কোনো বিশেষ জীব বা জীবকূলের নির্দিষ্ট নামে সনাক্তকরণের পদ্ধতিকে বলা হয় নামকরণ। শ্রেণিবিন্যাসের ইতিহাসে অ্যারিস্টটল, জন রে ও ক্যারোলাস লিনিয়াসের নাম উল্লেখযোগ্য। প্রকৃতিবিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াসকে শ্রেণিবিন্যাসের জনক বলা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম প্রজাতির বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন এবং দ্বিপদ বা দুই অংশ বিশিষ্ট নামকরণ প্রথা প্রবর্তন করেন। একটি জীবের বৈজ্ঞানিক নাম দুই অংশ বা পদবিশিষ্ট হয়। এই নামকরণকে দ্বিপদ নামকরণ বা বৈজ্ঞানিক নামকরণ বলে। বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাটিন অথবা ইংরেজি ভাষায় লিখতে হয়। প্রাণিদেহে বিদ্যমান বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে মিল, অমিল ও পরস্পরের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর বা ধাপে সাজানো হয়। জীবজগৎকে ধাপে ধাপে বিন্যস্ত করার এই পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে। প্রয়োজনের তাগিদে বর্তমানে জীববিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা গড়ে উঠেছে। এর নাম শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা (Taxonomy) | প্রজাতি হলো শ্রেণিবিন্যাসের সবচেয়ে নিচের ধাপ বা একক। যেমন- মানুষ, কুনোব্যাঙ, কবুতর ইত্যাদি এক একটি প্রজাতি। কোনো প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস করতে হলে সেই প্রাণীকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ধাপে ধাপে সাজাতে হয়। এই সকল ধাপের প্রত্যেকটিকে যথাযথভাবে বিন্যস্ত করতে হয়। শ্রেণিবিন্যাসের প্রতিটি একক (স্তর বা ধাপ) বা ট্যাক্সনের জন্য একটি স্বতন্ত্র বৈজ্ঞানিক নামের প্রয়োজন। এদেরকে নাম প্রদানের জন্য সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বোটানিক্যাল নমেনক্লেচার (ICBN)
ICBN -এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে- International code of Botanical Nomenclature. এটি উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নামকরণের আন্তর্জাতিক সংবিধান। উদ্ভিদ নামকরণের আন্তর্জাতিক নীতিমালাকে বলা হয় 'International code Botanical Nomenclature', সংক্ষেপে ICBN। এ বিধানের নিয়মনীতিগুলো International Botanical Congress কর্তৃক নির্ধারিত হয় এবং ইংরেজি, জার্মান ও ফরাসি ভাষায় প্রকাশ করা হয়। প্রাণির ক্ষেত্রে নামকরণের আন্তর্জাতিক নীতিমালাকে বলা হয় 'International code of Zoological Nomenclature', সংক্ষেপে ICZN ।
সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস সর্বপ্রথম নামকরণের একটি প্রথা প্রবর্তন করেন। এটি দ্বিপদ নামকরণ প্রথা (Binomial Nomenclature system) নামে পরিচিত। এ প্রথা অনুসারে প্রত্যেক জীবের বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকে যার প্রথমটি গণ (species) নাম এবং দ্বিতীয় প্রজাতি নাম। গণ নামের প্রথম অক্ষর ইংরেজি বর্ণমালার বড় অক্ষরে এবং প্রজাতি নামের আদ্যাক্ষর ছোট অক্ষরে লিখতে হয়।
ICBN-এর নিয়মানুযায়ী উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নামকরণের উল্লেখযোগ্য নিয়মাবলি নিম্নরূপ:
- উদ্ভিদের নামটি হবে দ্বিপদী।
- নামকরণের ভাষা হবে ল্যাটিন।
- দ্বিপদী নামের অক্ষর হবে রোমান।
- দ্বিপদী নাম ছাপার অক্ষরে লিখতে হলে ইটালিক হরফে লিখতে হবে।
- গণ নামের প্রথম অক্ষর Capital letter এবং প্রজাতির নামের প্রথম অক্ষর Small letter হবে।
- হাতে লিখলে গণ ও প্রজাতির নিচে পৃথক পৃথকভাবে দাগ টানতে হবে।
- যে বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম কোন উদ্ভিদের বর্ণনা দিবেন দ্বিপদী নামের শেষে তাঁর নামও সংক্ষিপ্তভাবে সংযোজন করতে হবে।
উদ্ভিদের নাম | বৈজ্ঞানিক নাম |
---|---|
কাঁঠাল | Artocarpus heterophylus |
আম | Mangifera indica |
ধান | Oryza sativa |
গম | Triticum aestivum |
কলা | Musa paradisiaca |
পেঁপে | Carica papaya |
শিম | Dolichos lablab |
মূলা | Raphanus sativus |
লিচু | Litchi sinensis |
লেবু | Citrus aurantifolia |
কফি | Coffea arabica |
শাপলা | Nymphaea nouchali |
গোলাপ | Rosa centifolia |
সুন্দরী | Heritiera fomes |
গেওয়া | Excoecaria agallocha |
সেগুন | Tectona grandis |
পিঁয়াজ | Allium cepa |
সরিষা | Brassica napus |
ভুট্টা | Zea mays |
Flora ও Fauna: কোন অঞ্চলের প্রকৃতি ও সেই প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে অবস্থানরত উদ্ভিদকুলকে Flora এবং প্রাণীকুলকে Fauna বলে।
জুয়োলজিক্যাল নমেনক্লেচার (ICZN)
প্রাণির ক্ষেত্রে নামকরণের আন্তর্জাতিক নীতিমালাকে বলা হয় 'International code of Zoological Nomenclature', সংক্ষেপে ICZN।
দ্বিপদী নামকরণ : কোন জীবের গণ ও প্রজাতি এ দুটো অংশ নিয়ে ICZN-এর নিয়মাবলি অনুযায়ী নামকরণ করাকে দ্বিপদী নামকরণ বলে। যেমন- মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম- Homo sapiens.
দ্বিপদ ও ত্রিপদ নামকরণ: দুটি ল্যাটিন বা রূপান্তরিত ল্যাটিন শব্দ দিয়ে প্রাণীর নামকরণের পদ্ধতিকে দ্বিপদ নামকরণ বলে। অনেক সময় একটি প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অঙ্গসংস্থানিক পার্থক্য দেখা যায়। সে সব সদস্যকে তখন ঐ নির্দিস্ট প্রজাতির উপপ্রজাতি (subspecies) হিসেবে গণ্য করা হয়। তখন গণ ও প্রজাতি সমন্বিত দ্বিপদ নামটি উপপ্রজাতিসহ ত্রিপদ নামে (trinomial) নামে পরিচিত। এভাবে, প্রজাতিসহ কোনো প্রাণীর নামকরণকে ত্রিপদ নামকরণ (trinomial nomenclature) বলে। যেমন: ইউরোপীয়ান চড়ুই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম- Passer domesticus; কিন্তু নীলনদ এলাকার চড়ুই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম- Passer domesticus nioticus। পাখি বিজ্ঞানী Schlegel (1844) সর্বপ্রথম ত্রিপদ নামকরণ করেন এবং এটি ICZN কর্তৃক স্বীকৃত পদ্ধতি।
দ্বিপদী নামকরণের প্রবর্তক: সুইডেনের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ক্যারোরাস লিনিয়াস (Carolus Linnaeus) দ্বিপদ নামকরণের প্রবর্তক।
শ্রেণিবিন্যাসের একক: জীবের বিন্যাসের কতগুলো একক রয়েছে। শ্রেণীবিন্যাস তত্ত্বের ভাষায় এদেরকে Taxon (বহুবচনে Taxa) বলে। এগুলো হলো- জগত (Kingdom) বিভাগ (Division) শ্রেণী (Class) বর্গ (Order) গোত্র (Family) গণ (Genus) প্রজাতি (Species) ।
গণ: জননাঙ্গের দিক হতে সর্বাধিক মিল সম্পন্ন একটি বা কয়েকটি প্রজাতি মিলে একটি গণ সৃষ্টি হয়। যেমন-বট, অশ্বত্থ, ডুমুর এই তিনটি পৃথক প্রজাতি মিলে Ficus নামক একটি গণ সৃষ্টি হয়। আবার Musa (কলা), Oryza (ধান), Mengifera (আম), Triticum (গম) ইত্যাদিও একক গণ।
প্রজাতি: সর্বাধিক মিল সম্পন্ন এক দল উদ্ভিদ প্রাণী যারা নিজেদের মধ্যে পরস্পর মিলনের মাধ্যমে উর্বর সন্তান ধারণে সক্ষম কিন্তু অন্য প্রজাতির সাথে মিলে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম তাদেরকে প্রজাতি বলে। যেমন-পৃথিবীর সমস্ত আম (Mangifera indica), কাঁঠাল (Artocarpus heterophyllus), পৃথক পৃথকভাবে একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
নাম | বৈজ্ঞানিক নাম |
---|---|
মানুষ | Homo sapiens |
সিংহ | Panthera leo |
দোয়েল | Copyclaus saularis |
ইলিশ | Tenualosa ilislia |
আরশোলা | Periplaneta americana |
রয়েল বেঙ্গল টাইগার | Panthera tigris |
হরিণ | Axis axis |
মৌমাছি | Apis indica |
রুই | Labeo rohita |
কুনোব্যাঙ | Bufo melanostictus |