স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে?
বস্তুর যে ধর্ম উহার উপর প্রযুক্ত বলের ক্রিয়ায় তার আকার বা আয়তন বা উভয়েরই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় এবং প্রযুক্ত বল অপসারণ করলে তার পূর্বের আকার বা আয়তন ফেরত পায়, তাকে স্থিতিস্থাপকতা বলে।
পূর্ণ স্থিতিস্থাপক বস্তু : কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করার পর ঐ বল ঐ অপসারণ করলে যদি বস্তুটি পূর্ণভাবে পূর্বাবস্থা ফিরে পায়, তবে ঐ বস্তুকে পূর্ণ স্থিতিস্থাপক বস্তু বলে । বাস্তবে কোন বস্তুই পূর্ণ স্থিতিস্থাপক নয় ।
অস্থিতিস্থাপক বস্তু : বিকৃতিকারী বল অপসারণের পর যদি বস্তুর অবস্থার পুন: প্রাপ্তি না ঘটে তবে তাকে নমনীয় বস্তু বলে । এই বস্তুকে অস্থিতিস্থাপক বস্তুও বলা হয় ।
পূর্ণ নমনীয় (প্লাস্টিক) বস্তু : বল প্রয়োগ করে কোন বস্তুকে বিকৃত করা হলে, বল অপসারণের পরেও যদি বস্তুটি ঐ বিকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে বজায় রাখে, তবে তাকে পূর্ণ নমনীয় (প্লাস্টিক) বস্তু বলে।
পূর্ণ দৃঢ় বস্তু :
বল প্রয়োগ করেও যদি কোন বস্তুকে বিকৃত করা না যায়, তবে তাকে পূর্ণ দৃঢ় বস্তু বলে। পূর্ণ দৃঢ় বস্তু বাস্তবে পাওয়া যায় না। বস্তু যত শক্তই হোক না কেন প্রযুক্ত বলের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে কোন এক পর্যায়ে বস্তুর বিকৃতি ঘটে।
স্থিতিস্থাপক ক্লান্তি :
কোনো বস্তু বা তারের ওপর ক্রমাগত পীড়নের হ্রাস-বৃদ্ধি করলে স্থিতিস্থাপক ধর্ম হ্রাস পায়। এর ফলে বল অপসারণের সাথে সাথে বস্তু আগের অবস্থা ফিরে পায় না,কিছুটা দেরি হয়।বস্তুর এই অবস্থাকে স্থিতিস্থাপক ক্লান্তি বলে।
স্থিতিস্থাপকতা সীমা কি?
প্রযুক্ত বাহ্যিক বলের যে সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত কোন বস্তু পূর্ণ স্থিতিস্থাপক থাকে, তাকে ঐ বস্তুর স্থিতিস্থাপক সীমা বলে।
পীড়ন কাকে বলে?
কোন একটি বস্তুর একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রযুক্ত বলকে পীড়ন বলে। পীড়ন =
বিকৃতি কাকে বলে?
বল প্রয়োগে কোন একটি বস্তুর একক মাত্রার যে পরিবর্তন ঘটে তাকে বিকৃতি বলে ৷
হুকের সূত্র : হুকের সূত্র অনুযায়ী স্থিতিসাধক সীমার মধ্যে কোন বস্তুর পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুবক সংখ্যা। এই ধ্রুবকই বস্তুর উপাদানের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক।
স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোন বস্তুর পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুব সংখ্যা। এই ধ্রুব সংখ্যাকে বস্তুর উপাদানের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক বলে।
স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর উপর প্রযুক্ত পীড়ন তার বিকৃতির সমানুপাতিক ।
পীড়ন ∝ বিকৃতি
পীড়ন = ধ্রুবক × বিকৃতি
( স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক )
এই ধ্রুবকে স্থিতিস্থাপক ধ্রুবক বা স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক ও বলা হয় ।
একক : যেহেতু বিকৃতির কোন একক নেই, সুতরাং স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের একক হবে পীড়নের একক অর্থাৎ বল/ক্ষেত্রফল। এস. আই পদ্ধতিতে স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্কের একক N/m² বা Pa (পাস্কাল)।
ইস্পাত রাবার অপেক্ষা স্থিতিস্থাপক :
আমরা জানি, বল প্রয়োগে বস্তুর বিকার ঘটে, অর্থাৎ বস্তু বিকৃত হয়।। পীড়নের ফলে যে বস্তুর বিকৃতি যত কম হয়, সে বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা তত । বেশি। ইস্পাতের ক্ষেত্রে অধিক পীড়ন দেওয়া সত্ত্বেও বিকৃতির মান হয় যৎ সামান্য।
সুতরাং পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত অর্থাৎ স্থিতিস্থাপক গুণাংকের মান বেশি হবে।
পক্ষান্তরে রাবারের ক্ষেত্রে, অল্প পীড়ন দিলেই বিকৃতির মান হয় অনেক বেশি। সুতরাং রাবারের ক্ষেত্রে পীড়ন ও বিকৃতির অনুপাত অর্থাৎ স্থিতিস্থাপক গুণাংকের মান কম হবে। এজন্য ইস্পাত রাবার অপেক্ষা অধিক স্থিতিস্থাপক।