তাপ ও তাপগতি বিদ্যা

আমাদের জীবন যেমন চলমান তেমনি আমাদের ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি ও চলমান । যতদিন আমরা বেচে থাকব ততদিন আমাদের ঠান্ডা ও গরমের অনুভূতি থাকবে । তাপ ও তাপগতি বিদ্যা পদার্থ বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় । এ অধ্যায়ে তাপ ও তাপমাত্রা , তাপের প্রভাবে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন , স্ফুটনাংক , গলনাংক , পদার্থের তাপীয় প্রসারণ , ক্যালরিমিতি , তাপ সঞ্চালন , তাপীয় যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় । আজকের এই টিউটরিয়ালে প্রত্যেকটি টপিক নিয়ে ইন ডিটেলইস আলোচনা করা হবে । আপনি যদি এই টিউটরিয়ালের শেষ পর্যন্ত পড়ে আসতে পারেন । আশা করছি যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে পারবেন এতে বিন্দুমাত্র ও সন্দেহ নাই ।

তাপ ও তাপমাত্রা কাকে বলে

তাপ : তাপ এক প্রকার শক্তি যা ঠাণ্ডা বা গরমের অনুভূতি জন্মায়। তাপ শক্তির একটি রূপ । তাপের আন্তর্জাতিক (S.I) একক হল শক্তির একক অর্থাৎ জুল (J)। C.G.S. পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালরি । এক গ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করার জন্য যে তাপের প্রয়োজন, তাকে এক ক্যালরি বলে।
১ ক্যালরি = ৪.২ জুল

তাপমাত্রা : তাপমাত্রা হচ্ছে বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা অন্য বস্তুর তাপীয় সংস্পর্শে আনলে তাপ গ্রহণ করবে না বর্জন করবে তা নির্ধারণ করে । আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক কেলভিন (K)। C. G.S. পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক ডিগ্রী সেলসিয়াস (C)। একটি বদ্ধ ঘরে একটি চালু ফ্রীজের দরজা খুলে রাখলে ঘরের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।

সেলসিয়াস, ফারেনহাইট ও কেলভিন স্কেলের মধ্যে সম্পর্ক:
C 5 = F - 32 9 = K - 273 5

তাপমাত্রার বিভিন্ন স্কেলের তুলনামূলক চিত্রঃ

স্কেলের নাম সংকেত নিম্ন স্থিরাঙ্ক উর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক
বরফের গলনাংক পানির স্ফুটনাংক
সেলসিয়াস / সেন্টিগ্রেড C 0 ডিগ্রি 100 ডিগ্রি
ফারেনহাইট F 32 ডিগ্রি 212 ডিগ্রি
কেলভিন K 273 373

তাপমাত্রার কোন ক্ষেত্রে 'শূন্য' ডিগ্রী সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা :
কেলভিন। (0°K = - 273°C = - 459.4°F)

ফারেনহাইট ও সেলসিয়াসের স্কেলে কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় সমান তাপমাত্রা নির্দেশ করে?
উত্তরঃ ধরি, নির্ণেয় তাপমাত্রা = x;
শর্তমতে, X 5 = X - 32 9
⇒ 9x = 5x – 160
⇒ 4x = -160
⇒ x = - 40

50° ফারেনহাইট উষ্ণতার সমান কত ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড?
উত্তরঃ ধরি নির্ণেয় তাপমাত্রা = x;
শর্তমতে, X 5 = 50 - 32 9
X 5 = 2
⇒ x = 10

সেন্টিগ্রেড মাপে তাপমাত্রার পরিবর্তন ৫° হয়, তাহলে কেলভিন মাপে পরিবর্তন হবে: ৫° ।
(সেন্টিগ্রেড স্কেলে তাপমাত্রার পরিবর্তন = কেলভিন স্কেলে তাপমাত্রার পরিবর্তন)

ফারেনহাইট স্কেলে পানির স্ফুটনাংক কত?
উত্তরঃ পানির স্ফুটনাংক 100°C.
100 5 = X - 32 9
X - 32 9 = 20
⇒ x - 32 = 180
⇒ X = 180 + 32
⇒ X = 212° F

সুস্থ দেহের তাপমাত্রা 98.4° F. সেলসিয়াসে সেটা হবে: 36.89°

প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপ :
O°C তাপমাত্রা বা 273K তাপমাত্রাকে প্রমাণ তাপমাত্রা বলে ।
৭৬৯ মিলিমিটার পারদচাপ বা ৭৬ সেন্টিমিটার পারদচাপকে প্রমাণ চাপ বলে ।
0° সেলসিয়াস . = 275° কেলভিন = - 459.4° ফারেনহাইট

পরমশূন্য তাপমাত্রা : -273°C বা 0°K তাপমাত্রাকে পরমশূন্য তাপমাত্রা বলে। একে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বা চরম শূন্য তাপমাত্রা বা চরম শীতলতাও বলা হয়।
পরম শূন্য তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন শূন্য।
NTP -এর পূর্ণরূপ: Normal temperature & pressure.

ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার : শরীরের তাপমাত্রা মাপতে সাধারণত যে থার্মোমিটার ব্যবহৃত হয়, তাকে ক্লিনিক্যাল বা ডাক্তারী থার্মোমিটার বলে। এই থার্মোমিটারে ফারেনহাইট স্কেল ব্যবহার করা হয়। ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটারে ৯৫ - ১১০° F পর্যন্ত দাগ কাটা থাকে । মানব দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতা ৯৮.৪° ফারেনহাইট বা ৩৬.৯° সেলসিয়াস

তাপ ও তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য

তাপ তাপমাত্রা
তাপ এক প্রকার শক্তি যা ঠাণ্ডা বা গরমের অনুভূতি জন্মায়। তাপমাত্রা হচ্ছে বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা অন্য বস্তুর তাপীয় সংস্পর্শে আনলে তাপ গ্রহণ করবে না বর্জন করবে তা নির্ধারণ করে ।
তাপের প্রবাহ তাপের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না। তাপের প্রবাহ তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে।
তাপ হলো তাপমাত্রার কারণ। তাপমাত্রা হলো তাপের ফল।
তাপের আন্তর্জাতিক (S.I) একক হল শক্তির একক অর্থাৎ জুল (J)। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক কেলভিন (K)।
C.G.S. পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালরি । C. G.S. পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক ডিগ্রী সেলসিয়াস (C)।
তাপ শক্তির একটি রূপ । তাপমাত্রা হলো তাপের ফসল ।
দুটি বস্তুর তাপমাত্রা এক হলেও এদের তাপের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। আর দুটি বস্তুর তাপের পরিমাণ এক হলেও এদের তাপমাত্রা ভিন্ন হতে পারে।
তাপ বস্তুস্থিত অণুর শক্তির সমানুপাতিক। তাপমাত্রা বস্তুস্থিত গড় শক্তির সমানুপাতিক।
তাপ পরিমাপক যন্ত্রের নাম ক্যালরি মিটার। তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের নাম থার্মোমিটার।

পদার্থের অবস্থার পরিবর্তনে তাপের প্রভাব

আমরা জানি পদার্থ তিনটি অবস্থায় থাকতে পারে যথা: [ক] কঠিন [খ] তরল [গ] গ্যাসীয় বা বায়বীয় । এর একমাত্র কারণ হলো তাপের প্রভাব । একটা কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তার তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং আণবিক বন্ধন শিথিল হয়ে পদার্থের অণুগুলো নড়তে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে এটি তরলে পরিণত হয় । তাপমাত্রা যদি আরো বেড়ে যায় তখন অণুগুলো মুক্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে, তখন তাকে আমরা বলি গ্যাসীয় বা বায়বীয় । আবার একইভাবে তাপ বর্জনের ফলে গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থা থেকে তরলে এবং তরল থেকে কঠিনে রুপান্তরিত হয় । একটু পরেই আমরা বিস্তারিত জানব ।

পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন

গলন বা তরলীভবন: তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থের তরল পদার্থে রূপান্তরিত হওয়াকে গলন বলে।

হিমায়ন বা কঠিনীভবন: তাপ বর্জনের ফলে তরল পদার্থের কঠিন পদার্থে রূপান্তরিত হওয়াকে হিমায়ন বলে ।

বাষ্পীভবন: তাপ প্রয়োগে তরল পদার্থের বায়বীয় পদার্থে রূপান্তরিত হওয়াকে বাষ্পীভবন বলে।

ঘনীভবন: তাপ বর্জনের ফলে বায়বীয় পদার্থের তরল পদার্থে রূপান্তরিত হওয়াকে ঘনীভবন বলে।

উর্ধ্বপাতন (Sublimation): যে প্রক্রিয়ায় কোনো কঠিন পদার্থ তাপের প্রভাবে তরল অবস্থা প্রাপ্ত না হয়ে সরাসরি তা বাষ্পে পরিণত হয় এবং ঐ বাষ্পকে শীতল করলে সরাসরি পুনরায় ঐ কঠিন পদার্থই পাওয়া যায়, তাকে ঊর্ধ্বপাতন বলে। যেমন- আয়োডিন , কর্পূর, নিশাদল ও ন্যাপথলিন ইত্যাদিকে উত্তপ্ত করলে সরাসরি বাষ্পে এবং বাষ্পকে শীতল করলে আবার কঠিন কেলাসে পরিণত হয়।

তুহিনীভবন: কোন কোন গ্যাসীয় পদার্থ তাপ বর্জন করে তরল পদার্থে রূপান্তরিত না হয়ে সরাসরি কঠিন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে তুহিনীভবন বলে। তুহিনীভবন উর্ধ্বপাতনের বিপরীত প্রক্রিয়া ।

গলনাঙ্ক কাকে বলে

এক বায়ুমন্ডলীয় চাপে কোনো কঠিন পদার্থ যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গলে তরলে পরিণত হয়, তাকে পদার্থের গলনাঙ্ক বলে । বরফের গলনাঙ্ক O°C অর্থাৎ O°C তাপমাত্রায় বরফ গলে পানিতে পরিণত হয় ।

গলনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাব:
১) কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরের সময় যেসব পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায়, যেমন, মোম, তামা ইত্যাদি; চাপ বাড়লে ঐ সব পদার্থের গলনাঙ্ক বেড়ে যায় ।
২) যেসব পদার্থের আয়তন গলনের ফলে হ্রাস পায় যেমন: বরফ, অ্যান্টিমনি, বিসমাথ, ঢালাই লোহা, ইত্যাদি; চাপ বাড়লে ঐ সব পদার্থের গলনাঙ্ক কমে যায় ।
৩ ) কোন কঠিন পদার্থ বিশুদ্ধ নাকি অবিশুদ্ধ তা গলনাংকের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।

হিমাঙ্ক কাকে বলে

এক বায়ুমন্ডলীয় চাপে কোনো তরল পদার্থ যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জমে কঠিনে পরিণত হয়, তাকে পদার্থের হিমাঙ্ক বলে। পানির হিমাঙ্ক O°C অর্থাৎ O°C তাপমাত্রায় পানি জমে বরফে পরিণত হয়।

স্ফুটনাঙ্ক কাকে বলে

প্রমাণ চাপে (বা এক বায়ুমন্ডলীয় চাপে) যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ ফুটতে শুরু করে এবং বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, তাকে ঐ তরলের স্ফুটনাঙ্ক বলা হয়। বিশুদ্ধ পানির স্ফুটনাঙ্ক 100°C অর্থাৎ 100°C তাপমাত্রায় প্রমাণ চাপে পানি ফুটতে থাকে এবং বাষ্পে পরিণত হয়।

স্বাভাবিক চাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক ১০০°C।
একটি খোলা পাত্রে ফুটানো হলে, পানি সর্বোচ্চ ১০০° C তাপমাত্রায় পৌছায় ।
এভারেস্ট পর্বতের উপর পানির স্ফুটনাঙ্ক ৭০° সেঃ।
চাপ বাড়লে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায় এবং চাপ কমলে স্ফুটনাঙ্ক কমে ।
প্রেসার কুকারে রান্না তাড়াতাড়ি হয় কারণ, উচ্চ চাপে তরলের স্ফুটনাংক বৃদ্ধি পায়।
খোলা পাত্র অপেক্ষা ঢাকনা দেওয়া পাত্রে চাল তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয় কারণ, ঢাকনা দেয়া পাত্রে পানির স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে ।
সুউচ্চ পাহাড় বা পর্বতের উপর রান্না করা দুরূহ: পাহাড় বা পর্বতের উপর বায়ুর চাপ কম থাকায় পানির স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। পাহাড়ের উপর পানির স্ফুটনাঙ্ক কম বলে কম তাপমাত্রায় পানি ফুটতে শুরু করে কিন্তু মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি দ্রুত সিদ্ধ হয় না । মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি সুসিদ্ধ হওয়ার জন্য যে তাপের প্রয়োজন হয়, পানি কম তাপমাত্রায় ফুটে বাষ্পীভূত হতে বাষ্পীভবনের সুপ্ততাপ গ্রহণ করে বলে মাছ, মাংস সেই পর্যাপ্ত তাপ পায় না ।
সুউচ্চ পাহাড় বা পর্বতের উপর রান্নার অসুবিধা কিভাবে কাটানো যায়: প্রেসার কুকার ব্যবহার করে ।

আপেক্ষিক সুপ্ততাপ কাকে বলে

একক ভরের কোন বস্তু তার তাপমাত্রার পরিবর্তন না ঘটিয়ে এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় পরিণত হতে যে পরিমাণ তাপ গ্রহন বা বর্জন করে, তাকে ঐ বস্তুর ঐ অবস্থা পরিবর্তনের আপেক্ষিক সুপ্ততাপ বলে।

0°C উষ্ণতার পানির চেয়ে 0°C উষ্ণতার বরফ বেশি ঠাণ্ডা বোধ হয় কেন:

0°C তাপমাত্রায় 1 কেজি বরফের মধ্যে যে পরিমাণ তাপ থাকে, তার সঙ্গে 3.36×10 5 জুল তাপশক্তি যোগ করলে 1 কেজি বরফ পানিতে পরিণত হবে। সুতরাং 0°C তাপমাত্রায় 1 কেজি বরফের যে পরিমাণ তাপ থাকে, 0°C তাপমাত্রায় 1 কেজি পানিতে তার চেয়ে 3.36×10 5 জুল তাপ বেশি থাকে। তাই 0°C তাপমাত্রার পানির চেয়ে 0°C তাপমাত্রার বরফ বেশি ঠাণ্ডা বোধ হয় ।

গরমের দিনে কুকুর জিহবা বের করে দৌড়ায় কেন

গরমের দিনে কুকুরের শরীর উত্তপ্ত থাকে এবং কুকুর অস্বস্তি বোধ করে। কুকুরের জিহবার উপর এক ধরণের লালা থাকে । সেই লালা কুকুরের শরীর হতে বাষ্পীভবনে সুপ্ততাপ শোষণ করে। ফলে কুকুরের শরীর ঠাণ্ডা হয় এবং কুকুর স্বস্তি বোধ করে। এজন্য গরমের দিনে কুকুর জিহবা বের করে দৌড়ায় ।
ফ্যান চালালে আমরা ঠাণ্ডা অনুভব করি কেন: শরীর থেকে বাস্পীভবনের হার বাড়িয়ে দেয়।

মাটির পাত্রে পানি ঠাণ্ডা থাকে কেন:

মাটির কলসীর গায়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। এসব ছিদ্র দিয়ে পানি কলসীর উপরিতলে এসে পৌঁছে এবং পানির বাষ্পায়ন ঘটে। বাষ্পায়নের প্রয়োজনীয় সুপ্ততাপ কলসীর পানি হতে গৃহীত হয়। ফলে তাপ হারিয়ে কলসীর পানি শীতল হয়।

ভিজা কাপড় গায়ে শুকালে ঠাণ্ডা লাগে কেন

ভিজাকাপড় গায়ে রাখলে কাপড়ের পানি ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হতে থাকে। এ বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় সুপ্ততাপ শরীর হতে গৃহীত হয়। ফলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। বেশিক্ষণ শরীরে বাষ্পীভবন হলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং সর্দি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইলিশ মাছ লবন দিয়ে সংরক্ষণ করা হয় কেন

ইলিশ মাছ লবন দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। কারণ খাদ্যে লবণ একটি পানিগ্রাসী পদার্থ। এটি বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্পকে শোষণ করে নেয়। ইলিশ মাছ লবণ মেখে সংরক্ষণ করা হলে, লবণ মাছের কোষ থেকে পানি শোষণ করে নেয়। এতে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার অভাবে মাছ পচে যেতে পারে না। এছাড়া লবণ জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করে ।

দেয়াল ঘড়ি গ্রীষ্মকালে ধীর এবং শীতকালে দ্রুত হয় কেন

দেয়াল ঘড়ির দোলক ধাতব দণ্ডের সাহায্যে ঝুলানো থাকে । গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দণ্ডের দৈর্ঘ্য বাড়ে। ফলে দোলন এর সময় বৃদ্ধি পায় তাই ঘড়ি ধীরে চলে । শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দোলকের দৈর্ঘ্য কমে যায় ফলে দোলনের সময় হ্রাস পায় এর ফলে ঘড়ি দ্রুত চলে।

পানির ত্রৈধবিন্দুর তাপমাত্রা

যে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে পানি তিন অবস্থাতেই অর্থাৎ বরফ, পানি এবং জলীয় বাষ্পরূপে অবস্থান করে তাকে পানির ত্রৈধবিন্দু (Triple Point) বলে। এই ত্রৈধবিন্দুর তাপমাত্রা ২৭৩K ধরা হয়।

পদার্থের তাপীয় প্রসারণ

কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল পদার্থই তাপ প্রয়োগে প্রসারিত হয় এবং তাপ অপসারণ করলে সংকুচিত হয়। তাপ প্রয়োগে বায়বীয় পদার্থ সবচেয়ে বেশি প্রসারিত হয় এবং কঠিন পদার্থ সবচেয়ে কম প্রসারিত হয়। তাপ প্রয়োগে পদার্থের প্রসারণঃ বায়বীয় পদার্থ > তরল পদার্থ > কঠিন পদার্থ । কঠিন পদার্থের প্রসারণ তিন প্রকার। যথাঃ দৈর্ঘ্য প্রসারণ, ক্ষেত্র প্রসারণ এবং আয়তন প্রসারণ । তরল ও বায়বীয় পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে শুধু আয়তনের প্রসারণ হয়।

পদার্থের তাপীয় প্রসারণের উদাহরণ

১. রেল লাইনে দুটি রেলের সংযোগস্থলে ফাঁক থাকে কেন:

সূর্যের তাপে কিংবা যখন ট্রেন চলে তখন চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন তাপে রেললাইন প্রসারিত হয় । রেল লাইনের দুটি রেলের সংযোগস্থলে তাই ফাঁক রাখা হয়, যাতে রেল লাইন প্রসারণের জন্য যথেষ্ট জায়গা পায়। এরূপ ফাঁক না রাখলে এই প্রসারণের ফলে লাইন বেঁকে গিয়ে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে ।

২. টেলিফোন ও বিদ্যুৎ লাইনের তারগুলো ঢিলা রাখা হয় কেন:

তাপমাত্রা হ্রাস পেলে ধাতব তার সঙ্কুচিত হয়। তারগুলো যদি টান টান থাকে তাহলে শীতকালে সঙ্কোচনের ফলে ছিড়ে যেতে বা পোস্ট ভেঙ্গে যেতে পারে, তাই তারগুলো ঢিলা রাখা হয় যেন ছিঁড়ে না যায় ।

৩. পুরু কাঁচের গ্লাসে গরম পানীয় ঢাললে গ্লাসটি ফেটে যায় কেন:

গ্লাসে গরম পানীয় ঢালার ফলে ঐ গ্লাসের ভিতরের অংশ গরম পানির সংস্পর্শে প্রসারিত হয়, কিন্তু কাঁচ তাপের কুপরিবাহক বলে ঐ তাপ বাইরের অংশে সঞ্চালিত হতে পারে না, তাই ভিতরের অংশ প্রসারিত হলেও বাইরের অংশ প্রসারিত হতে পারে না, ফলে প্রসারণ বলের জন্য কাঁচ ফেটে যায়। কিন্তু কাঁচ পাতলা হলে ভিতরের তাপ দ্রুত বাইরে যেতে পারে এবং কাঁচের প্রসারণ সব জায়গায় সমান হয়।

৪. হেরিকেনের গরম চিমনির উপর ঠাণ্ডা পানি পড়লে তা ফেটে যায় কেন:

হেরিকেনের গরম চিমনির উপর ঠাণ্ডা পানি পড়লে কাঁচের কিছু অংশে আকস্মিক সংকোচন ঘটে। কিন্তু বাকি অংশ সংকুচিত হয় না । এই বৈষম্যের কারণে সংকোচন বলের জন্য সংকুচিত অংশ অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং চিমনি ফেটে যায়।

৫. গরুর গাড়ির চাকায় লোহার বেড় পরানো হয় কেন:

সাধারণ তাপমাত্রায় বেড় ঢাকা থেকে ছোট হয়, তাই একে চাকার সাথে লাগানো যায় না। লোহার বেড়টিকে গরম করলে এটি প্রসারিত হয়, ফলে এর ব্যাস বৃদ্ধি পায়। উত্তপ্ত অবস্থায় বেড়টিকে চাকার সাথে লাগিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়। বেড়টি ঠাণ্ডায় সংকুচিত হয়ে চাকার গায়ে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকে ।

৬. বোতলের ছিপি খুলতে একে গরম করা হয় কেন:

তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থ প্রসারিত হয়। বোতলের ছিপি খুলতে বোতলের মুখ খানিকটা গরম করলে ছিপির মুখের ব্যাস বৃদ্ধি পায় এবং ছিপিটি ঢিলা হয়। কিন্তু কাচ তাপের কুপরিবাহী বলে কাঁচের বোতলের মুখের বাতাসের তারতম্য ঘটে না। ফলেঢিলা ছিপি টেনে খোলা হয়।

৭. মাঝখানে গোলাকার ছিদ্রবিশিষ্ট একটি ধাতব প্লেটকে উত্তপ্ত করলে ছিদ্রটির ব্যাস কমবে।

৮. বাল্বে ও কাঁচের যন্ত্রপাতিতে প্লাটিনাম তার ব্যবহার করা হয়, কারণ প্লাটিনাম ও কাঁচের প্রসারণ প্রায় সমান।

৯. একখণ্ড পাথরকে উত্তপ্ত করলে ফেটে যায়। কারণ, একখণ্ড পাথরকে উত্তপ্ত করলে পাথরের ভেতরের অংশ থেকে বাহিরের আবরণ বেশি উত্তপ্ত ও প্রসারিত হয়।

পানির ব্যতিক্রমী প্রসারণ

তরল পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে তার আয়তন বাড়ে, তাপ অপসারণ করলে আয়তন কমে। 4°C তাপমাত্রার পানিকে গরম বা ঠাণ্ডা যাই করা হোক না কেন তা প্রসারিত হয়। এটি তরল পদার্থের প্রসারণের সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম। তাই পানির এই প্রসারণকে ব্যতিক্রমী প্রসারণ বলে।
4°C উষ্ণতায় পানির ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ।
শীতপ্রধান দেশে নদ-নদী, পুকুর বা সাগরের সমস্ত পানিই জমে বরফ হয়ে যায় না: পানির ব্যতিক্রম প্রসারণের জন্য পুকুর, নদী বা সাগরে উপরে বরফ জমে গেলেও নিচে 4°C তাপমাত্রার পানি থেকে যায় । এর ফলে জলজ জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হয় ।
0°C তাপমাত্রার পানিকে উত্তপ্ত করলে আয়তন কমে ।

কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরের সময় আয়তনের পরিবর্তন হয় কেন:

অধিকাংশ পদার্থের কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরের সময় আয়তন বৃদ্ধি পায় পক্ষান্তরে তরল অবস্থা থেকে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরের সময় আয়তন কমে যায়। যেমন: মোম, তামা, পুটোনিয়াম ইত্যাদি।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন: বরফ (পানি), ঢালাই লোহা, পিতল, বিসমাথ, অ্যান্টিমনি ইত্যাদি। এসব পদার্থ কঠিন থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হলে আয়তন কমে যায় আর তরল অবস্থা থেকে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরের সময় আয়তন বেড়ে যায়।

শীত প্রধান দেশে পানির পাইপ ফেটে যায় কেন:

পানির পাইপের ভিতরের পানি ঠাণ্ডায় বরফ হয়ে গেলে আয়তন বেড়ে যায়। ফলে পাইপের উপর যে প্রচণ্ড চাপ পড়ে, তাতে পাইপ ফেটে যায়।

সাধারণত দেখা যায় ঠাণ্ডা পানির পাইপের চেয়ে গরম পানির পাইপ বেশি ফাটে কেন:

গরম পানিতে ঠাণ্ডা পানির চেয়ে দ্রবীভূত বাতাসের পরিমাণ কম থাকে। ঠাণ্ডা পানির পাইপে পানি জমে গেলে দ্রবীভূত বাতাস বেরিয়ে যেয়ে জমাট বাধা পানির অতিরিক্ত আয়তনের জন্যে জায়গা করে দেয়, কিন্তু গরম পানিতে বাতাসের পরিমাণ কম থাকায় জমাট বাঁধা পানির অতিরিক্ত আয়তনের জন্য আর জায়গা থাকে না। ফলে পাইপের গায়ে যে প্রচণ্ড চাপ পড়ে তাতে পাইপ ফেটে যায়। তাই গরম পানির পাইপ বেশি ফাটতে দেখা যায় ।

বরফের উপর দিয়ে হাঁটা অসুবিধাজক কেন:

চাপে বরফের গলনাঙ্ক কমে যায়। বরফের উপর দিয়ে হাঁটার সময় পায়ের চাপে বরফের গলনাঙ্ক কমে যায় এবং কিছু বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়। এর ফলে পা-সংলগ্ন বরফের তল খুব পিচ্ছিল হয়ে যায়। সে কারণে বরফের উপর দিয়ে হাঁটা অসুবিধাজনক।

পুনঃশিলীভবন কাকে বলে

চাপ প্রয়োগের ফলে কঠিন বস্তু গলে যাওয়া এবং চাপ প্রত্যাহারে আবার কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হওয়াকে পুনঃশিলীভবন বলে ।

দুই টুকরো বরফে একত্রে ধীরে চাপ দিলে ওরা জোড়া লেগে যায় কেন: যখন বরফ টুকরো দুটির উপর চাপ দেওয়া হয় তখন ওদের সংযোগস্থলে গলনাঙ্ক 0°C এর নিচে নেমে আসে। কিন্তু সংযোগস্থলের তাপমাত্রা 0°C থাকায় ঐ জায়গায় বরফ গলে যায় । এখন যেই চাপ অপসারণ করা হয় তখন গলনাঙ্ক আবার 0°Cএ চলে আসে ফলে সংযোগস্থলের বরফগলা পানি জমাট বেধে টুকরো দুটি জোড়া লেগে যায় ।

পর্বতারোহীদের আঁটসাট পোশাক পরার কারণ: পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে যত উপরে উঠা যায় তত বায়ুর চাপ কমতে থাকে। কাজেই উপরে উঠলে দেহের ভেতরের চাপ বাহিরের বায়ুর চাপ অপেক্ষা অধিক হলে দেহের রক্তনালীতে প্রচণ্ড চাপ পড়ে । এ চাপে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। এজন্য পর্বত আরোহীকে আটসাট পোশাক পরিধান করতে হয়।

উদ্বায়ী তরল পদার্থ: একই তাপমাত্রায় যে সকল তরল তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি বাষ্পে পরিণত হয় তাদের উদ্বায়ী তরল পদার্থ বলে । পেট্রোল, বেনজিন, অ্যালকোহল, ইথার ইত্যাদি ।

ক্যালরিমিতি

ক্যালরিমিতি পদার্থ বিজ্ঞানের একটি উপশাখা যার বিষয় তাপ পরিমাপ। তাপ পরিমাপের অন্যতম একক ক্যালরি; এবং এরই ভিত্তিতে তাপ বিজ্ঞানের এই উপশাখার নামাকরণ করা হয়েছে ক্যালরিমিতি। স্কটিশ চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী জোসেফ ব্ল্যাক, যিনি তাপ এবং তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করেন, তাঁকেই ক্যালোরিমিতির জনক হিসাবে ধরা হয়।

ক্যালরিমিতির মূলনীতি

ভিন্ন তাপমাত্রার একাধিক বস্তুকে তাপীয় সংস্পর্শে আনা হলে তাদের মধ্যে তাপের আদান-প্রদান ঘটে। বেশি তাপমাত্রার বস্তুগুলো তাপ হারায় এবং কম তাপমাত্রার বস্তুগুলো তাপ গ্রহণ করে। তাপের এ গ্রহণ বা বর্জন তাপের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না, এদের তুলনামূলক তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। বস্তুগুলোর তাপমাত্রা সমান না হওয়া পর্যন্ত তাপ উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু থেকে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুতে প্রবাহিত হয়। শক্তির সংরক্ষণশীলতার সূত্র অনুসারে বেশি তাপমাত্রার বস্তুগুলো যে তাপ হারায় কম তাপমাত্রার বস্তুগুলো সেই তাপ গ্রহণ করে। এ থেকে আমরা তাপ পরিমাপের তথা ক্যালরিমিতির মূলনীতি পাই -
যদি একাধিক বস্তুর মধ্যে তাদের বাহিরের অন্য কোথাও থেকে তাপ এদের ভেতরে না আসে কিংবা এদের ভিতর থেকে কোন তাপ বাহিরে না যায়, তাদের মধ্যে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া না ঘটে, তাহলে শক্তির সংরক্ষণশীলতার সূত্র হতে আমরা পাই, গৃহীত তাপ = বর্জিত তাপ।

তাপধারণ ক্ষমতা কাকে বলে : কোন বস্তুর তাপমাত্রা 1K বাড়াতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর তাপধারণ ক্ষমতা বলে ।
তাপধারণ ক্ষমতার একক: জুল/ কেলভিন। ( JK -1 )।
তাপধারণ ক্ষমতা = ভর × আপেক্ষিক তাপ

আপেক্ষিক তাপ (Specific heat) কাকে বলে : কোন বস্তুর 1Kg ভরের তাপমাত্রা 1K বাড়াতে যে তাপের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ বস্তুর উপাদানের আপেক্ষিক তাপ বলে ।
আপেক্ষিক তাপের একক: জুল/ কেজি-কেলভিন ( JKg -1 K -1 )

পদার্থ আপেক্ষিক তাপ ( JKg -1 K -1 )
পানি ৪২০০
বরফ ২১০০
জলীয় বাষ্প ২০০০
সীসা ১৩০
তামা ৪০০
রূপা ২৩০

কোন বস্তুতে অন্তর্নিহিত তাপশক্তির পরিমাণ বস্তুটির ভর, উপাদান এবং তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
স্থলভাগের তুলনায় সামুদ্রিক অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেক ধীরে ধীরে বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়। কারণ, পানির আপেক্ষিক তাপ মাটির চেয়ে বেশি।
সামুদ্রিক দ্বীপগুলোতে সারাবছর তাপমাত্রার বেশি পরিবর্তন হয় না । কারণ, পানির আপেক্ষিক তাপ বেশি বলে ।
পানির তাপগ্রহিতা বেশি বলে সমান তাপ দিলেও দুধ পানি অপেক্ষা আগে ফোটে ।

0° সে. তাপমাত্রায় ১ কি.গ্রা. বরফকে পানিতে পরিণত করতে কত তাপের দরকার হবে?
[বরফ গলনের সুপ্ততাপ= ৩৩৬০০০ জুল/ কি.গ্ৰা.]
উত্তরঃ ০° তাপমাত্রায় ১ কি.গ্রা. বরফকে পানিতে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় তাপ
= ভর × বরফ গলনের সুপ্ততাপ
= ১ × ৩৩৬০০০ জুল
= ৩৩৬০০০ জুল
= ৩৩.৬× ১০ জুল ।

মোটরগাড়ি ঠান্ডা রাখার জন্য পানির ব্যবহার: পানির আপেক্ষিক তাপ অধিক এ কারণে অধিক তাপ শোষণ করলেও পানির উষ্ণতা অল্প পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এ কারণে মোটরগাড়ি ঠান্ডা রাখার জন্য পানির ব্যবহার সুবিধাজনক ।

বরফকে বাতাসের মধ্যে রাখলে ধোঁয়া ওঠার কারণ: বাতাসের মধ্যে জলীয় বাষ্প থাকে। এই জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস শীতল বরফের সংস্পর্শে এসে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে ছোট ছোট জলকণায় পরিণত হয় এবং বাতাসের মধ্যে ভাসতে থাকে । বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে এই জলকণা গুলো প্রবাহিত হয়। এই জলকনা গুলোকে বরফের চারপাশে ধোঁয়ার মত দেখা যায় এবং মনে হয় বরফ থেকে বাষ্প উৎপন্ন হচ্ছে ।

তাপ সঞ্চালন কত প্রকার ও কি কি

তাপ সঞ্চালনের পদ্ধতি: তাপ তিন পদ্ধতিতে এক স্থান হতে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়ঃ [ক] পরিবহন (Conduction) [খ] পরিচলন (Convection) [গ] বিকিরণ (Radiation)।

তাপ পরিবহন কাকে বলে

যে পদ্ধতিতে পদার্থের অণুগুলো তাদের নিজস্ব স্থান পরিবর্তন না করে শুধু স্পন্দনের মাধ্যমে এক অণু তার পার্শ্ববর্তী অণুকে তাপ প্রদান করে পদার্থের উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে তাপ সঞ্চালিত করে সেই পদ্ধতিকে পরিবহন বলে।

তাপ পরিবহনের বৈশিষ্ট্য
[ক] জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। শূন্যস্থানের তাপের কোন পরিবহন হয় না ।
[খ] মাধ্যম উত্তপ্ত হয়।
[গ] মাধ্যমের কণাগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটে না ।
[ঘ] সকল সম্ভাব্য পথে তাপ সঞ্চালিত হয়।
[ঙ] এটি ধীর পদ্ধতি।
[চ] সাধারণত কঠিন পদার্থে এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়। কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপের পরিবহন সবচেয়ে বেশি হয়, তরলে তার চেয়ে কম, বায়বীয় পদার্থে অত্যন্ত কম ৷

তাপ পরিচলন কাকে বলে

পরিচলন যে পদ্ধতিতে তাপ কোন পদার্থের অণুগুলোর চলাচলের দ্বারা উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে সঞ্চালিত হয় তাকে পরিচলন বলে। এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের জন্য জড় মাধ্যম আবশ্যকীয়। বিশেষত তরল ও বায়বীয় পদার্থগুলোতে এ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়।

তাপ পরিচলনের বৈশিষ্ট্য
[ক] জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয় ।
[খ] মাধ্যম উত্তপ্ত হয়।
[গ] মাধ্যমের কণাগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটে ।
[ঘ] মাধ্যমের উত্তপ্ত অণুগুলোর প্রবাহ রেখা অনুযায়ী তাপ সঞ্চালিত হয়।
[ঙ] এটি পরিবহনের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দ্রুত পদ্ধতি ।
[চ] তরল ও বায়বীয় পদার্থে তাপ সঞ্চালিত হয়।

তাপ বিকিরণ কাকে বলে

যে পদ্ধতিতে তাপ জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের আকারে উষ্ণ বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে সঞ্চালিত হয় তাকে বিকিরণ বলে। আলো যেমন তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের আকারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় বিকিরণ পদ্ধতিতেও অনেকটা একইভাবে তাপ সঞ্চালিত হয়।

তাপ বিকিরণের বৈশিষ্ট্য
[ক] জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।
[খ] মাধ্যম উত্তপ্ত হয় না ।
[গ] তাপ তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গ আকারে সঞ্চালিত হয় ।
[ঘ] তাপ সরলরেখায় সঞ্চালিত হয়।
[ঙ] তাপ আলোর বেগে সঞ্চালিত হয়।
[চ] বায়বীয় ও শূন্য মাধ্যমে তাপ সঞ্চালিত হয়।

তাপ পরিবহন

তাপ পরিবাহকত্বের মান পরিবাহকের উপাদানের উপর নির্ভর করে।
তাপের পরিবহনের জন্য চুলার উপর রাখলে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি কেটলির হাতল গরম হয়।
রান্না করার হাড়ি-পাতিল সাধারণত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হয়। এর প্রধান কারণ: এতে দ্রুত তাপ সঞ্চারিত হয়ে খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়।
একটি লোহার একপ্রান্ত আগুনে ধরলে একটু পরেই অপর প্রান্তে গরম অনুভূত হয়। তাপ পরিবহনের জন্য এ ঘটনাটি ঘটে।
Vaccum বা শূন্য মাধ্যমে তাপ সঞ্চালিত হয় তাপ বিকিরণ পদ্ধতিতে।

তাপ বিকিরণ

স্বচ্ছ বস্তু যেমন: কাঁচ, কোয়ার্টজ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে তাপের বিকিরণ হয় ।
কার্বন ডাইসালফাইডের মধ্য দিয়ে তাপের বিকিরণ হয়। পানির মধ্য দিয়ে তাপের আংশিক বিকিরণ ঘটে।
অস্বচ্ছ বস্তু যেমন: কাঠ, লোহা, পাথর ইত্যাদি বস্তুর মধ্য দিয়ে তাপের বিকিরণ হয় না।
একটি জ্বলন্ত বৈদ্যুতিক বাতি গরম থাকে, কারণ ভিতরের ফিলামেন্ট থেকে বাতির গায়ে তাপ বিকিরণ পদ্ধতিতে যায় ।

রোদে রাখা একটুকরা লোহাকে এক টুকরা কাঠের চেয়ে গরম এবং ঘরে রাখা এক টুকরা লোহাকে এক টুকরা কাঠের চেয়ে ঠাণ্ডা মনে হয়: রোদে রাখলে এক টুকরা লোহা বা এক টুকরো কাঠের তাপমাত্রা এক হলেও যেহেতু লোহা তাপের সুপরিবাহক তাই লোহা তাড়াতাড়ি দেহে তাপ সঞ্চালন করে কিন্তু কাঠ তাপের কুপরিবাহক বলে কাঠ তাড়াতাড়ি তাপ সঞ্চালন করতে পারে না। কাজেই লোহা তাড়াতাড়ি দেহে তাপ পরিবহন করে বলে লোহাকে কাঠের চেয়ে বেশি গরম মনে হয়। অন্যদিকে ঘরে রাখলে লোহা ও কাঠের তাপমাত্রা দেহের তাপমাত্রা থেকে কম থাকে বলে উভয়ই দেহ থেকে তাপ নেয়। কিন্তু লোহা সুপরিবাহক বলে দ্রুত তাপ নেয়, কাঠ কুপরিবাহক বলে তাড়াতাড়ি তাপ নিতে পারে না। কাজেই লোহা কাঠের চেয়ে বেশি তাপ শোষণ করে। সুতরাং দেহ দ্রুত তাপ হারায় এবং লোহাকে কাঠের চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা মনে হয় ।

আগুনের পাশের কোন স্থান থেকে একই দূরত্বে ঠিক উপরে বেশি গরম লাগে : আগুনের পাশের কোন স্থানে তাপ শুধু বিকিরণ পদ্ধতিতেই সঞ্চালিত হয়। কিন্তু একই দুরত্বে উপরের কোন স্থানে তাপ বিকিরণ পদ্ধতি ছাড়াও পরিচলন পদ্ধতিতেও সঞ্চালিত হয়। কাজেই একই দূরত্বে পাশের কোন স্থান থেকে উপরের কোন স্থানে দুই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হওয়ায় বেশি তাপ সঞ্চালিত হয়। ফলে পাশের কোন স্থান থেকে একই দূরত্বে ঠিক উপরে বেশি গরম লাগে ।

মরু অঞ্চলে দিনে তীব্র গরম আর রাতে তীব্র শীত অনুভূত হয়: মরু অঞ্চলের বায়ু শুষ্ক থাকে। এই শুষ্ক বায়ু বিকিরণের জন্য স্বচ্ছ পদার্থ হিসেবে কাজ করে। মরু অঞ্চলের দিনের বেলা তাই শুষ্ক বায়ুর মধ্য দিয়ে সূর্য থেকে বিকীর্ণ তাপ সহজেই ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছায় এবং ভূ-পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। তাই মরু অঞ্চলে দিনে তীব্র গরম অনুভূত হয়। আবার রাতের বেলায় ভূ- পৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে। মরু অঞ্চলের শুষ্ক বায়ুর মধ্য দিয়ে এই বিকীর্ণ তাপ সহজেই বায়ুমণ্ডল ভেদ করে চলে যায় এবং ভূ-পৃষ্ঠ খুব শীতল হয়। এ জন্য রাতের বেলা তীব্র শীত অনুভূত হয়।

মেঘলারাত্রি অপেক্ষা মেঘহীন রাত্রি শিশির জমার জন্য অধিক অনুকূল : দিবাভাগে ভূ-পৃষ্ঠ তাপ শোষণ করে এবং রাত্রিকালে ভূ-পৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। মেঘ তাপরোধী পদার্থ। তাই মেঘলারাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ মেঘের মধ্য দিয়ে উর্ধ্বকাশে যেতে পারে না উপরন্তু মেঘ দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে। ফলে ভূ-পৃষ্ঠ ঠাণ্ডা থাকেনা এবং শিশির জমে না। পক্ষান্তরে মেঘহীন রাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ ঊর্ধ্বকাশে চলে যায়। ফলে ভূ-পৃষ্ঠ শীতল হয় এবং শিশির জমার জন্য অধিক অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।

খড়ের ছাদযুক্ত ঘর গরমকালে ঠাণ্ডা এবং শীতকালে গরম থাকে : খড় তাপের কুপরিবাহক। এছাড়া ছাদ খড়ের তৈরি হলে খড়ের মাঝে মাঝে অনেক ফাঁক থাকে যাতে বায়ু আবদ্ধ থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহক বলে গরমের দিনে বাইরের তাপমাত্রা বেশি হলেও খড়ের ছাদের মধ্য দিয়ে তাপ ভিতরে আসতে পারে না বলে ঘর ঠাণ্ডা মনে হয়। আবার শীতকালে বাইরের তাপমাত্রা কম থাকলেও ভিতরের তাপ বাইরে যেতে পারে না বলে গরম মনে হয়।

কম্বলে ঢেকে রাখলে মানুষের দেহ শীতের দিনে গরম থাকে : কম্বল তাপের কুপরিবাহক কারণ কম্বলের ফাঁকে ফাঁকে অসংখ্য ছিদ্র পথে বায়ু আবদ্ধ থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহক বলে এই বায়ুস্তর তাপ সঞ্চালনের বাধা প্রদান করে। শীতের দিনে মানুষের দেহ কম্বলে ঢেকে রাখলে কম্বলের মধ্য দিয়ে মানুষের দেহের তাপ বাইরে যেতে পারে না। ফলে শরীর গরম থাকে।

এক টুকরো বরফ কম্বলে ঢেকে রাখলে গরমের দিনে ঠাণ্ডা থাকে: গরমের দিনে বায়ুমণ্ডল থেকে তাপ গ্রহণ করে বরফ গলতে থাকে । কিন্তু কম্বলে ঢাকা থাকলে কম্বল তাপের কুপরিবাহক বলে বাইরের তাপ কম্বল ভেদ করে বরফে আসতে পারে না। ফলে বরফ কোন তাপ গ্রহণ করে না, তাই এটি ঠাণ্ডাই থাকে।

বরফকে কাঠের গুড়া দিয়ে ঢেকে রাখা হয়: কাঠের গুড়া তাপ কুপরিবাহী পদার্থ এবং বায়ুও তাপ কুপরিবাহী পদার্থ। বরফকে কাঠের গুড়া দিয়ে ঢেকে দিলে বরফ ও কাঠের টুকরার মধ্যে বায়ুস্তর আবদ্ধ থাকে। তাই কাঠের গুড়ায় ঢেকে থাকা বরফে বাইরের তাপ আসার সময় কুপরিবাহী কাঠের গুড়া এবং আবদ্ধ বায়ুস্তরে বাধাপ্রাপ্ত হয় । এতে বরফে তাপের পরিবাহিতা হয় না বললেই চলে। ফলে বরফ গলে না। সুতরাং বরফ যাতে না গলে সেজন্য কাঠের গুড়া দ্বারা বরফ ঢেকে দেয়া হয়।

শীতকালে একটি পুরু কম্বলের পরিবর্তে দুটি পাতলা কম্বল গায়ে দিলে বেশি গরম অনুভব হয়: কম্বল পশমের তৈরি । কম্বলের পশমের আঁশ আলগাকারে থাকে বলে আঁশের মধ্যে অধিক পরিমাণ বায়ু আটকে থাকতে পারে।বায়ু হল তাপের কুপরিবাহী এবং পশমও তাপের কুপরিবাহী। সেজন্য কম্বল গায়ে দিলে আমাদের দেহের তাপ কম্বলের মধ্যে দিয়ে পরিবাহিত হয়ে বাইরে চলে যেতে পারে না। আবার একটি পুরু কম্বলের পরিবর্তে দু'টি পাতলা কম্বল একত্রে ব্যবহার করা হলে কম্বল দুটির মাঝে অতিরিক্ত একটি বায়ুর স্তর আটকে থাকে। এ বায়ুস্তর শীতকালে তাপ অপসারণে বাধা প্রদান করে। এজন্য পুরু কম্বলের পরিবর্তে দুটি পাতলা কম্বল গায়ে দিলে বেশি গরম অনুভব হয়।

শীতকালে সুতোর কাপড়ের চেয়ে পশমের কাপড় পরলে বেশি গরম অনুভূত হয়: পশম তাপের কুপরিবাহী। পশমের মধ্যে অনেক আঁশ আলগাভাবে থাকে। তাই পশমের ফাঁকে ফাঁকে অনেক বেশি পরিমাণ বাতাস আটকে থাকতে পারে। আবার বাতাসও তাপের কুপরিবাহী। তাই পশমের পোশাক পরলে পশম এবং এর মধ্যে আটকে থাকা বায়ু আমাদের শরীরের তাপ বেরিয়ে যেতে বাধা দেয়। এ জন্য শরীর গরম থাকে। সুতোর কাপড়ের আঁশগুলো আলগাভাবে থাকে না । তাই সুতোর ফাঁকে বায়ুস্তর আটকে থাকতে পারে না ।ফলে শরীরের তাপ সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে । এ জন্য শীতকালে সুতোর কাপড় পরলে ঠাণ্ডা অনুভূত হয় ।

যে রঙের বস্তুর তাপ বিকিরণ ও শোষণ করার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি: কালো।

যে রঙের বস্তুর তাপ বিকিরণ ও শোষণ করার ক্ষমতা সবচেয়ে কম: সাদা।

গরমের দিনে সাদা কাপড় ব্যবহার করা আরামদায়ক: গরমের দিনে এমন কাপড় ব্যবহার করা হয় যা তাপ কম শোষণ করে। সাদা বস্তুর তাপ শোষণ ক্ষমতা একেবারেই কম এবং আপতিত তাপের বেশির ভাগই প্রতিফলিত করে। গরমের দিনে সাদা কাপড় ব্যবহার করলে সূর্যের বিকীর্ণ তাপ সাদা কাপড়ে পড়ে বেশির ভাগই প্রতিফলিত হয়ে যায়, কাপড়ের তাপমাত্রা তাতে সামান্য বাড়ে। এ কারণে গরমের দিনে সাদা কাপড় ব্যবহার করা আরামপ্রদ ।

শহরের রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ সাধারণত সাদা ছাতা ও সাদা জামা ব্যবহার করে কেন: তাপ বিকিরণ থেকে বাঁচার জন্য।

শীতের দিনে রঙিন কাপড় ব্যবহার করা আরামদায়ক: শীতের দিনে এমন কাপড় ব্যববহার করা হয় যা বেশি তাপ শোষণ করে। রঙিন বস্তু বেশি তাপ শোষণ করে । শীতের দিনে বিভিন্ন রঙিন কাপড় ব্যবহার করলে সূর্যের তাপ কাপড়ে পড়ে শোষিত হয় । ফলে কাপড়ের তাপমাত্রা বাড়ে এবং আরাম লাগে ।

ছাতার কাপড় কালো হয়: কালো কাপড়ের তাপ শোষণ ও বিকিরণ করার ক্ষমতা বেশি। সূর্যের তাপের ছাতার কালো কাপড় দ্রুত গরম হলেও কাপড় হতে অতিদ্রুত তাপ বিকীর্ণ হয়। ফলে কাপড় খুব বেশি গরম হতে পারে না এবং ছাতার নিচে বেশি উত্তাপ অনুভূত হয় না। তাই ছাতায় কালো কাপড় ব্যবহার করা হয়।

কোন রঙের কাপে চা তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়: কালো রঙের বস্তুর তাপ বিকিরণ করার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। তাই কালো রঙের কাপ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে বলে চা তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে।

কোন রঙের কাপে চা বেশিক্ষণ গরম থাকে: সাদা রঙের বস্তুর তাপ বিকিরণ করার ক্ষমতা সবচেয়ে কম। তাই সাদা রঙের কাপ ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে বলে চা বেশিক্ষণ গরম থাকে।

চায়ের কাপের বাহিরের পৃষ্ঠ পালিশ করা থাকলে এতে চা অনেকক্ষণ গরম থাকে: পালিশ করা পৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ করার ক্ষমতা কম। এজন্য পালিশ করা কাপে চায়ের তাপ বিকীর্ণ হয় কম এবং চা বেশিক্ষণ গরম থাকে।

টিনের ঘরে বেশি গরম লাগে কেন: টিন বেশি মাত্রায় তাপ বিকিরণ করে।

চা পানের জন্য ধাতব পেয়ালার চেয়ে চীনামাটির পেয়ালা সুবিধাজনক কেন : ধাতব পেয়ালা তাপ সুপরিবাহী। তাই ধাতব পেয়ালায় গরম চা রাখার সাথে সাথে পেয়ালার মধ্য দিয়ে তাপ পরিবাহিত হবে। ফলে চা দ্রুত তাপ হারাবে এবং পেয়ালা উত্তপ্ত হবে। কিন্তু চীনামাটি তাপের কুপরিবাহী। তাই চীনামাটির পেয়ালায় গরম চা রাখলে তা থেকে তাপ পরিবাহিত হতে পারে না। কাজেই চা পান করার সময় তাপ ঠোঁটে সঞ্চালিত হয়ে ঠোঁটে ফোস্কা পড়তে বা পুড়ে যেতে পারে না। অধিকন্তু এতে চা বেশিক্ষণ গরম থাকে ।

কাঁচের ঘর বা সবুজ বাড়ি সব সময় গরম থাকে কেন: সবুজ বাড়িতে গাছপালা, ফুল, মূল্যবান উদ্ভিদ ইত্যাদি কাঁচের ঘরের মধ্যে রাখা হয়। কাঁচের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপ সহজে চলে যেতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকীর্ণ তাপ যেতে পারে না। সূর্য থেকে নির্গত ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকীর্ণ তাপ কাঁচের মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারে। এর ফলে গাছপালা বা মাটি গরম হয়ে যায়। গরম মাটি বা গরম গাছপালা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তাপ বিকিরণ করে। এই দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকীর্ণ তাপ কাঁচের মধ্য দিয়ে বাইরে যেতে পারে না। ফলে কাঁচের ঘরটি বেশ গরম থাকে ।

 কাঁচের ঘর

নতুন কালিশূন্য পাত্র অপেক্ষা কালিমাখা পুরাতন পাত্রে পানি তাড়াতাড়ি ফোটে কেন: নতুন মসৃণ ও উজ্জ্বল কালিশূন্য পাত্র অপেক্ষা কালিমাখা পুরাতন পাত্রের তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি। ফলে কালিশূন্য পাত্র অপেক্ষা কালিমাখা পাত্র তাড়াতাড়ি গরম হয় এবং পাত্রের পানি ফুটতে শুরু করে।

মহাকাশযানের বহিরাবরণে বিশেষ ধরনের তাপসহ উপাদানের প্রলেপ দেওয়া থাকে কেন: মহাকাশযান যখন আবহাওয়া মণ্ডলের ভেতর দিয়ে তীব্রবেগে চলে তখন ঘর্ষণের ফলে প্রচন্ড তাপের উৎপত্তি হয়। তাই মহাকাশযানের বহিরাবরণে বিশেষ ধরনের তাপসহ উপাদানের প্রলেপ দেওয়া হয় যাতে এই তাপের প্রভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।

শীতে শরীর কাপে কেন: শরীরের তাপের চেয়ে বাহিরের তাপ কম বলে ।

ঘর্মাক্ত দেহে পাখার বাতাস আরাম দেয় কেন- গরমের সময় উত্তপ্ত বাতাস শরীরের সংস্পর্শে এসে গরম হয়ে যায়, সেজন্ন শরীরে গরম অনুভূত হয় । পাখার বাতাস শরীরের উপর সঞ্চিত ঘাম বাষ্পে পরিণীত হয়। বাষ্পে পরিনত হওয়ার সময় ঘাম শরীর থেকে প্রয়োজনীয় সুপ্ততাপ গ্রহন করে। ফলে শরীর ঠাণ্ডা হয় এবং আমরা আরাম বোধ করি ।

আকাশ মেঘলা থাকলে গরম বেশি লাগে কেন- মেঘহীন রাতের তুলনায় মেঘলা রাতের বায়ু অপেক্ষাকৃত আর্দ্র থাকে। আর্দ্র বায়ু শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা অধিক তাপ শোষণ করে। মেঘলা রাতে ভূপৃষ্ঠের বিকীর্ণ তাপ মেঘের মধ্যে দিয়ে ঊর্ধ্বাকাশে যেতে পারে না, বরং প্রতিফলিত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। এতে বায়ুমণ্ডল অধিকতর গরম হয়। অন্যদিকে মেঘহীন রাতে বিকিরিত তাপ ঊর্ধ্বাকাশে চলে যায় বলে বায়ুমণ্ডল শীতল থাকে ।

তাপীয় যন্ত্রপাতি

তাপ ইঞ্জিন : তাপ ইঞ্জিনে তাপশক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। জ্বালানি পুড়ানোর ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে তাপ ইঞ্জিনকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়: [ক] বহির্দহ ইঞ্জিন [খ] অন্তর্দহ ইঞ্জিন

 তাপ ইঞ্জিন

ক) বহির্দহ ইঞ্জিন: যে ইঞ্জিনে জ্বালানির দহন ক্রিয়া ইঞ্জিনের মূল অংশের বাইরে ঘটে তাকে বহির্দহ ইঞ্জিন বলে। যেমন: বাষ্পীয় ইঞ্জিন ।
খ) অন্তর্দহ ইঞ্জিন: যে ইঞ্জিনে জ্বালানির দহন ক্রিয়া ইঞ্জিনের মূল অংশের ভিতরে ঘটে তাকে অন্তর্দহ ইঞ্জিন বলে । যেমন: পেট্রোল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন ইত্যাদি।

পেট্রোল ইঞ্জিন :

✓ Spark ignition engine Petrol Engine
✓ Petrol Engine এর Compression rating 4:1
✓ Petrol Engine-এর Exhaust gas CO ধারণ করে
✓ Petrol Specific Gravity 0.75
✓ পেট্রোল ইঞ্জিনের থার্মোডাইনামিক সাইকেলের নাম অটো সাইকেল ।
✓ পেট্রোল ইঞ্জিনে কারবুরেটর ও স্পার্ক প্লাগ থাকে। কারবুরেটরে পেট্রোলকে বাষ্পে রূপান্তরিত করা হয়। এই পেট্রোল বাষ্পকে যথাযথ অনুপাতে বায়ুর সাথে মিশিয়ে বিস্ফোরক গ্যাসে পরিণত করা হয়। এই মিশ্রণ ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে ।
পেট্রোল ইঞ্জিনের দক্ষতা: প্রায় ৩০%।
পেট্রোল ইঞ্জিন সফলতার সাথে প্রথম চালু করেন: ড. অটো।
✓ পেট্রোল ইঞ্জিনে পিস্টনের দু'বার সামনে এবং দু'বার পিছনে এই চারবার গতির সময়ে মাত্র একবার জ্বালানি সরবরাহ করা হয় বলে এই ইঞ্জিনটিকে চতুর্ঘাত ইঞ্জিন বলে । চক্রের পর পর চারটি ঘাতের ক্রিয়াকে ‘অটোচক্র' বলে । সি.এন.জি এর ইঞ্জিন চতুর্ঘাত ইঞ্জিন। মোটরগাড়ি, লঞ্চ, এরোপ্লেনে এ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।
✓ পানির আপেক্ষিক তাপ বেশি বলে অনেক তাপ শোষণ করলেও পানির উষ্ণতা অল্প বৃদ্ধি পায়। তাই মোটর গাড়ির ইঞ্জিন ঠাণ্ডা রাখার জন্য পানি ব্যবহৃত হয়।
রেডিয়েটর: ইঞ্জিনের উত্তাপ কম রাখার যন্ত্র ।
✓ Four stroke Indicated Power এর সূত্র PLAN/2
অটোমোবাইল: [ক] কার [খ] বাস [গ] মটর সাইকেল

 রেডিয়েটর  সি.এন.জি ইঞ্জিন

থার্মোফ্লাস্ক (Thermo Flask):
✓ থার্মোফ্লাস্ক দুই স্তরবিশিষ্ট কাঁচের পাত্র।
✓ এর দেয়াল কাঁচের তৈরি এবং মুখ কর্ক দিয়ে বন্ধ করা থাকে তাই তাপ পরিবহন খুব কম হয় ।
✓ তাপ পরিবহন বা পরিচলন পদ্ধতিতে ভিতর থেকে বাহিরে বা বাহির থেকে ভিতরে যেতে পারে না কারণ দুই দেয়ালের মধ্যবর্তী স্থান বায়ুশূন্য ।
✓ দেয়াল রুপার প্রলেপ দিয়ে চকচকে করা থাকে বলে বিকরন পদ্ধতিতে ভিতরে তাপ বাহিরে বা বাহিরের তাপ ভিতরে যেতে পারে না।

 থার্মোফ্লাস্ক

রেফ্রিজারেটরে কমপ্রেসরের কাজ: ফ্রেয়নকে বাষ্পে পরিণত করা।

 রেফ্রিজারেটর কমপ্রেসর

রেফ্রিজারেটরে কনডেনসরের কাজ: ফ্রেয়নকে ঘনীভূত করা ।

 রেফ্রিজারেটর কনডেনসর

ফ্রেয়ন: একটি উদ্বায়ী হিমায়ক পদার্থ। এর রাসায়নিক ডাইক্লোরো ডাইফ্লোরো মিথেন । রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত তরল পদার্থটির নাম ফ্রেয়ন (হিমায়ন পদার্থসমূহের সম্মিলিত নাম ফ্রেয়ন; যেমন ডাইক্লোরো-ডাইফ্লোরো মিথেন একটি হিমায়ন পদার্থ)। রেফ্রিজারেটরে বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় সুপ্ততাপ রেফ্রিজারেটরের ভেতর রাখা খাদ্যদ্রব্য থেকে আসে। ফলে নিম্ন তাপমাত্রার সৃষ্টি হয় এবং এতে খাদ্যদ্রব্য বা অন্যান্য সামগ্রী অনেক দিন ভালো ও টাটকা থাকে ।

নবীনতর পূর্বতন