পদার্থ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তরঙ্গ ও শব্দ । সাধারণভাবে তরঙ্গ শব্দের অর্থ ঢেউ । কিন্তু পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় এই তরঙ্গ একটি বিশেষ অর্থ বহন করে যা আমরা ধাপে ধাপে জানব । শব্দ তরঙ্গের একটি বিশেষ রুপ যা আমাদের শোনার অনুভূতি জাগায় । এই শব্দ চারদিকে ছড়ায় এই তরঙ্গ বা ঢেউ ব্যবহার করেই ।
তরঙ্গ
তরঙ্গঃ কোন স্থিতিস্থাপক জড় মাধ্যমের বিভিন্ন কণার সমষ্টিগত পর্যায়বৃত্ত কম্পনের ফলে মাধ্যমে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, তাকে তরঙ্গ বলে। তরঙ্গ দুই প্রকার । যথাঃ ১) লম্বিক বা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ ও ২) আড় বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গ
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ: এখানে হাতের সঞ্চালন বা কম্পন যেদিকে তরঙ্গও সেই দিকে অগ্রসর হয়। অর্থাৎ এখানে কম্পনের দিক এবং তরঙ্গের গতির দিক পরস্পর সমান্তরাল বা একই। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে সমান্তরালভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে। বায়ু মাধ্যমে শব্দের তরঙ্গ অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের উদাহরণ। অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গে অনুরূপ রাশি হচ্ছে সঙ্কোচন ও প্রসারণ।
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ: হাতের সঞ্চালন বা কম্পনের দিক উপর-নিচ বা ডানে-বামে কিন্তু তরঙ্গের গতির দিক অনুভুমিক । এখানে কম্পনের দিক তরঙ্গের গতির দিকের সাথে আড়াআড়ি বা প্রস্থ বরাবর। এই তরঙ্গই হচ্ছে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যে তরঙ্গ কম্পনের দিকের সাথে লম্বভাবে অগ্রসর হয় তাকে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ বলে। পানির তরঙ্গ অনুপ্রস্থ তরঙ্গের উদাহরণ। অনুপ্রস্থ তরঙ্গের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বিন্দুকে তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদ বলে ।
কম্পাঙ্কঃ কোন একটি কম্পমান বস্তু বা কণা এক সেকেণ্ডে যতগুলো পূর্ণ কম্পন সম্পন্ন করে, তাকে তার কম্পাঙ্ক বলে। কম্পাঙ্কের একক: হার্টজ (Hz)
তরঙ্গ বেগ = তরঙ্গ দৈর্ঘ্য × কম্পাঙ্ক
শব্দ
শব্দ হল শক্তির একটি বিশেষ তরঙ্গ রূপ যা আমাদের কানে শ্রবণের অনুভূতি জাগায়। শব্দ এক ধরনের শক্তি ও তরঙ্গ। এই শক্তি সঞ্চারিত হয় শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে। শব্দ তরঙ্গ হলো অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ । কোনো মাধ্যমের কণাগুলোর বা স্তরসমূহের সংকোচন ও প্রসারণের সৃষ্টির মাধ্যমে এই তরঙ্গ এক স্থান হতে অন্য স্থানে সঞ্চারিত হয়।
বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দের উৎপত্তি হয়।
মানবদেহের স্বরযন্ত্রে শব্দ উৎপন্ন হয়।
শব্দ সঞ্চারণের জন্য জড় মাধ্যম আবশ্যক ।
যদি চন্দ্রে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে তবে, বিস্ফোরণের শব্দ পৃথিবীতে কখনও শুনা যাবে না কারণ শব্দের উৎস এবং আমাদের কানের মধ্যবর্তী অধিকাংশ স্থানে কোন জড় মাধ্যম নেই। ফলে শব্দ আমাদের কানে পৌঁছতে পারে না।
চাঁদে কোন শব্দ করলে শোনা যায় না। কারণ চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই ।
চন্দ্রপৃষ্ঠে মহাশূন্যচারীরা বেতার যন্ত্র ব্যবহার করে পরস্পরের সাথে কথা বলেন ।
রেলওয়ে স্টেশনে আগমনরত ইঞ্জিনে বাঁশি বাজাতে থাকলে প্লাটফর্মে দাঁড়ানো ব্যক্তির কাছে বাঁশির কম্পাঙ্ক কিরূপ মনে হবে : আসল কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি হবে।
ঝুলন্ত সেতুর উপর দিয়ে সৈন্যদের মার্চ করতে দেয়া হয় না কেন?
প্রত্যেক বস্তুরই একটি নিজস্ব কম্পাঙ্ক আছে। ঝুলন্ত সেতুরও একটি নির্দিষ্ট স্বাভাবিক কম্পাঙ্ক আছে। মার্চ করে যাওয়ার সময় নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে পা ফেলা হয়। এতে মার্চ করার একটি কম্পন তৈরি হয়। যদি কোনক্রমে মার্চ করার কম্পাঙ্ক ঐ সেতুটির স্বাভাবিক কম্পাঙ্কের সমান হয়ে যায়, তাহলে ঐ সেতুতে পরবশ কম্পন সৃষ্টি হয় এবং এর বিস্তার বেশি হয়ে সেতুটি দুলতে থাকে।
সেতুটির কম্পন বিস্তার বেশি হওয়ায় সেতুটি বেশি বিস্তার নিয়ে দুলতে থাকে এবং ভেঙ্গে পড়তে পারে। এ কারণে ঝুলন্ত সেতুর উপর দিয়ে সৈন্যদের মার্চ করতে দেয়া হয় না।
শব্দের তীক্ষ্ণতা : শব্দের যে বৈশিষ্ট্য দ্বারা কোন সুর চড়া ও কোন সুর মোটা তা বোঝা যায়, তাকে শব্দের তীক্ষ্ণতা বলে। শব্দের তীক্ষ্ণতার একক ডেসিবল। শব্দের তীক্ষ্ণতা শব্দ তরঙ্গের বিস্তার (Wave amplitude) উপর নির্ভর করে। একটি শূন্য পাত্রকে আঘাত করলে ভরা পাত্রের চেয়ে বেশি শব্দ হয়। কারণ, শূন্য পাত্রে বাতাসে শব্দ তরঙ্গের বিস্তার বেশি হয় বলে ।
শব্দের তীব্রতা পরিমাপক একক হলো db (ডেসিবেল)। অন্যদিকে কম্পাংকের একক হলো Hz (হার্জ)।
স্বাভাবিকভাবে শূন্য (০) ডেসিবেল থেকে ৬০ ডেসিবেল তীব্রতার শব্দ মানুষের জন্য স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য।
এ সীমার বেশি তীব্রতার শব্দ দূষিত। অর্থাৎ শব্দ দূষণ ঘটে ৬০ ডেসিবেলের পর থেকে। তবে দূষিত শব্দের তীব্রতা ৮৫ ডেসিবেলে পৌছালে তা মানুষের জন্য অসহনীয় ও ক্ষতিকর।
যে সর্বোচ্চ শ্রুতি সীমার ওপরে মানুষ বধির হতে পারে তা হচ্ছে - ১২০ ডেসিবেল।
লোক ভর্তি হল ঘরে শূন্য ঘরের চেয়ে শব্দ ক্ষীণ হয়। কারণ, শূন্য ঘরে শব্দের শোষণ কম হয়।
সুর ও স্বর
সুর ও স্বর: একটি মাত্র কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট শব্দকে সুর বলে। একাধিক কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দকে স্বর বলে।
বাদ্যযন্ত্রসমূহ ফাঁকা থাকে। কারণ, ফাঁপা বাক্সের বায়ুতে অনুনাদ সৃষ্টি হয়ে শব্দের প্রাবল্য বৃদ্ধি পায় ।
সুরেলা শব্দ তৈরি করার জন্য নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়:-
তার দিয়ে তৈরী বাদ্যযন্ত্র: একতারা, বেহালা, সেতার।
বাতাসের প্রবাহ দিয়ে তৈরী বাদ্যযন্ত্র: বাঁশি, হারমোনিয়া ।
আঘাত (Percussion) দিয়ে তৈরী করা বাদ্যযন্ত্র: ঢোল, তবলা।
আজকাল ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করে সম্পূর্ন ভিন্ন উপায়ে সুরেলা শব্দ তৈরী করা হয় ।
পুরুষের গলার চেয়ে শিশু বা মেয়ের গলার স্বর সরু: মানুষের গলার যে স্বরতন্ত্রী রয়েছে, পুরুষের ক্ষেত্রে স্বরতন্ত্রী দৃঢ় ও মোটা হয় কিন্তু শিশু বা মেয়েদের গলার স্বরতন্ত্রী নরম ও পাতলা হয়। ফলে শিশু বা মেয়েদের স্বর সরু হয়।
বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের গতিবেগ
শব্দের বেগ:
কঠিন মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে বেশি। বায়বীয় মাধ্যমে শব্দের বেগ সবচেয়ে কম ।
ভ্যাকিউয়ামে বা শূন্যে শব্দের বেগ শূন্য ।
শব্দের বেগ : কঠিন > তরল > বায়বীয়
c তাপমাত্রায় এবং স্বাভাবিক চাপে লোহাতে শব্দের গতি প্রায়
পানিতে শব্দের গতি
বাতাসে শব্দের বেগ ।
শূন্য মাধ্যমে শব্দের গতি শূন্য।
মাধ্যম | বেগ (m/s) |
---|---|
বাতাস | 330 |
পানি | 1,493 |
লোহা | 5,130 |
হাইড্রোজেন | 1,284 |
পারদ | 1,450 |
হীরা | 12000 |
পানিতে শব্দ বাতাসের চেয়ে চারগুণ দ্রুত চলে। বায়ুতে শব্দের গতি ঘণ্টায় ৭৪৭ মাইল বা ১১৯৫কিঃমিঃ।
সমুদ্রের তীরে বিস্ফোরণ ঘটলে এক কি:মি: দূরে সমূদ্রের পানির নীচে অবস্থানকারী একজন ব্যক্তি একই দূরত্বে সমূদ্রের উপর অবস্থানকারী অপর ব্যক্তির চেয়ে আগে শব্দ শুনতে পায়। কারণ বায়ু মাধ্যমের চেয়ে তরল মাধ্যমে শব্দের বেগ বেশি।
পুকুরের পানিতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে বাইরে থেকে যে শব্দ খুব আস্তে শোনা যায় কিন্তু পানিতে ডুব দিয়ে শুনলে ঐ শব্দ বেশ জোরে শোনা যায়। কারণ, শব্দ বায়বীয় মাধ্যমের চেয়ে তরল মাধ্যমে দ্রুত চলে ।
শব্দের বেগের উপর তাপমাত্রার প্রভাব: তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে শব্দের বেগ বৃদ্ধি পায়। 1°C বা 1°K তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বাতাসে শব্দের বেগ প্রায় ০.৬ মি./ সে. বৃদ্ধি পায়। রাত্রিকালের চেয়ে দিনের বেলায় বায়ুর উষ্ণতা বেশি থাকে বলে রাত্রিকালের চেয়ে দিনের বেলায় শব্দের বেগ বেশি হয়। আবার, শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে বায়ুর উষ্ণতা বেশি থাকে বলে শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে বায়ুতে শব্দের বেগ বেশি হয়।
শব্দের বেগের উপর আর্দ্রতার তাপমাত্রার প্রভাব: বায়ুর আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে শব্দের বেগ বৃদ্ধি পায়। এজন্য শুষ্ক বায়ুর চেয়ে ভিজা বায়ুতে শব্দের বেগ বেশি। বর্ষাকালে বায়ুর আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে শব্দ দ্রুততর চলে ।
শব্দের বেগের উপর বায়ুর চাপের কোন প্রভাব নেই ।
শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিতে যে বিমান চলে তাকে সুপারসনিক বিমান বলে ।
কনকর্ড: ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি যাত্রীবাহী সুপারসনিক বিমান ।
সনিক বুম: শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিতে চলমান কোন বিমান বা ক্ষেপনাস্ত্রকর্তৃক উদ্ভূত তরঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট তীব্র কম্পাঙ্ক ।
কোনটির গতিবেগ বেশি --- আলো/ শব্দ: আলো ।
বজ্রপাতের সময় আলোর ঝলক দেখার বেশ কিছু সময় পরে মেঘের গর্জন শোনা যায়: গর্জন এবং আলোর ঝলক একই সাথে ঘটে কিন্তু শব্দের চাইতে আলোর গতি অনেক বেশি। মেঘ ও পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্ব অতিক্রম করতে আলোর চেয়ে শব্দের বেশি সময় লাগে বলে আলোর ঝলক দেখার বেশ কিছু সময় পরে মেঘের গর্জন শোনা যায় ।
দূরে যদি বন্দুকের গুলি ছোঁড়া হয় তাহলে নলের মুখের আলোর ঝলক দেখার বেশ পরে গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। কারণ, শব্দের চাইতে আলোর গতি বেশি বলে ।
দূরে কোথাও ক্রিকেট খেলা দেখার সময় ব্যাট ও বলের সংঘাত দেখার বেশ কিছুসময় পরে আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। কারণ, শব্দের চাইতে আলোর গতি বেশি বলে ।
শব্দের প্রতিধ্বনি
শব্দের প্রতিধ্বনি: কোন উৎস থেকে সৃষ্ট শব্দ যদি দূরবর্তী কোন মাধ্যমে বাধা পেয়ে উৎসের কাছে ফিরে আসে তখন মূল ধ্বনির যে পুনরাবৃত্তি হয় তাকে শব্দের প্রতিধ্বনি বলে।
শব্দের প্রতিফলনের বাস্তব উদাহরণ শব্দের প্রতিধ্বনি ।
শব্দের প্রতিধ্বনির সাহায্যে সমুদ্র ও কুয়ার গভীরতা নির্ণয় করা হয় ।
হলঘরের ছাদ বাঁকানো এবং দেয়াল নরম আঁশযুক্ত পদার্থে আবৃত থাকে:
আধুনিক নির্মাণ কৌশলে হলঘরের ছাদ এবং মঞ্চের পেছনের দেয়াল অবতলে বাঁকানো থাকে। মঞ্চে উপবিষ্ট বক্তার বক্তব্য পেছনের দেয়ালে এবং
ছাদে প্রতিফলিত হয়ে দর্শক ও শ্রোতার নিকট পৌঁছায়। হলঘরের অবশিষ্ট তিন দিকের দেয়ালে শব্দ প্রতিফলিত হয়ে মূল শব্দের সাথে মিশে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
এ অসুবিধা এড়াতে হলঘরের দেয়াল নরম আঁশযুক্ত ফেল্ট কাপড় প্রভৃতি দ্বারা আবৃত করা হয়। এতে শব্দ নরম আঁশযুক্ত বস্তু কর্তৃক শোষিত হয় বলে মূল শব্দের সাথে মিশতে পারে না।
ফলে বক্তৃতা ভাল শোনা যায় ।
শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার জন্য উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যবর্তী দূরত্ব ন্যূনতম ১৬.৬ মিটার হওয়া প্রয়োজন ।
আমাদের মস্তিষ্কে শব্দের স্থায়িত্বকাল প্রায় ০.১ সেকেন্ড। এর মধ্যে আরেকটি শব্দ আমাদের কানে এসে পৌঁছায় তবে আমাদের মস্তিক দুটি শব্দ আলাদাভাবে শনাক্ত করতে বা বুঝতে পারে না ।
শ্রাব্যতার পাল্লা
শব্দের কম্পাঙ্ক ২০Hz থেকে ২০,০০০ Hz এর মধ্যে সীমিত থাকলেই কেবল আমরা সেই শব্দ শুনতে পাই । একে শ্রাব্যতার পাল্লা বলে। শব্দের উৎসের কম্পাঙ্ক যদি ২০Hz এর চেয়ে কম বা ২০,০০০Hz এর বেশি হয়,
তাহলে যে শব্দ উৎপন্ন হয় তা আমরা শুনতে পাই না। উৎসের কম্পাঙ্ক ২০Hz থেকে ২০,০০০Hz এর মধ্যে সীমিত থাকলেই কেবল আমরা শব্দ শুনতে পাই ।
কুকুরের শ্রাব্যতার ঊর্ধ্ব সীমা: প্রায় ৩৫,০০০ Hz ।
বাদুড়ের শ্রাব্যতার ঊর্ধ্ব সীমা: প্রায় ১,০০,০০০ Hz ।
শব্দোত্তর বা আলট্রাসনিক তরঙ্গ
যে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ২০,০০০Hz এর চেয়ে বেশি তাকে শব্দোত্তর তরঙ্গ বলে। কোয়ার্টজ ক্রিস্টাল অসিলেটরের সাহায্যে শব্দোত্তর তরঙ্গ তৈরি করা যায়। শব্দোত্তর তরঙ্গেও বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। যেমনঃ
১) সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়, হিমশৈল, ডুবোজাহাজ ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয় ।
২) পোতাশ্রয়ের মুখ থেকে জাহাজকে পথ প্ৰদৰ্শন ।
৩) ধাতবপিণ্ড বা পাতে সূক্ষ্মতম ফাটল অনুসন্ধান ৷
৪) সাধারণভাবে মিশে যায় না এমন তরলসমূহের (যেমন পানি ও পারদ) মিশ্রণ তৈরি ।
৫) সূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি পরিস্কার করা।
৬) ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করা।
৭) রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ।
আলট্রাসনোগ্রাফি
ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের শব্দের দ্বারা ইমেজিং অর্থাৎ শ্রবণোত্তর শব্দ তরঙ্গ (যে শব্দ তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ২০,০০০Hz এর বেশি) ব্যবহার করে শব্দের প্রতিধ্বনিকে কাজে লাগিয়ে শরীরের নরম পেশি বা টিস্যুর অভ্যন্তরীণ কোনো ক্ষত স্থানের ইমেজ তৈরি করার পদ্ধতি।
শব্দেতর বা ইনফ্রাসনিক তরঙ্গ: যে তরঙ্গের কম্পাঙ্ক ২০ Hz এর চেয়ে কম তাকে শব্দেতর তরঙ্গ বলে ৷
বাদুড় অন্ধকারে কিভাবে চলাফেরা করে ?
বাদুড় চোখে দেখতে পারে না। বাদুড় চলার পথে ক্রমাগত বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দোত্তর তরঙ্গ সৃষ্টি করে। সৃষ্ট শব্দের প্রতিধ্বনি শুনে বাদুড় পথে কোন প্রতিবন্ধকের উপস্থিতি কিংবা খাদ্যবস্তুর অবস্থান নির্ণয় করে।
ডপলার ক্রিয়া
ডপলার ক্রিয়া বা প্রভাব: শব্দের উৎস ও শ্রোতার মধ্য আপেক্ষিক গতি বিদ্যমান থাকলে শ্রোতার নিকট উৎস হতে নিঃসৃত শব্দের তীক্ষ্ণতা বা কম্পাঙ্কের যে আপাত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, তাকে ডপলার ক্রিয়া বা প্রভাব বলে ।
ডপলার ক্রিয়ার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হয় --
উৎস গতিশীল কিন্তু শ্রোতা স্থিরঃ
১) উৎস শ্রোতার দিকে অগ্রসর হলে শব্দের আপাত কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি হবে ।
২) উৎস শ্রোতা থেকে দূরে সরে গেলে শব্দের আপাত কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে কম হবে ।
উৎস স্থির কিন্তু শ্রোতা গতিশীলঃ
১) শ্রোতা উৎসের দিকে অগ্রসর হলে শব্দের আপাত কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি হবে ।
২) শ্রোতা উৎস থেকে দূরে সরে গেলে শব্দের আপাত কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে কম হবে।
উৎস ও শ্রোতা উভয়ই গতিশীলঃ
উৎস ও শ্রোতার মধ্য আপেক্ষিক গতিবেগ না থাকলে কম্পাঙ্কের কোন পরিবর্তন হয়না।