বিশ্বের যা কিছু আমরা দেখি সবই আলোর প্রতিফলনের কারণে। কোনো আলোক উৎস ( যেমন- সূর্য , চন্দ্র , বৈদ্যুতিক বাতি , মোমবাতি ইত্যাদি ) থেকে আলো অন্য বস্তুর উপর পড়ে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আঘাত করে বলেই আমরা বস্তুটি দেখতে পাই। আলো নিজে অদৃশ্য হয়ে বস্তুর প্রতিচ্ছবি আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে বিধায় আমরা কোন বস্তু দেখতে পাই । বস্তুত আলোর প্রতিফলনের এই ঘটনা না ঘটলে আমরা কোন বস্তুই দেখতে পেতাম না । তেমনিভাবে আলোর প্রতিসরণ ও আমাদের ব্যবহারিক জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলো যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে তাকে স্বচ্ছ মাধ্যম বলে। আলো যে কোনো মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সরলরেখায় চলে। আলো এক স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য একটি স্বচ্ছ মাধ্যমে বাধা পেলে আলো দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং দ্বিতীয় মাধ্যমে ও একইভাবে সরলরেখা বরাবর চলতে থাকে। কিন্তু মাধ্যম দুটির বিভেদ তলে আলোর দিক বা গতি পথ পরিবর্তিতনের একটি ঘটনা ঘটে । আলোর এই দিক পরিবর্তনের ঘটনাকেই বলা হয় আলোর প্রতিসরণ। আলোর প্রতিসরণ ধর্ম না থাকলে আমরা বাতাসের মধ্যে কিছু দেখতে পেতাম না, পানির মধ্যে কিছু দেখতে পেতাম না । কাচের জানালা দিয়ে ঘরে আলো ঢুকতো না। আমরা চশমা দিয়ে দেখতে পেতাম না। এই টিউটরিয়ালে আমরা আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ , আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের মধ্যে পার্থক্য , আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের উদাহরণ , আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের প্রকারভেদ , আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের সূত্র , প্রতিসরণাঙ্ক , ক্রান্তি কোণ , পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন , পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের শর্ত , পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের উদাহরণ ও অপটিক্যাল ফাইবার এর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হবে। যা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয়।
- আলোর প্রতিফলন কাকে বলে
- আলোর প্রতিফলনের প্রকারভেদ
- আলোর প্রতিফলনের সূত্র
- আলোর প্রতিফলনের উদাহরণ
- সংকট কোণ বা ক্রান্তি কোণ কাকে বলে
- পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন কাকে বলে
- পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের শর্ত
- পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের উদাহরণ
- অপটিক্যাল ফাইবার এর বৈশিষ্ট্য
- আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে
- আলোর প্রতিসরণের সূত্র
- আলোর প্রতিসরণের উদাহরণ
- প্রতিসরণাঙ্ক কাকে বলে
- আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের মধ্যে পার্থক্য
আলোর প্রতিফলন কাকে বলে
আলোর প্রতিফলন (Reflection Of Light): আলো এক প্রকার শক্তি। আলো যখন বায়ু বা অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় অন্য কোন মাধ্যমে বাধা পায় তখন দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে কিছু পরিমাণ আলো প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। একে আলোর প্রতিফলন বলে । অথবা আলোক উৎস থেকে আপতিত রশ্মি কোন তলে বা পৃষ্ঠে বাধা পেলে কিছু আলো পুনরায় প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে, এ ঘটনাকে আলোর প্রতিফলন বলে।
আলোর প্রতিফলনের প্রকারভেদ
আলো যখন কোন বস্তুর উপর পড়ে তখন বস্তুটি যত বেশি অস্বচ্ছ হয় ততবেশি আলো প্রতিফলিত হয় । উদাহরণস্বরুপ আলোক রশ্মি যখন একটি দেয়ালের উপর পড়ে তখন তার প্রায় সবটুকু আলোই প্রতিফলিত হয়ে প্রথম মাধ্যমে ফেরত আসে । এর কারণ দেয়াল ভেদ করে আলো গমন করতে পারে না । অন্যদিকে আলোক রশ্মি যখন পানির উপর পড়ে তখন তার সামান্য অংশই প্রতিফলিত হয়ে প্রথমে মাধ্যমে ফেরত আসে । এর কারণ পানির মধ্য দিয়ে আলো গমন করতে পারে । এর থেকে বোঝা গেল স্বচ্ছ মাধ্যমের চেয়ে অস্বচ্ছ মাধ্যমে আলো বেশি প্রতিফলিত হয় । আবার একইভাবে প্রতিফলক তল যত বেশি মসৃণ হবে আলোর প্রতিফলন ও ততবেশি হবে । সাদা তলে আলোর প্রতিফলন বেশি হয় এবং কালো তলে আলোর প্রতিফলন হয় না বললেই চলে । আবার আলোক রশ্মি লম্বভাবে পড়লে আলো খুবই সামান্য প্রতিফলিত হয় । প্রতিফলক পৃষ্ঠের মসৃণতা অনুযায়ী আলোর প্রতিফলনকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে , যথাঃ নিয়মিত প্রতিফলন ও ব্যাপ্ত প্রতিফলন।
নিয়মিত প্রতিফলন (Regular reflection): যদি একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোক রশ্মি কোনো পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর সমান্তরাল, অভিসারী বা অপসারী আলোক গুচ্ছে পরিণত হয় তা হলে সেই প্রতিফলনকে নিয়মিত প্রতিফলন বলে। প্রতিফলক পৃষ্ঠ মসৃণ হলে নিয়মিত প্রতিফলন হয়। সমতল দর্পণ, অবতল দর্পণ, উত্তল দর্পণে নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে। এ ক্ষেত্রে সবগুলো রশ্মির আপতন কোণ এবং প্রতিফলন কোণ সমান হয়। গ্রিসের প্রখ্যাত গণিতবিদ এবং ইঞ্জিনিয়ার- হীরন সর্বপ্রথম আলোর নিয়মিত প্রতিফলনের ধর্ম লক্ষ্য করেন।
ব্যাপ্ত প্রতিফলন (Diffused reflection): যদি একগুচ্ছ সমান্তরাল আলোক রশ্মি কোনো পৃষ্ঠে আপতিত হয়ে প্রতিফলনের পর সমান্তরাল, অভিসারী বা অপসারী আলোক গুচ্ছে পরিণত না হয় তা হলে সেই প্রতিফলনকে ব্যাপ্ত প্রতিফলন বলে। প্রতিফলক পৃষ্ঠ মসৃণ না হলে ব্যাপ্ত প্রতিফলন ঘটে। ঘরের দেয়াল, কাগজ, বার্নিশ না করা যে কোন কাঠের উপরি তল ইত্যাদি পৃষ্ঠ অমসৃণ এসব তলে ব্যাপ্ত প্রতিফলন ঘটে। এ ক্ষেত্রে সবগুলো রশ্মির আপতন কোণ বা প্রতিফলন কোণ পরস্পর সমান হয় না।
আলোর প্রতিফলনের সূত্র
আলোর প্রতিফলন প্রধানত দুটি সূত্র মেনে চলে । যথা-
১) আপতিত রশ্মি, আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অংকিত অভিলম্ব এবং প্রতিফলিত রশ্মি একই সমতলে থাকে ।
২) আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ সর্বদা সমান হয় ।
AO⇒আপতিত রশ্মি, BO⇒প্রতিফলিত রশ্মি, ON⇒আপতন বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব , ∠AON⇒ আপতন কোণ; ∠BON⇒প্রতিফলন কোণ ।
আলোর প্রতিফলনের উদাহরণ
১. সিনেমার পর্দা অমসৃণ হয়: পর্দা অমসৃণ হলে পর্দায় আপতিত আলোকরশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন ঘটে। পর্দা থেকে বিক্ষিপ্ত আলোকরশ্মিগুলো সিনেমা হলে অভ্যন্তরের চারদিকে ছড়িয়ে প্রতিটি দর্শকের চোখে পড়ে ।
২. কাঁচ স্বচ্ছ কিন্তু কাচের গুড়া অস্বচ্ছ : কাঁচের পাত্র মসৃণ ফলে আলোকরশ্মির নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে। অন্যদিকে কাঁচের ছোট ছোট গুড়া অমসৃণ। ফলে কাঁচের গুড়া থেকে আলোকরশ্মি বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। তাই গুড়া কাঁচ অস্বচ্ছ সাদা মনে হয়।
৩. সাধারণ কাগজ অস্বচ্ছ কিন্তু তৈলসিক্ত কাগজ স্বচ্ছ দেখায়: সাধারণ কাগজে আলোকরশ্মির অনিয়মিত প্রতিফলন ঘটে বলে অস্বচ্ছ মনে হয়। কিন্তু তৈলসিক্ত কাগজে আলোকরশ্মির অনিয়মিত প্রতিফলন কমে আসে বলে স্বচ্ছ দেখায়।
সংকট কোণ বা ক্রান্তি কোণ কাকে বলে
আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রতিসরিত হওয়ার সময় আপতন কোণের যে মানের জন্য প্রতিসরণ কোণের মান ৯০° হয়, অর্থাৎ প্রতিসরিত রশ্মি বিভেদ তল ঘেষে চলে যায় তাকে হালকা মাধ্যমের সাপেক্ষে ঘন মাধ্যমর ক্রান্তি কোণ বলে ।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন কাকে বলে
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন ( total internal reflection) হলো সেই ঘটনা যখন আলো ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রবেশের সময়ে দুই মাধ্যমের বিভেদতলে অভিলম্বের সাথে সংকট কোণের চেয়ে বেশি কোণে আপতিত হয় তখন আপতিত আলোকরশ্মির প্রায় সবটুকুই প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় ঘন মাধ্যমে ফিরে আসে। আলোর এই ধর্মকে অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন বলে। আলোর আপতন কোণ সংকট কোণের চেয়ে কম হলে আলো প্রতিসরিত হয়, সমান হলে প্রতিফলিত রশ্মি দুই মাধ্যমের বিভেদতল ঘেঁষে যায়, আর বেশি হলে ঐ আলো পরবর্তী মাধ্যমে প্রবেশ না করে পূনরায় পূর্বের মাধ্যমে ফিরে আসে।এটি আলোক রশ্মির একটি নিয়মিত ঘটনা ।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের শর্ত
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন সংঘটিত হওয়ার শর্ত: দুইটি-
[ক] আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যমে থেকে ঘন ও হালকা মাধ্যমের বিভেদ তলে আপতিত হবে ।
[খ] আপতন কোণ ক্রান্তি কোণের চেয়ে বড় হবে।
পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের উদাহরণ
১. মরুভূমির মরীচিকা
২. গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রে উত্তপ্ত পিচঢালা মসৃন রাজপথকে বৃষ্টির অব্যবহিত পরবর্তী সময়ের মত ভেজা
ও চকচকে মনে হয় ।
৩. হীরা আঁধারে চকচক করে।
৪. অপটিক্যাল ফাইবারে আলোক রশ্মির সম্প্রচার
৫. পদ্ম পাতার উপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে চকচক করে: পদ্ম পাতায় অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রোঁয়া থাকে । পাতার উপর পানির ফোঁটা পড়লে পানির ফোঁটা ঐ রোঁয়াগুলোর উপর আটকে থাকে ফলে পাতা এবং পানির ফোঁটার মাঝের অংশে বাতাস
থাকে। আলোর আপতিত রশ্মির যেগুলো সংকট কোণের চেয়ে বড় কোণে পানির ফোঁটার তলে আপতিত হয়, সেগুলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটে। এই প্রতিফলিত রশ্মি দর্শকের চোখে পড়ে বলে পানির ফোঁটাকে চকচকে দেখায় ।
অপটিক্যাল ফাইবার এর বৈশিষ্ট্য
ফাইবার হচ্ছে খুব সরু এবং নমনীয় কাচ তন্তু বা সুতা । আলো বহনের কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ধর্মকে লাগিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার তৈরী করা হয়েছে ।
নিচে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ দেয়া হল ।
১. অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে খুব সরু এবং নমনীয় কাচ তন্তু ।
২. এর ভেতরের অংশকে বলে কোর (Core), বাইরের অংশকে বলে ক্লাড (Clad).
৩. দুইটি একই কাঁচ দিয়ে তৈরি হলেও ভেতরের অংশের (কোর) প্রতিসরাঙ্ক বাইরের অংশ থেকে বেশি। এ কারণে আলোকের পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন এর মাধ্যমে কোরের সাথে আটকে রেখে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া যায়।
৪. অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে আলো শত শত কিলোমিটার নিয়ে যাওয়া যায়। কারণ এই কাঁচের তন্তুতে আলোর শোষণ হয় খুবই কম ।
৫. দৃশ্যমান আলো হলে শোষণ বেশি হতো বলে ফাইবারে লম্বা তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ইনফ্রারেড বা অবলাল রশ্মি ব্যবহার করা হয় ।
৬. এন্ডোস্কোপি নামের চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি প্রক্রিয়ায় অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করা হয়।
অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার:
[ক] চিকিৎসকরা মানবদেহের ভিতরের কোন অংশ দেখার জন্য ব্যবহার করেন।
[খ] টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থায় অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার ক্রমবর্ধমান ।
আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে
আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে যাওয়ার সময় মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদ তলে তীর্যকভাবে আপতিত আলোকরশ্মির দিক পরিবর্তন করার ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে । আলোকরশ্মি হালকা মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করলে প্রতিসরিত রশ্মি অভিলম্বের দিকে সরে যায়; আবার ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে প্রবেশ করলে প্রতিসরিত রশ্মি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়।
AO⇒ আপতিত রশ্মি ; BO⇒ প্রতিসরিত রশ্মি ; MN⇒ আপতন বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব ; ∠AON ⇒ আপতন কোণ ; ∠BOM ⇒ প্রতিসরণ কোণ ।
আলোর প্রতিসরণের সূত্র
আলোর প্রতিসরণ দুটি সূত্র মেনে চলে। যথা-
[ক] আপতিত রশ্মি, আপতন বিন্দুতে প্রতিফলকের উপর অংকিত অভিলম্ব এবং প্রতিসরিত রশ্মি একই সমতলে থাকে ।
[খ] একজোড়া নির্দিষ্ট মাধ্যম ও নির্দিষ্ট রঙের আলোর জন্য আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত সর্বদা ধ্রুব থাকে ।
আলোর প্রতিসরণের উদাহরণ
১. পানিতে একটি কাঠি ডুবিয়ে রাখলে তা বাঁকা দেখা যায় ।
২. পানিতে নৌকার বৈঠা বাঁকা দেখা যায় ।
৩. সূর্যোদয়ের খানিকটা পূর্বে ও পরে সূর্যকে দেখা যায় কেন?
৪. গোধুলির কারণ বায়ুমণ্ডলীয় আলোর প্রতিসরণ ।
৫. চাঁদ দিগন্তের কাছে অনেক বড় দেখায়: চাঁদ থেকে আলোক রশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে আসার সময় পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে আলোর প্রতিসরণ ঘটে অর্থাৎ আলোক রশি বেঁকে যায়। চাঁদ যখন দিগন্তের কাছে থাকে তখন আলোক রশ্মি তুলনামূলকভাবে অধিক পরিমাণে বেঁকে যায়। এ কারণে দিগন্তের নিকটে চাঁদ ও সূর্যকে ডিম্বাকৃতি এবং তুলনামূলকভাবে বড় দেখা যায় ।
৬. সুপার ব্লাড মুন: সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ছুঁয়ে খানিকটা চাঁদে যায়, সেই আলো আবার পৃথিবীতে আসার পথে অন্যসব রঙ হারিয়ে লাল রঙটি এসে আমাদের চোখে পৌঁছায়। এ কারণে চাঁদকে অনেকটা রক্তিম দেখায়, সে কারণে এটিকে বলা হয় ব্লাড ব্লু মুন। বিজ্ঞানীরা একে বলেছেন সুপার ব্লাড মুন। সর্বশেষ ২০১৮ এর আগে এরকম 'সুপার ব্লু ব্লাড মুন' দেখা গিয়েছিল ১৯৬৬ সালের ৩১ মার্চ ।
৭. পাত্রের পানিতে ডুবানো মুদ্রা প্রকৃত গভীরতার একচতুর্থাংশ উপরে মনে হয়।
প্রতিসরণাঙ্ক কাকে বলে
আলোকরশ্মি যখন এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে তীর্যকভাবে প্রবেশ করে তখন নির্দিষ্ট রঙের আলোর জন্য আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইন-এর অনুপাত যে ধ্রুব হয় তাকে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরণাঙ্ক বলে ।
বায়ুর সাপেক্ষে পানির প্রতিসরণাঙ্ক | ১.৩৩ |
বায়ুর সাপেক্ষে কাঁচের প্রতিসরণাঙ্ক | ১.৫ |
পানির সাপেক্ষে কাঁচের প্রতিসরণাঙ্ক | ১.১২৭ |
মাধ্যম | প্রতিসরণাঙ্ক |
---|---|
বায়ু | ১.০০০৩ |
বরফ | ১.৩১ |
পানি | ১.৩৩ |
কেরোসিন | ১.৪৪ |
গ্লিসারিন | ১.৪৭ |
কাচ | ১.৫-১.৬৫ |
মাইকা | ১.৬ |
হীরক | ২.৪২ |
প্রতিসরণাঙ্কের মান দুটি নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল-
[ক] মাধ্যমদ্বয়ের প্রকৃতি
[খ] আলোর রঙ
লাল বর্ণের আলোর প্রতিসরণ সবচেয়ে কম ।
বেগুনি বর্ণের আলোর প্রতিসরণ সবচেয়ে বেশি ।
গ্লিসারিনপূর্ণ পাত্রে কাঁচদণ্ড রাখলে তা দেখা যায় না কেন: প্রতিসরাঙ্কের ব্যবধান বেশি হলে এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে দেখা যায়। বায়ুর সাপেক্ষে থ্রি- সারিনের প্রতিসরাংক ১.৫ এবং কাচের প্রতিসরাঙ্ক ১.৪। বায়ুর সাপেক্ষে উভয়ের প্রতিসরাংকের ব্যবধান অত্যন্ত কম এবং প্রায় সমান। গ্লিসারিন পাত্রে কাচদণ্ড ডুবালে প্রায় সমান প্রতিসরাঙ্কের জন্য দেখা যায় না।
রাতের আকাশে তারাগুলো ঝিকমিক করে কেন: নক্ষত্রের ঝিকিমিকির কারণ আলোর প্রতিসরণ। বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় । ফলে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের প্রতিসরাংকেরও পরিবর্তন হয়। দূরবর্তী নক্ষত্র থেকে আগত আলোক বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে আসার সময় প্রতিসরাংকের পরিবর্তনের জন্য প্রতিনিয়ত প্রতিসরিত হয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে আমাদের চোখে আসে। এতে একবার বেশি আলো আবার কম আলো আমরা দেখতে পাই । এ জন্য তারাগুলো ঝিকমিক করে বলে মনে হয়।
আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের মধ্যে পার্থক্য
প্রতিফলন | প্রতিসরণ |
---|---|
মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আলোর গমন করতে না পারার প্রতিক্রিয়া হল আলোর প্রতিফলন | এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে আলো প্রবেশ করার সময় দিক পরির্তনের প্রতিক্রিয়া হল আলোর প্রতিসরণ |
প্রায় সকল মাধ্যমেই আলো সামান্য হলে ও প্রতিফলিত হয় । | সকল মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণ হতে পারে না । |
প্রতিফলনের সময় আলো যে মাধ্যমটিতে প্রবেশ করে তা একই দিকে ফিরে আসে। | প্রতিসরণের সময় আলো যে মাধ্যমটিতে প্রবেশ করে তা এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে ভ্রমণ করে। |
আপতন কোণ প্রতিফলনের কোণের সমান হয় । | আপতন কোণ প্রতিসরণের কোণের সমান হয় না । |
আলোর প্রতিফলন না ঘটলে আমরা কোন কিছুই দেখতে পেতাম না । | আলোর প্রতিসরণ না ঘটলে আমরা বাতাস এবং পানির মধ্যে কিছুই দেখতে পেতাম না । |
আলোর প্রতিফলন ধর্মের জন্য আলোর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় । ফলে আলো আর এগুতে পারে না । | আলোর প্রতিসরণ ধর্মের জন্য আলো ধীরগতির হয় তবে গমন করতে পারে । |
আলোর প্রতিফলন ও আলোর রশ্মির দিক পরিবর্তন করে তবে এটি সেই মাধ্যমের দিকে ফিরে যায় যেখানে এটি প্রথম উৎপন্ন হয়েছিল। | আলোর প্রতিসরণের মূল ধর্মই হল দিক বা গতিপথ পরিবর্তন করা তবে সেটি আর আগের মাধ্যমে ফিরে আসে না । |
আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন না ঘটলে নির্দিষ্ট আলোক রশ্মি স্থানান্তর করা সম্ভব হত না । যার ফলে টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট সংযোগ সহ আলোক সংক্রান্ত আরো অনেক কিছুই করা সম্ভব হত না । | আলোর প্রতিসরণ না থাকলে বায়ু এবং জল সংক্রান্ত কোন কিছুই করা সম্ভব হত না । |