পুরুষ বলতে বাংলা ব্যাকরণে পুরুষ ( মানুষ ) কে বোঝায় না। যদি ও শব্দটির উচ্চারণ এবং বানানরীতি উভয় পুরুষকেই নির্দেশ করে। কিন্তু বাংলা ব্যাকরণের পুরুষের একটি আলাদা স্থান রয়েছে। একটা বিশেষ পক্ষকে বোঝাতেই ব্যাকরণে এর ব্যবহার করা রয়েছে। যদি ও বিষয়টা খুবই দ্বিধাপূর্ণ এবং ফানি। এই অধ্যায় থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশ্ন এসে থাকে। তাই আজ আমরা এই পুরুষের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেই এই পোস্ট পড়া শেষ করব। চলুন তাহলে আমরা প্রথমেই জেনে নেই- পুরুষ কাকে বলে ?
পুরুষ কথাটির অর্থ
বাংলা ব্যাকরণে পুরুষ শব্দটি দ্বারা পুরুষ মানুষকে বোঝায় না অথবা পুংলিঙ্গ জাতীয় কোন কিছুকে ও নির্দেশ করে না। ক্রিয়াপদের সাথে কর্মের যোগসূত্রকারীই হল পুরুষ। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিশেষ্য এবং সর্বনাম পদ কোন না কোন পুরুষের অন্তর্গত।
পুরুষ কাকে বলে?
যে বিশেষ্য এবং সর্বনাম পদ দ্বারা কোন বক্তা.শ্রোতা অথবা অন্য কোন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে বোঝায় তাকে বাংলা ব্যাকরণে পুরুষ বলে। অন্যভাবে বলা যায় ব্যক্তি বা বস্তু নির্দেশক সর্বনামকেই ব্যাকরণে পক্ষ বা পুরুষ বলে। বিশেষ্য বা সর্বনামের বিভিন্ন প্রকৃতিকে ব্যাকরণে পুরুষ বলে।
পুরুষ কত প্রকার ও কি কি ?
পুরুষ তিন প্রকার যথাঃ
- উত্তম পুরুষ
- মধ্যম পুরুষ
- নাম পুরুষ
উত্তম পুরুষ কাকে বলে ও কি কি ?
বক্তা নিজের নামের পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহারে তাকে প্রথম পুরুষ বা উত্তম পুরুষ বলে। এক কথায় স্বয়ং বক্তাই উত্তম পুরুষ। যেমন- আমি, আমার,আমরা,আমাদের,আমাদিগকে,আমাদিগের। এক কথা ’আমি’ দিয়ে যত শব্দ তৈরি হয় তার সবকিছুই উত্তম পুরুষের অন্তর্গত।
মধ্যম পুরুষ কাকে বলে?
কাউকে কিছু বলার সময় যখন বক্তা সেই শ্রোতার পরিবর্তে অন্য যে সর্বনাম ব্যবহার করে তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। এক কথায় বলা যায় প্রত্যক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাকে মধ্যম পুরুষ বলে। যেমন- তুমি, তোমরা।
মধ্যম পুরুষ কত প্রকার কি কি ?
মধ্যম পুরুষ আবার তিন প্রকার যথাঃ
ক. সাধারণ মধ্যম পুরুষ
খ. সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষ
গ. অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষ ।
সাধারণ মধ্যম পুরুষের উদাহরণ দাও
সাধারণ মধ্যম পুরুষের উদাহরণ হল তুমি, তোমরা, তোমাদের, তোমাকে ইত্যাদি। এক কথায় তুমি দিয়ে গঠিত সকল শব্দ।
সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষের উদাহরণ দাও
সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষের উদাহরণ হল আপনি, আপনারা, আপনাকে, আপনাদের ইত্যাদি। এক কথায় আপনি দিয়ে গঠিত সকল শব্দ।
অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষের উদাহরণ দাও
অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষের উদাহরণ হল তুই, তোরা, তোকে ইত্যাদি। এক কথায় তুই দিয়ে গঠিত সকল শব্দ।
নাম পুরুষ কাকে বলে?
বক্তা যখন অনুপস্থিত কারো সম্পর্কে কোন কিছু বলে তখন ঐ অনুপস্থিত ব্যক্তি বা বস্তুর নাম অথবা নামের পরিবর্তে অন্য যে সর্বনাম পদ ব্যবহার করে তখন তাকে প্রথম পুরুষ বা নাম পুরুষ বলে। এক কথায় অনুপস্থিত পরোক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীই নাম পুরুষ। যেমন- সে, তারা, তিনি।
নাম পুরুষ কত প্রকার কি কি ?
নাম পুরুষ আবার দুই প্রকার যথাঃ
ক. সাধারণ নাম পুরুষ
খ. সম্মানসূচক নাম পুরুষ
সাধারণ নাম পুরুষের উদাহরণ দাও
সাধারণ নাম পুরুষের উদাহরণ হল সে, তারা, তাহারা ।
সম্মানসূচক নাম পুরুষের উদাহরণ দাও
সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষের উদাহরণ হল তিনি, তিনার,তারা, তাহারা ।
Pro Tips: আমি বাচক শব্দ দিয়ে গঠিত সকল শব্দকেই উত্তম পুরুষ, তুমি বাচক শব্দ দিয়ে গঠিত সকল শব্দকেই মধ্যম পুরুষ এবং আমি বাচক ও তুমি বাচক শব্দ ব্যতীত অন্য সব বিশেষ্য পদ ও সর্বনাম পদকে নাম পুরুষ বলে।
তিন প্রকার পুরুষের অপর নাম কি ?
উত্তম পুরুষের অপর নাম প্রথম পুরুষ , মধ্যম পুরুষের অপর নাম ২য় পুরুষ এবং নাম পুরুষের অপর নাম তৃতীয় পুরুষ।
পুরুষের বিভিন্ন প্রকৃতি
ক.পুরুষভেদে ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য হয়, কিন্তু ক্রিয়ার রূপে কোনো পার্থক্য হয় না।
খ.সাধারণ, সম্ভ্রমাত্মক ও তুচ্ছার্থক ভেদে মধ্যম ও নাম পুরুষের ক্রিয়ার রূপের পার্থক্য হয়ে থাকে কিন্তু উত্তম পুরুষে হয় না।
গ. সাধারণ ভবিষ্যৎ কালে নাম পুরুষ ও মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ অভিন্ন।
ঘ. করেছে, করেছো, করেছেন- বাংলা ক্রিয়ার এ তিনটি রূপ মর্যাদা ভেদের কারণে ব্যবহৃত হয়।
পুরুষ | একবচন | বহুবচন |
---|---|---|
উত্তম পুরুষ | আমি (মুই) | আমরা (মোরা) |
মধ্যম পুরুষ | তুমি, তুই,আপনি | তোমরা, তোরা |
নাম পুরুষ | সে, তিনি, ইনি, উনি | তারা, ওরা, এরা |