ইউসুফ জোলেখা কাব্যের কাহিনী
তৈমুর বাদশাহ দেবধর্ম আরাধনা করে এক কন্যারত্ন লাভ করেন; তাঁর নাম রাখেন জোলেখা। অসামান্য সুন্দরী জোলেখা পর পর তিনবার দেবতুল্য এক যুবাপুরুষকে স্বপ্নে দেখে তাঁর প্রণায়াসক্ত হন। স্বপ্নের নির্দেশমতো জোলেখা মিশরের বাদশাহ আজিজ মিশিরকে বরমাল্য দিলেন, কিন্তু আজিজ মিশির স্বপ্নদৃষ্ট ব্যক্তি ছিলেন না। দৈববাণী কর্তৃক আশ্বাস লাভ করে জোলেখা ভারাক্রান্ত মন ও প্রণয়পীড়িত দেহ নিয়ে কালযাপন করেন। এদিকে কেনান দেশের ইয়াকুব নবীর পুত্র ইউসুফের ভবিষ্যৎ সৌভাগ্যে ও কৃতিত্বে ঈর্ষাকাতর বৈমাত্রেয় দশ ভ্রাতা তাঁকে কূপে নিক্ষেপ করে হত্যা করার চেষ্টা করে। মনিরু নামে মিশরবাসী এক বণিক ইউসুফকে কূপ থেকে উদ্ধার করে মিশরে নিয়ে যান এবং দাসরূপে বিক্রয় করেন। জোলেখার অনুরোধক্রমে আজিজ মিশির তাঁকে খরিদ করেন এবং নিজ অন্তঃপুরে নিয়ে যান। ইউসুফের রূপমুগ্ধ জোলেখা প্রেমনিবেদন করলে ইউসুফ ধর্মভয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন। জোলেখা ছল প্রতারণা করে ইউসুফকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। কিন্তু কিছুকাল পরে আজিজ মিশিরের স্বপ্ন ব্যাখ্যা করে ইউসুফ মুক্তিলাভ করেন এবং মিশরের মন্ত্রিত্ব পান। ইউসুফ দক্ষতার সাথে রাজকার্য পালন করেন এবং আজিজ মিশিরের মৃত্যুর পর তিনিই মিশরের সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হন। জোলেখা বৃদ্ধ ও অন্ধপ্রাপ্ত হয়ে ইউসুফের সাক্ষাতের আশায় পথে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরিশেষে একদিন সাক্ষাৎ হয় এবং ইউসুফের প্রার্থনায় জোলেখা হৃতযৌবন ও রূপসৌন্দর্য ফিরে পান। উভয়ে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। যথাসময়ে তাঁরা দুটি পুত্রসন্তান লাভ করেন।
পরপর কয়েক বছর অনাবৃষ্টির কারণে চতুর্দিকে মহাদুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। ইয়াকুব নবী উপায়ন্তর না দেখে স্বীয় পুত্রদের খাদ্যের সন্ধানে মিশরে প্রেরণ করেন। ইউসুফ অত্যাচারী ভ্রাতাদের চিনতে পারেন, কিন্তু পরিচয় গোপন করে তাঁদের আদর-আপ্যায়ন করেন এবং প্রচুর খাদ্যশস্য দিয়ে বিদায় করেন। তাঁরা ইবনে আমিনকে নিয়ে দ্বিতীয়বার মিশরে গেলে ইউসুফ কেবল সহোদর আমিনকে নিজ পরিচয় দেন এবং ছলে ‘সোনার কাঠা’ চুরির অপবাদ দিয়ে বন্দী করে নিজের কাছে রাখেন। পিতা ইয়াকুবকে মিশরে আনার জন্য দ্রুতগামী অশ্ব দিয়ে বৈমাত্রেয় ভ্রাতাদের বিদায় করেন। ইয়াকুব মিশরে উপনীত হলে ত্রিশ বছর পর পিতা-পুত্রের মিলন হয়। ইউসুফ ভ্রাতাদের রাজকীয় দায়িত্ব দিয়ে মিশরে রাজত্ব করেন। কিছুকাল পরে বারহা- তনয়ার সাথে জ্যেষ্ঠপুত্রের এবং নৃপতি আমির-তনয়ার সাথে কনিষ্ঠপুত্রের বিবাহ দেন ৷ অতঃপর ইউসুফ দিগ্বিজয়ে বের হন। অনেক রাজ্য জয়ের পর মৃগয়ার সময়ে মধুপুরের রাজা শাহাবালের রূপবর্তী কন্যা বিধুপ্রভার সাক্ষাৎ পান। বিধুপ্রভার ঈপ্সিত পাত্ৰ ইবন আমিনের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। অপুত্রক শাহাবাল জামাতাকে মধুপুর রাজ্য দান করেন ৷ ইউসুফ মিশরে প্রত্যাবর্তন করেন। কিছুকাল পরে ইবন আমিন ও বিধুপ্রিয়া মিশরে এসে বৃদ্ধ ইয়াকুবের পদবন্দনা করেন। জোলেখা বিধুপ্রভাকে বরণ করেন। ইউসুফ মিশরে এবং ইবন আমিন মধুপুরে সুখে রাজত্ব করেন।