বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪)
বুদ্ধদেব বসু ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক। তিনি তাঁর রচনাতে সর্বপ্রথম কাব্যরীতিতে কথ্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। বুদ্ধদেবের কাব্যে সমাজচেতনা বিশেষভাবে প্রকাশ না পেলেও বাস্তববাদিতা ও নাগরিক চেতনা প্রকাশে সিদ্ধহস্ত ছিলেন বলেই তাঁকে ‘নাগরিক কবি' বলে। ১৯৪২ সালে ফ্যাসীবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের আন্দোলনে যোগদান করেন ।
বুদ্ধদেব বসুর সাহিত্যকর্ম
সাহিত্যিক উপাদান | সাহিত্যিক তথ্য |
---|---|
জন্ম | বুদ্ধদেব বসু ৩০ নভেম্বর, ১৯০৮ সালে কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস- মুন্সীগঞ্জের মালখানগর । |
সম্পাদনা | ঢাকার পুরানা পল্টন থেকে তাঁর ও অজিত দত্তের যৌথ সম্পাদনায় সচিত্র মাসিক পত্রিকা ‘ প্রগতি' (১৯২৭-২৯) ও কলকাতা থেকে তাঁর ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের যৌথ সম্পাদনায় ত্রৈমাসিক ‘কবিতা' (১৯৩৫) এবং হুমায়ুন কবিরের সাথে ত্রৈমাসিক ‘ চতুরঙ্গ’ (১৯৩৪) পত্রিকা সম্পাদনা করেন। (জগন্নাথ হলের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি ‘ বাসন্তিকা” পত্রিকা প্রকাশের সাথে যুক্ত ছিলেন)। |
পরিচিতি | রবীন্দ্রনাথের পর বুদ্ধদেব বসুকে ‘ সব্যসাচী ’ লেখক বলা হয় । |
পুরস্কার ও সম্মাননা | তিনি ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী' কাব্যনাট্যের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬৭), ‘স্বাগত বিদায়’ গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৭৪) পান এবং পদ্মভূষণ (১৯৭০) উপাধি লাভ করেন। |
বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডব | আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ত্রিশের দশকে ‘ কল্লোল' (১৯২৩) পত্রিকাকে ঘিরে তরুণ লেখকদের সম্মিলনে একটি সাহিত্যবলয় সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে অন্যতম পাঁচজন কবিকে একত্রে পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়। এরা হলেন: বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত । পঞ্চপাণ্ডবগণ রবীন্দ্র প্রভাব বলয়ের বাইরে গিয়ে বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতা সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁরা বাংলা সাহিত্যে প্রথম আধুনিক নবজাগরণের সূচনা করেন। এরা সবাই ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। ছাত্র। অপরদিকে, আধুনিকতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা ও অশ্লীলতাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে- এই অভিযোগে ‘শনিবারের চিঠি' পত্রিকাকে কেন্দ্র করে কল্লোল বিরোধী আরেকটি সাহিত্য বলয় সৃষ্টি হয়। এদের নেতৃত্বে ছিলেন- মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, নীরদ চৌধুরী প্রমুখ । |
কাব্যগ্রন্থ | বুদ্ধদেব বসুর কাব্যগ্রন্থসমূহ: ‘ কঙ্কাবতী ’ (১৯৩৭): এ কাব্যের কবিতাগুলির প্রধান বিষয় প্রেম। ‘মর্মবাণী' (১৯২৫), ‘বন্দীর বন্দনা' (১৯৩০), ‘ দময়ন্তী ’ (১৯৪৩), ‘মরচেপড়া পেরেকের গান' (১৯৬৬), ‘একদিন : চিরদিন' (১৯৭১), ‘স্বাগত বিদায়’ (১৯৭১)। |
উপন্যাস | তাঁর রচিত উপন্যাস গুলো: ‘একদা তুমি প্রিয়ে' (১৯৩৩): পলাশ ও রেবার প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে জটিল সমস্যার সৃষ্টি বিষয়ক কাহিনি এ উপন্যাসের মূল বিষয়। রেবা নতুনভাবে প্রেমের অভিষেক করতে চায় কিন্তু পলাশ বুঝতে পারে তা সম্ভবপর নয়, এরকম কাহিনি নিয়ে এগিয়ে যায় উপন্যাসের গতি । ‘ তিথিডোর ' (১৯৪৯): বাঙালি মধ্যবিত্ত শিল্পিত স্বভাব নর- নারীর জীবনযাপনের মনোরম ও মধুর কাহিনি, প্রেম ও যৌবনের বন্দনা এ উপন্যাসের মূল সুর। চরিত্র: স্বাতী, সত্যেন। ‘ সাড়া ’ (১৯৩০), ‘ সানন্দা ’ (১৯৩৩), ‘ লালমেঘ ’ (১৯৩৪), ‘ পরিক্রমা ’ (১৯৩৮), ‘কালো হাওয়া' (১৯৪২), ‘নির্জন স্বাক্ষর’ (১৯৫১), ‘ মৌলিনাথ' (১৯৫২), ‘নীলাঞ্জনের খাতা' (১৯৬০), ‘পাতাল থেকে আলাপ” (১৯৬৭), ‘রাত ভরে বৃষ্টি' (১৯৬৭), ‘গোলাপ কেন কালো’ (১৯৬৮), ‘বিপন্ন বিস্ময়' (১৯৬৯)। |
নাটক | তাঁর রচিত নাটক গুলো: ‘মায়া-মালঞ্চ’ (১৯৪৪), ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী' (১৯৬৬), ‘কলকাতার ইলেক্ট্রা ও সত্যসন্ধ' (১৯৬৮)। |
অন্যান্য রচনাবলি | তাঁর অন্যান্য রচনাবলি: গল্পগ্রন্থ: ‘অভিনয়, অভিনয় নয়' (১৯৩০), ‘রেখাচিত্র’ (১৯৩১), ‘হাওয়া বদল' (১৯৪৩), ‘হৃদয়ের জাগরণ (১৯৬১), ‘ভালো আমার ভেলা’ (১৯৬৩), ‘প্রেমপত্র' (১৯৭২)। প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি' (১৯৩৫), কালের পুতুল' (১৯৪৬), ‘সাহিত্যচর্চা' (১৯৫৪), ‘স্বদেশ ও সংস্কৃতি' (১৯৫৭), ‘সঙ্গ, নিঃসঙ্গতা ও রবীন্দ্রনাথ' (১৯৬৩)। স্মৃতিকথা: ‘‘আমার ছেলেবেলা” (১৯৭৩), ‘আমার যৌবন’ (১৯৭৬)। ভ্রমণ কাহিনি: ‘‘সব পেয়েছির দেশে' (১৯৪১), ‘‘দেশান্তর’ (১৯৬৬)। সম্পাদনা: ‘‘আধুনিক বাংলা কবিতা” (১৯৬৩)। |
মৃত্যু | তিনি ১৮ মার্চ, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে মারা যান । |
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নসমূহ পড়তে ও পরীক্ষা দিতে এখানে ক্লিক করুন