বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝার জন্য বাক্যের মধ্যে বা বাক্যের সমাপ্তিতে কিংবা বাক্যে আবেগ (হর্ষ, বিষাদ), জিজ্ঞাসা ইত্যাদি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে বাক্য গঠনে যে ভাবে বিরতি দিতে হয় এবং লেখার সময় বাক্যের মধ্যে তা দেখাবার জন্য যে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তা-ই যতি বা বিরাম বা ছেদচিহ্ন।
বিরাম চিহ্ন কেনো ব্যবহৃত হয়?
ক. বাক্যের অর্থ সহজভাবে বোঝাতে,
খ. শ্বাস বিরতির জায়গা দেখাতে,
গ. বাক্যকে অলংকৃত করতে,
ঘ. বাক্যের অর্থ স্পষ্টকরণের জন্য,
বিরাম বা যতি চিহ্ন এর প্রবর্তক কে?
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । বাংলা সাহিত্যে দাঁড়ি, কমা, কোলন প্রভৃতি বিরাম চিহ্ন তিনি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। এজন্য তাকে বাংলা যতি চিহ্নের প্রবর্তক বলা হয় ।
বিরাম বা যতি চিহ্ন মোট কয়টি?
বিরাম বা যতি চিহ্ন মোট ১২টি। নিম্নে এদের নাম, আকৃতি এবং তাদের বিরতিকালের পরিমাণ নির্দেশিত হলো-
যতি চিহ্নের নাম | আকৃতি | বিরতিকাল-পরিমাণ |
---|---|---|
কমা (পাদচ্ছেদ) | , | ১ (এক) বলতে যে সময় প্রয়োজন |
সেমিকোলন(অর্ধচ্ছেদ) | ; | ১ বলার দ্বিগুণ সময় |
দাঁড়ি (পূর্ণচ্ছেদ) | । | এক সেকেন্ড |
জিজ্ঞাসা চিহ্ন | ? | |
বিস্ময় চিহ্ন | ! | |
কোলন | : | |
কোলন ড্যাস | :- | |
ড্যাস | - | |
উদ্ধরণ চিহ্ন | “ ” | এক উচ্চারণে যে সময় লাগে |
ইলেক বা লোপচিহ্ন | ’ | থামার প্রয়োজন নাই |
হাইফেন | - | |
ব্রাকেট (বন্ধনী চিহ্ন) | (),{},[] |
বাক্যের অভ্যন্তরে বসে : কমা, সেমিকোলন, ড্যাস (৩টি)। বাক্যের প্রান্তে বসে : দাঁড়ি, প্রশ্নচিহ্ন, বিস্ময়চিহ্ন (৩টি)
যতি বা বিরাম চিহ্নের ব্যবহার
১. কমা / পাদচ্ছেদ (,):
ক. বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ-বিভাগ দেখাবার জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন- সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
খ. পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি সবগুলোর পরই কমা বসবে। যেমন- সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য একই মালিকার পুষ্প।
গ. সম্বোধনের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন- রশিদ, এখানে আস ।
ঘ. মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর কমা বসবে। যেমন- ১৬ই পৌষ, বুধবার, ১৩৯০ বঙ্গাব্দ ।
ঙ. উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে (খণ্ড বাক্যের শেষে) কমা বসাতে হবে। যেমন- অধ্যক্ষ বললেন, “ছুটি পাবেন না।”
চ. বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে কমা বসে। যেমন- ৬৫, নবাবপুর রোড, ঢাকা।
২. সেমি কোলন (;): কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে, সেমি কোলন বসে। একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমি কোলন বসে। যেমন- সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; সে মায়ার বাঁধন কি সত্যিই দুশ্ছেদ্য?
৩. দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (। ): বাক্যের পরিসমাপ্তি বোঝাতে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়। যেমন- কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার।
৪. প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?): বাক্যে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে, বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে। যেমন- তুমি কখন এলে?
৫. বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!): হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে হলে এবং সম্বোধন পদের পরে বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন বসে। যেমন- আহা! কি চমৎকার দৃশ্য।
৬. কোলন ( : ) : একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে হলে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- সভায় সাব্যস্ত হলো : এক মাস পরে নতুন সভাপতি নির্বাচিত করা হবে।
৭. ড্যাস চিহ্ন (-): যৌগিক ও মিশ্র বাক্য পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। কোনো কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে ড্যাস চিহ্ন বসে। যেমন- তোমরা দরিদ্রের উপকার কর এতে - তোমাদের সম্মান যাবে না - বাড়বে।
৮. কোলন ড্যাস (:-): উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করতে হলে কোলন এবং ড্যাস চিহ্ন একসাথে ব্যবহৃত হয়। যেমন- বর্ণ দুই প্রকার। যথা: স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ।
৯. হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-): সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখাবার জন্য হাইফেনের ব্যবহার করা হয়। দুই শব্দের সংযোগ বোঝাতে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন এ আমাদের শ্রদ্ধা - অভিনন্দন, আমাদের প্রীতি - উপহার।
১০. ইলেক বা লোপ চিহ্ন ('): কোনো বর্ণ বিশেষের লোপ বোঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্য লোপচিহ্ন দেয়া হয়। যেমন- মাথার‘পরে জ্বলছে রবি। (‘পরে = ওপরে)
১১. উদ্ধরণ চিহ্ন (“”): বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যেমন- শিক্ষক বললেন, “গতকাল ‘অগ্রদূত বাংলা’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে।”
১২. ব্রাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন : (), {}, [] এই তিনটি চিহ্নই গণিতশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ত্রিপুরায় (বর্তমানে কুমিল্লা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন।