লায়লী-মজনু কাব্যের কাহিনী
আরবের এক ধনী আমির বহু দয়া-ধ্যান করে একটি পুত্রসন্তান লাভ করেন, তার নাম রাখেন কয়েস। পাঠশালায় পড়ার সময়ে মালিক নন্দিনী লায়লীর সাথে কয়েসের সাক্ষাৎ ও প্রণয় হয়। লায়লীর মাতা লায়লীর প্রেমকথা জানতে পেরে কূল- কলঙ্কের ভয়ে তার পাঠ বন্ধ করে দেন এবং কয়েসের সাথে সাক্ষাৎ বা পত্রবিনিময় যাতে না করতে পারে, তার জন্য সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বন্দিনী লায়লী কেবল বিলাপ ও অশ্রুপাত করে কালযাপন করে। এদিকে প্রেমশরাহত কয়েস ভিখারীর ছদ্মবেশে লায়লীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে ধরা পড়ে এবং মালিকের নির্দেশে প্রহরী কর্তৃক নির্যাতিত হয়। লায়লীর প্রেম ধ্যান করে কয়েস গৃহত্যাগ করে নজদ বনে আশ্রয় নেয়। প্রেমোন্মত্ত ও বিরহকাতর কয়েসের নাম হয় 'মজনু' (পাগল)। আমির অনেক চেষ্টা করেও মজনুর মতি-পরিবর্তন করতে পারেননি। গৃহে আত্মীয়-পরিজন-সহচরী পরিবেষ্টিত থেকেও লায়লী বিরহ-যন্ত্রণা ভোগ করে ও অনবরত বিলাপ করে। আমিরের অনুরোধে মালিক লায়লী মজনুর বিবাহে সম্মত হন, কিন্তু বিবাহবাসরে মজনুর প্রেমোন্মত্ততার কারণে তা ভেঙে যায়। মজনু নজদ বনে ফিরে যায় এবং লায়লীর প্রেম ধ্যান করতে করতে ঈশ্বরপ্রেমে মগ্ন হয়। আমির আশাভঙ্গে ও পুত্রশোকে প্রাণত্যাগ করেন। ইবন সালামের পুত্রের সাথে লায়লীর বিবাহ হয় বটে কিন্তু বাসরঘরে লায়লীর পদাঘাত পেয়ে নববর গৃহত্যাগ করে চলে যায়।
এক বৃদ্ধার মুখে মজনু লায়লীর বিবাহ-সংবাদ পেয়ে ‘হৃদয়শোণিতে' তাকে পত্র দেয়। লায়লীর পত্র পেয়ে মজনু শান্ত হয়। নয়ফল-রাজ মৃগয়ায় এসে মজনুকে উদ্ধার করেন এবং মালিককে যুদ্ধে পরাভূত করে লায়লীকে বন্দী করেন। পরে লায়লীর রূপে তিনি নিজেই বন্দী হন এবং বিষপান করিয়ে মজনুকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। সাকির প্রমাদে বিষমিশ্রিত পানীয় পান করে নয়ফল-রাজ মৃত্যুবরণ করেন। পিতা লায়লীকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। কিছুকাল পরে পিতামাতার সাথে শামদেশে যাওয়ার পথে লায়লী নিজের উট চালিয়ে নজদ বনে যায় এবং মজনুর সাথে মিলিত হয়। কলঙ্কের ভয়ে মজনু লায়লীকে ফিরিয়ে দেয়। বিরহতাপানলে দগ্ধ হয়ে লায়লী মৃত্যুবরণ করে; শোকে মুহ্যমান মজনুও লায়লীর কবরে বিলাপ করতে করতে প্রাণত্যাগ করে।