্তুতন্ত্রের উপর। বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী বিভিন্ন জীব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে শুধু মানুষ নয়, পৃথিবী রক্ষায়ও নিয়োজিত রয়েছে।

 জীববৈচিত্র্য

এনিমাল ডাইভারসিটি

এনিমাল ডাইভারসিটি বা প্রাণি বৈচিত্র্য: প্রকৃতির বিভিন্ন অঞ্চলে সাফল্যমণ্ডিতভাবে বংশবিস্তার করে টিকে থাকার উদ্দেশ্যে প্রাণি প্রজাতিগুলোর বহিঃঅঙ্গসংস্থান ও অন্তঃঅঙ্গসংস্থান, আকার, আকৃতি, প্রকৃতি ইত্যাদি প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করে অভিযোজিত হওয়ার ফলে প্রাণীদের ম্যে যে বৈচিত্র্যময়তার উদ্ভব ঘটে, তাকে প্রাণিবৈচিত্র্য বলে।

প্রাণীর প্রতিসাম্য: প্রাণীর বিভিন্ন আনুপাতিক আকৃতি, গঠন, আকারের বিবরণ ইত্যাদিকে প্রাণীর প্রতিসাম্য বলে। প্রতিসাম্যের ভিত্তিতে প্রাণী প্রধানত তিন প্রকারের। যথা:

১. অপ্রতিসাম্য: কোনো তল দ্বারাই প্রাণীকে সমদ্বিখণ্ডিত করা যায় না। যেমন- অ্যামিবা, শামুক ইত্যাদি।

২. দ্বি-পার্শ্বীয় প্রতিসাম্য: মাত্র একটি তল দ্বারাই প্রাণীকে সমডিখণ্ডিত করা যায়। যেমন- আরশোলা, টিকটিকি, ব্যাঙ, মাছ, মানুষ ইত্যাদি।

৩. অরীয় প্রতিসাম্য: একাধিক তল দ্বারা প্রাণীকে সমদ্ভিখণ্ডিত করা যায়। যেমন- হাইড্রা, জেলীফিস, তারামাছ ইত্যাদি।

প্লান্ট ডাইভারসিটি

প্লান্ট ডাইভারসিটি বা উদ্ভিদ বৈচিত্র্য:

  • বৃক্ষ : সুস্পষ্ট একক কাণ্ডবিশিষ্ট কাষ্ঠল। এরা বহুবর্ষজীবি। উদাহরণ: কাঁঠাল, নারিকেল, জাম।
  • স্রাব বা গুল্ম : কাষ্ঠল তবে একক কাণ্ডবিশিষ্ট নয়। বহুবর্ষজীবি। সাধারণত গোড়া হতে অধিক- শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে ঝোপে পরিণত হয়। যেমন: জবা, রঙ্গন, গন্ধরাজ।
  • আন্ডারস্রাব বা উপগুল্ম : স্রাবের চেয়ে আকারে ছোট কাষ্ঠ উদ্ভিদ হল উপগুল্ম। যেমন: কাল্কাসুন্দা, আঁশশেওড়া, বেলী।
  • হার্ব বা বীরুৎ : নরম কাণ্ডবিশিষ্ট উদ্ভিদ। অধিকাংশ হার্বই একবার ফল দিয়ে মারা যায়। যেমন: ধান, গম, সরিষা। নরম লতা গাছ বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। কাষ্ঠর কাণ্ডবিশিষ্ট হার্বকে উডি হার্ব বলে। যেমন: তোষা পাট।
  • অপুষ্পক উদ্ভিদ : এদের ফুল হয় না। রেণু বা স্পোর দ্বারা এদের বংশবৃদ্ধি ঘটে।
  • স্পাইরোগাইরা : স্পাইরোগাইরা হ্যালোফাইটা বিভাগযুক্ত, অপুষ্পক, শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ। দেহের পিচ্ছিল আবরণের জন্য স্পাইরোগাইরা উজ্জ্বল ও চকচকে দেখায়, তাই এদের জলজ রেশম বা পন্ডসিল্ক বলে।
  • মস : মস ব্রায়োফাইটা বিভাগযুক্ত অপুষ্পক উদ্ভিদ। এরা স্থলবাসী হলেও জলের মাধ্যমে নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলে এদেরকে উভচর উদ্ভিদ (amphibious plant) বলে। মসের দেহ কাণ্ড ও পাতার ন্যায় অঙ্গে বিভক্ত, কিন্তু মূলের পরিবর্তে রাইজয়েড থাকে।
  • ফার্ন : ফার্ন টেরিডোফাইটা বিভাগযুক্ত, সংবহন, কলাযুক্ত, অপুষ্পক উদ্ভিদ। এদের দেহে সংবহনকলা গঠিত হওয়ায়, এদের ভ্যাঙ্কুলার ক্রিপ্টোগ্যামস (Vascular Cryptogams) বলে। এদের দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভেদিত।
  • শৈবাল : থ্যালোফাইটা বিভাগের যেসব উদ্ভিদ ক্লোরোফিলযুক্ত অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষী, এককোষী বা বহুকোষী তাদেরকে শৈবাল বলে।
  • ছত্রাক : ছত্রাক এক ধরনের সমাঙ্গদেহী ক্লোরোফিলবিহীন অসবুজ উদ্ভিদ যা মাইসেলিয়ামযুক্ত বা মাইসেলিয়ামবিহীন।
  • সপুষ্পক উদ্ভিদ : এদের ফুল ও ফল হয় । বীজ দ্বারা এদের বংশবৃদ্ধি ঘটে।
  • নগ্নবীজী : এরা বীজ তৈরি করতে পারে, তবে প্রকৃতঅর্থে ফুল থাকে না, বীজপত্র উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে। যেমন: সাইকাস, পাইনাস।
  • আবৃতবীজী : এদের ফুল ও ফল হয় বীজ আবৃত অবস্থায় থাকে। যেমন: আম, জাম, লিচু। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু উদ্ভিদ - বৈলাম
  • স্পিরুলিনা : একজাতীয় শৈবাল যাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে কিন্তু শর্করা কম থাকে। ড. ফ্লোরা মজিদ কর্তৃক আবিষ্কৃত এ শৈবাল যে রোগের জন্য বিশেষ উপকারী- ডায়াবেটিস
  • চিরহরিৎ : যেসব উদ্ভিদের পাতা বিশেষ ঋতুতে ঝরে পড়ে না তাদেরকে বলে- (Evergreen) উদ্ভিদ। যেমন: চাপালিশ, তেলসুর ইত্যাদি।
  • শৈবাল ও ছত্রাকের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ ধরনের উদ্ভিদকে বলে - লাইকেন
  • ক্লোরেলা এক প্রকার এককোষী সবুজ শৈবাল । ১৭ প্রকার এমাইনো এসিড থাকায় প্রোটিন খাদ্যের আদর্শ উৎস বলা হয় - ক্লোরেলাকে।
  • মাশরুমে যে বিষাক্ত পদার্থ থাকলে তা খাওয়া যায় না - মাসকারিন
  • সুন্দরী উদ্ভিদকে ইংরেজিতে অভিহিত করা হয়- 'লুকিং গ্লাস ট্রি' নামে।
  • পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা বৃক্ষের নাম - জায়ান্ট রেড উড ট্রি
  • লিচুর ভক্ষাংশের নাম- এরিল
  • মরফিন ওষধ যে গাছ থেকে প্রস্তুত করা হয়- পপি
  • খুব ছোট ও নরম গোড়া বিশিষ্ট উদ্ভিদকে বলা হয় – ওষধি
  • উদ্ভিদকোষে খাদ্য সঞ্চিত থাকে- শ্বেতসার রূপে
  • রুটির ছত্রাক বলা হয় - মিউকরকে
  • আপেল যে ধরনের ফল – ' পোম '।
  • বাজারে চিরতা নামে বিক্রয় হয় - কালমেঘ
  • চায়ের উপক্ষারের নাম - ক্যাফেইন
  • যে পাতা পূর্ণতা প্রাপ্তির পরে ঝরে যায় তাকে বলে - পার্মোচী পাতা
  • বাধাকপির মুকুল - অঙ্গজ মুকুল
  • ফুলকপির মুকুল - জনন মুকুল
  • উদ্বায়ী তেল পাওয়া যায়- গোলাপ, বেলি, জুঁই ফুল হতে
  • আমাদের দেশে ঢেঁকিশাক নামে পরিচিত - ফার্ন
নবীনতর পূর্বতন